আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
কোলকাতায় ফিরে মানসী, বড়দা আর বাকি ভাই বোন সবাই যা ছিল তাই। মানসীর দিন রাত সেই একই ভাবে কেটে যেতে থাকে। এই সময় বড়দার খেয়াল হয় বোনের বিয়ে না হয় দেওয়া যাচ্ছে না দু ভাইয়ের বিয়ে দেওয়া উচিত। দুটো ভাই – একজন মানসীর বড় আর একজন মানসীর ছোটো। এক বছরের মধ্যেই দুই ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। পয়সা ওয়ালা ঘর কিন্তু কম লেখাপড়া জানা মেয়ে খুজলেন ভাইদের জন্য। বিয়ের ফাইনাল কথা বলতে উনি একাই যেতেন। ফাইনাল কথা মানে টাকার কথা। উনি মেয়ের বাবার কাছ থেকে এত লক্ষ টাকা নিলেন কিন্তু বাড়ীতে এসে সবাইকে বললেন ৫০ হাজার দেবে। বড়দা নিজের ভাইদের বিয়েতেও কমিশন নিলেন। সরকারি কর্মচারী – ৩০ বছরের অভ্যেস কি ভাবে ছাড়বেন !
মানসীর দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন আসে। এখন সৃজা ১২ এ পড়ে। ওর পেছনে খুব বেশী সময় লাগেনা। সকালে বা রাত্রে রান্না ঘরেও যেতে হয় না। রান্নার কাজ ওর বৌদি আর ভাইয়ের বৌ করে।
স্বপন তখন পাটনা থেকে দিল্লি চলে গেছে। মানসীর দাদার বিয়েতে স্বপন এসেছিলো কিন্তু ওর ভাইয়ের বিয়ের সময় আসতে পারে নি। তখন ফেসবুক বা মোবাইল কোনটাই ছিল না। ফলে দুই বন্ধুর কথা খুব কমই হত।
ওর ভায়ের বিয়েতে একটা ছেলে (আসলে লোক, ৪০ এর বেশী বয়েস) এসেছিলো। তার মানসীকে দেখে পছন্দ হয়। তিনি মানসীর ভায়ের বৌ দীপ্তিকে বলেন। দীপ্তি বড়দাকে বলে। মানসীও শোনে। বড়দা খুব একটা আগ্রহ দেখান না। এই সময়ে মানসী নিজে উদ্যোগ নেয় নিজের বিয়ের। ও দীপ্তর সাথে কথা বলে।
মানসী – দীপ্তি তোমার সেই লোকটা তোমার কে হয় ?
দীপ্তি – কোন লোকটা ?
মানসী – যার আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছে ?
দীপ্তি – দেখা করবে তার সাথে ?
মানসী – আগে বল সে তোমার কে হয় ?
দীপ্তি – আমার এক বৌদির মাসতুতো দাদা।
মানসী – কি করে ?
দীপ্তি – দীপু দা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে। ছেলে বিষ্ণুপুরে বোর্ডিং স্কুলে পড়ে। একাই থাকে। মোটামুটি পয়সা আছে।
মানসী – আমি কথা বলতে চাই
দীপ্তি – চল নিয়ে যাব।
এরপর দীপ্তি ওর স্বভাব অনুসারে মানসীর পেছনে লাগে। দীপ্তিও মানসীকে রাঙ্গাদি বলেই ডাকতো।
দীপ্তি – রাঙা দি মনের মধ্যে একটু হাওয়া খেলছে ?
মানসী – হাওয়া খেলার কি আছে ?
দীপ্তি – না তোমার মুখে স্বপন ছাড়া আর কোন ছেলের কথা শুনিনি তো তাই।
মানসী – তুমি স্বপনকে দেখনি তাই এইরকম বলছ
দীপ্তি – শুনেছি ও তোমাকে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে
মানসী – হ্যাঁ ধরে তো, ও আমার বন্ধু। কি হয়েছে তাতে ?
দীপ্তি – বাপরে কি এমন বন্ধু যে ওর বুকে তোমার বুক লাগিয়ে জড়িয়ে ধরতে হবে !
(দীপ্তি মানসীকে টিটকিরি দিচ্ছিল না, মজা করছিলো।)
মানসী – এবার স্বপন আসলে বলব তোমাকে জড়িয়ে ধরতে, তখন দেখে নিও ওর বুকে কি আছে।
দীপ্তি – ছেলেদের বুকে চুল ছাড়া কিছুই থাকে না। ছেলেদের অন্য জায়গায় কিছু থাকে।
মানসী – ঠিক আছে তুমি সেটাই দেখে নিও।
দীপ্তি – তুমি দেখনি কোনদিন
মানসী – স্বপন আমার বন্ধু, নোংরামি করি না ওর সাথে। কিন্তু আমরা তোমার দীপুদাকে নিয়ে কথা বলছিলাম।
দীপ্তি – এখনই ইচ্ছা করছে নাকি ?
মানসী – হ্যাঁ ইচ্ছা করছে, তোর কি ?
অনেক ইয়ার্কি আর সিরিয়াস কথার মধ্যে দীপ্তি ব্যবস্থা করে মানসী আর দীপুদার দেখা করানোর।
সেই দক্ষিণেশ্বরেই দুজনে দেখা করে। প্রথম দেখায় মানসীর খারাপ লাগে না। সেই দীপুদাও মানসীকে পছন্দ করে। দীপুদা একবারও বলে না যে মানসী কালো। বরঞ্চ কথায় কথায় মানসীর প্রসংসা করে। ওর যে এতদিন বিয়ে হয়নি সে নিয়ে অনেক দুঃখ প্রকাশও করে। মানসী আর দীপু তিন চারদিন বিভিন্ন জায়গায় দেখাও করে। দীপ্তি মানসীর পেছনে লাগতে শুরু করে দীপুদা ওকে হামি খেয়েছে কিনা। মানসী ভাবছিল স্বপনের সাথে কথা বলবে। এর পরে যেদিন মানসী আর দীপুর দেখা হয় তখন –
দীপু – কেমন আছে আমার রাঙা দিদি ?
মানসী – আপনিও আমাকে দিদি বলবেন ?
দীপু – যতদিন তুমি আমাকে ‘আপনি’ করে কথা বলবে, আমি তোমাকে দিদি বলব।
মানসী – বিয়ে হলে ‘তুমি’ করে কথা বলব।
তারপর ঘণ্টা খানেক কথা বলার পরে দীপু যা বলে তার সারাংশ হল –
দীপুর সারাদিন অফিসে কাটে। সকাল আটটায় বেরোয় আর সন্ধ্যে আটটা থেকে ন’ টার মধ্যে ফেরে। ও যতক্ষণ বাড়ীতে থাকবে ততক্ষন মানসী কোথাও যেতে পারবে না। বাড়ি ফিরে দীপু দু পেগ হুইস্কি খায়। সেই সময়টা মানসীকে দীপুর পাশে বসে থাকতে হবে। মানসীও যদি দীপুর সাথে হুইস্কি খায় তবে ওর বেশী ভাল লাগবে। আর রাত্রে ওর সাথে শুতে হবে। তা ছাড়া দীপুর জীবনে মানসীর কোন দরকার নেই।
আমি লেখক হিসাবে হয়তো ঠিক বোঝাতে পারলাম না। দীপুদা যা যা বলেছিল তাতে মানসীর কাছে এটা পরিস্কার হয় যে দীপুর একটা বৌ চাই না, ওর একটা ‘রাখেল’ আর 'টাইম পাস' চাই। বৌ বা সাথীর দরকার নেই। মানসী সেদিন ফিরে আসার পরে আর দেখা করতে যায়নি। দীপ্তিও আর কিছু বলেনি। বরঞ্চ ওরও খুব খারাপ লাগে এইরকম লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল বলে। মানসী বোঝে যে ও যেটাকে মরুদ্যান ভাবছিল সেটা আসলে মরীচিকা।
আস্তে আস্তে মানসীর বিয়ের কথা সবাই ভুলেই গেল। মানসীর বাবা বড় ছেলেকে দু একবার বলেছিলেন। ছেলে দেখছি দেখব করে কাটিয়ে যায়। একসময় মানসীর বাবাও মারা যান। উনি মারা যাবার আগে বিটি রোডের ওপর একটা ছোটো শপিং কমপ্লেক্সে মানসীর নামে একটা দোকান ঘর রেখে যান। এই দোকান ঘর নিয়ে বড়দা কিছু করতে পারেননি। আসলে মানসীর বাবা মানসীকে দোকানটা দেবার আগে বড় ছেলেকে জানানও নি। মানসী একা একাই ওখানে ওর সুলগ্না বৌদির দেওয়া টাকা দিয়ে একটা বিউটি পার্লার খোলে। পার্লারের নাম রাখে “সুলগ্না”। অবশ্য বিউটি পার্লার খোলার পরে বড়দা অনেক দাদাগিরিও করে আর সাহায্যও করে।
মানসী প্রথমেই বিউটি পার্লারের সাজসজ্জার দিকে নজর দেয়। দেয়াল করে মুক্তো সাদা রঙের ওয়াসেবল রঙ দিয়ে। বড়দা বলেছিলেন সাদা রঙ না করতে। কিন্তু সেটা মানসী শোনেনি। ও বলেছিল সাদা রঙ নোংরা হলে প্রত্যেক সপ্তাহে পরিস্কার করতে হবে। সাদা দেয়ালের কোনায় কোনায় হাল্কা নীল রঙের সরু দাগ দিয়ে ফুলের আলপনা। আয়নার ফ্রেম গাঢ় গোলাপি রঙের। সব যন্ত্রপাতি হয় সাদা বা গোলাপি রঙের। আর যত মেটাল ফিটিংস সব পেতলের তৈরি। পার্লারে ঢুকেই মনে হয় মন্দিরের মতো পবিত্র জায়গায় এলাম। পার্লার সাজানোর পরে আসে সৌন্দর্য সুন্দরী ঠিক করার পালা।
স্বপনের সাথে ফোনে আলোচনা করে মানসী কিছু মাপকাঠি তৈরি করে। আর ওই তালিকা অনুযায়ী মেয়ে খোঁজে। ওর পছন্দের মেয়েদের বিশেষত্বর তালিকা –
১। গায়ের রঙ – যেকোনো, অতিরিক্ত ফর্সা চলবে না
২। চামড়ায় কোন অসুখ থাকা চলবে না।
৩। মুখে কোন ব্রণর দাগও চলবে না।
৪। শাড়ী পড়ে কাজে আসতে হবে।
৫। শাড়ী নাভির এক ইঞ্চির বেশী নিচে পড়া যাবে না।
৬। পরিস্কার বাংলায় কথা বলতে হবে
৭। পার্লারে যতক্ষণ থাকবে সবাইকে ওর পছন্দ করা চারটে নাম ব্যবহার করবে।
৮। মুখে কোন গন্ধ থাকা চলবে না
৯। দাঁতে দাগ বা ছোপ থাকা চলবে না
১০। চুল অন্ততঃ ১৪ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে।
এই তালিকা অনুযায়ী মেয়ে খুঁজে পেতে ২০ দিন সময় লাগে। সেই মেয়েদের বিউটিসিয়ান কোর্স করা থাকলেও মানসী নিজের পয়সা খরচ করে বিভিন্ন নামী পার্লারে গ্রাহক হিসাবে পাঠায় কে কিভাবে গ্রাহক পরিসেবা দেয় সেটা জানা আর বোঝার জন্য। একটা মেয়েকে বিশেষ ভাবে তৈরি করে চুলের যত্ন নেবার জন্য। তার নাম দেওয়া হয় “অলকা”। অলকা মানে যার খুব সুন্দর বেণী। যে মেয়েটাকে চোখের যত্ন নেবার জন্য তৈরি করা হয় তার নাম দেওয়া হয় “নয়নিকা”। যে মেয়েটা স্কিনের যত্ন নেবে তার নাম দেওয়া হয় “বর্ণিকা”। আর যে মেয়েটা শরীরের মেদ কমানোয় সাহায্য করবে বা বডি ম্যাসাজ করবে তার নাম দেওয়া হয় “লতিকা”।
এই সব করতে প্রায় দু মাস সময় লাগে। শুরুতে বড়দা অনেক কিছুতেই নাক গলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানসী শুধু স্বপনের সাথেই আলোচনা করে। চারটে মেয়ে ঠিক হয়ে যাবার পড়ে স্বপন একবার দিল্লি থেকে আসে ওই মেয়েদের “Customer Satisfaction” নিয়ে ট্রেনিং দিতে। কিভাবে সারভিস দিতে হয়, কি ভাবে কথা বলতে হয়, গ্রাহক রেগে গেলে তাকে কি ভাবে সামলাতে হয়। ট্রেনিঙের আগে স্বপন সবার সাথে কথা বলে।
মানসী – এই ট্রেনিং নিয়ে কি হবে ?
স্বপন – আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি কোলকাতার কোন বিউটি পার্লারের ছেলেরা বা মেয়েরা এই রকম কোন ট্রেনিং পায়নি। ওরা অনেকেই জানেনা কি ভাবে গ্রাহক সামলাতে হয়। তুমি দেখো আমার শেখানো রাস্তায় তোমার গ্রাহক অনেক অনেক সন্তুষ্ট থাকবে।
নয়নিকা – আমরা ছোটবেলায় পড়েছিলাম “যে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে চায় সে কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারে না”।
স্বপন – একদম ঠিক। তবু এর মানে এই নয় যে সন্তুষ্ট না করতে পারলেই সে অসন্তুষ্ট হবে।
অলকা – সেটা আবার কিরকম কথা হল ?
স্বপন – ধর এক ভদ্রমহিলা তার কালো মেয়েকে নিয়ে এসে তোমাকে বলল ওকে ফর্সা করে দিতে। তুমি বললে যে তোমরা ওটা করতে পারবে না। কারন পৃথিবীতে এমন কোন ক্রীম বা অসুধ নেই যেটা খেলে বা লাগালে চামড়ার রঙ বরাবরের জন্য বদলে যাবে। সেই মহিলা তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবে না। আবার অসন্তুষ্টও হবে না। কিন্তু যদি তোমরা প্রথমদিন বলে যে ওনার মেয়ে ফর্সা হয়ে যাবে আর তিন মাস অনেক টাকা খরচ করানোর পড়ে বলবে এর বেশী কিছু হবে না, তখন গ্রাহক অসন্তুষ্ট হবে।
বর্ণিকা – একদম ঠিক কথা
স্বপন - সন্তুষ্ট গ্রাহক পাঁচটা নতুন গ্রাহক এনে দেবে। কিন্তু একটা অসন্তুষ্ট গ্রাহক ৫০ টা গ্রাহক কে তোমাদের থেকে দূরে সড়িয়ে দেবে।
লতিকা – কিন্তু ওই ‘ডেয়ার অ্যান্ড বাবলি’ ক্রীম যে এতো বিজ্ঞাপন দেয় ফর্সা হবার জন্য ? অনেক পার্লার বলে ফর্সা করে দেবে ?
স্বপন – দেখো আমি বিউটি এক্সপার্ট নই। কিন্তু আমি যতটা জানি ওই ক্রীম বা অন্যান্য যা কিছু আছে তাতে কিছু দিনের জন্য হয়তো একটু রঙের শেড বদলায়, পারমানেন্টলি কিছু হয় না। তবে আমি এটা শুধু উদাহরন হিসাবে বলেছি, তোমাদের বোঝানর জন্য। শুধু এটা মনে রাখবে গ্রাহক যা কিছু চাইবে তার ৫০% আমরা দিতে পারবো না।
নয়নিকা – তবে কি হবে ?
স্বপন – আমি সেটাই বোঝাবো। গ্রাহক বুঝতেও পারবেন না যে উনি যা চেয়েছিলএন তার ৫০% পান নি। ওনার মনে হবে ৯০% পেয়েছেন।
মানসী – কি করে ?
স্বপন – সেটাই আমি আগামি দু দিনে বোঝাবো। তোমাদের সাথে কথা বলার পরে গ্রাহকের চাহিদাই বদলে যাবে। আগে যা যা চাইছিলেন তোমাদের সাথে কথা বলার পরে তোমাদের পক্ষে যা যা সম্ভব শুধু সেইগুলোই চাইবেন।
পরের দুদিন ট্রেনিং হয়। সব মেয়েরাই খুব খুশী। জীবনে নতুন কিছু শিখলে সবাই সব সময় খুশী হয়। স্কুল বা কলেজের পরে কেউ যদি না শিখতে পারে তাতে ছাত্র যেমন দায়ী, তার শিক্ষকও তার থেকে বেশী দায়ী। শেখানোর পরে ছাত্রের কি লাভ সেটা না বুঝিয়ে আমরা শেখাতে চাই। তাই প্রায় কোন ছাত্রই ভাল করে শেখে না। যাই হোক এটা ট্রেনিং নিয়ে গল্প নয়। তাই এই আলোচনা আমরা অন্য কোথাও করবো।
মানসী – বাপরে তুমি আবার এইসব কিভাবে শিখলে ?
স্বপন – আমি আমার অফিসে নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের এই ট্রেনিং দেই।
মানসী – কিন্তু তুমি কি করে শিখলে ?
স্বপন – আমি ট্রেনিং দেবার ট্রেনিং নিয়েছি
অলকা – তবে তো আপনার বৌদিকে সামলানো খুব সোজা
স্বপন – দেখো থিওরি হিসাবে বৌও একজন গ্রাহক। কিন্তু আমি যা যা শিখেছি বা তোমাদের শিখিয়েছি তাতে বৌ বা স্বামী সামলানো যাবে না। কিছু কিছু স্বামীকে কন্ট্রোল করা গেলেও বৌ এর ওপর এই সবের কোন এফেক্ট নেই।
নয়নিকা – তবে ঠিক আছে। আমার বয় ফ্রেন্ড যদি কোনদিন এই ট্রেনিং পেয়েও যায়, আমার কিছু করতে পারবে না।
মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি ওই আনন্দেই থাকো।
বর্ণিকা – তোকে কন্ট্রোল করার ট্রেনিং শুভ কে আমি দিয়ে দেব।
নয়নিকা – একদম না। শুভর সাথে কথা বলতেই দেব না তোকে।
লতিকা – তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলব না।
বর্ণিকা – তোর ভয় নেই, আমরা শুধু কথা বলব। তোর শুভর কোথাও হাত লাগাব না।
অনেক দিন পরে মানসী নতুন অনেক কিছু শেখে। স্বপন আর চারটে মেয়ের সাথে মন খুলে আড্ডা মারে। মেয়ে চারটে চলে গেলে স্বপন, মানসীকে নিয়ে বড়দার সাথে দেখা করতে যায়। হতে পারে বড়দা স্বার্থপর আর দাদাগিরি করে। তবুও নিয়ম মত মানসীর অভিভাবক ওই বড়দাই। স্বপন বড়দাকে ওর আর মানসীর বিজনেস প্ল্যান সব কিছু বুঝিয়ে দেয়। আর অপ্রত্যক্ষ ভাবে এটাও বলে দেয় যে এটা শুধুই মানসীর ব্যবসা। স্বপন শুধু ওকে সাহায্য করছে শুরু করার সময়। স্বপন ব্যবসার কোন লাভের অংশ নেবে না। বড়দাও হাঁফ ছেড়ে বাচেন।
বড়দা – মানসী স্বপন যে যে ভাবে বলেছে, একদম সেই ভাবেই চালাবি।
মানসী – ঠিক আছে দাদা।
বড়দা – কোন কিছু হলেই স্বপনের সাথে আলোচনা করবি।
স্বপন – সেটা করতেই পারে। কিন্তু আপনারাও এতদিন ধরে অন্যান্য ব্যবসা করছেন। আপনিও ওকে গাইড করতে পারবেন।
বড়দা – এই ব্যবসা আমাদের ব্যবসার থেকে অনেক আলাদা ভাবে শুরু করছে।
স্বপন – তা হতে পারে। তবু সব ব্যবসার একটাই লক্ষ – কি ভাবে টাকা উপার্জন করবো। সেটা আপনি ভালই বোঝাতে পারবেন।
বড়দা – তা তো বটেই।
হৈ হৈ করে একটা শুভ দিন দেখে মানসীর “সুলগ্না” শুরু হয়। মোটামুটি ছ’ মাস লাগে বিউটি পার্লার দাঁড়িয়ে যেতে। এখন “সুলগ্না” ওই এলাকার যথেষ্ট পপুলার পার্লার। মানসী কালো হলেও মেয়েদের সাজায় ভাল। একজন গ্রাহক একবার ওই পার্লারে এলে সে আর অন্য কোথাও যায় না। ওই চারটে মেয়েও খুব ভাল ভাবে কাজ করে। মানসী পয়সার দিক থেকে পুরোপুরি স্বনির্ভর হয়ে যায়। কিন্তু সংসারে এখনও বড়দার অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারে না।
মানসী সকালে উঠে স্কুলে যায়। সব মেয়েরা পার্লার চালায়। স্কুল থেকে ফিরেই পার্লারে যায় আর রাত ন’ টা পর্যন্ত পার্লারেই থাকে। বেশ আনন্দেই ছিল শুধু একটা ব্যাপার ছাড়া। সেই ব্যাপারটা হল সেই বড়দার সেই দাদাগিরি। পার্লারে যা আয় হত পুরোটাই বড়দা নিয়ে নিতেন। বলতেন মানসীর ভবিস্যতের জন্য রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু কারো সাহস ছিল না জিজ্ঞাসা করার যে উনি টাকাটা কোথায় কি ভাবে রাখছেন। মানসীকে একটা নাম মাত্র হাত খরচা দিতেন। উনি বলতেন মানসীর আর কি খরচা ? খাওয়া দাওয়া বাড়ীতে। ওর কোন নেশার খরচও নেই বা অন্য কোথাও খরচ করার দরকার হয় না। তো মানসী টাকা নিয়ে কি করবে। আর একটা মেয়ে টাকার বোঝেই বা কি !
মানসী স্বনির্ভর হয় কিন্তু “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (Financial Freedom)” পায় না।
মানসীর পার্লার চালু হবার প্রায় একবছর পরে স্বপন আসে দিল্লি থেকে। মানসী খুব আনন্দের সাথে স্বপন আর নিহারিকা কে পার্লারে নিয়ে যায়। সেদিন শনিবার আর সময় দুপুরবেলা। কোন কাস্টোমার ছিল না।
মানসী – চল স্বপন আজ তোমাকে সাজাই
স্বপন – কি করবে ?
মানসী – দেখো না কি করি
স্বপন – নিজেকে আয়নায় চিনতে পারবো তো ?
অলকা আর নয়নিকা বলে যে ওদের পার্লারে ছেলেদের ভেতরে ঢোকাই নিষেধ আর সেখানে স্বপনকে ওখানে বিউটি ট্রিটমেন্ট দেবে কি করে।
মানসী – দেখো স্বপন আমার বন্ধু। আমি আজ যেখানে পৌঁছেছি সেটা স্বপন না থাকলে হত না।
স্বপন – আমি কিছুই করিনি তোমার এই পার্লারের জন্য। তোমার বাবা তোমাকে দোকান দিয়েছেন। তুমি তোমার টাকায় ব্যবসা করছ। আমি কি করলাম।
মানসী স্বপনকে জড়িয়ে ধরে আর বলে, “তোমার বন্ধুত্ব ছাড়া এই মানসীই তৈরি হত না। তাই যা কিছু আমি করি তোমার ভরসা আর তোমার দেওয়া বুদ্ধিতেই করি। আর একথা বলা বাহুল্য যে তোমার ট্রেনিং আমাদের খুব কাজে দেয়।”
স্বপন – এটা তুমি বাড়িয়ে বলছ
মানসী – তুমি যে আমার জীবনে কি সেটা শুধু আমিই জানি।
নিহারিকা – রাঙ্গাদি সেটা আমিও বুঝি।
তারপর মানসী নিজে স্বপনের ফেসিয়াল করে দেয়। মুখে, মাথায় আরও কি সব করে স্বপন সেটা বোঝে না। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কাজ করে যাচ্ছিল।
বর্ণিকা – এবার তুমি ছাড়ো দিদি, বাকিটা আমি করে দিচ্ছি
মানসী – আমার স্বপনের গায়ে তোমরা কেউ হাত দেবে না।
এই বলে সবার সামনেই মানসী স্বপনের ঠোঁটে চুমু খায়।
ওই মেয়েগুলো হতবাক হয়ে যায়, এটা আবার কিরকম বন্ধুত্ব! ওরা নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কিছু বলতে থাকে।
মানসী – এই তোরা কি বলছিস রে ?
নয়নিকা – না তুমি যে ....
মানসী – আমি যে কি ?
বর্ণিকা – তুমি যে স্বপন দা কে চুমু খেলে তাই !
মানসী – চুমু খেলাম তো কি হয়েছে ?
নয়নিকা – কখনও কোন বন্ধুকে ওইভাবে চুমু খেতে দেখিনি, তাই।
নিহারিকা – ওরা দুজন কত বছর ধরে চুমু খায়
বর্ণিকা – আর তুমি কিছু বল না ?
নিহারিকা – চুমু খায় তো কি হয়েছে ?
নয়নিকা – তোমার বরের ঠোঁটে চুমু খেল আর তুমি কিছু বলবে না ?
নিহারিকা – স্বপন আর রাঙ্গাদির বন্ধুত্ব গঙ্গা জলের মত পবিত্র। সেখানে চুমু খেলে কিচ্ছু অপবিত্র হয় না।
অলকা – আমরা বুঝতে পারিনা।
লতিকা – এর মধ্যে আবার বোঝার কি আছে। আমি প্রথম যেদিন স্বপনদাকে দেখি সেদিনই বুঝেছি যে দাদা
মানসীদি কে খুব ভালবাসে। আর ভালবাসায় চুমু খেতেই পারে।
মানসী – আমাকে স্বপনের মতো ভাল কেউ বাসে না।
বর্ণিকা – আমি নিহারিকা দিদিকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
নিহারিকা – তোমরা স্বপনকে জানোনা তাই অবাক হচ্ছো। ওর কাছেই আমি শিখেছি ভালবাসা কাকে বলে।
অলকা – ভালবাসা কাকে বলে দিদি ?
নিহারিকা – সে আমি বোঝাতে পারবো না। আমি ট্রেনিং দিতে পারি না।
বর্ণিকা – তাও তোমরা কি ভাব সেটা একটু বল
নিহারিকা – আমি কিছু বলার আগেই স্বপন বুঝে যায় যে আমি কি চাই। আমার শরীর খারাপ হলে বা অন্য কোন সমস্যা হলে আমার স্বপন আমার যে যত্ন নেয় সেইরকম আর কেউ করেনি। ধর আমি যদি গরমকালে ফুলকপি খেতে চাই তো স্বপন যেখান থেকে হোক যেভাবেই হোক জোগাড় করে আনবে। স্বপনের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য আমাকে আর আমার মেয়েকে ভাল ভাবে রাখা। ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে যে শান্তি সেটা আর কোথাও পাইনা। ও আমাকে ফুলসজ্জার রাতে যেভাবে আদর করেছিলো সো সময়েই সে ভাবেই আদর করে। আমি ওর কাছে এখন পর্যন্ত পুরানো হয়ে যাই নি।
অলকা – স্বপনদা তোমাকে I Love you বলে ?
নিহারিকা – মুখে হয়তো মাসে একবার বলে। কিন্তু ব্যবহারে দিয়ে ২৫ বার বলে
লতিকা – স্বপন দা আপনি কিছু বলুন
স্বপন – আমি কি বলব ?
লতিকা – ভালবাসা নিয়ে কিছু বলুন
স্বপন – ঠিক আছে আবার একদিন ট্রেনিং দেব। আমাকে ভালবাসার ট্রেনিং প্রোগ্রাম বানাতে দাও।
সবাই হেঁসে ওঠে।
লতিকা – না না সে দরকার নেই। এমনি বলুন।
স্বপন – মোদ্দা কথা হল তোমরা একে অন্যের Care কতটা করো। তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তবে তার জন্য Concerned থাকবে। তোমার ভালবাসার জীবন আর তোমার জীবন কখনও আলাদা হবে না।
লতিকা – বুঝলাম। আচ্ছা দাদা ভালবাসায় সেক্সের ভুমিকা কি ?
স্বপন – সেক্সের সাথে ভালবাসার সেইরকম কোন সম্পর্কই নেই। আমরা সবাই বিয়ের পরে সেক্স করি আর বাচ্চার জন্ম দেই। তাই ভাবি সেক্স আর ভালবাসা এক। অনেকেই ভাবে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে সেক্স না থাকলে ভালবাসা বেশী দিন টেঁকে না। আমাদের ভালবাসা সেক্সের ওপর নির্ভরশীল নয়।
বর্ণিকা – বিয়ের আগে সেক্স করলে ?
স্বপন – ইচ্ছা হলে করবে। কিছুই হবে না তাতে
বর্ণিকা – আপনার মেয়ে যদি বড় হয়ে বিয়ের আগে সেক্স করে ?
স্বপন – আমার মেয়ের ১৮ বছর বয়সের পরে বা কলেজের গ্রাজুয়েশনের পরে কি করবে সেটা ওর চিন্তা হবে। আমি ওর মধ্যে কিচ্ছু বলব না। ওর যদি ইচ্ছা হয় কারো সাথে সেক্স করতে তো করবে।
নিহারিকা – আর আমি চাইব সেটা এখানে ওখানে না করে আমাদের বাড়ীতে বা ছেলেটার বাড়ীতে যেন করে।
অলকা – বাপরে আমরা এইরকম চিন্তাই করতে পারি না।
নিহারিকা – সেটাই তো বলছি। স্বপনের কাছে সেক্স আর ভালবাসা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। আমিও অন্য ছেলের সাথে সেক্স করেছি। আর তোমাদের স্বপনদাও করেছে। কত জনের সাথে সেটা জানিনা। কিন্তু সেসব শুধুই সেক্স ছিল। ভালবাসা শুধু আমার আর ওর মধ্যে।
মানসী – এই সব কথা এখানে বলছিস কেন ?
নিহারিকা – আমরা আমাদের জীবনের কোন কিছুই লুকিয়ে রাখি না। তুই যে স্বপন কে জড়িয়ে ধরিস বা চুমু খাস সেটা কি লুকিয়ে রাখিস ?
মানসী – কেন লুকাবো ?
নিহারিকা – আমিও তাই বলি কেন লুকাবো ?
নয়নিকা – আজ স্বপনদার কাছে ভালবাসার অন্য মানে বুঝলাম। স্বপন দা তোমাকে একটা চুমু খেতে দেবে ?
মানসী – একদম না। আমার স্বপনের দিকে চোখ তুলেও তাকাবি না।
নয়নিকা – না দিদি কিচ্ছু করবো না। আমি শুধু তোমার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য বললাম।
মানসী – দেখ আমি নিহারিকা বা স্বপনের মতো মহান নই। আমার সামনে আমার স্বপনের গায়ে আর কাউকে হাত দিতে দেব না।
বর্ণিকা – স্বপন দা কি তোমার ?
মানসী – স্বপন প্রথমে নিহারিকার। কিন্তু তার পরে আমারও।
এতক্ষনে স্বপনের সাজুগুজু শেষ হয়ে যায়। নিহারিকা বলে দেখে একটু বেশী ভদ্র ভদ্র মনে হচ্ছে। বিকাল হয়ে গিয়েছিলো আর অন্য গ্রাহকদের আসার সময় হয়ে গিয়েছিলো। তাই সেদিনকার আড্ডা শেষ করে স্বপন রা চলে যায়। মানসীর মনে আনন্দ আর দুঃখ দুটোই থাকে।
সেদিন রাতে মানসীর ঘুম আসেনা। মানসী জানত না যে স্বপন আর নিহারিকার মধ্য সেক্সের সম্পর্ক ওইরকম খোলা মেলা। ও তখন বুঝতে পারে কোন ভরসায় পাটনায় নিহারিকা ওকে আর স্বপন কে সব কিছু করতে বলে রেখে গিয়েছিল। একবার ভাবে সেই রাতে স্বপনের সাথে সেক্স করলেই ভাল হত। তারপরেই ভাবে স্বপনরা যাদের সাথে সেক্স করে তাদের ভাল বাসে না। ও তো স্বপনকে ভালবাসে। স্বপনও ওকে ভালবাসে। আর ওদের ভালবাসার জন্য সেক্সের দরকার নেই। আর স্বপনও কোনদিন ওর মানসীর সাথে সেক্স করবে না। মানসীর মন থেকে ক্ষনিকের দুঃখটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। ও নিজের মনে বলে ওঠে, “স্বপনের ভালবাসা বোঝার জন্য আমার সেক্সের দরকার নেই। আমাদের ভালবাসায় কোনদিন সেক্স আসতেই দেব না।”
২০০০ সালে স্বপন দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরে আসে। মানসীর খুব আনন্দ যে ও ওর স্বপনকে মাঝে মাঝেই দেখতে পাবে। তখন মানসীর বয়েস ৩৮ আর স্বপনের ৪২। স্বপন কলকাতা আসার পর মোটামুটি মাসে একবার মানসীর সাথে দেখা করত। কখনও নিহারিকা সাথে থাকতো। কখনও নিহারিকা আসতো না। নিহারিকা ওর স্বপন আর রাঙ্গাদি দুজনকে নিয়েই নিশ্চিন্তে ছিল। স্বপন মানসীকে বলে যে ও ওর রাঙ্গাদির জন্য ছেলে খুঁজছে।
স্বপনের মেয়ে তখন সিক্সে পড়ে। ওর মেয়েকে প্রাইভেট টিউশন দেবার জন্য একটা লোক ঠিক করে, নাম ভাস্কর। অবিবাহিত আর বয়েস প্রায় ৪০। স্বপন ভাস্করের সম্বন্ধে একটু খোঁজ নেয়। ভালই ছেলে ছিল। দুবাইয়ে কাজ করত। বছর পাঁচেক আগে কোন কারণে দুবাই থেকে কলকাতা ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এখানে ফিরে কোন কাজ পায় নি। বাড়ির প্রবলেমে বিয়েও করতে পারেনি। গত পাঁচ বছরে যা টাকা ছিল তা প্রায় শেষ। বাবার বানানো বাড়ীতে এখন শুধু মা আর ছেলে থাকে। কখনো কোন ফার্মে অ্যাকাউন্টসের খুচ খাচ কাজ পেলে করে আর দু একটা টিউশনি করে।
কোলকাতা ফেরার পর থেকেই স্বপন আর নিহারিকা দুজনেই মানসীকে বলত এক রাত ওদের বাড়ি গিয়ে থাকতে। কিন্তু ওর পার্লার বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে আর স্কুল রবিবার ছুটি। ফলে মানসী আর আসতে পারে না। নিহারিকা এক বুধবার ওর রাঙ্গাদিকে ওদের বাড়ি আসতে বলে। জোর করে বৃহস্পতিবার মানসীকে ওর স্কুল থেকে ছুটি নেওয়ায়। স্বপন বুধবার রাতে অফিস থেকে মানসীদের বাড়ি যায়। বড়দাকে জানায় মানসীকে ওদের বাড়ি নিয়ে যাবার কথা।
বড়দা – তুমি তোমার বন্ধুকে তোমার বাড়ি নিয়ে যাবে তাতে আমার অনুমতির কি দরকার।
স্বপন – আপনি মানসীর অভিভাবক। আপনাকে না বলে আমি রাঙ্গাদিকে নিয়ে যেতে পারি না।
বড়দা – তা তো বটেই। মানসী স্বপনের সাথে যাও। আর দেখবে তোমার জন্য যেন ওদের কোন অসুবিধা না হয়।
মানসী – ঠিক আছে বড়দা।
বড়দা চলে যান। আর সাথে সাথে দীপ্তি আর ওর বৌদি আসে। এসেই দীপ্তি মানসীর পেছনে লাগতে শুরু করে।
দীপ্তি – রাঙ্গাদি তুমি কি করে যাবে ?
মানসী – কেন স্বপনের মোটর সাইকেলের পেছনে বসে যাব
দীপ্তি – তুমি কোনদিন মোটর সাইকেলের পেছনে বসেছ ?
মানসী – না বসিনি, কিন্তু তাতে কি হয়েছে ?
দীপ্তি – যদি পড়ে যাও
বৌদি – তুমি থামাও তো তোমার ইয়ার্কি
দীপ্তি – না আমি জিজ্ঞাসা করছি যে রাঙ্গাদি কি ধরে বসবে ?
মানসী – স্বপনকে ধরে বসব
দীপ্তি – দেখো আবার স্বপনদাকে ধরতে গিয়ে অন্য কিছু ধরে ফেল না
স্বপন – ধরলে কি হয়েছে ?
দীপ্তি – আমাদের রাঙ্গাদির খেয়াল আমাদেরই তো রাখতে হবে
মানসী – তোকে আমার খেয়াল রাখতে হবে না
দীপ্তি – আর স্বপনদাকে বেশী জোড়ে জড়িয়ে ধরবে না
মানসী – আমার যেভাবে খুশী বসব তোর কি ?
দীপ্তি – আমার কি, তুমি আর স্বপনদা বুঝবে
স্বপন – তোমার কি আমার সাথে একটু বসতে ইচ্ছা করছে
দীপ্তি – না বাবা আমার বসে কাজ নেই। আপনি আপনার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যান
স্বপন – হ্যাঁ আর বাড়ীতে গিয়ে আজ রাঙ্গাদিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব
মানসী – স্বপন, তুমিও ওই পাগলিটার সাথে তাল দিচ্ছ।
দীপ্তি – যাই হোক স্বপনদা রাঙ্গাদিকে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই ভাবেই ফেরত দেবেন। কোন কিছু চ্যাপটা করে দেবেন না যেন।
Tumi_je_amar-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here
মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
কাজল নদী
Written By Tumi_je_amar
Written By Tumi_je_amar
পঞ্চম পরিচ্ছদ – মরুভুমি আর মরীচিকা
(#০১)
(#০১)
কোলকাতায় ফিরে মানসী, বড়দা আর বাকি ভাই বোন সবাই যা ছিল তাই। মানসীর দিন রাত সেই একই ভাবে কেটে যেতে থাকে। এই সময় বড়দার খেয়াল হয় বোনের বিয়ে না হয় দেওয়া যাচ্ছে না দু ভাইয়ের বিয়ে দেওয়া উচিত। দুটো ভাই – একজন মানসীর বড় আর একজন মানসীর ছোটো। এক বছরের মধ্যেই দুই ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। পয়সা ওয়ালা ঘর কিন্তু কম লেখাপড়া জানা মেয়ে খুজলেন ভাইদের জন্য। বিয়ের ফাইনাল কথা বলতে উনি একাই যেতেন। ফাইনাল কথা মানে টাকার কথা। উনি মেয়ের বাবার কাছ থেকে এত লক্ষ টাকা নিলেন কিন্তু বাড়ীতে এসে সবাইকে বললেন ৫০ হাজার দেবে। বড়দা নিজের ভাইদের বিয়েতেও কমিশন নিলেন। সরকারি কর্মচারী – ৩০ বছরের অভ্যেস কি ভাবে ছাড়বেন !
মানসীর দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন আসে। এখন সৃজা ১২ এ পড়ে। ওর পেছনে খুব বেশী সময় লাগেনা। সকালে বা রাত্রে রান্না ঘরেও যেতে হয় না। রান্নার কাজ ওর বৌদি আর ভাইয়ের বৌ করে।
স্বপন তখন পাটনা থেকে দিল্লি চলে গেছে। মানসীর দাদার বিয়েতে স্বপন এসেছিলো কিন্তু ওর ভাইয়ের বিয়ের সময় আসতে পারে নি। তখন ফেসবুক বা মোবাইল কোনটাই ছিল না। ফলে দুই বন্ধুর কথা খুব কমই হত।
ওর ভায়ের বিয়েতে একটা ছেলে (আসলে লোক, ৪০ এর বেশী বয়েস) এসেছিলো। তার মানসীকে দেখে পছন্দ হয়। তিনি মানসীর ভায়ের বৌ দীপ্তিকে বলেন। দীপ্তি বড়দাকে বলে। মানসীও শোনে। বড়দা খুব একটা আগ্রহ দেখান না। এই সময়ে মানসী নিজে উদ্যোগ নেয় নিজের বিয়ের। ও দীপ্তর সাথে কথা বলে।
মানসী – দীপ্তি তোমার সেই লোকটা তোমার কে হয় ?
দীপ্তি – কোন লোকটা ?
মানসী – যার আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছে ?
দীপ্তি – দেখা করবে তার সাথে ?
মানসী – আগে বল সে তোমার কে হয় ?
দীপ্তি – আমার এক বৌদির মাসতুতো দাদা।
মানসী – কি করে ?
দীপ্তি – দীপু দা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে। ছেলে বিষ্ণুপুরে বোর্ডিং স্কুলে পড়ে। একাই থাকে। মোটামুটি পয়সা আছে।
মানসী – আমি কথা বলতে চাই
দীপ্তি – চল নিয়ে যাব।
এরপর দীপ্তি ওর স্বভাব অনুসারে মানসীর পেছনে লাগে। দীপ্তিও মানসীকে রাঙ্গাদি বলেই ডাকতো।
দীপ্তি – রাঙা দি মনের মধ্যে একটু হাওয়া খেলছে ?
মানসী – হাওয়া খেলার কি আছে ?
দীপ্তি – না তোমার মুখে স্বপন ছাড়া আর কোন ছেলের কথা শুনিনি তো তাই।
মানসী – তুমি স্বপনকে দেখনি তাই এইরকম বলছ
দীপ্তি – শুনেছি ও তোমাকে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে
মানসী – হ্যাঁ ধরে তো, ও আমার বন্ধু। কি হয়েছে তাতে ?
দীপ্তি – বাপরে কি এমন বন্ধু যে ওর বুকে তোমার বুক লাগিয়ে জড়িয়ে ধরতে হবে !
(দীপ্তি মানসীকে টিটকিরি দিচ্ছিল না, মজা করছিলো।)
মানসী – এবার স্বপন আসলে বলব তোমাকে জড়িয়ে ধরতে, তখন দেখে নিও ওর বুকে কি আছে।
দীপ্তি – ছেলেদের বুকে চুল ছাড়া কিছুই থাকে না। ছেলেদের অন্য জায়গায় কিছু থাকে।
মানসী – ঠিক আছে তুমি সেটাই দেখে নিও।
দীপ্তি – তুমি দেখনি কোনদিন
মানসী – স্বপন আমার বন্ধু, নোংরামি করি না ওর সাথে। কিন্তু আমরা তোমার দীপুদাকে নিয়ে কথা বলছিলাম।
দীপ্তি – এখনই ইচ্ছা করছে নাকি ?
মানসী – হ্যাঁ ইচ্ছা করছে, তোর কি ?
অনেক ইয়ার্কি আর সিরিয়াস কথার মধ্যে দীপ্তি ব্যবস্থা করে মানসী আর দীপুদার দেখা করানোর।
(#০২)
সেই দক্ষিণেশ্বরেই দুজনে দেখা করে। প্রথম দেখায় মানসীর খারাপ লাগে না। সেই দীপুদাও মানসীকে পছন্দ করে। দীপুদা একবারও বলে না যে মানসী কালো। বরঞ্চ কথায় কথায় মানসীর প্রসংসা করে। ওর যে এতদিন বিয়ে হয়নি সে নিয়ে অনেক দুঃখ প্রকাশও করে। মানসী আর দীপু তিন চারদিন বিভিন্ন জায়গায় দেখাও করে। দীপ্তি মানসীর পেছনে লাগতে শুরু করে দীপুদা ওকে হামি খেয়েছে কিনা। মানসী ভাবছিল স্বপনের সাথে কথা বলবে। এর পরে যেদিন মানসী আর দীপুর দেখা হয় তখন –
দীপু – কেমন আছে আমার রাঙা দিদি ?
মানসী – আপনিও আমাকে দিদি বলবেন ?
দীপু – যতদিন তুমি আমাকে ‘আপনি’ করে কথা বলবে, আমি তোমাকে দিদি বলব।
মানসী – বিয়ে হলে ‘তুমি’ করে কথা বলব।
তারপর ঘণ্টা খানেক কথা বলার পরে দীপু যা বলে তার সারাংশ হল –
দীপুর সারাদিন অফিসে কাটে। সকাল আটটায় বেরোয় আর সন্ধ্যে আটটা থেকে ন’ টার মধ্যে ফেরে। ও যতক্ষণ বাড়ীতে থাকবে ততক্ষন মানসী কোথাও যেতে পারবে না। বাড়ি ফিরে দীপু দু পেগ হুইস্কি খায়। সেই সময়টা মানসীকে দীপুর পাশে বসে থাকতে হবে। মানসীও যদি দীপুর সাথে হুইস্কি খায় তবে ওর বেশী ভাল লাগবে। আর রাত্রে ওর সাথে শুতে হবে। তা ছাড়া দীপুর জীবনে মানসীর কোন দরকার নেই।
আমি লেখক হিসাবে হয়তো ঠিক বোঝাতে পারলাম না। দীপুদা যা যা বলেছিল তাতে মানসীর কাছে এটা পরিস্কার হয় যে দীপুর একটা বৌ চাই না, ওর একটা ‘রাখেল’ আর 'টাইম পাস' চাই। বৌ বা সাথীর দরকার নেই। মানসী সেদিন ফিরে আসার পরে আর দেখা করতে যায়নি। দীপ্তিও আর কিছু বলেনি। বরঞ্চ ওরও খুব খারাপ লাগে এইরকম লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল বলে। মানসী বোঝে যে ও যেটাকে মরুদ্যান ভাবছিল সেটা আসলে মরীচিকা।
আস্তে আস্তে মানসীর বিয়ের কথা সবাই ভুলেই গেল। মানসীর বাবা বড় ছেলেকে দু একবার বলেছিলেন। ছেলে দেখছি দেখব করে কাটিয়ে যায়। একসময় মানসীর বাবাও মারা যান। উনি মারা যাবার আগে বিটি রোডের ওপর একটা ছোটো শপিং কমপ্লেক্সে মানসীর নামে একটা দোকান ঘর রেখে যান। এই দোকান ঘর নিয়ে বড়দা কিছু করতে পারেননি। আসলে মানসীর বাবা মানসীকে দোকানটা দেবার আগে বড় ছেলেকে জানানও নি। মানসী একা একাই ওখানে ওর সুলগ্না বৌদির দেওয়া টাকা দিয়ে একটা বিউটি পার্লার খোলে। পার্লারের নাম রাখে “সুলগ্না”। অবশ্য বিউটি পার্লার খোলার পরে বড়দা অনেক দাদাগিরিও করে আর সাহায্যও করে।
(#০৩)
মানসী প্রথমেই বিউটি পার্লারের সাজসজ্জার দিকে নজর দেয়। দেয়াল করে মুক্তো সাদা রঙের ওয়াসেবল রঙ দিয়ে। বড়দা বলেছিলেন সাদা রঙ না করতে। কিন্তু সেটা মানসী শোনেনি। ও বলেছিল সাদা রঙ নোংরা হলে প্রত্যেক সপ্তাহে পরিস্কার করতে হবে। সাদা দেয়ালের কোনায় কোনায় হাল্কা নীল রঙের সরু দাগ দিয়ে ফুলের আলপনা। আয়নার ফ্রেম গাঢ় গোলাপি রঙের। সব যন্ত্রপাতি হয় সাদা বা গোলাপি রঙের। আর যত মেটাল ফিটিংস সব পেতলের তৈরি। পার্লারে ঢুকেই মনে হয় মন্দিরের মতো পবিত্র জায়গায় এলাম। পার্লার সাজানোর পরে আসে সৌন্দর্য সুন্দরী ঠিক করার পালা।
স্বপনের সাথে ফোনে আলোচনা করে মানসী কিছু মাপকাঠি তৈরি করে। আর ওই তালিকা অনুযায়ী মেয়ে খোঁজে। ওর পছন্দের মেয়েদের বিশেষত্বর তালিকা –
১। গায়ের রঙ – যেকোনো, অতিরিক্ত ফর্সা চলবে না
২। চামড়ায় কোন অসুখ থাকা চলবে না।
৩। মুখে কোন ব্রণর দাগও চলবে না।
৪। শাড়ী পড়ে কাজে আসতে হবে।
৫। শাড়ী নাভির এক ইঞ্চির বেশী নিচে পড়া যাবে না।
৬। পরিস্কার বাংলায় কথা বলতে হবে
৭। পার্লারে যতক্ষণ থাকবে সবাইকে ওর পছন্দ করা চারটে নাম ব্যবহার করবে।
৮। মুখে কোন গন্ধ থাকা চলবে না
৯। দাঁতে দাগ বা ছোপ থাকা চলবে না
১০। চুল অন্ততঃ ১৪ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে।
এই তালিকা অনুযায়ী মেয়ে খুঁজে পেতে ২০ দিন সময় লাগে। সেই মেয়েদের বিউটিসিয়ান কোর্স করা থাকলেও মানসী নিজের পয়সা খরচ করে বিভিন্ন নামী পার্লারে গ্রাহক হিসাবে পাঠায় কে কিভাবে গ্রাহক পরিসেবা দেয় সেটা জানা আর বোঝার জন্য। একটা মেয়েকে বিশেষ ভাবে তৈরি করে চুলের যত্ন নেবার জন্য। তার নাম দেওয়া হয় “অলকা”। অলকা মানে যার খুব সুন্দর বেণী। যে মেয়েটাকে চোখের যত্ন নেবার জন্য তৈরি করা হয় তার নাম দেওয়া হয় “নয়নিকা”। যে মেয়েটা স্কিনের যত্ন নেবে তার নাম দেওয়া হয় “বর্ণিকা”। আর যে মেয়েটা শরীরের মেদ কমানোয় সাহায্য করবে বা বডি ম্যাসাজ করবে তার নাম দেওয়া হয় “লতিকা”।
(#০৪)
এই সব করতে প্রায় দু মাস সময় লাগে। শুরুতে বড়দা অনেক কিছুতেই নাক গলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানসী শুধু স্বপনের সাথেই আলোচনা করে। চারটে মেয়ে ঠিক হয়ে যাবার পড়ে স্বপন একবার দিল্লি থেকে আসে ওই মেয়েদের “Customer Satisfaction” নিয়ে ট্রেনিং দিতে। কিভাবে সারভিস দিতে হয়, কি ভাবে কথা বলতে হয়, গ্রাহক রেগে গেলে তাকে কি ভাবে সামলাতে হয়। ট্রেনিঙের আগে স্বপন সবার সাথে কথা বলে।
মানসী – এই ট্রেনিং নিয়ে কি হবে ?
স্বপন – আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি কোলকাতার কোন বিউটি পার্লারের ছেলেরা বা মেয়েরা এই রকম কোন ট্রেনিং পায়নি। ওরা অনেকেই জানেনা কি ভাবে গ্রাহক সামলাতে হয়। তুমি দেখো আমার শেখানো রাস্তায় তোমার গ্রাহক অনেক অনেক সন্তুষ্ট থাকবে।
নয়নিকা – আমরা ছোটবেলায় পড়েছিলাম “যে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে চায় সে কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারে না”।
স্বপন – একদম ঠিক। তবু এর মানে এই নয় যে সন্তুষ্ট না করতে পারলেই সে অসন্তুষ্ট হবে।
অলকা – সেটা আবার কিরকম কথা হল ?
স্বপন – ধর এক ভদ্রমহিলা তার কালো মেয়েকে নিয়ে এসে তোমাকে বলল ওকে ফর্সা করে দিতে। তুমি বললে যে তোমরা ওটা করতে পারবে না। কারন পৃথিবীতে এমন কোন ক্রীম বা অসুধ নেই যেটা খেলে বা লাগালে চামড়ার রঙ বরাবরের জন্য বদলে যাবে। সেই মহিলা তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবে না। আবার অসন্তুষ্টও হবে না। কিন্তু যদি তোমরা প্রথমদিন বলে যে ওনার মেয়ে ফর্সা হয়ে যাবে আর তিন মাস অনেক টাকা খরচ করানোর পড়ে বলবে এর বেশী কিছু হবে না, তখন গ্রাহক অসন্তুষ্ট হবে।
বর্ণিকা – একদম ঠিক কথা
স্বপন - সন্তুষ্ট গ্রাহক পাঁচটা নতুন গ্রাহক এনে দেবে। কিন্তু একটা অসন্তুষ্ট গ্রাহক ৫০ টা গ্রাহক কে তোমাদের থেকে দূরে সড়িয়ে দেবে।
লতিকা – কিন্তু ওই ‘ডেয়ার অ্যান্ড বাবলি’ ক্রীম যে এতো বিজ্ঞাপন দেয় ফর্সা হবার জন্য ? অনেক পার্লার বলে ফর্সা করে দেবে ?
স্বপন – দেখো আমি বিউটি এক্সপার্ট নই। কিন্তু আমি যতটা জানি ওই ক্রীম বা অন্যান্য যা কিছু আছে তাতে কিছু দিনের জন্য হয়তো একটু রঙের শেড বদলায়, পারমানেন্টলি কিছু হয় না। তবে আমি এটা শুধু উদাহরন হিসাবে বলেছি, তোমাদের বোঝানর জন্য। শুধু এটা মনে রাখবে গ্রাহক যা কিছু চাইবে তার ৫০% আমরা দিতে পারবো না।
নয়নিকা – তবে কি হবে ?
স্বপন – আমি সেটাই বোঝাবো। গ্রাহক বুঝতেও পারবেন না যে উনি যা চেয়েছিলএন তার ৫০% পান নি। ওনার মনে হবে ৯০% পেয়েছেন।
মানসী – কি করে ?
স্বপন – সেটাই আমি আগামি দু দিনে বোঝাবো। তোমাদের সাথে কথা বলার পরে গ্রাহকের চাহিদাই বদলে যাবে। আগে যা যা চাইছিলেন তোমাদের সাথে কথা বলার পরে তোমাদের পক্ষে যা যা সম্ভব শুধু সেইগুলোই চাইবেন।
(#০৫)
পরের দুদিন ট্রেনিং হয়। সব মেয়েরাই খুব খুশী। জীবনে নতুন কিছু শিখলে সবাই সব সময় খুশী হয়। স্কুল বা কলেজের পরে কেউ যদি না শিখতে পারে তাতে ছাত্র যেমন দায়ী, তার শিক্ষকও তার থেকে বেশী দায়ী। শেখানোর পরে ছাত্রের কি লাভ সেটা না বুঝিয়ে আমরা শেখাতে চাই। তাই প্রায় কোন ছাত্রই ভাল করে শেখে না। যাই হোক এটা ট্রেনিং নিয়ে গল্প নয়। তাই এই আলোচনা আমরা অন্য কোথাও করবো।
মানসী – বাপরে তুমি আবার এইসব কিভাবে শিখলে ?
স্বপন – আমি আমার অফিসে নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের এই ট্রেনিং দেই।
মানসী – কিন্তু তুমি কি করে শিখলে ?
স্বপন – আমি ট্রেনিং দেবার ট্রেনিং নিয়েছি
অলকা – তবে তো আপনার বৌদিকে সামলানো খুব সোজা
স্বপন – দেখো থিওরি হিসাবে বৌও একজন গ্রাহক। কিন্তু আমি যা যা শিখেছি বা তোমাদের শিখিয়েছি তাতে বৌ বা স্বামী সামলানো যাবে না। কিছু কিছু স্বামীকে কন্ট্রোল করা গেলেও বৌ এর ওপর এই সবের কোন এফেক্ট নেই।
নয়নিকা – তবে ঠিক আছে। আমার বয় ফ্রেন্ড যদি কোনদিন এই ট্রেনিং পেয়েও যায়, আমার কিছু করতে পারবে না।
মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি ওই আনন্দেই থাকো।
বর্ণিকা – তোকে কন্ট্রোল করার ট্রেনিং শুভ কে আমি দিয়ে দেব।
নয়নিকা – একদম না। শুভর সাথে কথা বলতেই দেব না তোকে।
লতিকা – তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলব না।
বর্ণিকা – তোর ভয় নেই, আমরা শুধু কথা বলব। তোর শুভর কোথাও হাত লাগাব না।
অনেক দিন পরে মানসী নতুন অনেক কিছু শেখে। স্বপন আর চারটে মেয়ের সাথে মন খুলে আড্ডা মারে। মেয়ে চারটে চলে গেলে স্বপন, মানসীকে নিয়ে বড়দার সাথে দেখা করতে যায়। হতে পারে বড়দা স্বার্থপর আর দাদাগিরি করে। তবুও নিয়ম মত মানসীর অভিভাবক ওই বড়দাই। স্বপন বড়দাকে ওর আর মানসীর বিজনেস প্ল্যান সব কিছু বুঝিয়ে দেয়। আর অপ্রত্যক্ষ ভাবে এটাও বলে দেয় যে এটা শুধুই মানসীর ব্যবসা। স্বপন শুধু ওকে সাহায্য করছে শুরু করার সময়। স্বপন ব্যবসার কোন লাভের অংশ নেবে না। বড়দাও হাঁফ ছেড়ে বাচেন।
বড়দা – মানসী স্বপন যে যে ভাবে বলেছে, একদম সেই ভাবেই চালাবি।
মানসী – ঠিক আছে দাদা।
বড়দা – কোন কিছু হলেই স্বপনের সাথে আলোচনা করবি।
স্বপন – সেটা করতেই পারে। কিন্তু আপনারাও এতদিন ধরে অন্যান্য ব্যবসা করছেন। আপনিও ওকে গাইড করতে পারবেন।
বড়দা – এই ব্যবসা আমাদের ব্যবসার থেকে অনেক আলাদা ভাবে শুরু করছে।
স্বপন – তা হতে পারে। তবু সব ব্যবসার একটাই লক্ষ – কি ভাবে টাকা উপার্জন করবো। সেটা আপনি ভালই বোঝাতে পারবেন।
বড়দা – তা তো বটেই।
হৈ হৈ করে একটা শুভ দিন দেখে মানসীর “সুলগ্না” শুরু হয়। মোটামুটি ছ’ মাস লাগে বিউটি পার্লার দাঁড়িয়ে যেতে। এখন “সুলগ্না” ওই এলাকার যথেষ্ট পপুলার পার্লার। মানসী কালো হলেও মেয়েদের সাজায় ভাল। একজন গ্রাহক একবার ওই পার্লারে এলে সে আর অন্য কোথাও যায় না। ওই চারটে মেয়েও খুব ভাল ভাবে কাজ করে। মানসী পয়সার দিক থেকে পুরোপুরি স্বনির্ভর হয়ে যায়। কিন্তু সংসারে এখনও বড়দার অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারে না।
মানসী সকালে উঠে স্কুলে যায়। সব মেয়েরা পার্লার চালায়। স্কুল থেকে ফিরেই পার্লারে যায় আর রাত ন’ টা পর্যন্ত পার্লারেই থাকে। বেশ আনন্দেই ছিল শুধু একটা ব্যাপার ছাড়া। সেই ব্যাপারটা হল সেই বড়দার সেই দাদাগিরি। পার্লারে যা আয় হত পুরোটাই বড়দা নিয়ে নিতেন। বলতেন মানসীর ভবিস্যতের জন্য রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু কারো সাহস ছিল না জিজ্ঞাসা করার যে উনি টাকাটা কোথায় কি ভাবে রাখছেন। মানসীকে একটা নাম মাত্র হাত খরচা দিতেন। উনি বলতেন মানসীর আর কি খরচা ? খাওয়া দাওয়া বাড়ীতে। ওর কোন নেশার খরচও নেই বা অন্য কোথাও খরচ করার দরকার হয় না। তো মানসী টাকা নিয়ে কি করবে। আর একটা মেয়ে টাকার বোঝেই বা কি !
মানসী স্বনির্ভর হয় কিন্তু “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (Financial Freedom)” পায় না।
(#০৬)
মানসীর পার্লার চালু হবার প্রায় একবছর পরে স্বপন আসে দিল্লি থেকে। মানসী খুব আনন্দের সাথে স্বপন আর নিহারিকা কে পার্লারে নিয়ে যায়। সেদিন শনিবার আর সময় দুপুরবেলা। কোন কাস্টোমার ছিল না।
মানসী – চল স্বপন আজ তোমাকে সাজাই
স্বপন – কি করবে ?
মানসী – দেখো না কি করি
স্বপন – নিজেকে আয়নায় চিনতে পারবো তো ?
অলকা আর নয়নিকা বলে যে ওদের পার্লারে ছেলেদের ভেতরে ঢোকাই নিষেধ আর সেখানে স্বপনকে ওখানে বিউটি ট্রিটমেন্ট দেবে কি করে।
মানসী – দেখো স্বপন আমার বন্ধু। আমি আজ যেখানে পৌঁছেছি সেটা স্বপন না থাকলে হত না।
স্বপন – আমি কিছুই করিনি তোমার এই পার্লারের জন্য। তোমার বাবা তোমাকে দোকান দিয়েছেন। তুমি তোমার টাকায় ব্যবসা করছ। আমি কি করলাম।
মানসী স্বপনকে জড়িয়ে ধরে আর বলে, “তোমার বন্ধুত্ব ছাড়া এই মানসীই তৈরি হত না। তাই যা কিছু আমি করি তোমার ভরসা আর তোমার দেওয়া বুদ্ধিতেই করি। আর একথা বলা বাহুল্য যে তোমার ট্রেনিং আমাদের খুব কাজে দেয়।”
স্বপন – এটা তুমি বাড়িয়ে বলছ
মানসী – তুমি যে আমার জীবনে কি সেটা শুধু আমিই জানি।
নিহারিকা – রাঙ্গাদি সেটা আমিও বুঝি।
তারপর মানসী নিজে স্বপনের ফেসিয়াল করে দেয়। মুখে, মাথায় আরও কি সব করে স্বপন সেটা বোঝে না। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কাজ করে যাচ্ছিল।
বর্ণিকা – এবার তুমি ছাড়ো দিদি, বাকিটা আমি করে দিচ্ছি
মানসী – আমার স্বপনের গায়ে তোমরা কেউ হাত দেবে না।
এই বলে সবার সামনেই মানসী স্বপনের ঠোঁটে চুমু খায়।
ওই মেয়েগুলো হতবাক হয়ে যায়, এটা আবার কিরকম বন্ধুত্ব! ওরা নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কিছু বলতে থাকে।
মানসী – এই তোরা কি বলছিস রে ?
নয়নিকা – না তুমি যে ....
মানসী – আমি যে কি ?
বর্ণিকা – তুমি যে স্বপন দা কে চুমু খেলে তাই !
মানসী – চুমু খেলাম তো কি হয়েছে ?
নয়নিকা – কখনও কোন বন্ধুকে ওইভাবে চুমু খেতে দেখিনি, তাই।
নিহারিকা – ওরা দুজন কত বছর ধরে চুমু খায়
বর্ণিকা – আর তুমি কিছু বল না ?
নিহারিকা – চুমু খায় তো কি হয়েছে ?
নয়নিকা – তোমার বরের ঠোঁটে চুমু খেল আর তুমি কিছু বলবে না ?
নিহারিকা – স্বপন আর রাঙ্গাদির বন্ধুত্ব গঙ্গা জলের মত পবিত্র। সেখানে চুমু খেলে কিচ্ছু অপবিত্র হয় না।
অলকা – আমরা বুঝতে পারিনা।
লতিকা – এর মধ্যে আবার বোঝার কি আছে। আমি প্রথম যেদিন স্বপনদাকে দেখি সেদিনই বুঝেছি যে দাদা
মানসীদি কে খুব ভালবাসে। আর ভালবাসায় চুমু খেতেই পারে।
মানসী – আমাকে স্বপনের মতো ভাল কেউ বাসে না।
বর্ণিকা – আমি নিহারিকা দিদিকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
নিহারিকা – তোমরা স্বপনকে জানোনা তাই অবাক হচ্ছো। ওর কাছেই আমি শিখেছি ভালবাসা কাকে বলে।
অলকা – ভালবাসা কাকে বলে দিদি ?
(#০৭)
নিহারিকা – সে আমি বোঝাতে পারবো না। আমি ট্রেনিং দিতে পারি না।
বর্ণিকা – তাও তোমরা কি ভাব সেটা একটু বল
নিহারিকা – আমি কিছু বলার আগেই স্বপন বুঝে যায় যে আমি কি চাই। আমার শরীর খারাপ হলে বা অন্য কোন সমস্যা হলে আমার স্বপন আমার যে যত্ন নেয় সেইরকম আর কেউ করেনি। ধর আমি যদি গরমকালে ফুলকপি খেতে চাই তো স্বপন যেখান থেকে হোক যেভাবেই হোক জোগাড় করে আনবে। স্বপনের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য আমাকে আর আমার মেয়েকে ভাল ভাবে রাখা। ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে যে শান্তি সেটা আর কোথাও পাইনা। ও আমাকে ফুলসজ্জার রাতে যেভাবে আদর করেছিলো সো সময়েই সে ভাবেই আদর করে। আমি ওর কাছে এখন পর্যন্ত পুরানো হয়ে যাই নি।
অলকা – স্বপনদা তোমাকে I Love you বলে ?
নিহারিকা – মুখে হয়তো মাসে একবার বলে। কিন্তু ব্যবহারে দিয়ে ২৫ বার বলে
লতিকা – স্বপন দা আপনি কিছু বলুন
স্বপন – আমি কি বলব ?
লতিকা – ভালবাসা নিয়ে কিছু বলুন
স্বপন – ঠিক আছে আবার একদিন ট্রেনিং দেব। আমাকে ভালবাসার ট্রেনিং প্রোগ্রাম বানাতে দাও।
সবাই হেঁসে ওঠে।
লতিকা – না না সে দরকার নেই। এমনি বলুন।
স্বপন – মোদ্দা কথা হল তোমরা একে অন্যের Care কতটা করো। তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তবে তার জন্য Concerned থাকবে। তোমার ভালবাসার জীবন আর তোমার জীবন কখনও আলাদা হবে না।
লতিকা – বুঝলাম। আচ্ছা দাদা ভালবাসায় সেক্সের ভুমিকা কি ?
স্বপন – সেক্সের সাথে ভালবাসার সেইরকম কোন সম্পর্কই নেই। আমরা সবাই বিয়ের পরে সেক্স করি আর বাচ্চার জন্ম দেই। তাই ভাবি সেক্স আর ভালবাসা এক। অনেকেই ভাবে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে সেক্স না থাকলে ভালবাসা বেশী দিন টেঁকে না। আমাদের ভালবাসা সেক্সের ওপর নির্ভরশীল নয়।
বর্ণিকা – বিয়ের আগে সেক্স করলে ?
স্বপন – ইচ্ছা হলে করবে। কিছুই হবে না তাতে
বর্ণিকা – আপনার মেয়ে যদি বড় হয়ে বিয়ের আগে সেক্স করে ?
স্বপন – আমার মেয়ের ১৮ বছর বয়সের পরে বা কলেজের গ্রাজুয়েশনের পরে কি করবে সেটা ওর চিন্তা হবে। আমি ওর মধ্যে কিচ্ছু বলব না। ওর যদি ইচ্ছা হয় কারো সাথে সেক্স করতে তো করবে।
নিহারিকা – আর আমি চাইব সেটা এখানে ওখানে না করে আমাদের বাড়ীতে বা ছেলেটার বাড়ীতে যেন করে।
অলকা – বাপরে আমরা এইরকম চিন্তাই করতে পারি না।
নিহারিকা – সেটাই তো বলছি। স্বপনের কাছে সেক্স আর ভালবাসা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। আমিও অন্য ছেলের সাথে সেক্স করেছি। আর তোমাদের স্বপনদাও করেছে। কত জনের সাথে সেটা জানিনা। কিন্তু সেসব শুধুই সেক্স ছিল। ভালবাসা শুধু আমার আর ওর মধ্যে।
মানসী – এই সব কথা এখানে বলছিস কেন ?
নিহারিকা – আমরা আমাদের জীবনের কোন কিছুই লুকিয়ে রাখি না। তুই যে স্বপন কে জড়িয়ে ধরিস বা চুমু খাস সেটা কি লুকিয়ে রাখিস ?
মানসী – কেন লুকাবো ?
নিহারিকা – আমিও তাই বলি কেন লুকাবো ?
নয়নিকা – আজ স্বপনদার কাছে ভালবাসার অন্য মানে বুঝলাম। স্বপন দা তোমাকে একটা চুমু খেতে দেবে ?
মানসী – একদম না। আমার স্বপনের দিকে চোখ তুলেও তাকাবি না।
নয়নিকা – না দিদি কিচ্ছু করবো না। আমি শুধু তোমার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য বললাম।
মানসী – দেখ আমি নিহারিকা বা স্বপনের মতো মহান নই। আমার সামনে আমার স্বপনের গায়ে আর কাউকে হাত দিতে দেব না।
বর্ণিকা – স্বপন দা কি তোমার ?
মানসী – স্বপন প্রথমে নিহারিকার। কিন্তু তার পরে আমারও।
এতক্ষনে স্বপনের সাজুগুজু শেষ হয়ে যায়। নিহারিকা বলে দেখে একটু বেশী ভদ্র ভদ্র মনে হচ্ছে। বিকাল হয়ে গিয়েছিলো আর অন্য গ্রাহকদের আসার সময় হয়ে গিয়েছিলো। তাই সেদিনকার আড্ডা শেষ করে স্বপন রা চলে যায়। মানসীর মনে আনন্দ আর দুঃখ দুটোই থাকে।
সেদিন রাতে মানসীর ঘুম আসেনা। মানসী জানত না যে স্বপন আর নিহারিকার মধ্য সেক্সের সম্পর্ক ওইরকম খোলা মেলা। ও তখন বুঝতে পারে কোন ভরসায় পাটনায় নিহারিকা ওকে আর স্বপন কে সব কিছু করতে বলে রেখে গিয়েছিল। একবার ভাবে সেই রাতে স্বপনের সাথে সেক্স করলেই ভাল হত। তারপরেই ভাবে স্বপনরা যাদের সাথে সেক্স করে তাদের ভাল বাসে না। ও তো স্বপনকে ভালবাসে। স্বপনও ওকে ভালবাসে। আর ওদের ভালবাসার জন্য সেক্সের দরকার নেই। আর স্বপনও কোনদিন ওর মানসীর সাথে সেক্স করবে না। মানসীর মন থেকে ক্ষনিকের দুঃখটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। ও নিজের মনে বলে ওঠে, “স্বপনের ভালবাসা বোঝার জন্য আমার সেক্সের দরকার নেই। আমাদের ভালবাসায় কোনদিন সেক্স আসতেই দেব না।”
(#০৮)
২০০০ সালে স্বপন দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরে আসে। মানসীর খুব আনন্দ যে ও ওর স্বপনকে মাঝে মাঝেই দেখতে পাবে। তখন মানসীর বয়েস ৩৮ আর স্বপনের ৪২। স্বপন কলকাতা আসার পর মোটামুটি মাসে একবার মানসীর সাথে দেখা করত। কখনও নিহারিকা সাথে থাকতো। কখনও নিহারিকা আসতো না। নিহারিকা ওর স্বপন আর রাঙ্গাদি দুজনকে নিয়েই নিশ্চিন্তে ছিল। স্বপন মানসীকে বলে যে ও ওর রাঙ্গাদির জন্য ছেলে খুঁজছে।
স্বপনের মেয়ে তখন সিক্সে পড়ে। ওর মেয়েকে প্রাইভেট টিউশন দেবার জন্য একটা লোক ঠিক করে, নাম ভাস্কর। অবিবাহিত আর বয়েস প্রায় ৪০। স্বপন ভাস্করের সম্বন্ধে একটু খোঁজ নেয়। ভালই ছেলে ছিল। দুবাইয়ে কাজ করত। বছর পাঁচেক আগে কোন কারণে দুবাই থেকে কলকাতা ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এখানে ফিরে কোন কাজ পায় নি। বাড়ির প্রবলেমে বিয়েও করতে পারেনি। গত পাঁচ বছরে যা টাকা ছিল তা প্রায় শেষ। বাবার বানানো বাড়ীতে এখন শুধু মা আর ছেলে থাকে। কখনো কোন ফার্মে অ্যাকাউন্টসের খুচ খাচ কাজ পেলে করে আর দু একটা টিউশনি করে।
কোলকাতা ফেরার পর থেকেই স্বপন আর নিহারিকা দুজনেই মানসীকে বলত এক রাত ওদের বাড়ি গিয়ে থাকতে। কিন্তু ওর পার্লার বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে আর স্কুল রবিবার ছুটি। ফলে মানসী আর আসতে পারে না। নিহারিকা এক বুধবার ওর রাঙ্গাদিকে ওদের বাড়ি আসতে বলে। জোর করে বৃহস্পতিবার মানসীকে ওর স্কুল থেকে ছুটি নেওয়ায়। স্বপন বুধবার রাতে অফিস থেকে মানসীদের বাড়ি যায়। বড়দাকে জানায় মানসীকে ওদের বাড়ি নিয়ে যাবার কথা।
বড়দা – তুমি তোমার বন্ধুকে তোমার বাড়ি নিয়ে যাবে তাতে আমার অনুমতির কি দরকার।
স্বপন – আপনি মানসীর অভিভাবক। আপনাকে না বলে আমি রাঙ্গাদিকে নিয়ে যেতে পারি না।
বড়দা – তা তো বটেই। মানসী স্বপনের সাথে যাও। আর দেখবে তোমার জন্য যেন ওদের কোন অসুবিধা না হয়।
মানসী – ঠিক আছে বড়দা।
বড়দা চলে যান। আর সাথে সাথে দীপ্তি আর ওর বৌদি আসে। এসেই দীপ্তি মানসীর পেছনে লাগতে শুরু করে।
দীপ্তি – রাঙ্গাদি তুমি কি করে যাবে ?
মানসী – কেন স্বপনের মোটর সাইকেলের পেছনে বসে যাব
দীপ্তি – তুমি কোনদিন মোটর সাইকেলের পেছনে বসেছ ?
মানসী – না বসিনি, কিন্তু তাতে কি হয়েছে ?
দীপ্তি – যদি পড়ে যাও
বৌদি – তুমি থামাও তো তোমার ইয়ার্কি
দীপ্তি – না আমি জিজ্ঞাসা করছি যে রাঙ্গাদি কি ধরে বসবে ?
মানসী – স্বপনকে ধরে বসব
দীপ্তি – দেখো আবার স্বপনদাকে ধরতে গিয়ে অন্য কিছু ধরে ফেল না
স্বপন – ধরলে কি হয়েছে ?
দীপ্তি – আমাদের রাঙ্গাদির খেয়াল আমাদেরই তো রাখতে হবে
মানসী – তোকে আমার খেয়াল রাখতে হবে না
দীপ্তি – আর স্বপনদাকে বেশী জোড়ে জড়িয়ে ধরবে না
মানসী – আমার যেভাবে খুশী বসব তোর কি ?
দীপ্তি – আমার কি, তুমি আর স্বপনদা বুঝবে
স্বপন – তোমার কি আমার সাথে একটু বসতে ইচ্ছা করছে
দীপ্তি – না বাবা আমার বসে কাজ নেই। আপনি আপনার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যান
স্বপন – হ্যাঁ আর বাড়ীতে গিয়ে আজ রাঙ্গাদিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব
মানসী – স্বপন, তুমিও ওই পাগলিটার সাথে তাল দিচ্ছ।
দীপ্তি – যাই হোক স্বপনদা রাঙ্গাদিকে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই ভাবেই ফেরত দেবেন। কোন কিছু চ্যাপটা করে দেবেন না যেন।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
Tumi_je_amar-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereTumi_je_amar-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment