আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
নিয়তির স্রোতস্বিনী
Written By SS_Sexy
Written By SS_Sexy
(#২৫)
আমার চোখ দিয়েও কয়েক ফোঁটা জল বেরিয়ে এসেছিল। বিজলীমাসি তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে নিজের চোখের কোল দুটোও মুছে নিয়ে বলল, "আমরা হলাম বেশ্যামাগি। আমাদের মধ্যে এত মায়া মমতা থাকতে নেই। আমাদের ধর্মই হল আমাদের শরীর বেচে পুরুষ মানুষগুলোকে সুখ দেওয়া। সেখানে মা, মেয়ে, বোন, দিদি, বৌদি, কাকি, মাসি জেঠি এসব সম্পর্ক অর্থহীন। বাসন্তীও যেমন মাগি, তেমনি তার মা এই শ্যামলীও একটা মাগি। তুই আর আমিও একই রকম মাগি। আর সব মাগিদেরই একটাই কাজ। হাজার পুরুষকে শরীরের সুখ দেওয়া। আমরা কেউ কাউকে আলাদা চোখে দেখি না। কিন্তু বিশ্বাস কর মিনু। মা তোকে ব্যবসার জন্য কিনলেও তোকে কিন্তু অন্যসব মাগিদের মত সমান চোখে দেখত না। তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। অত কিছু বুঝিনি। কিন্তু এ বাড়ির দায়িত্ব আমার ওপর আসবার পর থেকে আমি তোর মার্জিত ব্যবহার দেখে অবাক হয়েছিলাম। বেশ্যারা কেউই এত মার্জিত হয় না। তখন বুঝেছিলাম তুই নিশ্চয়ই খুব ভদ্রঘরের মেয়ে। ভাগ্যের ফেরে আমাদের হাতে এসে পড়েছিস। লেখাপড়াও করেছিস। বিএসসি পড়া মেয়ে। এ কি চাট্টিখানি কথা! আমাদের লাইনের মেয়েরা তো ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়বার সময়েই ধান্দায় নেমে যায়। কেউ কেউ তো একেবারেই লেখাপড়া জানে না। মা মাসিদের নোংরা সহবত দেখেই তারা বড় হয়েছে। আর সেভাবেই চলে। আর বাইরে থেকে যারা এ লাইনে নতুন আসে তাদের মধ্যেও এমন ভদ্র ঘরের মেয়ে খুব কমই থাকে। কিন্তু তুই যে তাদের সকলের থেকে আলাদা। তাই তোকে আমি সবসময় একটু অন্য চোখেই দেখি। তোর বাড়ি ঘর বা আগের জীবনের কথা তোর কাছে কখনো জানতে চাইনি আমি। জানতাম তুই তাতে শুধু কষ্টই পাবি। কিন্তু আজ আমার দু’একটা প্রশ্নের জবাব দিবি তুই?"
আমি বিজলীমাসির কথা শুনে অবাক হলেও বললাম, "বেশ জিজ্ঞেস কর মাসি। আমিও আজ তোমাকে মিথ্যে কথা বলব না। কিন্তু যেটার জবাব আমি দিতে চাইব না, সেটা আর দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস কোরনা আমায়।"
জানিনা এমন কথা কি করে বললাম তখন। দশ দশটা বছর ধরে যেসব কথা কাউকে জানাতে চাইনি সে’সব কথা বলতে আমি রাজি হলাম! মদের নেশাতেই কি?
বিজলীমাসি আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, "ঠিক আছে, তাই হবে। আচ্ছা তুই তো বারবার বলেছিস, যে রাতে গজানন তোকে তোদের বাড়ি থেকে তুলে এনেছিল সেদিনই নাকি তুই তোর মা বাবা দাদাদের হারিয়েছিস। কিন্তু এই হারিয়ে যাওয়াটা ঠিক কী ধরণের রে? তারা কি তোকে আর ফিরিয়ে নেবে না বলে ভেবেছিস? না তুই নিজেই আর তাদের কাছে ফিরতে চাসনি?"
আমি কয়েক মূহুর্ত বিজলীমাসির দিকে স্থির চোখে চেয়ে থেকে মনটাকে কঠিন করবার চেষ্টা করে ধীরে ধীরে বললাম, "কোথায় আর ফিরব মাসি? কার কাছে ফিরে যাব? সে রাতে গজানন আর তার ছ’সাতজন সঙ্গীসাথী মিলে আমার বাবা আর দাদাদের সামনে আমাকে আর আমার মা-কে রেপ করেছিল। আর তারপর ........."
এটুকু বলতেই উথলে আসা কান্নায় আমার কণ্ঠরোধ হয়ে এল।
বিজলীমাসি দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল, "শালা কুত্তার বাচ্চাটা যে এমনই কিছু করেছিল সেটা আমি আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তাই বলে সকলের সামনে মা আর মেয়েকে একসাথে করবে? আর কি করেছিল রে? বলনা মিনু।"
যে কথাগুলো দীর্ঘ বারোটা বছর ধরে আমার মনের মধ্যে চাপা পড়ে আছে সে কথাগুলো বলতে চেয়েও যেন বলতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু কেন জানিনা, বিজলীমাসির প্রশ্নের জবাবে সে কথাগুলো আমার বলতে ইচ্ছে করছিল। মদ খেয়ে নেশা হয়েছিল বলে, না এত বছর বাদে অনুরাধাকে কাছে পেয়ে? আমি হঠাৎ করেই বিজলীমাসির কোলে মুখ গুঁজে দিয়ে অনেক কষ্টে বললাম, "বাবা আর দাদাদের সামনে আমার মা আর আমার ইজ্জত লুটে নিয়েও গজানন শান্ত হয়নি মাসি সেদিন। আমার চোখের সামনে এক এক করে আমার দুই দাদা, মা আর বাবার গলা কেটে তাদের খুন করে ......"
আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম।
শ্যামলীদির চিৎকার শুনতে পেলাম আমার পেছনদিকে। আর বিজলীমাসি কোন কথা না বলে আমার শরীরটাকে দু’হাতে খুব জোরে আঁকড়ে ধরে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। আমি বিজলীমাসির কোলে মুখ চেপে ধরে গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলাম।
সে’সব দৃশ্য একটা চলমান ছবির মত চোখের সামনে দেখতে দেখতে আমি এক নাগাড়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলাম। বিজলীমাসিও আমাকে তার কোলের ওপর চেপে ধরে বসে রইল। বারো বছর ধরে ভেতরে চেপে রাখা কান্না যেন আর থামাতেই পারছিলাম না আমি। একসময় আমার মনে হল আমি বুঝি অতল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন ঘরের মধ্যে অনেকগুলো মেয়ের গলার মাঝে কয়েকজন পুরুষের গলাও শুনতে পেলাম। মনে হল অনেক দুর থেকে কেউ যেন বলছে, "এই তো সেন্স ফিরে আসছে। আর ভয় নেই। কিন্তু তোমরা সবাই একটু তফাতে সরে যাও, প্লীজ। একটু খোলা হাওয়া আসতে দাও ঘরের ভেতরে। দরজার দিক থেকে সবাই সরে যাও।"
আমি চেষ্টা করেও যেন আমার চোখ খুলতে পাচ্ছিলাম না। আর কেমন একটা কড়া গন্ধ যেন আমার শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আমার ফুসফুসে ঢুকছিল। সে উগ্র গন্ধটা সইতে না পেরে আমি জোর করে আমার চোখ মেলে চাইলাম। সাথে সাথেই আমার মুখের সামন থেকে কিছু একটা যেন সরে গেল। তার বদলে বিজলীমাসির ঝাপসা মুখটা দেখতে পেলাম, বিজলীমাসি আমার দুটো গালে হাত চেপে ধরে বলল, "মিনু, মিনু, তাকা। এদিকে দ্যাখ, এই যে আমি তোর বিজলীমাসি। আর এই দ্যাখ, তাকিয়ে দ্যাখ, এই যে শ্যামলীদি। দেখতে পাচ্ছিস? কথা বলছিস না কেন রে। দেখতে পাচ্ছিস না আমাদের?"
আমি একটু ওঠার চেষ্টা করতেই বিজলীমাসি আবার বলল, "ওরে ও শ্যামলীদি, ওকে উঠতে দিস না। ওকে জোর করে শুইয়ে রাখ। আমি শাড়িটা পাল্টে আসছি তাড়াতাড়ি।"
শ্যামলীদির মুখটা দেখতে পেলাম। সে আমাকে আবার শুইয়ে দিতে দিতে বলল, "না না মিনু, এখন উঠিস না। আরেকটু শুয়ে থাক বোন আমার। বলি ওরে ও বাসন্তী, ঠুটো জগন্নাথের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন রে মাগি? নিচের নোংরাগুলো পরিষ্কার কর তাড়াতাড়ি।"
এমন সময় বাম হাতে সুচ ফোঁটার মত কিছু একটা মনে হতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখি পাড়ার বুড়ো সুবল ডাক্তার আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করছে। তখন ধীরে ধীরে আমার মনে পড়তে লাগল। আমি বিজলীমাসিকে আমার বাড়ির সকলের কথা বলছিলাম। চারপাশে তাকিয়ে দেখি সারাটা ঘর লোকের ভিড়ে গিজগিজ করছে। বাড়ির অনেকগুলো পরিচিত মেয়ের মুখ দেখতে পেলাম। মাসির পোষা গুণ্ডাদের দু’তিনজনকেও দেখতে পেলাম। কিন্তু সাথে সাথেই মনে হল, আমার যেন ঘুম পাচ্ছে খুব। আর কিছু মনে নেই।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতে দেখি আমি বিজলীমাসির ঘরে শুয়ে আছি। আর অবাক হয়ে দেখি বিজলীমাসির বড় খাটটার ওপর আমার একপাশে শুয়ে আছে বিজলীমাসি, আর অন্য পাশে অনুরাধা। আমি ধড়ফড় করে উঠে বসতেই বিজলীমাসির ঘুম ভেঙে গেল। সে-ও সাথে সাথে উঠে আমার হাত ধরে বলল, "দাঁড়া মিনু। কোথায় যাচ্ছিস?"
আমি আমতা আমতা করে বললাম, "আমি তোমার ঘরে এলাম কি করে মাসি?"
বিজলীমাসি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আমিই তোকে এ ঘরে রেখে দিয়েছি। তুই যে কাল রাতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। তাই একা তোর ঘরে রাখতে সাহস পাইনি রে। তা এখন শরীর কেমন লাগছে রে? ঠিক আছিস তো?"
আমি মাথা ঝাঁকি দিয়ে বললাম, "মাথাটাই শুধু একটু ভার ভার লাগছে। আর কিছু তো তেমন মনে হচ্ছে না। কিন্তু রাধাও তো দেখি এখানে শুয়ে আছে। তোমার বিছানায় ও কি করে শুয়েছে? তুমি বারণ করনি?"
বিজলীমাসি আমার চিবুক ছুঁয়ে আদর করে বলল, "তুই আমার ঘরের নিয়ম পাল্টে দিয়েছিস কাল রাতে। আসলে তোর যা অবস্থা হয়েছিল, তাতে আমরা সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে। তাই তোকে তোর ঘরে আর পাঠাইনি। আর বেশী রাতে যদি আবার কিছু সমস্যা হয়, এ’কথা ভেবেই আমিও একা তোর সাথে থাকতে চাইছিলাম না। তাই রাধা আর শ্যামলীদিকেও এ ঘরেই শুতে বলেছি। শ্যামলীদি মেঝেতে শুয়েছে, আর রাধা এখানে আমাদের সাথেই শুয়েছে।"
আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখি শ্যামলীদিরও ঘুম ভেঙে গেছে। আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, "ছিঃ ছিঃ কী লজ্জার কথা বল তো। তোমাকে কাল রাতে কত ভাবেই না বিব্রত করে তুলেছি আমি। ইশ বেলা তো প্রায় সাতটা বাজতে চলল গো। না না, আমি বরং এবার আমার ঘরে যাই। তোমার স্নান আর পুজোর দেরী হয়ে যাচ্ছে না?"
বলে আমি বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম।
শ্যামলীদি উঠে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, "এখন কেমন লাগছে রে মিনু? শরীর ভাল লাগছে তো?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ গো শ্যামলীদি, এখন ঠিক আছি।"
শ্যামলীদি বিজলীমাসিকে বলল, "মাসি। আমি ওকে ওর ঘরে রেখে এখুনি আসছি, তারপর তোমার ঘরটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি। তুমি আর দেরী না করে চান করতে বেরিয়ে পড়।"
বিজলীমাসিও বিছানা থেকে নেমে বলল, "হ্যাঁ, তাই কর। আজ মাসের শেষ বৃহস্পতি বার। আমার অনেক কাজ আছে আজ। আর মিনু, তোদের তো আজ আর কোন কাজ নেই। তুই তোর ঘরে গিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নে। তাহলে তোর শরীরটা ভাল লাগবে।"
আমি শ্যামলীদির সাথে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে ঘুমন্ত রাধার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। কি সুন্দর নিষ্পাপ লাগছিল ওর মিষ্টি মুখটা। নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসতেই শ্যামলীদি বলল, "শোন মিনু, আমি মাসির ঘরটা চট করে পরিষ্কার করেই তোর কাছে চলে আসব। ততক্ষণ তুই একটু চোখ বুজে শুয়ে থাক। আমি এসে তোকে বাথরুমে নিয়ে যাব। কাল রাতে কাঁদতে কাঁদতে বমি করে মাসিকে ভিজিয়ে দিয়ে তুই নিজেকেও ভিজিয়ে ফেলেছিলি। ভেজা কাপড় দিয়ে যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার করে দিয়েছি। কিন্তু আজ ভাল করে চান করাতে হবে। আমি এসে তোকে বাথরুমে নিয়ে যাব। বুঝেছিস?"
আমি ম্লান হেসে বললাম, "ঠিক আছে শ্যামলীদি, তুমি এসো।"
বিছানায় শুয়েই মনে হল, বারো বছর ধরে আমার মনের গভীরে যে মর্মান্তিক সত্যটা চাপা দিয়ে রেখেছিলাম সে কথা কাল বিজলীমাসি আর শ্যামলীদির সামনে প্রকাশ করে ফেলে কি আমি কোন ভুল করে ফেললাম? আমি যে কখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম তা নিজেও ঠিক মনে করতে পারছি না। কিন্তু এই মূহুর্তে আমার মনটা অনেক হালকা মনে হচ্ছে। মনে হল ওই ঘোরের মধ্যে ঘরের ভেতরে অনেকগুলো মেয়ে পুরুষের ভিড় দেখেছিলাম। কিন্তু এখন ভেবেও তা ঠিক ঠিক মনে করতে পারছি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলাম মাসির বিছানায় আমার পাশে অনুরাধা শুয়ে ছিল। বিজলীমাসির বিছানায় তো একমাত্র আমি ছাড়া আর কারুর বসবারই অধিকার নেই। তাহলে অনুরাধা সেখানে সারা রাত ধরে ঘুমলো কী করে? কিন্তু মাসি তো সকালে সে’কথাই বলল।
মনে মনে ভাবলাম আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে বুঝি ভাল হত। কিন্তু কিছুতেই আর ঘুম এল না। বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ভাল করে স্নান সেরে ঘরে ফিরলাম। চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে ভেজা চুলগুলো মেলে দিয়ে চোখ বুজতেই আগের রাতের কথাগুলো আবার মনে পড়ছিল। কিন্তু মনটাকে জোর করে কাল রাতের ঘটনা থেকে সরিয়ে নিতে অন্য কথা ভাববার চেষ্টা করতে লাগলাম।
মনে পড়ল, রাতে বিজলীমাসির ঘরে যাবার আগে আমি অনুরাধার ঘরে ছিলাম। ও তখন এখানে এসে পৌঁছনোর কথাগুলো বলেছিল আমায়। তখন কথায় কথায় টুপুর কথাও বলেছিল। টুপুর ভাল নাম যে নির্ঝর ছিল, সেটা এতদিন আমার মনেও ছিল না। শধু ওর মিষ্টি মুখটাই আবছা আবছা মনে আছে আমার। অনুরাধা টুপুর সাথে সেক্স করবার অনেক চেষ্টা করেও পারেনি বলল। ওর মত সেক্সি সুন্দরী একটা মেয়েও যাকে টলাতে পারে না, তার যে মানসিক শক্তি খুবই প্রবল হবে এটা বোঝাই যায়। কিন্তু ছোড়দা বড়দারাও অনুরাধার সাথে সেক্স করেছিল? এ কথাটা আমি খোদ অনুরাধার মুখে না শুনলে বিশ্বাসই করতাম না! অনুরাধা নাকি তখন সেভেন এইটে পড়ত। তার মানে আমি তখন ক্লাস নাইনে। ছোড়দার সাথে আমারে সেক্স রিলেশন যখন শুরু হয়েছিল তখন আমি ক্লাস ইলেভেনে পড়তাম। তার মানে ছোড়দা বড়দারা তার অনেক আগেই অনুরাধার সাথে সেক্স করেছিল! ছোড়দা বা বড়দা কখনও এ কথা আমার কাছে প্রকাশ করেনি।
কিন্তু শান্ত শিষ্ট টুপুকে দেখে আমার কখনোই মনে হয়নি অনুরাধার মত সুন্দরী সেক্সী মেয়ের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করবার মত এত মনের জোর থাকতে ওর পারে। কিন্তু ও নিজেইনাকি একদিন অনুরাধাকে বলেছিল, ও কোনও মেয়েকে ভালবাসে। তাকে পাবার অপেক্ষায় ছিল। তাই অন্য কোন মেয়ের সাথেই সে সেক্স করবে না বলেছিল। অনুরাধাকেও তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু টুপুর কোন গার্লফ্রেন্ড ও’ সময় ছিল বলে শুনিনি কোনদিন। অবশ্য পাশাপাশি বাড়ি হলেও আমিও কখনো ওদের বাড়ি যেতাম না। তবে টুপুর মা সোনা কাকিমা আর ওর দিদি তো মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে এসে আমার এবং মা-র সাথে কথা বলতেন। টুপুর দিদির ভাল নামটাও এখন আমার মনে নেই। বাড়ির ডাক নাম ছিল ঝুনু। আমিও তাকে ঝুনুদি বলে ডাকতাম। ঝুনুদি আমার ছোড়দার সমবয়সী ছিল। আমাকে তারা সকলেই খুব ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন। আমিও তাদের সাথে মন খুলে কথা বলতাম। কিন্তু ওদের বাড়িতে আমি কখনও বেড়াতে যাইনি। ওদের বাড়ির কারো জন্মদিন বা কোন পুজোর অনুষ্ঠান থাকলেই শুধু মা বাবার সাথে যেতাম। কিন্তু টুপুর সাথে কখনো কথা হয়নি আমার। অমন শান্ত শিষ্ট ছেলেটার যে কোন গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে তা কোনদিনই ভাবিনি আমি। অনুরাধার মুখে কাল রাতে কথাটা শুনে একটু অবাকই হয়েছি। আমার সুন্দর জীবনের শেষ দিনটাতেই ওর সাথে আমার সামান্য কথা হয়েছিল। আর সেদিনই প্রথম আমি ওকে অত কাছ থেকে দেখেছিলাম।
@@@@@@@ ........মনে আছে সেদিন সকালে খুব জোরে বাতাস বইছিল। আমি আমার ঘরে বসে আমার বই খাতা গুলো গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার কলেজের আইডেন্টিটি কার্ডটা বাতাসের দাপটে আমার ঘরের জানালা দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম অসহায়ের মত। ওই কার্ডটা হারিয়ে গেলে মুস্কিল হত। কার্ডটা দমকা বাতাসে অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছিল প্রথমে। তারপর সেটা ভোকাট্টা খাওয়া ঘুড়ির মত নিচে নামতে নামতে পাশের টুপুদের একতলা বাড়িটার ছাদের ওপর গিয়ে পড়েছিল। আকাশটা মেঘে ঢাকা ছিল। মনে হচ্ছিল যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে আসতে পারে। সকালের দিকেও খানিকটা বৃষ্টি হয়েছিল। ছাদ ভেজা থাকলে কার্ডটাও বৃষ্টির জলে ভিজে যাবে। তাছাড়া হাওয়াও আরও জোরে বইছিল। কার্ডটা যদি তখনই ফেরৎ না আনা যেত, তাহলে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়াও এমন সম্ভাবনাও ছিল যে কার্ডটা ওই বাড়ির ছাদ থেকে উড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারত। তখনই ওই বাড়ির ছাদের ওপর টুপুকে দেখতে পেয়েই আমি চেঁচিয়ে উঠে বলেছিলাম, "এই টুপু, আমার আইডেন্টিটি কার্ডটা বাতাসে উড়ে গিয়ে তোমাদের ছাদের ওপর পড়েছে। একটু ওই কোনার দিকটা দ্যাখো না, আছে সেখানে?"
টুপুদের ছাদের ওপর একটা তারে দুটো কাপড় মেলা ছিল। বৃষ্টি আসবার সম্ভাবনা দেখে টুপু বুঝি সেগুলোই নিতে ছাদে উঠেছিল তখন। আমার ডাক শুনে একটু চমকে গেলেও পরক্ষণেই আমার কথা মত ছাদের এক কোনায় চলে গিয়ে নিচু হয়ে কিছু একটা তুলে সেটা দেখে জিনিসটা তুলে ধরে আমায় দেখাতে দেখাতে বলেছিল, "হ্যাঁ, পেয়েছি। কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই। তাই আমার কাছে রেখে দিচ্ছি। তুমি পরে নিয়ে যেও" বলেই ছাদ থেকে নেমে গিয়েছিল।
আমি আমার ঘর ছেড়ে বের হয়ে নিচে নেমে মা-কে সব কথা বলতেই মা আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে কমলাদিকে ডেকে বলেছিলেন, "কমলা শিগগীর রুমুকে নিয়ে ঝুনুদের বাড়িতে যা তো। ওর কি একটা জিনিস বাতাসে উড়ে গিয়ে নাকি ওদের ছাদে গিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি নামলেই সেটা ভিজে যাবে। তাড়াতাড়ি যা।"
টুপুদের বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজিয়েও কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে কমলাদি দরজায় ধাক্কাতে শুরু করেছিল। কিছু বাদেই টুপু দরজা খুলতেই আমি কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারিনি। ওকে সেই প্রথম অত কাছ থেকে দেখছিলাম। অপূর্ব মিষ্টি ফর্সা মুখে সোনালী সরু ফ্রেমের চশমাটা দারুণ লাগছিল। চোখ দুটো দেখেই মনে হয়েছিল ও খুব বুদ্ধিমান ছেলে হবে। টুপুও যে আমাকে দেখে বিষ্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিল তা ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম। ও বোধহয় ভাবতেই পারেনি যে আমি অত তাড়াতাড়ি জিনিসটা নিতে আসতে পারি। আমাদের কাউকে কোন কথা বলতে না দেখে কমলাদি বলেছিল, "কি গো রুমুদি, কী নিতে এসেছ, সেটা বল।"
কমলাদির কথায় হুঁশ ফিরতেই টুপু বলেছিল, "ও বুঝেছি। এসো, দিচ্ছি।"
আমি ওর পেছন পেছন ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। টুপু ভেতরের একটা ঘরে ঢুকে যেতে আমি সে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম। টুপু আমার আইডেন্টিটি কার্ডটা এনে আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, "এই নাও।"
আমি কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখলাম, কোথাও কোন নোংরা লেগে নেই। ভদ্রতার খাতিরেই জিজ্ঞেস করলাম, "এটা বুঝি তোমার ঘর?"
টুপু জবাব দিয়েছিল, "এটা আমার আর দিদির ঘর। আমরা তো আর তোমাদের মত বড়লোক নই। ছোট বাড়ি আমাদের। ঘর বেশী নেই। তাই আমি আর দিদি একটা ঘরেই থাকি" বলে মিষ্টি করে হেসেছিল।
আমি তখন বলেছিলাম, "তোমাদের ছাদে একটু নিয়ে যাবে? দেখব কোন জায়গায় জিনিসটা পড়েছিল।"
টুপু ছোট্ট করে জবাব দিয়েছিল, "হ্যাঁ, এসো।"
ওদের ছাদে উঠে টুপু প্রথমে আইডেন্টিটি কার্ডটা যেখানে পড়েছিল সে জায়গাটা দেখিয়েছিল আমাকে। জায়গাটায় বেশ জল কাদা চোখে পড়ছিল। তাই হাতের কার্ডটা ভাল করে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "এটায় তো নোংরা লেগে যাবার কথা ছিল।"
টুপু একটু লাজুক ভাবে জবাব দিয়েছিল, "লেগেছিল একটু। আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি। কার্ডে তোমার ছবিটা কিন্তু খব সুন্দর লাগছে।"
আমিও মনে মনে একটু খুশী হয়ে বলেছিলাম, "শুধু ছবিটাই বুঝি সুন্দর? আমি আসলে কি সুন্দর নই দেখতে?"
টুপু একটু লজ্জা পেয়ে জবাব দিয়েছিল, "না না। তা কেন। তুমিও খুব সুন্দর। কিন্তু এর আগে তো তোমার কোন ছবিও দেখিনি, আর তোমাকেও এত সামনা সামনি দেখিনি।"
আমি আর কিছু না বলে আমাদের বাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার ঘরের জানালাটা তখনও খোলাই ছিল। জানালা দিয়ে আমার বিছানার একটা পাশ সহ ঘরের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল। টুপু হঠাৎই বলেছিল, "একটু এদিকে এসে দেখ। তোমার ঘরটা যে কত বড়, সেটা এখান থেকে দেখলেই বোঝা যায়"
বলে ছাদের কোনার দিকের এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল যেখান থেকে আমার ঘরের দুটো জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল। বিছানার মাঝের কিছুটা অংশ বাদ দিয়ে খাটের প্রায় সবটাই দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎই মনে হয়েছিল ওই বিছানাতেই তো ছোড়দার সাথে মা-র সাথে কত সময় কাটিয়েছি। টুপু বা ওদের বাড়ির আর কেউ এখান থেকে সে’সব দেখে ফ্যালেনি তো?
ভাবতেই আমার শরীরটা কেঁপে উঠেছিল। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নেমে "যাচ্ছি" বলেই কমলাদিকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।
টুপুদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবার কয়েক ঘণ্টা বাদেই সে রাতেই আমাদের ওই চরম সর্বনাশ হয়েছিল। রাত আটটার পর থেকেই গুড়ো গুড়ো বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল। তবে বৃষ্টির চাইতেও অনেক গুণ বেশী ছিল মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের চমক। অন্য কোথাও সেদিন বাজ পড়েছিল কি না জানিনা। তবে আমাদের বাড়ির ওপরের আর নিচের তলার সবগুলো ঘরের ভেতরেই সে রাতে একের পর এক বাজ পড়েছিল। আর আমাদের গোটা বাড়িটাকেই পুড়ে ছাড়খাড় করে ফেলেছিল। .......@@@@@@@
ঠিক তখনই শ্যামলীদি আর অনুরাধা দু’জন আমার ঘরে এসে ঢুকল। তাদের দু’জনের হাতেই চা আর সকালের জল খাবার। আমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে শ্যামলীদি বলল, "তুই হাত মুখ ধুয়েছিস মিনু? এটুকু খেয়ে নে আগে।"
অনুরাধা আমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,"হ্যাঁগো মিনুদি, তোমার শরীর ঠিক আছে তো? নাকি এখনও দুর্বল লাগছে?"
আমি অনুরাধার দিকে এক পলক চেয়েই মুখ নিচু করে বললাম, "না রে, এখন আর খারাপ লাগছে না তেমন। স্নান করবার পর বেশ ভালই লাগছে" বলে বিছানার ভেতরের দিকে সরে গিয়ে ওদের দু’জনকে বসবার জায়গা দিয়ে বললাম, "শ্যামলীদি, তোমরা বোসো এখানে, বোস রাধা।"
তিনজনে মিলে চুপচাপ চা আর খাবার খেয়ে শেষ করলাম। আমি জানি এদের মনের ভেতর আমাকে জিজ্ঞেস করবার মত অনেক প্রশ্নই এখন জমা হয়ে আছে। কিন্তু কেউই কিছু বলছিল না।
আমি বিজলীমাসির কথা শুনে অবাক হলেও বললাম, "বেশ জিজ্ঞেস কর মাসি। আমিও আজ তোমাকে মিথ্যে কথা বলব না। কিন্তু যেটার জবাব আমি দিতে চাইব না, সেটা আর দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস কোরনা আমায়।"
জানিনা এমন কথা কি করে বললাম তখন। দশ দশটা বছর ধরে যেসব কথা কাউকে জানাতে চাইনি সে’সব কথা বলতে আমি রাজি হলাম! মদের নেশাতেই কি?
বিজলীমাসি আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, "ঠিক আছে, তাই হবে। আচ্ছা তুই তো বারবার বলেছিস, যে রাতে গজানন তোকে তোদের বাড়ি থেকে তুলে এনেছিল সেদিনই নাকি তুই তোর মা বাবা দাদাদের হারিয়েছিস। কিন্তু এই হারিয়ে যাওয়াটা ঠিক কী ধরণের রে? তারা কি তোকে আর ফিরিয়ে নেবে না বলে ভেবেছিস? না তুই নিজেই আর তাদের কাছে ফিরতে চাসনি?"
আমি কয়েক মূহুর্ত বিজলীমাসির দিকে স্থির চোখে চেয়ে থেকে মনটাকে কঠিন করবার চেষ্টা করে ধীরে ধীরে বললাম, "কোথায় আর ফিরব মাসি? কার কাছে ফিরে যাব? সে রাতে গজানন আর তার ছ’সাতজন সঙ্গীসাথী মিলে আমার বাবা আর দাদাদের সামনে আমাকে আর আমার মা-কে রেপ করেছিল। আর তারপর ........."
এটুকু বলতেই উথলে আসা কান্নায় আমার কণ্ঠরোধ হয়ে এল।
বিজলীমাসি দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল, "শালা কুত্তার বাচ্চাটা যে এমনই কিছু করেছিল সেটা আমি আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তাই বলে সকলের সামনে মা আর মেয়েকে একসাথে করবে? আর কি করেছিল রে? বলনা মিনু।"
যে কথাগুলো দীর্ঘ বারোটা বছর ধরে আমার মনের মধ্যে চাপা পড়ে আছে সে কথাগুলো বলতে চেয়েও যেন বলতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু কেন জানিনা, বিজলীমাসির প্রশ্নের জবাবে সে কথাগুলো আমার বলতে ইচ্ছে করছিল। মদ খেয়ে নেশা হয়েছিল বলে, না এত বছর বাদে অনুরাধাকে কাছে পেয়ে? আমি হঠাৎ করেই বিজলীমাসির কোলে মুখ গুঁজে দিয়ে অনেক কষ্টে বললাম, "বাবা আর দাদাদের সামনে আমার মা আর আমার ইজ্জত লুটে নিয়েও গজানন শান্ত হয়নি মাসি সেদিন। আমার চোখের সামনে এক এক করে আমার দুই দাদা, মা আর বাবার গলা কেটে তাদের খুন করে ......"
আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম।
শ্যামলীদির চিৎকার শুনতে পেলাম আমার পেছনদিকে। আর বিজলীমাসি কোন কথা না বলে আমার শরীরটাকে দু’হাতে খুব জোরে আঁকড়ে ধরে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। আমি বিজলীমাসির কোলে মুখ চেপে ধরে গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলাম।
সে’সব দৃশ্য একটা চলমান ছবির মত চোখের সামনে দেখতে দেখতে আমি এক নাগাড়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলাম। বিজলীমাসিও আমাকে তার কোলের ওপর চেপে ধরে বসে রইল। বারো বছর ধরে ভেতরে চেপে রাখা কান্না যেন আর থামাতেই পারছিলাম না আমি। একসময় আমার মনে হল আমি বুঝি অতল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন ঘরের মধ্যে অনেকগুলো মেয়ের গলার মাঝে কয়েকজন পুরুষের গলাও শুনতে পেলাম। মনে হল অনেক দুর থেকে কেউ যেন বলছে, "এই তো সেন্স ফিরে আসছে। আর ভয় নেই। কিন্তু তোমরা সবাই একটু তফাতে সরে যাও, প্লীজ। একটু খোলা হাওয়া আসতে দাও ঘরের ভেতরে। দরজার দিক থেকে সবাই সরে যাও।"
আমি চেষ্টা করেও যেন আমার চোখ খুলতে পাচ্ছিলাম না। আর কেমন একটা কড়া গন্ধ যেন আমার শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আমার ফুসফুসে ঢুকছিল। সে উগ্র গন্ধটা সইতে না পেরে আমি জোর করে আমার চোখ মেলে চাইলাম। সাথে সাথেই আমার মুখের সামন থেকে কিছু একটা যেন সরে গেল। তার বদলে বিজলীমাসির ঝাপসা মুখটা দেখতে পেলাম, বিজলীমাসি আমার দুটো গালে হাত চেপে ধরে বলল, "মিনু, মিনু, তাকা। এদিকে দ্যাখ, এই যে আমি তোর বিজলীমাসি। আর এই দ্যাখ, তাকিয়ে দ্যাখ, এই যে শ্যামলীদি। দেখতে পাচ্ছিস? কথা বলছিস না কেন রে। দেখতে পাচ্ছিস না আমাদের?"
আমি একটু ওঠার চেষ্টা করতেই বিজলীমাসি আবার বলল, "ওরে ও শ্যামলীদি, ওকে উঠতে দিস না। ওকে জোর করে শুইয়ে রাখ। আমি শাড়িটা পাল্টে আসছি তাড়াতাড়ি।"
শ্যামলীদির মুখটা দেখতে পেলাম। সে আমাকে আবার শুইয়ে দিতে দিতে বলল, "না না মিনু, এখন উঠিস না। আরেকটু শুয়ে থাক বোন আমার। বলি ওরে ও বাসন্তী, ঠুটো জগন্নাথের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন রে মাগি? নিচের নোংরাগুলো পরিষ্কার কর তাড়াতাড়ি।"
এমন সময় বাম হাতে সুচ ফোঁটার মত কিছু একটা মনে হতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখি পাড়ার বুড়ো সুবল ডাক্তার আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করছে। তখন ধীরে ধীরে আমার মনে পড়তে লাগল। আমি বিজলীমাসিকে আমার বাড়ির সকলের কথা বলছিলাম। চারপাশে তাকিয়ে দেখি সারাটা ঘর লোকের ভিড়ে গিজগিজ করছে। বাড়ির অনেকগুলো পরিচিত মেয়ের মুখ দেখতে পেলাম। মাসির পোষা গুণ্ডাদের দু’তিনজনকেও দেখতে পেলাম। কিন্তু সাথে সাথেই মনে হল, আমার যেন ঘুম পাচ্ছে খুব। আর কিছু মনে নেই।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতে দেখি আমি বিজলীমাসির ঘরে শুয়ে আছি। আর অবাক হয়ে দেখি বিজলীমাসির বড় খাটটার ওপর আমার একপাশে শুয়ে আছে বিজলীমাসি, আর অন্য পাশে অনুরাধা। আমি ধড়ফড় করে উঠে বসতেই বিজলীমাসির ঘুম ভেঙে গেল। সে-ও সাথে সাথে উঠে আমার হাত ধরে বলল, "দাঁড়া মিনু। কোথায় যাচ্ছিস?"
আমি আমতা আমতা করে বললাম, "আমি তোমার ঘরে এলাম কি করে মাসি?"
বিজলীমাসি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আমিই তোকে এ ঘরে রেখে দিয়েছি। তুই যে কাল রাতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। তাই একা তোর ঘরে রাখতে সাহস পাইনি রে। তা এখন শরীর কেমন লাগছে রে? ঠিক আছিস তো?"
আমি মাথা ঝাঁকি দিয়ে বললাম, "মাথাটাই শুধু একটু ভার ভার লাগছে। আর কিছু তো তেমন মনে হচ্ছে না। কিন্তু রাধাও তো দেখি এখানে শুয়ে আছে। তোমার বিছানায় ও কি করে শুয়েছে? তুমি বারণ করনি?"
বিজলীমাসি আমার চিবুক ছুঁয়ে আদর করে বলল, "তুই আমার ঘরের নিয়ম পাল্টে দিয়েছিস কাল রাতে। আসলে তোর যা অবস্থা হয়েছিল, তাতে আমরা সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে। তাই তোকে তোর ঘরে আর পাঠাইনি। আর বেশী রাতে যদি আবার কিছু সমস্যা হয়, এ’কথা ভেবেই আমিও একা তোর সাথে থাকতে চাইছিলাম না। তাই রাধা আর শ্যামলীদিকেও এ ঘরেই শুতে বলেছি। শ্যামলীদি মেঝেতে শুয়েছে, আর রাধা এখানে আমাদের সাথেই শুয়েছে।"
আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখি শ্যামলীদিরও ঘুম ভেঙে গেছে। আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, "ছিঃ ছিঃ কী লজ্জার কথা বল তো। তোমাকে কাল রাতে কত ভাবেই না বিব্রত করে তুলেছি আমি। ইশ বেলা তো প্রায় সাতটা বাজতে চলল গো। না না, আমি বরং এবার আমার ঘরে যাই। তোমার স্নান আর পুজোর দেরী হয়ে যাচ্ছে না?"
বলে আমি বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম।
শ্যামলীদি উঠে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, "এখন কেমন লাগছে রে মিনু? শরীর ভাল লাগছে তো?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ গো শ্যামলীদি, এখন ঠিক আছি।"
শ্যামলীদি বিজলীমাসিকে বলল, "মাসি। আমি ওকে ওর ঘরে রেখে এখুনি আসছি, তারপর তোমার ঘরটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি। তুমি আর দেরী না করে চান করতে বেরিয়ে পড়।"
বিজলীমাসিও বিছানা থেকে নেমে বলল, "হ্যাঁ, তাই কর। আজ মাসের শেষ বৃহস্পতি বার। আমার অনেক কাজ আছে আজ। আর মিনু, তোদের তো আজ আর কোন কাজ নেই। তুই তোর ঘরে গিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নে। তাহলে তোর শরীরটা ভাল লাগবে।"
আমি শ্যামলীদির সাথে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে ঘুমন্ত রাধার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। কি সুন্দর নিষ্পাপ লাগছিল ওর মিষ্টি মুখটা। নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসতেই শ্যামলীদি বলল, "শোন মিনু, আমি মাসির ঘরটা চট করে পরিষ্কার করেই তোর কাছে চলে আসব। ততক্ষণ তুই একটু চোখ বুজে শুয়ে থাক। আমি এসে তোকে বাথরুমে নিয়ে যাব। কাল রাতে কাঁদতে কাঁদতে বমি করে মাসিকে ভিজিয়ে দিয়ে তুই নিজেকেও ভিজিয়ে ফেলেছিলি। ভেজা কাপড় দিয়ে যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার করে দিয়েছি। কিন্তু আজ ভাল করে চান করাতে হবে। আমি এসে তোকে বাথরুমে নিয়ে যাব। বুঝেছিস?"
আমি ম্লান হেসে বললাম, "ঠিক আছে শ্যামলীদি, তুমি এসো।"
বিছানায় শুয়েই মনে হল, বারো বছর ধরে আমার মনের গভীরে যে মর্মান্তিক সত্যটা চাপা দিয়ে রেখেছিলাম সে কথা কাল বিজলীমাসি আর শ্যামলীদির সামনে প্রকাশ করে ফেলে কি আমি কোন ভুল করে ফেললাম? আমি যে কখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম তা নিজেও ঠিক মনে করতে পারছি না। কিন্তু এই মূহুর্তে আমার মনটা অনেক হালকা মনে হচ্ছে। মনে হল ওই ঘোরের মধ্যে ঘরের ভেতরে অনেকগুলো মেয়ে পুরুষের ভিড় দেখেছিলাম। কিন্তু এখন ভেবেও তা ঠিক ঠিক মনে করতে পারছি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলাম মাসির বিছানায় আমার পাশে অনুরাধা শুয়ে ছিল। বিজলীমাসির বিছানায় তো একমাত্র আমি ছাড়া আর কারুর বসবারই অধিকার নেই। তাহলে অনুরাধা সেখানে সারা রাত ধরে ঘুমলো কী করে? কিন্তু মাসি তো সকালে সে’কথাই বলল।
মনে মনে ভাবলাম আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে বুঝি ভাল হত। কিন্তু কিছুতেই আর ঘুম এল না। বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ভাল করে স্নান সেরে ঘরে ফিরলাম। চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে ভেজা চুলগুলো মেলে দিয়ে চোখ বুজতেই আগের রাতের কথাগুলো আবার মনে পড়ছিল। কিন্তু মনটাকে জোর করে কাল রাতের ঘটনা থেকে সরিয়ে নিতে অন্য কথা ভাববার চেষ্টা করতে লাগলাম।
মনে পড়ল, রাতে বিজলীমাসির ঘরে যাবার আগে আমি অনুরাধার ঘরে ছিলাম। ও তখন এখানে এসে পৌঁছনোর কথাগুলো বলেছিল আমায়। তখন কথায় কথায় টুপুর কথাও বলেছিল। টুপুর ভাল নাম যে নির্ঝর ছিল, সেটা এতদিন আমার মনেও ছিল না। শধু ওর মিষ্টি মুখটাই আবছা আবছা মনে আছে আমার। অনুরাধা টুপুর সাথে সেক্স করবার অনেক চেষ্টা করেও পারেনি বলল। ওর মত সেক্সি সুন্দরী একটা মেয়েও যাকে টলাতে পারে না, তার যে মানসিক শক্তি খুবই প্রবল হবে এটা বোঝাই যায়। কিন্তু ছোড়দা বড়দারাও অনুরাধার সাথে সেক্স করেছিল? এ কথাটা আমি খোদ অনুরাধার মুখে না শুনলে বিশ্বাসই করতাম না! অনুরাধা নাকি তখন সেভেন এইটে পড়ত। তার মানে আমি তখন ক্লাস নাইনে। ছোড়দার সাথে আমারে সেক্স রিলেশন যখন শুরু হয়েছিল তখন আমি ক্লাস ইলেভেনে পড়তাম। তার মানে ছোড়দা বড়দারা তার অনেক আগেই অনুরাধার সাথে সেক্স করেছিল! ছোড়দা বা বড়দা কখনও এ কথা আমার কাছে প্রকাশ করেনি।
কিন্তু শান্ত শিষ্ট টুপুকে দেখে আমার কখনোই মনে হয়নি অনুরাধার মত সুন্দরী সেক্সী মেয়ের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করবার মত এত মনের জোর থাকতে ওর পারে। কিন্তু ও নিজেইনাকি একদিন অনুরাধাকে বলেছিল, ও কোনও মেয়েকে ভালবাসে। তাকে পাবার অপেক্ষায় ছিল। তাই অন্য কোন মেয়ের সাথেই সে সেক্স করবে না বলেছিল। অনুরাধাকেও তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু টুপুর কোন গার্লফ্রেন্ড ও’ সময় ছিল বলে শুনিনি কোনদিন। অবশ্য পাশাপাশি বাড়ি হলেও আমিও কখনো ওদের বাড়ি যেতাম না। তবে টুপুর মা সোনা কাকিমা আর ওর দিদি তো মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে এসে আমার এবং মা-র সাথে কথা বলতেন। টুপুর দিদির ভাল নামটাও এখন আমার মনে নেই। বাড়ির ডাক নাম ছিল ঝুনু। আমিও তাকে ঝুনুদি বলে ডাকতাম। ঝুনুদি আমার ছোড়দার সমবয়সী ছিল। আমাকে তারা সকলেই খুব ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন। আমিও তাদের সাথে মন খুলে কথা বলতাম। কিন্তু ওদের বাড়িতে আমি কখনও বেড়াতে যাইনি। ওদের বাড়ির কারো জন্মদিন বা কোন পুজোর অনুষ্ঠান থাকলেই শুধু মা বাবার সাথে যেতাম। কিন্তু টুপুর সাথে কখনো কথা হয়নি আমার। অমন শান্ত শিষ্ট ছেলেটার যে কোন গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে তা কোনদিনই ভাবিনি আমি। অনুরাধার মুখে কাল রাতে কথাটা শুনে একটু অবাকই হয়েছি। আমার সুন্দর জীবনের শেষ দিনটাতেই ওর সাথে আমার সামান্য কথা হয়েছিল। আর সেদিনই প্রথম আমি ওকে অত কাছ থেকে দেখেছিলাম।
@@@@@@@ ........মনে আছে সেদিন সকালে খুব জোরে বাতাস বইছিল। আমি আমার ঘরে বসে আমার বই খাতা গুলো গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার কলেজের আইডেন্টিটি কার্ডটা বাতাসের দাপটে আমার ঘরের জানালা দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম অসহায়ের মত। ওই কার্ডটা হারিয়ে গেলে মুস্কিল হত। কার্ডটা দমকা বাতাসে অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছিল প্রথমে। তারপর সেটা ভোকাট্টা খাওয়া ঘুড়ির মত নিচে নামতে নামতে পাশের টুপুদের একতলা বাড়িটার ছাদের ওপর গিয়ে পড়েছিল। আকাশটা মেঘে ঢাকা ছিল। মনে হচ্ছিল যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে আসতে পারে। সকালের দিকেও খানিকটা বৃষ্টি হয়েছিল। ছাদ ভেজা থাকলে কার্ডটাও বৃষ্টির জলে ভিজে যাবে। তাছাড়া হাওয়াও আরও জোরে বইছিল। কার্ডটা যদি তখনই ফেরৎ না আনা যেত, তাহলে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়াও এমন সম্ভাবনাও ছিল যে কার্ডটা ওই বাড়ির ছাদ থেকে উড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারত। তখনই ওই বাড়ির ছাদের ওপর টুপুকে দেখতে পেয়েই আমি চেঁচিয়ে উঠে বলেছিলাম, "এই টুপু, আমার আইডেন্টিটি কার্ডটা বাতাসে উড়ে গিয়ে তোমাদের ছাদের ওপর পড়েছে। একটু ওই কোনার দিকটা দ্যাখো না, আছে সেখানে?"
টুপুদের ছাদের ওপর একটা তারে দুটো কাপড় মেলা ছিল। বৃষ্টি আসবার সম্ভাবনা দেখে টুপু বুঝি সেগুলোই নিতে ছাদে উঠেছিল তখন। আমার ডাক শুনে একটু চমকে গেলেও পরক্ষণেই আমার কথা মত ছাদের এক কোনায় চলে গিয়ে নিচু হয়ে কিছু একটা তুলে সেটা দেখে জিনিসটা তুলে ধরে আমায় দেখাতে দেখাতে বলেছিল, "হ্যাঁ, পেয়েছি। কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই। তাই আমার কাছে রেখে দিচ্ছি। তুমি পরে নিয়ে যেও" বলেই ছাদ থেকে নেমে গিয়েছিল।
আমি আমার ঘর ছেড়ে বের হয়ে নিচে নেমে মা-কে সব কথা বলতেই মা আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে কমলাদিকে ডেকে বলেছিলেন, "কমলা শিগগীর রুমুকে নিয়ে ঝুনুদের বাড়িতে যা তো। ওর কি একটা জিনিস বাতাসে উড়ে গিয়ে নাকি ওদের ছাদে গিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি নামলেই সেটা ভিজে যাবে। তাড়াতাড়ি যা।"
টুপুদের বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজিয়েও কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে কমলাদি দরজায় ধাক্কাতে শুরু করেছিল। কিছু বাদেই টুপু দরজা খুলতেই আমি কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারিনি। ওকে সেই প্রথম অত কাছ থেকে দেখছিলাম। অপূর্ব মিষ্টি ফর্সা মুখে সোনালী সরু ফ্রেমের চশমাটা দারুণ লাগছিল। চোখ দুটো দেখেই মনে হয়েছিল ও খুব বুদ্ধিমান ছেলে হবে। টুপুও যে আমাকে দেখে বিষ্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিল তা ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম। ও বোধহয় ভাবতেই পারেনি যে আমি অত তাড়াতাড়ি জিনিসটা নিতে আসতে পারি। আমাদের কাউকে কোন কথা বলতে না দেখে কমলাদি বলেছিল, "কি গো রুমুদি, কী নিতে এসেছ, সেটা বল।"
কমলাদির কথায় হুঁশ ফিরতেই টুপু বলেছিল, "ও বুঝেছি। এসো, দিচ্ছি।"
আমি ওর পেছন পেছন ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। টুপু ভেতরের একটা ঘরে ঢুকে যেতে আমি সে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম। টুপু আমার আইডেন্টিটি কার্ডটা এনে আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, "এই নাও।"
আমি কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখলাম, কোথাও কোন নোংরা লেগে নেই। ভদ্রতার খাতিরেই জিজ্ঞেস করলাম, "এটা বুঝি তোমার ঘর?"
টুপু জবাব দিয়েছিল, "এটা আমার আর দিদির ঘর। আমরা তো আর তোমাদের মত বড়লোক নই। ছোট বাড়ি আমাদের। ঘর বেশী নেই। তাই আমি আর দিদি একটা ঘরেই থাকি" বলে মিষ্টি করে হেসেছিল।
আমি তখন বলেছিলাম, "তোমাদের ছাদে একটু নিয়ে যাবে? দেখব কোন জায়গায় জিনিসটা পড়েছিল।"
টুপু ছোট্ট করে জবাব দিয়েছিল, "হ্যাঁ, এসো।"
ওদের ছাদে উঠে টুপু প্রথমে আইডেন্টিটি কার্ডটা যেখানে পড়েছিল সে জায়গাটা দেখিয়েছিল আমাকে। জায়গাটায় বেশ জল কাদা চোখে পড়ছিল। তাই হাতের কার্ডটা ভাল করে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "এটায় তো নোংরা লেগে যাবার কথা ছিল।"
টুপু একটু লাজুক ভাবে জবাব দিয়েছিল, "লেগেছিল একটু। আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি। কার্ডে তোমার ছবিটা কিন্তু খব সুন্দর লাগছে।"
আমিও মনে মনে একটু খুশী হয়ে বলেছিলাম, "শুধু ছবিটাই বুঝি সুন্দর? আমি আসলে কি সুন্দর নই দেখতে?"
টুপু একটু লজ্জা পেয়ে জবাব দিয়েছিল, "না না। তা কেন। তুমিও খুব সুন্দর। কিন্তু এর আগে তো তোমার কোন ছবিও দেখিনি, আর তোমাকেও এত সামনা সামনি দেখিনি।"
আমি আর কিছু না বলে আমাদের বাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার ঘরের জানালাটা তখনও খোলাই ছিল। জানালা দিয়ে আমার বিছানার একটা পাশ সহ ঘরের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল। টুপু হঠাৎই বলেছিল, "একটু এদিকে এসে দেখ। তোমার ঘরটা যে কত বড়, সেটা এখান থেকে দেখলেই বোঝা যায়"
বলে ছাদের কোনার দিকের এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল যেখান থেকে আমার ঘরের দুটো জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল। বিছানার মাঝের কিছুটা অংশ বাদ দিয়ে খাটের প্রায় সবটাই দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎই মনে হয়েছিল ওই বিছানাতেই তো ছোড়দার সাথে মা-র সাথে কত সময় কাটিয়েছি। টুপু বা ওদের বাড়ির আর কেউ এখান থেকে সে’সব দেখে ফ্যালেনি তো?
ভাবতেই আমার শরীরটা কেঁপে উঠেছিল। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নেমে "যাচ্ছি" বলেই কমলাদিকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।
টুপুদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবার কয়েক ঘণ্টা বাদেই সে রাতেই আমাদের ওই চরম সর্বনাশ হয়েছিল। রাত আটটার পর থেকেই গুড়ো গুড়ো বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল। তবে বৃষ্টির চাইতেও অনেক গুণ বেশী ছিল মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের চমক। অন্য কোথাও সেদিন বাজ পড়েছিল কি না জানিনা। তবে আমাদের বাড়ির ওপরের আর নিচের তলার সবগুলো ঘরের ভেতরেই সে রাতে একের পর এক বাজ পড়েছিল। আর আমাদের গোটা বাড়িটাকেই পুড়ে ছাড়খাড় করে ফেলেছিল। .......@@@@@@@
ঠিক তখনই শ্যামলীদি আর অনুরাধা দু’জন আমার ঘরে এসে ঢুকল। তাদের দু’জনের হাতেই চা আর সকালের জল খাবার। আমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে শ্যামলীদি বলল, "তুই হাত মুখ ধুয়েছিস মিনু? এটুকু খেয়ে নে আগে।"
অনুরাধা আমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,"হ্যাঁগো মিনুদি, তোমার শরীর ঠিক আছে তো? নাকি এখনও দুর্বল লাগছে?"
আমি অনুরাধার দিকে এক পলক চেয়েই মুখ নিচু করে বললাম, "না রে, এখন আর খারাপ লাগছে না তেমন। স্নান করবার পর বেশ ভালই লাগছে" বলে বিছানার ভেতরের দিকে সরে গিয়ে ওদের দু’জনকে বসবার জায়গা দিয়ে বললাম, "শ্যামলীদি, তোমরা বোসো এখানে, বোস রাধা।"
তিনজনে মিলে চুপচাপ চা আর খাবার খেয়ে শেষ করলাম। আমি জানি এদের মনের ভেতর আমাকে জিজ্ঞেস করবার মত অনেক প্রশ্নই এখন জমা হয়ে আছে। কিন্তু কেউই কিছু বলছিল না।
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
SS_Sexy-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereSS_Sexy-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment