আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
নিয়তির স্রোতস্বিনী
Written By SS_Sexy
Written By SS_Sexy
(#২৬)
খাওয়া শেষ হতে শ্যামলীদি বিছানা থেকে খালি প্লেটগুলো তুলে নিতে নিতে বলল, "চান তো তুই করেই নিয়েছিস। আমার তো আবার ডাক্তার কম্পাউন্ডারদের বসবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাই রাধা তোর সাথে কিছুক্ষণ বসুক। আমি ওদিকের কাজটা সেরে পড়ে আবার তোর ঘরে আসব’খন। আর হ্যাঁ, এই ট্যাবলেট দুটো খেয়ে নে। ডাক্তার কাল রাতেই লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন অত রাতে আনানো সম্ভব হয়নি। মাসি সকালেই কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিয়েছে।"
বলে সে আমার হাতে দুটো ট্যাবলেট দিল।
শ্যামলীদি বেরিয়ে যেতে অনুরাধা টেবিলের ওপর থেকে জলের গ্লাসটা এনে আমার হাতে দিয়ে বলল, "নাও রুমুদি, ট্যাবলেট দুটো খেয়ে নাও।"
আমি ওর হাত থেকে ট্যাবলেট দুটো নিয়ে বললাম, "সবসময় রুমুদি বলে ডাকিস নারে আমায় রাধা।"
অনুরাধা জবাব দিল, "ভেবো না। শোনার মত কেউ যখন আশেপাশে থাকবে না তখনই শুধু আমি তোমায় এ নামে ডাকব। আর সতর্ক ভাবেই ডাকব। নাও তো, ওষুধটা খেয়ে নাও।"
আমি ট্যাবলেট দুটো খেয়ে গ্লাসটা রাখতে বিছানা থেকে নামবার উদ্যোগ করতেই অনুরাধা আমার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিল। আমি একটু ম্লান হেসে বললাম, "কাল রাতে তোদের সবাইকে আমি খুব জ্বালিয়েছি, তাইনা রে অনু?"
অনুরাধা আবার আমার পাশে বসে আমার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, "জীবনভর শুধু লোককে জ্বালিয়েই এসেছি আমি রুমুদি। কখনো কারো জন্যে নিজে জ্বলিনি। সারাটা জীবন ধরে আমার আশেপাশের মানুষগুলোর মনে শুধু ব্যথাই দিয়ে এসেছি। কাল জীবনে প্রথমবার মাসি আর সকলের কথায় আমি যখন তোমার সামান্য একটু পরিচর্যা করেছি, তখন জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলাম, কারো ব্যথায় একটুখানি প্রলেপ লাগিয়ে দিলে নিজেও কতটা সুখ পাওয়া যায়। আমি তো মনে মনে চাইছিলাম সারাটা রাত তোমার শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু হয়ত কাল খুব বেশী মদ খেয়ে ফেলেছিলাম বলেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, তা নিজেও বুঝিনি।"
আমিও অনুরাধার কথা শুনে নিরুত্তর রইলাম। কিন্তু অনুরাধাই আবার বলল, "তুমি হয়ত জানো না রুমুদি। সেই রাতের পর সারাটা শহরে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল। সকালে অনেকগুলো পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, আর জনতার ভিড়ে বড় রাস্তা থেকে তোমাদের বাড়ির পেছন দিকের সরু রাস্তাটাও একেবারে জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। পুলিশে জনতায় রিপোর্টারে সারা শহরটা একেবারে গিজগিজ করছিল। সকালে সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা শুনে আমিও তোমাদের বাড়ির দিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তোমাদের বাড়ির গলি দিয়ে ঢুকতে পারছিলাম না সেদিন। পেছনের ঘুর পথ দিয়ে কোনরকমে নির্ঝরদের পেছনের গেট দিয়ে ওদের বাড়ি গিয়ে ঢুকতে পেরেছিলাম। ওদের বাড়ির ছাদেও লোকে লোকারণ্য হয়ে ছিল। তোমাদের বাড়ির সব দরজা জানালা বন্ধ ছিল। তাই ভেতরের কোন দৃশ্য দেখতে পারিনি। আর তোমাদের বাড়ির সামনে এবং গোটা গলিটায় যারা দাঁড়িয়েছিল সকলের মুখেই হায় হায় শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রত্যেকটা লোকের চোখে জল ছিল। অনেককে তো হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখেছিলাম। নির্ঝরের মা বাবা দিদি সবাই আলুথালু হয়ে কাঁদছিল সেদিন। আর নির্ঝরকে দেখেছিলাম নিজের ঘরের একটা জানালায় নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে তোমাদের বাড়ির সামনের ওই ভিড়ের দিকে তাকিয়েছিল। সকলের মুখেই নানা রকম চাপা গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছিলাম ‘সব শেষ হয়ে গেছে’, ‘চারটে লাশ পাওয়া গেছে’, ‘বাড়ির কাজের লোকগুলোকে হাত পা মুখ বেঁধে একটা ঘরের ভেতর আটকে রেখে গেছে’, ‘কাউকে ছাড়েনি’, ‘সকলের গলা কেটে রেখে গেছে’, ‘রক্তে ঘর একেবারে ভেসে গেছে’, ‘সোনাদানা টাকা কড়ি যা ছিল সব নিয়ে গেছে’, ‘মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেছে’ এমন সব কথা কানে আসছিল আমার। আমার মত স্বার্থপর নিষ্ঠুর একটা মেয়ের মনটাও যেন অস্থির হয়ে উঠেছিল। ওদের ছাদের ওপর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম শ’য়ে শ’য়ে লোক মোবাইলে ভিডিও ক্যামেরায় তোমাদের বাড়িটার ছবি তুলছিল। ইলেকট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়ার রিপোর্টারেরা ফোনে এবং স্পীকার হাতে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সমগ্র ঘটনার ধারা বিবরণী দিয়ে চলছিল। একসময় দেখতে পেয়েছিলাম সাদা কাপড়ে মোড়া একের পর এক চারখানা ডেডবডি বাইরে এনে সাদা অ্যাম্বুলেনসে ওঠানো হয়েছিল। আর ওই মূহুর্তে জনতার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না যেন চিৎকারে পরিণত হয়েছিল। আমার মত নির্দয়ী নিষ্ঠুর মেয়েও সেদিন চোখের জল আটকাতে পারিনি। প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে যখন আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম, তখন রাস্তার সকলের মুখে একটাই কথা শুনেছিলাম ‘মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেছে, মেয়েটারও না জানি কী সর্বনাশ করেছে ডাকাতগুলো’। আজ এত বছর বাদে তুমি বেঁচে আছ দেখে যতটা খুশী হচ্ছে আমার, ঠিক ততটাই দুঃখ হচ্ছে ওই রাতে তোমাদের বাড়ির ভেতর যা কিছু ঘটেছিল, সে সব ঘটনার কথা কল্পনা করে।"
আমি আবার দু’হাতে আমার মুখ ঢেকে ফেলেছিলাম। সেই রাতের দৃশ্য গুলো আবার চোখের সামনে ভেসে উঠতে আমার শরীর কেঁপে উঠল। অনুরাধা আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, "ভয় পেওনা রুমুদি। এ কথাগুলো নিজের মনের মধ্যে এতগুলো বছর ধরে চেপে রাখতে রাখতে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ। জানি, তোমার কথা শোনবার মত একজনও তোমার পাশে ছিল না এতদিন। আজ তুমি আমার কাছে তোমার মনের ওই জ্বালা যন্ত্রণাগুলো সব উগড়ে দাও। দেখো, তাহলে তোমার মনের ভারটা অনেকটাই কমে যাবে। দ্যাখ রুমুদি, যা হবার সেটা তো হয়েই গেছে। কিন্তু নিজের মনের বোঝাটাকে একটু হালকা তো করতে পারবে।"
আমি অনুরাধার কথার জবাবে কিছু বলার আগে নিজের কান্না সামলাবার চেষ্টা করছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম, হ্যাঁ ও বোধহয় ঠিক কথাই বলেছে। আমার ভেতরের জমে থাকা কথাগুলো খুলে বললে আমার মনের ভার কিছুটা হলেও অবশ্যই কমবে। আমি ভেজা চোখে অনুরাধার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কাল রাতে যখন আমি বিজলীমাসিকে কথা গুলো বলছিলাম তুই কি সে’সব শুনেছিস?"
অনুরাধা বলল, "আমি তখন মাসির ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তোমাদের কথা শুনছিলাম। আসলে অত রাতে মাসি তোমাকে কেন ডেকেছিল সেটাই শুনব বলে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছি যে তুমি অজ্ঞান হয়ে গেছ, তখনই আর কেউ আসবার আগে আমিই সে ঘরে গিয়ে ঢুকেছিলাম প্রথম।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "সকালে বাথরুমে স্নান করবার সময় আমার গায়ে একটু বমি বমি গন্ধ পেয়েছিলাম। শ্যামলীদি বলল আমি নাকি বমি করে দিয়েছিলাম। সত্যি নাকি রে?"
অনুরাধা আমার একটা হাত ধরে বলল, "তুমি যেভাবে হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছিলে তাতে তো বমি হবারই কথা। তাতে আর তোমার কি দোষ? এতগুলো বছর ধরে কী কষ্টটাই না তুমি নিজের মনের ভেতর চেপে রেখেছিলে। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও এমনটাই হত। তাছাড়া ও’ ঘরে যাবার আগে তো আমার সাথে বসে দু’ তিন পেগ মদও খেয়েছিলে তুমি। প্রচুর বমি করেছ তুমি। মাসির পড়ে থাকা শাড়িটার বুকের ওপর থেকে হাঁটু পর্যন্ত একেবারে বমিতে ভরে গিয়েছিল। তোমারও মুখ থেকে বুক পর্যন্ত বমিতে ভিজে গিয়েছিল। ডাক্তার ঘরে ঢোকবার আগে শ্যামলীদি তোমার ঘর থেকে একটা অন্য নাইটি নিয়ে গিয়ে তোমার নাইটিটা বদলে দিয়েছিল। আর একটা টাওয়েল ভিজিয়ে তোমার নাক মুখ বুক মুছে দিয়েছিল। কিন্তু মাসি যে তোমাকে কতটা ভালবাসে তা কালই বুঝতে পেরেছি। তোমাকে সুস্থ করে তুলতেই সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নিজের বমিভেজা শাড়িটাই পড়ে তোমার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল। আর শ্যামলীদি আর বিজলীমাসি দু’জনেই যে কী কান্নাকাটি শুরু করেছিল সে তুমি বিশ্বাসই করবে না। আমি তো ভাবতেই পারিনি বেশ্যা মেয়েদের মনেও এত ভাব ভালবাসা এত স্নেহ মমতা থাকতে পারে!"
আমি লাজুক মুখে মাথা নিচু করে বললাম, "সত্যি কাল তোদের সবাইকে আমি খুব কষ্ট দিয়েছি রে। আমাকে মাফ করিস ভাই।"
এমন সময়ে শ্যামলীদির সাথে বিজলী মাসিও এসে আমার ঘরে ঢুকল। বিজলীমাসি আমার পাশে বসে আমার মুখটা দু’হাতে ধরে বলল, "কী হয়েছে রে মিনু? এখন আবার কাঁদছিস কেন তুই?"
অনুরাধা বলল, "আসলে মাসি, আমি ওকে বলছিলাম যে কাল রাতে যে কথাগুলো খুলে বলতে পারেনি, সে কথাগুলো তোমার কাছে খুলে বলা উচিৎ। তাহলে ওর মনের বোঝা কিছুটা হালকা হবে।"
বিজলীমাসি অনুরাধার কথা শুনে বলল, "একদম ঠিক বলেছিস তুই রাধা। সবাই বলে আমাদের মনে কোন দয়া মায়া নেই। কিন্তু কাল ওর মুখের ওই দুটো কথা শুনে আমিও যেন কেমন শিউড়ে উঠেছি। এত নৃশংসও কেউ হতে পারে? মা মেয়েকে বাড়ির সকলের সামনে একসাথে রেপ করেও রেহাই দেয়নি। ওভাবে মেয়েটার চোখের সামনে এক এক করে ...... ছিঃ ছিঃ। এ মেয়েটাকে দশ বছর ধরে দেখছি আমি। আমাদের অনেক মাগীরই মনে অনেক রকমের দুঃখ আছে, জানি। কিন্তু ওর মনে যে এমন একটা দুঃখের বিশাল পাহাড় জমে ছিল, সেটা তো আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি রে। তাই আমিও তোর কথায় সায় দিচ্ছি। ওর না বলা কথা গুলোও আমাদের শুনতে হবে, তাহলে ওর পক্ষে ভালই হবে। আর আমাকে তো পুরো ব্যাপারটা শুনতেই হবে।"
বারো বছর আগের সে দৃশ্য গুলো আবার আমার চোখের সামনে ফুটে উঠেছিল। আর চোখ বুজে থেকেও আমি তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। নিজের চোখের জল মুছে বললাম, "কী বলব মাসি? সে কথাগুলো মনে হলেই যে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারি না গো। সেদিন রাতে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। বেশ জোরে হাওয়া চলছিল সেদিন সকাল থেকেই। সন্ধ্যের পর থেকে এক নাগাড়ে বিদ্যুতের ঝলকের সাথে সাথে প্রচণ্ড মেঘের গর্জন হচ্ছিল। তখন বাড়িতে আমার বাবা, মা, ছোড়দা আর আমিই থাকতাম। বড়দা তখন কলকাতারই কোন একটা কলেজে পড়াত। কলেজের ছুটি ছিল বলে বড়দাও তখন বাড়ি এসেছিল। আমার আর দাদাদের ঘর ছিল দোতলায়। মা বাবা থাকতেন নিচের তলায়। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা যে যার ঘরে শুয়ে পড়েছিলাম। এমন সময়ে আমাদের দোতলার সিঁড়ির মুখের কলাপসিবল গেটটায় প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ হয়েছিল। তখনও আমার ঘুম আসেনি। কিসের শব্দ হয়েছিল তা দেখতে যাব বলে আমি বিছানা থেকে নেমে সুইচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঘরের বড় আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। আর ঠিক তখনই আমার ঘরের দরজা খুলে কেউ যেন ঘরে ঢুকে পড়েছিল। আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠতেই মুখোশ পড়া একটা লোক লাফ দিয়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে আমার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি লোকটার হাতের শক্ত বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার প্রয়াস চালাতেই দেখি বড়দা আর ছোড়দাকেও মুখ বেঁধে চারজন মুখোশ পড়া লোক তাদের পাঁজাকোলা করে আমার ঘরের ভেতর এসে ঢুকল। বড়দা ছোড়দার অবস্থাও একেবারে আমার মতই। তার খানিক বাদেই মা আর বাবাকেও হাত পা আর মুখ বাঁধা অবস্থায় দুটো লোক আমার ঘরের ভেতর টেনে এনে ঢুকিয়েছিল। তার কয়েক সেকেন্ড বাদেই তারা আমার মুখটাও একই ভাবে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল।"
এতখানি বলে আমি আবার দু’হাতে আমার মুখ ঢেকে ফেললাম।
কান্না ভেজা চোখেই একবার বিজলীমাসির মুখের দিকে চাইতেই দেখি তার চোখ দিয়ে যেন আগুন ফুটে বেরোচ্ছে। শ্যামলীদি আর অনুরাধা দু’দিক থেকে আমাকে ধরে আমার চোখের জল মুছিয়ে যাচ্ছিল।
কিছুক্ষণ বাদে নিজের কান্নার বেগ সামলে আমি বললাম, "শুধু আমার আর মা-র হাত পা বাঁধেনি ডাকাতগুলো। কিন্তু আমাদের মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু কেউ না কেউ সর্বক্ষণই আমার আর মায়ের হাত চেপে ধরে রেখেছিল। আমি আর মা দু’জনেই নাইটি পড়া ছিলাম। একটা লোক মা-র নাইটিটাকে ফালা ফালা করে ছিঁড়ে তার ব্রা আর প্যান্টিও টেনে ছিঁড়ে ফেলল। চোখের পলক পড়তে না পড়তে আমারও একই দশা হয়েছিল। বাবা, দুই দাদা আর আটজন মুখোশধারী গুণ্ডার সামনে আমরা মা ও মেয়ে দু’জনে একেবারে নির্বস্ত্র হয়ে পড়েছিলাম। প্রায় সাথে সাথেই তিন চার জন লোক ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত মা-র উলঙ্গ শরীরটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমার ওপরেও বাকি সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ ধরে আমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল সকলে মিলে। তারপর ওই আটজন মুখোশ পড়া লোক একের পর এক বাড়ির সকলের সামনে আমাকে আর মাকে রেপ করেছিল। কত সময় ধরে তারা ও’সব করেছিল তার কোনও হুঁশ ছিলনা আমার। কিন্তু সকলের শেষে সবচেয়ে লম্বা লোকটা আমাকে ধর্ষণ করবার পর আমার আর নড়ার শক্তি ছিল না। আমি বোধ হয় কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছিল, তাও বুঝতে পারিনি। কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন দেখেছিলাম আমরা সবাই নিচের তলায় আমাদের ড্রয়িং রুমে। আর আমাদের সকলেরই হাত দুটো পিঠের দিকে নিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর সকলেরই মুখ কাপড়ে বাঁধা। মা বাবা ছোড়দা আর বড়দাকে আমাদের বিশাল ড্রয়িং রুমের চারদিকে চারজন মুখোশ পড়া লোক তাদের চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি আর মা দু’জনেই পুরোপুরি ন্যাংটো অবস্থায় দুটো লোকের হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে ছিলাম। আমার তখন দাঁড়িয়ে থাকবার শক্তিও ছিল না। জ্ঞান ফিরে আসার পরেও আর উঠে বসতে পারিনি। আমি চোখ খুলতেই সবচেয়ে লম্বা মত যে লোকটা আমায় ধরে ছিল সে বলেছিল, ‘এবার শেষ কাজটা কর’। সে’কথা শুনেই যে লোকটা বড়দাকে চেপে ধরে দাঁড়িয়েছিল সে তার কোমরের পেছন দিক থেকে একটা ধারালো ছোঁড়া টেনে বের করে একহাতে বড়দার মুখ চেপে ধরে তার গলায় ছোঁড়াটা বসিয়ে একটা হ্যাঁচকা টান মেরেছিল। বড়দা সঙ্গে সঙ্গে একটা কাঁটা কলাগাছের মত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল নিঃশব্দে। তার গলার কেটে যাওয়া নলীটা থেকে ফিনকি দিয়ে ফোয়ারার মত রক্তের ধারা বেরিয়ে এসেছিল। আমি শরীরের সমস্ত শক্তি লাগিয়ে প্রাণপণে চিৎকার করে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধ মুখের ভেতরেই সে চিৎকারের শব্দ চাপা পড়ে গিয়েছিল। আকাশে মেঘের গর্জনও সমানে চলছিল। আমি দেখতে পেয়েছিলাম, মেঝেতে পড়ে যাবার পরেও বড়দার শরীরটা কাটা পাঠার শরীরের মত কিছুক্ষণ ধরে দাপাদাপি করছিল। তারপর একটা সময় নিথর হয়ে গিয়েছিল। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার বেঁধে রাখা মুখটা লম্বা লোকটা এত শক্ত করে চেপে ধরেছিল যে শুধু সামান্য একটু গোঙানির শব্দ ছাড়া আমার মুখ দিয়ে আর কিছু বের হয়নি। আমার মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় আবার অজ্ঞান হয়ে যাব। কিন্তু ঠিক তখনই আরেকটা লোক আমার পাশে এসে এত জোরে আমার একটা মাই টিপে ধরেছিল যে ব্যথায় আমি আবার চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম। আর চোখ মেলতেই দেখেছিলাম ছোড়দার শরীরটাও ধপ করে মেঝেয় লুটিয়ে পড়ল। তার গলা থেকেও গলগল করে রক্তের স্রোত বেরিয়ে আসছিল। তার নিষ্প্রাণ শরীরটাও কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে শান্ত হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক দু’জনকে এভাবে লুটিয়ে পড়তে দেখে আমি আর মা গলা ফাটিয়ে চিৎকার উঠছিলাম। কিন্তু আমাদের চিৎকারের সেই বেগে গলা ফুলে উঠলেও মুখ দিয়ে যেটুকু শব্দ বেরোচ্ছিল তা বাইরের হাওয়া আর মেঘের গর্জনে চাপা পড়ে যাচ্ছিল। একটা লোক আমাকে টেনে বসিয়ে দিয়েছিল মেঝের ওপর। বারবার আমার শরীরটা যেন ঢলে ঢলে পড়তে চাইছিল। কিন্তু প্রতিবারই কেউ না কেউ আমার মাইয়ে আর গুদে এমন ভাবে মুচড়ে ধরছিল যে অজ্ঞান হতে গিয়েও আমার শরীরটা ঝটকা মেরে উঠছিল। আর তার ঠিক সাথে সাথে আমার মায়ের শরীরটাও একইভাবে পড়ে গিয়েছিল। আর তারপর বাবাকেও একই ভাবে লুটিয়ে পড়তে দেখেছিলাম" এতটা বলে আমি আবার হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়লাম।
শ্যামলীদি আর অনুরাধা আমাকে দু’দিক থেকে চেপে ধরল। আর বিজলীমাসির কর্কশ আওয়াজ কানে এল, "শালা হারামীর বাচ্চা গজানন। এবার তোর শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। এই বিজলীর হাত থেকে তোকে এবার কে বাঁচায় আমি সেটাই দেখব। শুয়োরের বাচ্চা তোর বাড়াটাকে কেটে আমি যদি রাস্তার নেড়ি কুত্তো গুলোকে খাওয়াতে না পারি, তাহলে আমার নাম পাল্টে ফেলিস তোরা।"
শ্যামলীদি আর অনুরাধা এক নাগাড়ে আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যেতে লাগল, "জানিরে মিনু, এ কথাগুলো বলতে তোর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তবু আজ আমাদের তুই সব কথা খুলে বল বোন। এ কথাগুলো তোর মনের মধ্যে চেপে রাখলে তুই যে আরও বেশী কষ্ট পাবি। জানিনা, ভগবান তোকে কোন পাপের এমন শাস্তি দিয়েছেন। এমন ফুলের মত টুকটুকে মেয়েটার এমন সর্বনাশ করতে ওদের বুকগুলো কি একটুও কাঁপেনি?"
আমি কান্না ভেজা চোখ মেলতেই বিজলীমাসি সাপের মত হিসহিসিয়ে উঠে বলল, "হ্যাঁ মিনু, তারপর কি হল, আমাকে সবটা খুলে বল। গজাননই যে ওই দলের পান্ডা ছিল, সেটা তুই বুঝলি কি করে? ওরা তো মুখোশ পড়ে ছিল সবাই!"
অনেক চেষ্টার পর নিজের কান্নার দমক সামলে আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম, "চারজনকে মেরে ফেলবার পর আমি তখন সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর যখন আমার জ্ঞান ফিরেছিল তখন দেখলাম আমাকে একটা গাড়িতে চাপিয়ে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ বোধহয় আমার চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়েছিল। একবার একটুখানি চোখ মেলে পরিস্থিতিটা বোঝবার চেষ্টা করলাম। তখন দেখলাম অন্ধকার এবড়ো থেবড়ো রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়িটা ছুটে চলেছে। আর আমার দু’পাশে দু’জন লোক বসে আছে। পেছনের সীট থেকেও দু’ তিনজনের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। তবে তখন আমি নির্বস্ত্র ছিলাম না। আমার গায়ে কোন একটা নাইটি পড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি তখন ভেবেছিলাম আমার দুর্ভোগ আরও কিছু বাকি আছে। নইলে ওরা আমাকেও মেরে ফেলল না কেন। কিন্তু প্রতিবাদ করে কোনও লাভও হত না। আর কী করব না করব কিছুই বুঝতেও পারছিলাম না। তাই চোখ বুজে অজ্ঞান হয়ে থাকবার ভাণ করেই পড়ে রয়েছিলাম।"
এতখানি বলে আমি আবার নিজের চোখ মুছতে শুরু করতেই মনে হল আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে। আমি অনুরাধার উদ্দেশ্যে বললাম, "আমাকে একটু জল খেতে দিবি রাধা? গলাটা শুকিয়ে আসছে রে।"
অনুরাধা লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে গিয়েই টেবিলের ওপরের জগ থেকে একটা গ্লাসে খানিকটা জল এনে আমাকে দিল। আমি ঢক ঢক করে জলটুকু খেয়ে নিয়ে দু’ তিনবার ঢোঁক গিলতেই শ্যামলীদি অনুরাধাকে বলল, "রাধা ওর আলমাড়িতে দেখ ব্রান্ডির বোতল আছে। একটু ব্রান্ডি এনে দে তো ওকে।"
আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ব্র্যান্ডি খাবার। অনুরাধা আমাকে ব্র্যান্ডি এনে দিতেই আমি পরপর দু’চুমুক ব্র্যান্ডি খেয়ে নিলাম। বিজলীমাসি আমার একটা হাত ধরে বলল, "একবারে খাস নে। অল্প অল্প করে খা। আর তারপর কি হল, বল?"
বলে সে আমার হাতে দুটো ট্যাবলেট দিল।
শ্যামলীদি বেরিয়ে যেতে অনুরাধা টেবিলের ওপর থেকে জলের গ্লাসটা এনে আমার হাতে দিয়ে বলল, "নাও রুমুদি, ট্যাবলেট দুটো খেয়ে নাও।"
আমি ওর হাত থেকে ট্যাবলেট দুটো নিয়ে বললাম, "সবসময় রুমুদি বলে ডাকিস নারে আমায় রাধা।"
অনুরাধা জবাব দিল, "ভেবো না। শোনার মত কেউ যখন আশেপাশে থাকবে না তখনই শুধু আমি তোমায় এ নামে ডাকব। আর সতর্ক ভাবেই ডাকব। নাও তো, ওষুধটা খেয়ে নাও।"
আমি ট্যাবলেট দুটো খেয়ে গ্লাসটা রাখতে বিছানা থেকে নামবার উদ্যোগ করতেই অনুরাধা আমার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিল। আমি একটু ম্লান হেসে বললাম, "কাল রাতে তোদের সবাইকে আমি খুব জ্বালিয়েছি, তাইনা রে অনু?"
অনুরাধা আবার আমার পাশে বসে আমার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, "জীবনভর শুধু লোককে জ্বালিয়েই এসেছি আমি রুমুদি। কখনো কারো জন্যে নিজে জ্বলিনি। সারাটা জীবন ধরে আমার আশেপাশের মানুষগুলোর মনে শুধু ব্যথাই দিয়ে এসেছি। কাল জীবনে প্রথমবার মাসি আর সকলের কথায় আমি যখন তোমার সামান্য একটু পরিচর্যা করেছি, তখন জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলাম, কারো ব্যথায় একটুখানি প্রলেপ লাগিয়ে দিলে নিজেও কতটা সুখ পাওয়া যায়। আমি তো মনে মনে চাইছিলাম সারাটা রাত তোমার শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু হয়ত কাল খুব বেশী মদ খেয়ে ফেলেছিলাম বলেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, তা নিজেও বুঝিনি।"
আমিও অনুরাধার কথা শুনে নিরুত্তর রইলাম। কিন্তু অনুরাধাই আবার বলল, "তুমি হয়ত জানো না রুমুদি। সেই রাতের পর সারাটা শহরে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল। সকালে অনেকগুলো পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, আর জনতার ভিড়ে বড় রাস্তা থেকে তোমাদের বাড়ির পেছন দিকের সরু রাস্তাটাও একেবারে জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। পুলিশে জনতায় রিপোর্টারে সারা শহরটা একেবারে গিজগিজ করছিল। সকালে সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা শুনে আমিও তোমাদের বাড়ির দিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তোমাদের বাড়ির গলি দিয়ে ঢুকতে পারছিলাম না সেদিন। পেছনের ঘুর পথ দিয়ে কোনরকমে নির্ঝরদের পেছনের গেট দিয়ে ওদের বাড়ি গিয়ে ঢুকতে পেরেছিলাম। ওদের বাড়ির ছাদেও লোকে লোকারণ্য হয়ে ছিল। তোমাদের বাড়ির সব দরজা জানালা বন্ধ ছিল। তাই ভেতরের কোন দৃশ্য দেখতে পারিনি। আর তোমাদের বাড়ির সামনে এবং গোটা গলিটায় যারা দাঁড়িয়েছিল সকলের মুখেই হায় হায় শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রত্যেকটা লোকের চোখে জল ছিল। অনেককে তো হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখেছিলাম। নির্ঝরের মা বাবা দিদি সবাই আলুথালু হয়ে কাঁদছিল সেদিন। আর নির্ঝরকে দেখেছিলাম নিজের ঘরের একটা জানালায় নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে তোমাদের বাড়ির সামনের ওই ভিড়ের দিকে তাকিয়েছিল। সকলের মুখেই নানা রকম চাপা গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছিলাম ‘সব শেষ হয়ে গেছে’, ‘চারটে লাশ পাওয়া গেছে’, ‘বাড়ির কাজের লোকগুলোকে হাত পা মুখ বেঁধে একটা ঘরের ভেতর আটকে রেখে গেছে’, ‘কাউকে ছাড়েনি’, ‘সকলের গলা কেটে রেখে গেছে’, ‘রক্তে ঘর একেবারে ভেসে গেছে’, ‘সোনাদানা টাকা কড়ি যা ছিল সব নিয়ে গেছে’, ‘মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেছে’ এমন সব কথা কানে আসছিল আমার। আমার মত স্বার্থপর নিষ্ঠুর একটা মেয়ের মনটাও যেন অস্থির হয়ে উঠেছিল। ওদের ছাদের ওপর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম শ’য়ে শ’য়ে লোক মোবাইলে ভিডিও ক্যামেরায় তোমাদের বাড়িটার ছবি তুলছিল। ইলেকট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়ার রিপোর্টারেরা ফোনে এবং স্পীকার হাতে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সমগ্র ঘটনার ধারা বিবরণী দিয়ে চলছিল। একসময় দেখতে পেয়েছিলাম সাদা কাপড়ে মোড়া একের পর এক চারখানা ডেডবডি বাইরে এনে সাদা অ্যাম্বুলেনসে ওঠানো হয়েছিল। আর ওই মূহুর্তে জনতার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না যেন চিৎকারে পরিণত হয়েছিল। আমার মত নির্দয়ী নিষ্ঠুর মেয়েও সেদিন চোখের জল আটকাতে পারিনি। প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে যখন আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম, তখন রাস্তার সকলের মুখে একটাই কথা শুনেছিলাম ‘মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেছে, মেয়েটারও না জানি কী সর্বনাশ করেছে ডাকাতগুলো’। আজ এত বছর বাদে তুমি বেঁচে আছ দেখে যতটা খুশী হচ্ছে আমার, ঠিক ততটাই দুঃখ হচ্ছে ওই রাতে তোমাদের বাড়ির ভেতর যা কিছু ঘটেছিল, সে সব ঘটনার কথা কল্পনা করে।"
আমি আবার দু’হাতে আমার মুখ ঢেকে ফেলেছিলাম। সেই রাতের দৃশ্য গুলো আবার চোখের সামনে ভেসে উঠতে আমার শরীর কেঁপে উঠল। অনুরাধা আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, "ভয় পেওনা রুমুদি। এ কথাগুলো নিজের মনের মধ্যে এতগুলো বছর ধরে চেপে রাখতে রাখতে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ। জানি, তোমার কথা শোনবার মত একজনও তোমার পাশে ছিল না এতদিন। আজ তুমি আমার কাছে তোমার মনের ওই জ্বালা যন্ত্রণাগুলো সব উগড়ে দাও। দেখো, তাহলে তোমার মনের ভারটা অনেকটাই কমে যাবে। দ্যাখ রুমুদি, যা হবার সেটা তো হয়েই গেছে। কিন্তু নিজের মনের বোঝাটাকে একটু হালকা তো করতে পারবে।"
আমি অনুরাধার কথার জবাবে কিছু বলার আগে নিজের কান্না সামলাবার চেষ্টা করছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম, হ্যাঁ ও বোধহয় ঠিক কথাই বলেছে। আমার ভেতরের জমে থাকা কথাগুলো খুলে বললে আমার মনের ভার কিছুটা হলেও অবশ্যই কমবে। আমি ভেজা চোখে অনুরাধার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কাল রাতে যখন আমি বিজলীমাসিকে কথা গুলো বলছিলাম তুই কি সে’সব শুনেছিস?"
অনুরাধা বলল, "আমি তখন মাসির ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তোমাদের কথা শুনছিলাম। আসলে অত রাতে মাসি তোমাকে কেন ডেকেছিল সেটাই শুনব বলে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছি যে তুমি অজ্ঞান হয়ে গেছ, তখনই আর কেউ আসবার আগে আমিই সে ঘরে গিয়ে ঢুকেছিলাম প্রথম।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "সকালে বাথরুমে স্নান করবার সময় আমার গায়ে একটু বমি বমি গন্ধ পেয়েছিলাম। শ্যামলীদি বলল আমি নাকি বমি করে দিয়েছিলাম। সত্যি নাকি রে?"
অনুরাধা আমার একটা হাত ধরে বলল, "তুমি যেভাবে হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছিলে তাতে তো বমি হবারই কথা। তাতে আর তোমার কি দোষ? এতগুলো বছর ধরে কী কষ্টটাই না তুমি নিজের মনের ভেতর চেপে রেখেছিলে। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও এমনটাই হত। তাছাড়া ও’ ঘরে যাবার আগে তো আমার সাথে বসে দু’ তিন পেগ মদও খেয়েছিলে তুমি। প্রচুর বমি করেছ তুমি। মাসির পড়ে থাকা শাড়িটার বুকের ওপর থেকে হাঁটু পর্যন্ত একেবারে বমিতে ভরে গিয়েছিল। তোমারও মুখ থেকে বুক পর্যন্ত বমিতে ভিজে গিয়েছিল। ডাক্তার ঘরে ঢোকবার আগে শ্যামলীদি তোমার ঘর থেকে একটা অন্য নাইটি নিয়ে গিয়ে তোমার নাইটিটা বদলে দিয়েছিল। আর একটা টাওয়েল ভিজিয়ে তোমার নাক মুখ বুক মুছে দিয়েছিল। কিন্তু মাসি যে তোমাকে কতটা ভালবাসে তা কালই বুঝতে পেরেছি। তোমাকে সুস্থ করে তুলতেই সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নিজের বমিভেজা শাড়িটাই পড়ে তোমার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল। আর শ্যামলীদি আর বিজলীমাসি দু’জনেই যে কী কান্নাকাটি শুরু করেছিল সে তুমি বিশ্বাসই করবে না। আমি তো ভাবতেই পারিনি বেশ্যা মেয়েদের মনেও এত ভাব ভালবাসা এত স্নেহ মমতা থাকতে পারে!"
আমি লাজুক মুখে মাথা নিচু করে বললাম, "সত্যি কাল তোদের সবাইকে আমি খুব কষ্ট দিয়েছি রে। আমাকে মাফ করিস ভাই।"
এমন সময়ে শ্যামলীদির সাথে বিজলী মাসিও এসে আমার ঘরে ঢুকল। বিজলীমাসি আমার পাশে বসে আমার মুখটা দু’হাতে ধরে বলল, "কী হয়েছে রে মিনু? এখন আবার কাঁদছিস কেন তুই?"
অনুরাধা বলল, "আসলে মাসি, আমি ওকে বলছিলাম যে কাল রাতে যে কথাগুলো খুলে বলতে পারেনি, সে কথাগুলো তোমার কাছে খুলে বলা উচিৎ। তাহলে ওর মনের বোঝা কিছুটা হালকা হবে।"
বিজলীমাসি অনুরাধার কথা শুনে বলল, "একদম ঠিক বলেছিস তুই রাধা। সবাই বলে আমাদের মনে কোন দয়া মায়া নেই। কিন্তু কাল ওর মুখের ওই দুটো কথা শুনে আমিও যেন কেমন শিউড়ে উঠেছি। এত নৃশংসও কেউ হতে পারে? মা মেয়েকে বাড়ির সকলের সামনে একসাথে রেপ করেও রেহাই দেয়নি। ওভাবে মেয়েটার চোখের সামনে এক এক করে ...... ছিঃ ছিঃ। এ মেয়েটাকে দশ বছর ধরে দেখছি আমি। আমাদের অনেক মাগীরই মনে অনেক রকমের দুঃখ আছে, জানি। কিন্তু ওর মনে যে এমন একটা দুঃখের বিশাল পাহাড় জমে ছিল, সেটা তো আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি রে। তাই আমিও তোর কথায় সায় দিচ্ছি। ওর না বলা কথা গুলোও আমাদের শুনতে হবে, তাহলে ওর পক্ষে ভালই হবে। আর আমাকে তো পুরো ব্যাপারটা শুনতেই হবে।"
বারো বছর আগের সে দৃশ্য গুলো আবার আমার চোখের সামনে ফুটে উঠেছিল। আর চোখ বুজে থেকেও আমি তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। নিজের চোখের জল মুছে বললাম, "কী বলব মাসি? সে কথাগুলো মনে হলেই যে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারি না গো। সেদিন রাতে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। বেশ জোরে হাওয়া চলছিল সেদিন সকাল থেকেই। সন্ধ্যের পর থেকে এক নাগাড়ে বিদ্যুতের ঝলকের সাথে সাথে প্রচণ্ড মেঘের গর্জন হচ্ছিল। তখন বাড়িতে আমার বাবা, মা, ছোড়দা আর আমিই থাকতাম। বড়দা তখন কলকাতারই কোন একটা কলেজে পড়াত। কলেজের ছুটি ছিল বলে বড়দাও তখন বাড়ি এসেছিল। আমার আর দাদাদের ঘর ছিল দোতলায়। মা বাবা থাকতেন নিচের তলায়। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা যে যার ঘরে শুয়ে পড়েছিলাম। এমন সময়ে আমাদের দোতলার সিঁড়ির মুখের কলাপসিবল গেটটায় প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ হয়েছিল। তখনও আমার ঘুম আসেনি। কিসের শব্দ হয়েছিল তা দেখতে যাব বলে আমি বিছানা থেকে নেমে সুইচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঘরের বড় আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। আর ঠিক তখনই আমার ঘরের দরজা খুলে কেউ যেন ঘরে ঢুকে পড়েছিল। আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠতেই মুখোশ পড়া একটা লোক লাফ দিয়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে আমার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি লোকটার হাতের শক্ত বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার প্রয়াস চালাতেই দেখি বড়দা আর ছোড়দাকেও মুখ বেঁধে চারজন মুখোশ পড়া লোক তাদের পাঁজাকোলা করে আমার ঘরের ভেতর এসে ঢুকল। বড়দা ছোড়দার অবস্থাও একেবারে আমার মতই। তার খানিক বাদেই মা আর বাবাকেও হাত পা আর মুখ বাঁধা অবস্থায় দুটো লোক আমার ঘরের ভেতর টেনে এনে ঢুকিয়েছিল। তার কয়েক সেকেন্ড বাদেই তারা আমার মুখটাও একই ভাবে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল।"
এতখানি বলে আমি আবার দু’হাতে আমার মুখ ঢেকে ফেললাম।
কান্না ভেজা চোখেই একবার বিজলীমাসির মুখের দিকে চাইতেই দেখি তার চোখ দিয়ে যেন আগুন ফুটে বেরোচ্ছে। শ্যামলীদি আর অনুরাধা দু’দিক থেকে আমাকে ধরে আমার চোখের জল মুছিয়ে যাচ্ছিল।
কিছুক্ষণ বাদে নিজের কান্নার বেগ সামলে আমি বললাম, "শুধু আমার আর মা-র হাত পা বাঁধেনি ডাকাতগুলো। কিন্তু আমাদের মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু কেউ না কেউ সর্বক্ষণই আমার আর মায়ের হাত চেপে ধরে রেখেছিল। আমি আর মা দু’জনেই নাইটি পড়া ছিলাম। একটা লোক মা-র নাইটিটাকে ফালা ফালা করে ছিঁড়ে তার ব্রা আর প্যান্টিও টেনে ছিঁড়ে ফেলল। চোখের পলক পড়তে না পড়তে আমারও একই দশা হয়েছিল। বাবা, দুই দাদা আর আটজন মুখোশধারী গুণ্ডার সামনে আমরা মা ও মেয়ে দু’জনে একেবারে নির্বস্ত্র হয়ে পড়েছিলাম। প্রায় সাথে সাথেই তিন চার জন লোক ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত মা-র উলঙ্গ শরীরটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমার ওপরেও বাকি সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ ধরে আমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল সকলে মিলে। তারপর ওই আটজন মুখোশ পড়া লোক একের পর এক বাড়ির সকলের সামনে আমাকে আর মাকে রেপ করেছিল। কত সময় ধরে তারা ও’সব করেছিল তার কোনও হুঁশ ছিলনা আমার। কিন্তু সকলের শেষে সবচেয়ে লম্বা লোকটা আমাকে ধর্ষণ করবার পর আমার আর নড়ার শক্তি ছিল না। আমি বোধ হয় কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছিল, তাও বুঝতে পারিনি। কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন দেখেছিলাম আমরা সবাই নিচের তলায় আমাদের ড্রয়িং রুমে। আর আমাদের সকলেরই হাত দুটো পিঠের দিকে নিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর সকলেরই মুখ কাপড়ে বাঁধা। মা বাবা ছোড়দা আর বড়দাকে আমাদের বিশাল ড্রয়িং রুমের চারদিকে চারজন মুখোশ পড়া লোক তাদের চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি আর মা দু’জনেই পুরোপুরি ন্যাংটো অবস্থায় দুটো লোকের হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে ছিলাম। আমার তখন দাঁড়িয়ে থাকবার শক্তিও ছিল না। জ্ঞান ফিরে আসার পরেও আর উঠে বসতে পারিনি। আমি চোখ খুলতেই সবচেয়ে লম্বা মত যে লোকটা আমায় ধরে ছিল সে বলেছিল, ‘এবার শেষ কাজটা কর’। সে’কথা শুনেই যে লোকটা বড়দাকে চেপে ধরে দাঁড়িয়েছিল সে তার কোমরের পেছন দিক থেকে একটা ধারালো ছোঁড়া টেনে বের করে একহাতে বড়দার মুখ চেপে ধরে তার গলায় ছোঁড়াটা বসিয়ে একটা হ্যাঁচকা টান মেরেছিল। বড়দা সঙ্গে সঙ্গে একটা কাঁটা কলাগাছের মত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল নিঃশব্দে। তার গলার কেটে যাওয়া নলীটা থেকে ফিনকি দিয়ে ফোয়ারার মত রক্তের ধারা বেরিয়ে এসেছিল। আমি শরীরের সমস্ত শক্তি লাগিয়ে প্রাণপণে চিৎকার করে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধ মুখের ভেতরেই সে চিৎকারের শব্দ চাপা পড়ে গিয়েছিল। আকাশে মেঘের গর্জনও সমানে চলছিল। আমি দেখতে পেয়েছিলাম, মেঝেতে পড়ে যাবার পরেও বড়দার শরীরটা কাটা পাঠার শরীরের মত কিছুক্ষণ ধরে দাপাদাপি করছিল। তারপর একটা সময় নিথর হয়ে গিয়েছিল। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার বেঁধে রাখা মুখটা লম্বা লোকটা এত শক্ত করে চেপে ধরেছিল যে শুধু সামান্য একটু গোঙানির শব্দ ছাড়া আমার মুখ দিয়ে আর কিছু বের হয়নি। আমার মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় আবার অজ্ঞান হয়ে যাব। কিন্তু ঠিক তখনই আরেকটা লোক আমার পাশে এসে এত জোরে আমার একটা মাই টিপে ধরেছিল যে ব্যথায় আমি আবার চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম। আর চোখ মেলতেই দেখেছিলাম ছোড়দার শরীরটাও ধপ করে মেঝেয় লুটিয়ে পড়ল। তার গলা থেকেও গলগল করে রক্তের স্রোত বেরিয়ে আসছিল। তার নিষ্প্রাণ শরীরটাও কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে শান্ত হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক দু’জনকে এভাবে লুটিয়ে পড়তে দেখে আমি আর মা গলা ফাটিয়ে চিৎকার উঠছিলাম। কিন্তু আমাদের চিৎকারের সেই বেগে গলা ফুলে উঠলেও মুখ দিয়ে যেটুকু শব্দ বেরোচ্ছিল তা বাইরের হাওয়া আর মেঘের গর্জনে চাপা পড়ে যাচ্ছিল। একটা লোক আমাকে টেনে বসিয়ে দিয়েছিল মেঝের ওপর। বারবার আমার শরীরটা যেন ঢলে ঢলে পড়তে চাইছিল। কিন্তু প্রতিবারই কেউ না কেউ আমার মাইয়ে আর গুদে এমন ভাবে মুচড়ে ধরছিল যে অজ্ঞান হতে গিয়েও আমার শরীরটা ঝটকা মেরে উঠছিল। আর তার ঠিক সাথে সাথে আমার মায়ের শরীরটাও একইভাবে পড়ে গিয়েছিল। আর তারপর বাবাকেও একই ভাবে লুটিয়ে পড়তে দেখেছিলাম" এতটা বলে আমি আবার হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়লাম।
শ্যামলীদি আর অনুরাধা আমাকে দু’দিক থেকে চেপে ধরল। আর বিজলীমাসির কর্কশ আওয়াজ কানে এল, "শালা হারামীর বাচ্চা গজানন। এবার তোর শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। এই বিজলীর হাত থেকে তোকে এবার কে বাঁচায় আমি সেটাই দেখব। শুয়োরের বাচ্চা তোর বাড়াটাকে কেটে আমি যদি রাস্তার নেড়ি কুত্তো গুলোকে খাওয়াতে না পারি, তাহলে আমার নাম পাল্টে ফেলিস তোরা।"
শ্যামলীদি আর অনুরাধা এক নাগাড়ে আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যেতে লাগল, "জানিরে মিনু, এ কথাগুলো বলতে তোর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তবু আজ আমাদের তুই সব কথা খুলে বল বোন। এ কথাগুলো তোর মনের মধ্যে চেপে রাখলে তুই যে আরও বেশী কষ্ট পাবি। জানিনা, ভগবান তোকে কোন পাপের এমন শাস্তি দিয়েছেন। এমন ফুলের মত টুকটুকে মেয়েটার এমন সর্বনাশ করতে ওদের বুকগুলো কি একটুও কাঁপেনি?"
আমি কান্না ভেজা চোখ মেলতেই বিজলীমাসি সাপের মত হিসহিসিয়ে উঠে বলল, "হ্যাঁ মিনু, তারপর কি হল, আমাকে সবটা খুলে বল। গজাননই যে ওই দলের পান্ডা ছিল, সেটা তুই বুঝলি কি করে? ওরা তো মুখোশ পড়ে ছিল সবাই!"
অনেক চেষ্টার পর নিজের কান্নার দমক সামলে আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম, "চারজনকে মেরে ফেলবার পর আমি তখন সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর যখন আমার জ্ঞান ফিরেছিল তখন দেখলাম আমাকে একটা গাড়িতে চাপিয়ে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ বোধহয় আমার চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়েছিল। একবার একটুখানি চোখ মেলে পরিস্থিতিটা বোঝবার চেষ্টা করলাম। তখন দেখলাম অন্ধকার এবড়ো থেবড়ো রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়িটা ছুটে চলেছে। আর আমার দু’পাশে দু’জন লোক বসে আছে। পেছনের সীট থেকেও দু’ তিনজনের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। তবে তখন আমি নির্বস্ত্র ছিলাম না। আমার গায়ে কোন একটা নাইটি পড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি তখন ভেবেছিলাম আমার দুর্ভোগ আরও কিছু বাকি আছে। নইলে ওরা আমাকেও মেরে ফেলল না কেন। কিন্তু প্রতিবাদ করে কোনও লাভও হত না। আর কী করব না করব কিছুই বুঝতেও পারছিলাম না। তাই চোখ বুজে অজ্ঞান হয়ে থাকবার ভাণ করেই পড়ে রয়েছিলাম।"
এতখানি বলে আমি আবার নিজের চোখ মুছতে শুরু করতেই মনে হল আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে। আমি অনুরাধার উদ্দেশ্যে বললাম, "আমাকে একটু জল খেতে দিবি রাধা? গলাটা শুকিয়ে আসছে রে।"
অনুরাধা লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে গিয়েই টেবিলের ওপরের জগ থেকে একটা গ্লাসে খানিকটা জল এনে আমাকে দিল। আমি ঢক ঢক করে জলটুকু খেয়ে নিয়ে দু’ তিনবার ঢোঁক গিলতেই শ্যামলীদি অনুরাধাকে বলল, "রাধা ওর আলমাড়িতে দেখ ব্রান্ডির বোতল আছে। একটু ব্রান্ডি এনে দে তো ওকে।"
আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ব্র্যান্ডি খাবার। অনুরাধা আমাকে ব্র্যান্ডি এনে দিতেই আমি পরপর দু’চুমুক ব্র্যান্ডি খেয়ে নিলাম। বিজলীমাসি আমার একটা হাত ধরে বলল, "একবারে খাস নে। অল্প অল্প করে খা। আর তারপর কি হল, বল?"
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
SS_Sexy-এর লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereSS_Sexy-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment