CH Ad (Clicksor)

Monday, January 30, 2017

নিয়তির স্রোতস্বিনী_Written By SS_Sexy [চ্যাপ্টার ৫৩]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




নিয়তির স্রোতস্বিনী
Written By SS_Sexy




(#৫৩)

আমার বুকের ভেতরটা যেন আবার দুরুদুরু করতে শুরু করল। ঝুনুদি আমাকে একহাতে তার শরীরের সাথে চেপে ধরে অন্য হাতে দরজার পাল্লা ঠেলে আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। পাজামা আর স্যান্ডো গেঞ্জী পড়া অপূর্ব সুন্দর এক যুবক ঘরের প্রায় মাঝামাঝি দাঁড়িয়েছিল। তার দিকে চোখ পড়তেই আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। প্রায় ছ’ফুটের কাছাকাছি লম্বা, সুন্দর সুগঠিত শরীর, মাথায় এক ঝাঁকরা কালো কচকুচে কোঁকড়ানো চুল, চোখে সোনালী সরু ফ্রেমের একটা চশমা পড়া টুপুকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম, বারো বছর আগে দেখা মুখটাকে চিনতে বেশ কষ্টই হবে আমার। কিন্তু ঘরের উজ্জ্বল আলোয় টুপুকে চিনতে আমার এতটুকু কষ্ট হল না। সেই বুদ্ধিদীপ্ত মুখ। সেই ভাসা ভাসা চোখের চাউনি। শুধু শরীরটাই যা ফুলে ফেঁপে উঠেছে আগের চেয়ে অনেকটা বেশী।

টুপুও আমার মুখের দিকে চেয়ে যেন আর চোখ সরাতে পারছিল না। ঝুনুদি বাঁ হাতে আমার একটা হাত ধরে ডানহাতে টুপুর বাঁ হাতটাকে ধরে বলল, "এদিকে আয় ভাই" বলেই ঘরের একটা দেয়ালের দিকে আমাদের দু’জনকে টেনে নিয়ে গেল।

দেয়ালটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল দেয়ালে একই রকমের আধুনিক ফ্রেমে একের পর এক চারটে ছবি বাঁধিয়ে রাখা এক লাইনে। আর নিচের লাইনে আরও দুটো ছবি একই রকম বাঁধানো। ওপরের শারির প্রথম ছবিটা আমার বাবার। পরের ছবিটা মা-র। তারপরের দুটো রমেন কাকু আর সোনালী কাকিমার। আর নীচের লাইনের দুটো ছবি বড়দার আর ছোড়দার। প্রত্যেকটা ছবিতে টাটকা রজনীগন্ধার মালা ঝুলছে। তার নিচে বেশ লম্বা মত একটা তাক। তাতে ছ’টা ধূপদানী। ধূপদানী গুলোর তলায় ধূপকাঠির কিছু ছাই জমা হয়ে আছে।

ছবিগুলো দেখেই আমার বুকের ভেতর থেকে কান্না উথলে উঠতে চাইল। আমার মনে পড়ল, মা বাবা দাদাদের এ রঙিন ছবিগুলো একটা অ্যালবামে রাখা ছিল। অ্যালবামটা রাখা হত মা বাবার বেডরুমের একটা আলমারিতে। তবে সে ছবিগুলো এত বড় সাইজের ছিল না। ওগুলো ছিল পোস্টকার্ড সাইজের। কিন্তু এ ছবিগুলো আরও অনেক বড়। মনে হচ্ছে আগের ছবিগুলোকেই নতুন করে বড় করে ছাপানো হয়েছে। কিন্তু এত বছর পর ছবির সেই মানুষগুলোকে দেখে আমার দু’চোখ জলে ভরে গেল।

ঝুনুদি তার দু’হাতে আমাকে আর টুপুকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলল, "নে রুমু, মা বাবা আর দাদাদের প্রণাম করে তাদের আশীর্বাদ নে" বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল। আমিও দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে করতে হু হু করে কেঁদে ফেললাম। আমি নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। কিন্তু ঝুনুদি কাঁদতে কাঁদতেও আমাকে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইল।

কিন্তু আমাকে বেশী সময় ওভাবে থাকতে দিল না। আমাকে টেনে সোজা করতে করতে ঝুনুদি টুপুকে বলল, "ভাই, আর দেরী করিস নে। রুমুর মনের ওপর আজ খুব স্ট্রেস পড়েছে। ওকে বেশীক্ষণ কাঁদতে দিলে আবার হয়ত ও অজ্ঞান হয়ে পড়বে" বলে আমাকে আর টুপুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল। ঝুনুদি একহাত দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলল, "কাঁদিস না রুমু। আজ মা-বাবা, জেঠু-জেঠিমা, আদিদা, অভি সকলেই খুব খুশী হবে। তোদের দু’জনকে তারা নিশ্চয়ই প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করছেন ওপর থেকে।"

টুপু কোন কথা না বলে তার পাজামার পকেট থেকে একটা গোল কৌটো বের করে সেটার ভেতর থেকে একটা হীরের আংটি বের করে আমার বাঁ হাতের অনামিকায় পড়িয়ে দিল। আমি বারন করতে চাইলেও গলা দিয়ে কোন শব্দ বেরোল না। ঝুনুদি তাকটার ওপর থেকে খানিকটা ধূপের ছাই আঙুলের ডগায় তুলে আমার কপালে একটা টিপের মত লাগিয়ে দিয়ে বলল, "এটা হচ্ছে মা-বাবা, জেঠু-জেঠিমা আর তোর দাদাদের আশীর্বাদ। এবার আয় এখানে বোস" বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে টুপুর হাতের কৌটোটা থেকে একটা সোনার নেকলেস নিয়ে আমার গলায় পড়িয়ে দিতে চাইতেই আমি তার হাতটা ধরে বললাম, "এ কি করছ ঝুনুদি। আমি যে এ’সবের উপযুক্ত...."

ঝুনুদি আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, "চুপ, আর একটি কথাও নয়। অনেক কথা বলেছি। অনেক বুঝিয়েছি তোকে। আর নতুন করে কিছু বলতেও চাই না শুনতেও চাই না। একদম চুপটি করে বসে থাক" বলে আমার গলায় নেকলেসটা পড়িয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। কেঁদে কেঁদেই বলতে লাগল, "বাবা, তোমার শেষ ইচ্ছেটা আজ পূর্ণ করতে পেরেছি। তোমরা সবাই টুপু আর রুমুকে প্রানভরে আশীর্বাদ কর। বারোটা বছর ধরে ওরা দুটিতে অনেক কষ্ট পেয়েছে। এখন থেকে ওরা যেন সুখে থাকতে পারে।"

আমিও ঝুনুদিকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেললাম। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে টুপুও নিজের চোখের জল মুছল। বেশ কিছুক্ষণ পর ঝুনুদি আমার দু’গালে চুমু খেয়ে বলল, "আর আপত্তি করিস না লক্ষ্মী বোন আমার। বারোটা বছর ধরে তুই অনেক যন্ত্রণা সয়েছিস। ভাইকেও আমি বারোটা বছর ধরে ব্যথায় কষ্টে ছটফট করতে দেখেছি। আমি জানতাম ওর ব্যথা আর যন্ত্রণার উপশম তখনই হবে, যখন তোকে কাছে পাবে। তুই ওকে ভালবাসতিস কি না জানিনা। কিন্তু এটা জানি যে, ও তোকে যতটা ভালবাসে এমন ভাবে কাউকে ভালবাসতে দেখিনি। অনেক মেয়ে ওকে পাবার জন্যে পাগল হয়েছিল। আজও অনেকেই ওকে পাবার অপেক্ষা করছে। কিন্তু ওর মন প্রাণ জুড়ে যে শুধু তুইই ছিলি। ওই অনুরাধার মত সুন্দরীও ওর মনে দাগ কাটতে পারে নি। মা-বাবা আর জেঠু-জেঠিমা সকলেই তোদের দু’জনের বিয়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন। তাদের কথা ভেবেই না হয় তুই ওকে মেনে নে। আমি জানি, ভাই তোকে সারাটা জীবন নিজের বুকে করে রাখবে। তুইও খুব সুখে থাকবি আমি জানি। আর দেখিস, আমি তোকে একটা কথাও বানিয়ে বলিনি। যে কোনও মেয়ে ওকে স্বামী হিসেবে পেলে নিজেকে ধন্য মনে করবে। ও শুধু বয়সেই তোর থেকে একটু ছোট। অনেক মেয়েই তো নিজেদের চেয়ে বয়সে ছোট ছেলেদের বিয়ে করেছে। আর তারা সুখে সাচ্ছন্দে সংসারও করছে। তোরাও দুটিতে সুখী হবি, আমি জানি। শুধু তুই একটু রাজি হয়ে যা বোন। বারো বছর আগে তোদের সকলের অমন সর্বনাশ হবার পর ভাইকে সামলাতে মা বাবা আর আমি হিমসিম খেয়েছিলাম। তুই নিশ্চয়ই বেঁচে আছিস, আর একদিন না একদিন ঠিক আমাদের কাছে ফিরে আসবি, এ আশ্বাসবাণী শুনিয়েই অনেক কষ্টে আমরা ওকে সামলাতে পেরেছিলাম। কিন্তু আজ তুই আমাদের ফিরিয়ে দিলে ও বোধহয় এবার পাগলই হয়ে যাবে রে। আমি হাতজোড় করে তোর কাছে এ ভিক্ষেটুকু চাইছি। আমাকে ফিরিয়ে দিস না বোন।"

ঝুনুদির কথা শুনে আমিও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, "চুপ কর ঝুনুদি। দোহাই তোমার, এবার তুমি চুপ কর। কিন্তু আমার সারাটা শরীরে যে বারো বছরের নোংরা কাদা জমে আছে। এ নোংরার দাগ যে তোমাদের গায়েও লেগে যাবে গো।"

ঝুনুদি আবার আগের মত সুরেই বলল, "তোর শরীরে কতটা নোংরা কাদা লেগে আছে জানি। কিন্তু দেখিস তোর শরীরের সমস্ত নোংরা খুব অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের ভালবাসার জলে ধুয়ে যাবে। বল রুমু, আর তো তোর বাধা নেই?"

আমি এবার নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের চোখের জল মুছে ঝুনুদির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললাম, "শান্ত হও ঝুনুদি। তোমার ভাইয়ের মত একটা ছেলেকে যে সব মেয়েই বিয়ে করতে চাইবে এ তো জানা কথাই। কিন্তু আমার মত একটা নষ্টা মেয়েকে বিয়ে করে ও নিজেকে আর তোমাদের সবাইকে সমাজের চোখে ছোট করবে কেন? আমাকে ....."

এবার টুপু আমার ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে খুব শান্ত ভাবে বলল, "রুমু, কবে থেকে আমি তোমাকে মনে মনে ভালবাসতে শুরু করেছি, তা নিজেও ঠিক জানিনা। তোমাকে ভালবাসাটা আমার কাছে সুন্দর একটা স্বপ্নের মত ছিল। জীবনের অর্ধেকটা সময় সে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দিলাম। আজ তুমি সে ভালবাসায় সাড়া দিলেই আমার স্বপ্ন সত্যি হবে। আর নিজের সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে সমাজের কাছে যতই ছোট হই না কেন, আমি তা হাসিমুখে মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আর দিদি আর শান্তুদাও আমাদের পাশে থাকবে। সবরকম প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা করবার মত সাহস এবং ক্ষমতা, দুটোই আমার আছে। শুধু তোমার মনের দ্বিধাটুকু ঝেড়ে ফ্যালো। আর আমি কিচ্ছুটি চাই না।"

আমি টুপুর মুখের দিকে অবাক চোখে চাইলাম। ওর চোখ মুখও যেন একই কথা বলছে।

রুমুদির একটা হাত চেপে ধরে আমি কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রেখে বললাম, "ঝুনুদি, বারোটা বছর বাদে আজ আমার নিজেকে একটা মানুষ বলে মনে হচ্ছে। এতদিন তো শুধু একটা পণ্য সামগ্রী ছিলাম। আজ এখানে এসে, মা-বাবা, কাকু-কাকিমা আর দাদাদের ছবি দেখে, ডক্টর মুখার্জি আর তোমার ছেলে আদিকে দেখে মনে হচ্ছে, মিনু নামের নষ্টা মেয়েটা মরে যাচ্ছে। আর বারো বছর আগের রুমু যেন আবার বেঁচে উঠতে চাইছে। কিন্তু রুমুদি, তোমরা হয়ত বিজলীমাসি আর অনুরাধার মুখে আমার অনেক কথাই শুনেছ। কিন্তু তোমাদের কথায় রাজী হবার আগে আমার যে আরও কয়েকটা এমন কথা বলার আছে, যা তোমরা জানতে বা ভাবতেও পারনি। সে’টুকু বলার সুযোগ দেবে না আমায়?"

রুমুদি আমাকে খুশীতে জড়িয়ে ধরে বলল, "বল না, কে তোকে বারণ করছে বলতে। আমরা তো তোর মুখের কথা শোনবার জন্যেই অপেক্ষা করছি রে। বল রুমু, যা বলতে চাস, মন খুলে বল।"

আমি রুমুদির হাতটা দু’হাতে ধরে মাথা নিচু করে বললাম, "তোমার ভাইকেও বসতে বল। কথা গুলো তোমাদের দু’জনেরই শোনা উচিৎ।"

ঝুনুদি টুপুর হাত ধরে তাকে টেনে বিছানার ওপর তার অন্যপাশে বসিয়ে দিতেই আমি তাদের দু’জনের মুখের দিকে একটু দেখে মাথা নীচু করে বললাম, "ঝুনুদি, বারোটা বছর আমি যে কী কী করেছি তা হয়ত তোমরা নিশ্চয়ই কিছু কিছু শুনেছ। কিন্তু এ ছাড়াও আমার জীবনের আরও কিছু গোপন কথা আছে। তোমাদের জীবনের সাথে নিজের জীবনটা জড়িয়ে নেবার আগে সে কথাগুলোও যে তোমাদের খুলে বলা খুব প্রয়োজন"

বলে একটু থেমে বললাম, "আমাদের ওই শহরের কথা তো তোমরা সবই জানতে। অনুরাধার মত অতটা বাড়াবাড়ি না করলেও প্রায় প্রতিটা মেয়েই তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সাথে চুটিয়ে সুখ ভোগ করত। আমার সাথে পড়া প্রত্যেকটা মেয়েই সে’সব করত। আমাকেও তাদের দলে টেনে নিতে কম চেষ্টা করেনি তারা। কিন্তু ওই উঠতি বয়সে মা আমার সবচেয়ে বড় বান্ধবী এবং পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছিলেন। মা-র সাহায্য পেয়েছিলাম বলেই আমি ওই স্রোতে গা না ভাসিয়ে থাকতে পেরেছিলাম। তিনিই আমাকে শিখিয়েছিলেন যে ছেলেমেয়েরা নিজেদের শারিরীক সুখের জন্যেই ও’সব করে থাকে। তাই আমিও যাতে অন্যান্য বান্ধবীদের মত বয়েফ্রেন্ডদের সাথে শারিরীক সুখ পাবার চেষ্টায় নিজেদের পরিবারের বদনাম না করে বসি, মা তার একটা বৈকল্পিক উপায় বের করে দিয়েছিলেন।"

এতোটা বলে আমি একটু থামতেই টুপু ঝুনুদিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, "এই দিদি, শোন না। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে আমরা দু’জনই একে অন্যের সাথে আলোচনা করে নিলে ভাল হবে। তুই, বরং নিচে গিয়ে শান্তুদা আর অন্য সবাইকে সুখবরটা দে। সকলেই তো উদ্গ্রীব হয়ে আছে এ’কথাটা শোনার জন্যে।"

ঝুনুদি সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে বলল, "ঠিক বলেছিস ভাই। ওদের সকলকে খবরটা দিয়ে ওদের দুশ্চিন্তা দুর করা দরকার" বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে একটা আদরের চুমু খেয়ে বলল, "যা বলার আছে, মন খুলে বল সে’সব ভাইকে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনরকম গোপন কথা লুকিয়ে রাখতে নেই। কিন্তু আদি অনন্তকাল ধরে ভাইয়ের সাথে গল্প বলার সুযোগ পাবি না আজ। জাস্ট পনের মিনিট বাদেই আমি আবার এ’ঘরে চলে আসব। যা বলার, আর যা করার, তা এরই মধ্যে শেষে করে ফেলিস"

বলে দুষ্টু হাসি দিয়ে ঘরে থেকে বেরিয়ে গেল।

আমি খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে কথাগুলো কিভাবে বলব না বলব, তাই ভাবতে লাগলাম। এমন সময় টুপু নিজেই বলে উঠল, "গজানন তোমাদের পরিবারের সর্বনাশ করবার আগেও যে তুমি সেক্স এনজয় করতে, সে’কথাই কি বলতে চাইছ?"

আমি টুপুর কথা শুনে কেঁপে উঠলাম। অবাক চোখে ওর দিকে চাইতেই ও মিষ্টি করে হেসে বলল, "সে’সব ব্যাপার আমার জানা আছে। ও’সব নিয়ে আমার মনের ভেতর কোন দ্বিধাদ্বন্দ নেই। তাই সে’সব কথা বলে তোমাকে আর সময় নষ্ট করতে হবে না। তবে এর বাইরেও যদি আর কিছু বলার থাকে, অবশ্যই বলতে পার।"

আমি থতমত খেয়ে তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করলাম, "তু-তু-মি সে’স-স-ব জানো?"

টুপু শান্তভাবে বলল, "হ্যাঁ সে’সবের মূল কথা প্রায় সবটাই জানি। ডীটেইলস না বললেও চলবে। তবে এ ব্যাপারে তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। সে’সব কথা দিদি বা শান্তুদাকে কিন্তু একেবারেই জানাবার দরকার নেই। এ’গুলো শুধু আমাদের দু’জনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাক। আর আমার মনে হয়, সে’সব কথা অনুরাধা, বিজলীদিরাও কেউ জানে না, তাই না?"

আমি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে তার কথায় সায় দিয়ে মাথা নেড়ে বললাম, "হ্যাঁ, আর কেউ জানে না। যারা জানতেন তারাও আর বেঁচে নেই। মা বলতেন, স্বামী-স্ত্রীর ভেতরে কোন কিছুই গোপন করতে নেই। মা আমাকে আরও বুঝিয়েছিলেন যে সব সত্যি কথা সবাইকে খুলে না বললেও দোষের কিছু নেই। কিন্তু হাজার লুকোলেও সত্য চিরদিন গোপন করে রাখা যায় না। কোন না কোন ভাবে সেটা কারো না কারুর কাছে ঠিকই প্রকাশ হবে। কিন্তু স্বামীর কাছে কখনও কোন কথা গোপন করতে নেই। যত লজ্জারই হোক যত কলঙ্কময় ঘটনাই হোক, স্বামীর কাছে ঘটবার সাথে সাথেই সে’সব জানিয়ে দেওয়া উচিৎ। আর তুমি যখন আমাকে নরক থেকে উদ্ধার করে আমাকে নিয়ে সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখছো, তখন সকলের অজানা ওই কথাগুলোই তোমাকে জানাতে চাইছিলাম। আমি তো চাইছিলাম সে কথাগুলো তোমার আর ঝুনুদি দু’জনের কাছেই খুলে বলি। কিন্তু তুমি যখন চাইছ, তবে ঠিক আছে, অন্য কাউকে আর এ ব্যাপারে কিছু জানাব না। কিন্তু সে’ কথাগুলো তুমি কী করে জানতে পেরেছিলে?"

টুপু আগের মতই খুব শান্ত স্বরে জবাব দিল, "তোমার মনে আছে কি না জানিনা। তোমার ঘরের অনেকটা অংশই যে আমাদের ছাদ থেকে দেখা যেত সেটা কিন্তু তোমাকে আমি দেখিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ঘরের একটা কোণা থেকে তোমার বিছানার অনেকটাই দেখা যেত। জেঠিমার সাথে আর অভিদার সাথে ওই বিছানায় তোমার কাটানো কিছু ঘটনার সাক্ষী আমি হয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ওপর কেন জানিনা, আমার কোন ঘৃণা জন্মেনি। কিন্তু এখন আমার মনে হয়, জেঠিমার সাথে তোমাকে প্রথম যেদিন ও’সব করতে দেখেছিলাম, সেদিন থেকেই বুঝি তোমায় ভালবাসতে শুরু করেছিলাম।"

আমি নিজে কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, "মা আর ছোড়দার সাথে আমার কেমন সম্পর্ক ছিল, তা জানার পরেও তুমি আমাকে ভালবাসতে?"

টুপু আবার খুব শান্ত গলায় বলল, "যদি জিজ্ঞেস কর ‘কেন’, তাহলে তার জবাব দিতে পারব না। আসলে জবাবটা জানাই নেই আমার। কিন্তু সেটাই হয়েছিল। সে’সব জানবার পরেও তোমাকে মনে মনে ভালবাসতাম। তোমার ওপর কখনও রাগ বা অভিমান হয়নি আমার। আর ওই চরম ঘটনাটার পর প্রায় বছর খানেক বাদে তোমার মামাদের হাতে যখন পুলিশ তোমাদের ঘরের চাবি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা এ কেসের কোন হদিস করতে পারল না, তখন তোমার তিন মামাই প্রথমে আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। তোমাদের বাড়িটা তখন জঙ্গল আর আগাছায় ভরে গিয়েছিল। ঘরের ভেতর সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে ছিল। তারপর তোমার মামাদের অনুরোধে দু’তিনটে লেবার সঙ্গে নিয়ে আমি ও বাবা সে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ঘরের ভেতর বাইরের সব কিছু পরিস্কার করতে দু’দিন সময় লেগেছিল। নিচের তলার ড্রয়িং রুমের মেঝে থেকে কালো হয়ে থাকা রক্তের দাগগুলো ঘষে ঘষে তুলবার সময় আমি আর বাবা কেঁদে ফেলেছিলাম। আমাদের দেখাদেখি তোমার মামারাও সকলেই কাঁদতে শুরু করেছিলেন।"

এতটুকু বলে টুপু কিছু সময়ের জন্য থেমে গেল। কান্নার আবেগে তার গলা বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার চোখ দিয়েও আবার জলের ধারা নামতে শুরু করেছিল।

টুপু কয়েকবার ঢোক গিলে গিলে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলল, "তোমাদের নিচের তলার একটা ঘরের আলমারি গুলো খুলে সবুজ অ্যালবামটা দেখতে পেয়ে আমি সেটা তোমার মামাদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলাম। অবশ্য তাদের আমরা বলেছিলাম যে এটা তারা নিতে চাইলে আমাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারবেন যে কোন সময়। কিন্তু কেন জানিনা, তারা আর সেগুলো ফেরত নিতে আসেননি কখনও। সে অ্যালবামটা এখনও আমার কাছে আছে। এ’ঘরের দেয়ালে যে ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছো সেগুলো ওই অ্যালবামের ছবি থেকেই বড় করে প্রিন্ট করে নিয়েছি। আর একটা জিনিস আমি তোমার ঘর থেকে চুরি করে নিয়েছিলাম। একটা নোটবুক। সেটাকে তুমি বোধহয় একটা ডাইরীর মত করে মেনটেন করতে। সেটা পড়ে আমি সবটা, মানে আদিদা, অভিদা, জেঠিমা আর জেঠুর কথা গুলোও জানতে পেরেছি।"

আমার মনে পড়ল সেই নোটবুকটার কথা। সেটাতে আমি আমার সেক্স লাইফের ঘটনাগুলো লিখে রাখতাম। আর সেটাকে সব সময় আমার ড্রেসিং রুমের আলমারির ভেতর তালাচাবি মেরে রেখে দিতাম। সেটার খবর বাড়ির আর কেউ জানত না। টুপু যখন সেটা পড়েছে, তখন মা, বাবা আর দুই দাদার সাথে আমার সেক্স কিভাবে শুরু হয়েছিল, তার সব কিছুই জানতে পেরেছে। তাই এ ব্যাপারে ওকে আর কিছু বলার কোন প্রয়োজনই নেই।

টুপু তখন আবার বলছে, "আজ তোমার মনের ওপর অনেক প্রেসার পড়েছে। তাই আজ আর সে’সব বের করছি না। ও’গুলো আমার ওই আলমারিতে রাখা আছে। পরে তোমার হাতে ওই জিনিসদুটো তুলে দেব। অ্যালবামের কথা দিদি আর শান্তুদা জানেন। কিন্তু তোমার ডাইরীতে যা লেখা আছে, সে’সবের খবর শুধু আমিই জানি। দিদিও সে’সব ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাই তুমি যখন বললে যে তোমার আরো কিছু বলবার আছে, আমি তখনই বুঝে নিয়েছিলাম যে তুমি ওই কথাগুলোই তুলবে। তাই একটা কায়দা করে দিদিকে নিচে পাঠিয়ে দিলাম। জেঠিমা তোমাকে ঠিক কথাই বলেছেন, সব গোপন কথা তো সবাইকে জানাবার দরকার নেই। এটা একান্তই তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই তো আমি চাইনি দিদি বা শান্তুদা বা আর কেউ এ সব জানুক। অবশ্য তোমার ডাইরীটা চুরি করার অপরাধ থেকে আমি তাতে মুক্ত হব না। সে অপরাধের শাস্তি তুমি আমায় দিও। আমি হাসিমুখে তা মেনে নেব। কিন্তু প্লীজ, আর আমাকে ফেলে চলে যেও না।"

টুপু থামতে আমি বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম। আমার মাথায় কিছুতেই একটা কথা পরিস্কার হচ্ছিল না। মা, বাবা, দাদাদের সাথে আমার সেক্স রিলেশনের কথা জানবার পরেও টুপু কি করে আমাকে এত ভালবাসতে পারে? বারোটা বছর ধরে ও কেন আমার জন্যেই অপেক্ষা করে থাকবে শুধু? আমার চেয়ে ছোট হলেও ওর তো ত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেছে। পাঁচ ছ’ বছর ধরে সরকারী চাকুরিও করছে। ওর মত সুন্দর সুদর্শন একটা ছেলে বিয়ে করবার মত পাত্রী খুঁজে পাবে না, এ তো হতেই পারে না! ও আমার জন্যেই কেন অপেক্ষা করছে? আর ঝুনুদি তো বলল যে আমাকে না পেলে ও সারা জীবন আইবুড়ো থাকবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। কিন্তু বারোটা বছর ধরে আমাকে যেভাবে বেশ্যাবৃত্তি করতে হয়েছে, সে’সব জেনেও ও আমাকে এখনও বিয়ে করতে আছে ভেবেই আমার বিস্ময়ের অবধি ছিল না।

এ’সব ভাবতে ভাবতে আমি গলা পরিস্কার করে সোজাসুজি বললাম, "দ্যাখো টুপু, যে সুন্দর স্বপ্নটা আমাকে তোমরা দেখাচ্ছ তাতে আমার জীবনের তো একটা সুন্দর পরিণতিই হবে। কিন্তু নিজেদের দিকটা তোমরা ভেবে দেখেছ? রাস্তা ঘাটে তোমার সাথে আমাকে কেউ দেখে যদি আমার দিকে আঙুল তুলে বলে যে এই মেয়েটাকে আমি এক রাতের জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে মনের সুখে ভোগ করেছিলাম, তখন সে’কথা শুনে সহ্য করতে পারবে? নিজে তখন কতটা ছোট হয়ে যাবে, সেটা কখনও ভেবেছ? আর ঝুনুদি, ডক্টর মুখার্জিও তো তেমন কোন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তখন তারাই বা কী করবেন?"

টুপুও সোজাসুজি আমার মুখের দিকে চেয়ে জবাব দিল, "এ’সব যে আমরা ভেবে দেখিনি, এটা তুমি কী করে ভাবছ? আমি আর দিদি তো আগে থেকেই এ’সবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম, এখনও আছি। আর শান্তুদাও আমার মনের ইচ্ছে জেনে উনিও তাতে মত দিয়েছেন। আমরা সবাই তেমন ঘটনার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি। শুধু তুমি একটু আমাদের সাহায্য কোর প্লীজ।"

আমি তবু বললাম, "তোমরা তো শুনেছই যে বারোটা বছর ধরে আমি বেশ্যার জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছি। এতগুলো বছরের মধ্যে হাজার হাজার পুরুষ আমার এই শরীরটাকে ভোগ করেছে। আমাকে বিয়ে করে তুমি আমার এই অপবিত্র শরীরটাকে পাশে নিয়ে ঘুমোতে পারবে? স্বামী-স্ত্রীর ভেতরে যা কিছু হয়ে থাকে, সে’সব করতে তোমার কোন ঘেন্না করবে না? তোমার কি একবারও মনে হবে না যে যাকে তুমি ভালবেসে ছুঁতে যাচ্ছ তোমার পাশে শোয়া সে নারী শরীরটাকে রোজ আট থেকে বারোজন পুরুষ জানোয়ারের মত ভোগ করেছে। তখন তুমি কিকরে তোমার মনকে প্রবোধ দেবে? তুমি কি সত্যিই মন থেকে আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবে? ঘেন্না করবে না আমাকে? আমার শরীরটাকে?"

টুপু খুব শান্ত ভাবেই জবাব দিল, "সেই ছোটবেলা থেকেই তুমি যে আমার অস্থি মজ্জার সাথে মিশে আছ রুমু। তোমার অস্তিত্ব তো আমার মনের সাথে একাকার হয়ে আছে। কাকে ঘৃণা করব আমি? কেউ কি নিজেকে ঘৃণা করতে পারে?"

টুপুর জবাব শুনে আমার ভেতর থেকে আরেকবার কান্না উথলে উঠতে চাইল। আমি দু’হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে উঠলাম। কিন্তু টুপু সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আর কান্না নয় রুমু। বারোটা বছর ধরে অনেক কেঁদেছ জানি। এসো ওঠো। চল মা বাবা জেঠু জেঠিমার কাছ থেকে তাদের আশীর্বাদ চেয়ে নিই আমরা" বলে আমাকে টেনে ওঠালো।

দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোর নিচে মাথা ঠেকিয়ে আমি আবার কেঁদে উঠলাম। টুপুও সবগুলো ছবির ফ্রেমে হাত ছুঁইয়ে প্রণাম করে আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, "নিজেকে সামলাও রুমু। আমার মনে হয় এখন আমাদের নিচে যাওয়া দরকার। বিজলীদিকে অন্ততঃ একটা কৃতজ্ঞতা সূচক ধন্যবাদ আমার জানানোই উচিৎ।"

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "হ্যাঁ ঠিক বলেছ তুমি। বিজলীদি মন থেকে আমার ভাল না চাইলে, আজ এ দিনটা কিছুতেই আমাদের জীবনে আসত না। সে তো প্রায় মাস দুয়েক আগে থেকেই আমাকে বলছিল। কিন্তু তখন তো আমি জানতাম না যে সে তোমার হাতে আমাকে তুলে দিতে চাইছে। আর তাছাড়া, আমার জীবনের রাহু ওই গজাননের কবল থেকে আমি যে সারা জীবনেও মুক্তি পাব না বলে ভেবেছিলাম। মাসির কথায় ও’খান থেকে চলে এলেও গজানন আমার পিছু ছাড়ত না। সে ঠিক আমাকে খুঁজে বের করত। তখন আমার সাথে সাথে যে আমাকে আশ্রয় দিত, সে-ও বিপদে পড়ত।"

টুপু আমার মাথাটাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, "তোমাকে একটা কথা জানিয়ে দেওয়া উচিৎ। অবশ্য এটা আমার ধারণা। তবে, ধারণাটা যে পুরোপুরি মিথ্যে হতে পারে না, এ ব্যাপারে আমার মনে কোন সন্দেহই নেই।"







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





SS_Sexy- লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

SS_Sexy- লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment