CH Ad (Clicksor)

Monday, January 30, 2017

নিয়তির স্রোতস্বিনী_Written By SS_Sexy [চ্যাপ্টার ৪৭]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




নিয়তির স্রোতস্বিনী
Written By SS_Sexy




(#৪৭)

বিগত প্রায় দু’মাসের মধ্যে আমার ঘরে কোন খদ্দের আসেনি। মাসি আমাকে বাইরের কোন ক্লায়েন্টের কাছেও পাঠায়নি। কিন্তু আমার ভেতরে সেক্সের তাগিদ প্রায় বুঝতেই পারিনি। এ’কথা মনে হতেই একটু অবাক হলাম। প্রায় দুটো মাস আমি সেক্স ছাড়া কাটিয়েছি। কিন্তু আমার মধ্যে সেক্সের কোন ইচ্ছেই জেগে ওঠেনি। স্বমেহনও করিনি কখনও। তবে কি আমার মধ্যে সেক্সের আর কোন তাগিদ বাকি নেই আর? মাত্র একত্রিশ বছর বয়সেই একটা মেয়ের জীবনে সেক্সের চাহিদা ফুরিয়ে যেতে পারে? মা তো তার সাতচল্লিশ বছর বয়সেও পুরোপুরি সেক্স ভরপুর ছিলেন। যেদিন ওই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটেছিল তার দু’দিন আগেও আমি মা আর বাবা মিলে থ্রিসাম করেছিলাম। সেদিনও মাকে প্রচণ্ড রকমের সেক্সী বলে মনে হয়েছিল। আর মাত্র একত্রিশ বছর বয়সেই আমার ভেতরের সেক্সের চাহিদা ফুরিয়ে গেল? আর বিজলী মাসিও কি সেটা বুঝতে পেরেছে? সে কি বুঝে ফেলেছে যে আমার ভেতরে সেক্সের চাহিদা কমে গেছে বলেই খদ্দেরদের চোখে আমার আকর্ষণও আর আগের মত থাকবে না। তাই কোন একটা অজুহাত খাড়া করে আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছে।

এমন কথা মনে হতেই ভাবলাম যে সেক্স চাহিদা তো সেই রাতের পর থেকে আর কখনও আমি সেভাবে বুঝতেই পারিনি। গজাননের সেই ডেরায় আমার ইচ্ছের বিরূদ্ধে রোজ দিনে রাতে একের পর এক বদমাশগুলো আমার শরীরটাকে ভোগ করত। ধর্ষিতা হতাম রোজ। তারপর মাসিদের এ বাড়িতে আসবার পরেও নিজের কর্তব্য পূরণ করতে, প্রায় স্বেচ্ছায় একের পর এক পুরুষের কাছে নিজের শরীরটা বিলিয়ে আসছি। এখানে কেউ আমাকে ধর্ষণ না করলেও আমার ভেতরে সেক্সের আগ্রহ বা চাহিদা বলতে কিছুই ছিল না গত দশটা বছরে। সেক্সের সুখ আমি পেয়েছি জীবনের মাত্র ওই চারটি বছরেই। প্রথমে ছোড়দা, তারপর বাবা আর তারপর বড়দা। ওই চার বছরের মধ্যে একটা দিনও আমি সেক্স ছাড়া কাটাতে পারতাম না।

বড়দার সাথে আমার সেক্স রিলেশন শুরু হবার পর বড়দা সেবারে তারপর প্রায় মাসখানেক বাড়িতে ছিল। সেই একমাস বিকেলে বড়দা আর আমি সেক্স করতাম। তখন রোজ ভোরে আর রাতে ঘুমোবার আগে ছোড়দার সাথে সেক্স করাটা একটা ধরাবাঁধা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর বিকেলে বড়দার কাছ থেকে সে সুখ পেতাম। তার মাস ছয়েক বাদে বড়দা আবার বাড়ি এসেছিল।

ততদিনে আমার সেক্স চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। বড়দাও সেবার বাড়ি আসবার পর প্রায় সব সময় আমার সাথে সেক্স করবার জন্য ছোঁকছোঁক করত। আগের বারের মত শুধু রোজ বিকেলে একবার আমার সাথে সেক্স করে তার মন ভরত না। সে রোজ রাতেও আমার সাথে সেক্স করতে চাইত। কিন্তু চার বছর আগে থেকেই আমার প্রতিটি রাতের সেক্স পার্টনার ছিল আমার ছোড়দাই। তাই রাতে বড়দাকে কোন সুযোগ দিতে পারছিলাম না। তাই বড়দা সারা দিনে যখনই সুযোগ পেত তখনই আমাকে তার ঘরে টেনে নিয়ে যেত। কিন্তু আমারও কলেজে যেতে হত। তবু ছুটির দিনে বড়দার সাথে সুযোগ সুবিধে মত সেক্স করতাম। কিন্তু বড়দা তাতে সন্তুষ্ট হত না।

সব কথাই আমি মা-কে জানাতাম। মা-ই তো ছিলেন আমার জীবনে ফ্রেন্ড, ফিলজফার অ্যান্ড গাইড। তার পরামর্শেই রাতে দু’দাদাকে সঙ্গে নিয়ে করবার প্ল্যান করেছিলাম। কিন্তু ছোড়দাকে কিছুতেই রাজি করানো যাচ্ছিল না। শেষে মা নিজেই ছোড়দাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন।

জীবনের সেই কালো রাতটার আগের একটা সপ্তাহ থেকে বড়দা, ছোড়দা আর আমি মিলে সত্যিকারের থ্রিসাম সেক্সের উন্মাদনা উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম। যৌনতার দিক দিয়ে বিচার করলে ওই সাতটা দিনই আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন ছিল।

সে রাতটাতেও সকলে ঘুমিয়ে পড়বার পর আমি যখন বড়দার ঘরে যাব বলে ভাবছিলাম বিপদটা ঠিক তখনই এসেছিল। সেদিন বিজলী মাসিদের কাছে ঘটনাটা বলবার সময় শুরুর দিকে কথাগুলো সত্যি বলিনি। ছোড়দা আর বড়দা রোজ রাতের মতই সে রাতেও বড়দার বিছানায় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমিও আমার নাইট ড্রেস পড়ে যখন বড়দার ঘরে যাবার উদ্যোগ করেছিলাম, তখনই গজাননের দলবল আমাদের ওপর হামলা করেছিল। তাদের উদ্দেশ্যটা আমরা বুঝতেই পারিনি। প্রথমে যখন বদমাশগুলো বাবা দাদাদের সামনে আমাকে আর মাকে উলঙ্গ করে দিয়েছিল তখন ভেবেছিলাম তারা বুঝি আমাদের দু’জনকে রেপ করতেই এসেছে। কিন্তু আমার সে ধারণাও যে ভুল ছিল, সেটা জানতে পারলাম তখন, যখন আমার চোখের সামনে একে একে বড়দা ছোড়দা বাবা আর মাকে ডাকাতগুলো খুন করেছিল। গজাননের ডেরায় বন্দী থাকবার সময়েও আমি বুঝতে পারিনি, তাদের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল।

এমনকি সেটা এখনও পর্যন্ত আমার কাছে অজানা। সেদিন অনুরাধার মুখেই শুনলাম যে ওরা নাকি আমাদের বাড়ির সমস্ত টাকা পয়সা, সোনা দানা লুট করেছিল। মা-র শরীরটাকে ঘরের মেঝেয় ছটফট করতে দেখেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। ওই সময়েই বোধহয় গজাননের লোকেরা আমাদের বাড়িতে লুঠতরাজ চালিয়েছিল।

পরদিন বৃহস্পতি বার সকালে মাসির ঘরে চা খেয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসবার কিছুক্ষণ পরেই অনুরাধা আর শ্যামলীদি আমার ঘরে এল। অনুরাধা ঘরে ঢুকেই উত্তেজিত ভাবে জিজ্ঞেস করল, "ও মিনুদি, তোমার ঘরে কাগজ এসেছে? সেটা কোথায় গো?"

আমি জবাব দেবার আগেই শ্যামলীদি বলল, "মিনু যখন মাসির সাথে চা খাচ্ছিল তখনই তো আমি কাগজটা ওর ঘরে রেখে গিয়েছি। ওই তো টেবিলের ওপর" বলে সে নিজেই টেবিলের ওপর থাকে কাগজটা এনে অনুরাধার হাতে দিল।

অনুরাধা তাড়াতাড়ি কাগজটা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কাগজের প্রথম পাতার হেডলাইন গুলো দেখে পাতা ওল্টাতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম, "এমন কী খবর আছে রে রাধা?"

অনুরাধা খবরের কাগজ থেকে চোখ না তুলেই বলল, "দাঁড়াও না আগে দেখি খবরটা এ কাগজটাতেও ছেপেছে কি না। মাসি বলল তার ঘরে যে কাগজটা আছে তাতে নাকি খবরটা বেরিয়েছে। এই তো, এই তো। ও মিনুদি, এই দেখ, কী খবর বেড়িয়েছে" বলে প্রায় চিৎকার করে উঠল।

অনুরাধার ভাবভঙ্গী দেখে আমি চুড়ান্ত অবাক হয়ে খবরের কাগজটার ওপর চোখ ফেলতেই অনুরাধা ঝট করে কাগজটা ভাঁজ করে বলল, "দাঁড়াও মিনুদি" বলে শ্যামলীদির দিকে চেয়ে বলল, "শ্যামলীদি, আমি তো জানি, মিনুদিকে তুমি কত ভালবাস? আমি এ বাড়িতে আসবার আগে পর্যন্ত তোমরা মিনুদির আগের ঘটনার কিছুই জানতে পারনি। মিনুদি যে কিভাবে এখানে এসে পৌঁছেছে, এ ব্যাপারে তোমরা কিছুই জানতে না। এখন তার কিছুটা জেনেছ তোমরা। কিন্তু এ কাগজে আজ এমন একটা খবর বেরিয়েছে যেটা পড়লে বা শুনলেই তোমরা হয়ত মিনুদির আসল নাম বা জন্মস্থানের কথা জেনে ফেলতে পার। কিন্তু মিনুদি সেটা তোমাদের জানাতে চাইবে কিনা তা তো জানিনা। তাই বলছিলাম ......"

অনুরাধার কথা শেষ না হতেই আমি ওর হাত থেকে খবরের কাগজটা টেনে নিয়ে বললাম, "তুই আগে আমাকে দেখতে দে তো রাধা" বলে ভেতরের দিকের যে পাতাটা ও মেলে ধরেছিল সেটা খুলে ভালভাবে দেখতে শুরু করলাম। পাতার মাঝামাঝি বড় বড় অক্ষরে লেখাটা চোখে পড়ল - "মুর্শিদাবাদ পুলিশের বিরাট সাফল্য- বারো বছর পুরনো খুনের কেসের আসামিরা পুলিশের জালে" খবরটা পড়েই আমার হৃৎপিণ্ডটা যেন লাফিয়ে উঠল। আমি চোখ বড় বড় করে রূদ্ধশ্বাসে নিচের প্রতিবেদনটা পড়তে লাগলাম।

মিনিট পাঁচেক ধরে প্রায় শ্বাস রোধ করে গোটা প্রতিবেদনটা পড়ে আমি দু’হাতে শ্যামলীদি আর অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলাম। তারা দু’জনও আমাকে জড়িয়ে ধরল। শ্যামলীদি আর অনুরাধা এক নাগাড়ে আমার মাথায় কাঁধে পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে আমাকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু আমি যেন কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না।

একটা সময় আমি তাদের হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানার উপুড় হয়ে শুয়ে "ওমা... মা গো ...... মা..." বলে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। বালিশে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বুঝতে পারলাম আমার ঘরে যেন আরও কেউ এসে ঢুকল।

কতক্ষণ ওভাবে কেঁদেছি জানিনা। চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম মা বাবা আর দাদাদের প্রাণহীন দেহগুলো আমাদের বাড়ির ওই ড্রয়িং রুমের মেঝেতে পড়ে দাপাদাদি করছে। আর গজানন আর তার দলবল ওই চার চারটে শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে দেখে উল্লাসে নাচানাচি করছে। বারো বছর আগের সে দৃশ্যটা যেন আজ আবার আমি পরিস্কার চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম।

অনেকক্ষণ বাদে কান্নার বেগ কিছুটা কমতেই কানে এল শ্যামলীদি আর অনুরাধা এক নাগাড়ে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে। আর বিজলী মাসির গলা পেলাম। কাউকে যেন বলছে, "এই মাগিরা তোরা এখানে ভিড় করছিস কেন। এখানে কি কোন তামাশা হচ্ছে? যা, ভাগ এখান থেকে। সবাই যার যার ঘরে যা। কিচ্ছু হয়নি এখানে। যা বলছি।"

বারান্দায় কয়েক জনের পায়ের শব্দ পেলাম। শব্দগুলো ধীরে ধীরে দুরে সরে যেতে যেতে একসময় আর শোনা যাচ্ছিল না। আমি তখন বালিশের ওপর থেকে মাথাটা খানিকটা টেনে তুলতেই অনুরাধা আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরল। একবার চোখটা একটু খুলেই দেখলাম যে ওর দু’চোখ দিয়েও জলের ধারা নেমে আসছে। বিজলী মাসি আর শ্যামলীদি আমার গায়ে পিঠে কাঁধে হাত বোলাতে বোলাতে আমাকে শান্ত হতে বলছে। একটা সময় মনে হল আমার গায়ে যেন আর শক্তি নেই। আমি যেন আর সোজা হয়ে বসে থাকতে পাচ্ছিলাম না। গলাটা শুকিয়ে আসছিল আমার। দু’বার ‘জল জল’ বলেই আমি আবার নিজের শরীরটা ছেড়ে দিলাম।

অনুরাধা আমাকে দু’হাতের জোরে ওর বুকের ওপর চেপে ধরে চাপা উত্তেজনা ভরা গলায় বলল, "ও শ্যামলীদি। শিগগীর জল আন এক গ্লাস।"

আমি যে চেতনা লুপ্ত হইনি, সেটা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু চোখদুটো যেন আর কিছুতেই খুলতে পারছিলাম না। একটু বাদেই কেউ আমার ঠোঁটে একটা গ্লাস ঠেকিয়ে ধরতেই আমি চোঁ চোঁ করে অনেকটা জল খেয়েনিলাম। গায়ে বাতাস লাগতে বুঝলাম যে কেউ একজন ঘরের ফ্যানটা চালিয়ে দিয়েছে। আরও কিছুক্ষণ বাদে তারা তিনজনে মিলে আমার নাম ধরে ডাকাডাকি করতে আমি চোখ মেলে তাকালাম। শ্যামলীদি আমার দুটো গাল দু’হাতে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল, "মিনু। ও মিনু। তুই ঠিক আছিস তো রে?"

আমি একহাত দিয়ে শ্যামলীদির একটা হাত ধরে তার চোখের দিকে চাইতেই দেখি তার দু’চোখ বেয়েও জলের ধারা নেমে এসেছে। বিজলী মাসিরও তাই। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই শ্যামলীদি বলল, "রাধা তুই ওকে ধরে রাখিস। আমি ওর জন্য একটু ব্র্যাণ্ডি নিয়ে আসি।"

অনুরাধা আর বিজলী মাসি আমার দু’পাশে বসে আমাকে ধরে রইল। শ্যামলীদি একটা গ্লাসে ব্র্যাণ্ডি এনে আমার ঠোঁটে গ্লাসটা চেপে ধরে কান্না ভেজা গলায় বলল, "নে মিনু, এটুকু খেয়ে নে একটু ভাল লাগবে।"

আমার মনে হচ্ছিল ঢক ঢক করে গ্লাসের সবটুকুই একবারে খেয়ে নিই। কিন্তু দু’ঢোক গেলার পরেই শ্যামলীদি গ্লাসটা সরিয়ে নিয়ে বলল, "উহু, ওভাবে একবারে নয়। আস্তে আস্তে খা।"

মিনিট খানেক বাদে আমার কান্নার বেগ পুরোপুরি ভাবে থেমে যাবার পর শ্যামলীদি আমার হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, "নে এবার বাকিটুকু আস্তে আস্তে খা।"

বিজলী মাসি আমার গায়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, "দেখেছিস মিনু একেই বলে ভগবানের মার। আর এজন্যেই বলে ভগবানকে ঘর মে দের হ্যায়, অনধের নহী। ওই খুনে গুলোকে এবার ফাঁসিতে ঝোলান হবে দেখিস।"

আমি কোন কথা না বলে গ্লাসের বাকি ব্র্যাণ্ডিটুকু খেতে খেতে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলাম। অনুরাধা আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে আমাকে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে রেখেও আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে রইল।

বিজলী মাসি বলল, "শ্যামলী ওর দিকে খেয়াল রাখিস। আমার একটু কাজ আছে। আমি নিচে যাচ্ছি। ওকে তোরা দু’জন মিলে সামলা একটু। আর শ্যামলীদি, একবার হেঁসেলের খবরটা নিস। ওদের কিন্তু বেলা তিনটে নাগাদ বেরোতে হবে। সেদিকেও খেয়াল রাখিস" বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকবার পর শ্যামলীদি আমার গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, "ভাবিস না মিনু। আমরা সবটা জেনে ফেললেও আর কেউ তোর আসল পরিচয় জানতে পারবে না। আর আমরা তিনজনও এ’কথা কাউকে বলব না যে খবরের কাগজে যে রুমকি সরকারের কথা লেখা আছে সেটা আসলে আমাদের এই মিনু। তুই এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকিস। এ বাড়ির কেউ তোর আসল নাম পরিচয় জানতে পারবে না। এ বাড়িতে তুই মিনু ছিলি, মিনুই থাকবি চিরকাল। আর এটা আমার কথা নয়, মাসিই বলেছে।"

আমি বিছানা থেকে নামবার চেষ্টা করতে করতে বললাম, "আমি একটু মাসির ঘরে যাব।"

শ্যামলীদি সাথে সাথে আমার হাত চেপে ধরে বলল, "এখন না। একটু পরে যাস বোন। মাসি বলল না? তার কী কাজ আছে। নিশ্চয়ই জরুরী কিছু কাজ আছে। নইলে তোকে ছেড়ে সে এখন কিছুতেই চলে যেত না। তুইও আরেকটু শান্ত হয়ে নে। পরে যাস।"

অনুরাধাও শ্যামলীদির কথায় সায় দিতে আমি আবার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলাম। চোখ বুজে খবরের কাগজের লেখাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম।

কাগজে লিখেছে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত পরশু রাতে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ আর দুর্গাপুর থানার পুলিশ যৌথভাবে দুর্গাপুরের কাছাকাছি কোন একটা অঞ্চল থেকে গজানন নামের কুখ্যাত এক গ্যাংলিডার আর তার পাঁচ সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে। জীবিত পাঁচজনই অল্পবিস্তর আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। আর তাদের লীডার গজানন ওরফে গজু ওস্তাদকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। গজাননের মৃতদেহের কয়েকটা টুকরো বিচ্ছিন্ন ভাবে অকুস্থলের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে পাওয়া গেলেও তার গুপ্তাঙ্গের অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরা সকলেই মুর্শিদাবাদ জেলার বারো বছর পুরনো একটি নৃশংস খুনের ঘটনায় জড়িত ছিল। মুর্শিদাবাদ জেলার গড় কাপ্তানী বিভাগের সরকারী অফিসার নীলেশ সরকার, তার স্ত্রী হৈমন্তী সরকার, আর তাদের দুই ছেলে আদিত্য সরকার ও অভিষেক সরকারকে খুন করার অভিযোগেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। ওই একই ঘটনায় তাদের বিরূদ্ধে ধর্ষণ এবং লুঠতরাজের অভিযোগও পুলিশের ফাইলে লিপিবদ্ধ হয়ে অমীমাংসিত অবস্থায় পড়েছিল গত বারো বছর ধরে। মুর্শিদাবাদ পুলিশের জেলা সুপার ইন্দ্রজিত বক্সী জানিয়েছেন যে বারো বছর আগে কোন রকম সূত্র বা এভিডেন্স হাতে না পাবার ফলে তারা এতদিন এ খুনের ঘটনার কিনারা করতে পারেননি। কিন্তু গোপন সুত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ হবার পর গত মাস খানেক ধরে তারা এ ব্যাপারে পুনরায় সচেষ্ট হয়ে উঠেছিল। দুর্গাপুর পুলিশের সহায়তায় তারা সেই ঘটনার আটজন অভিযুক্তের মধ্যে মৃত গজানন ও জীবিত পাঁচ দুষ্কৃতীকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। ধৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে যে গজাননের নেতৃত্বে মোট আটজন দুষ্কৃতী সরকার পরিবারের ওপর সে রাতে হামলা চালিয়েছিল। সে ঘটনায় চারজনকে গলা কেটে খুন করলেও নীলেশ সরকারের একমাত্র মেয়ে রুমকি সরকারকে তারা জীবিতাবস্থায় অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। ধৃতদের জেরা করে জানা গেছে যে গড় কাপ্তানী বিভাগের সিনিয়র একাউন্ট্যান্ট নীলেশ সরকার গজাননের সাত লাখ টাকা অঙ্কের একটা ভুয়োবিলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছিলেন। নানারকম প্রলোভন দেখিয়েও গজানন তার বিলের পেমেন্ট পায়নি বলেই নীলেশ সরকারকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল। গজাননের জীবিত সঙ্গী দুষ্কৃতীদের বয়ানে জানা যায় যে নীলেশ সরকার আর তার দুই বয়ঃপ্রাপ্ত ছেলেকে খুন করবার পরিকল্পনা গজানন আগে থেকেই করেছিল। নীলেশ সরকারের স্ত্রী এবং মেয়ের শ্লীলতাহানির কথাও তাদের পূর্ব পরিকল্পনায় ছিল। কিন্তু নীলেশ সরকারের স্ত্রীকে খুন করবার এবং তার একমাত্র যুবতী মেয়েকে সঙ্গে করে তুলে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা আগে থেকে করা ছিলনা। গজাননের তাৎক্ষণিক নির্দেশেই নাকি অমন করা হয়েছিল। ধৃতদের জেরা করে আরও জানা গেছে যে, ওই ঘটনার পর গজানন রুমকি সরকারকে প্রায় দু’বছর দুর্গাপুরের একটি বাড়িতে বন্দী করে রেখেছিল। দু’বছর পর গজানন দুর্গাপুর থেকে রুমকি সরকারকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করে দিয়েছিল। জীবিত পাঁচ দুষ্কৃতীই রুমকি সরকারের পরবর্তী অবস্থান সম্মন্ধে কিছুই জানাতে পারেনি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী গত দশ বছর ধরে গজানন কলকাতায় বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বেআইনী কাজের সাথে যুক্ত ছিল। সম্ভবতঃ রুমকি সরকারকে কোলকাতারই কোন এক জায়গায় গজানন লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু গজাননকে পুলিশ তার জীবিতাবস্থায় গ্রেপ্তার করতে পারেনি। জীবিত পাঁচ দুষ্কৃতীর জবানবন্দীতে জানা গেছে যে পুলিশের হাতে ধরা পড়বার কিছু আগেই উত্তরবঙ্গের অন্য একটি সমাজ বিরোধী দলের সাথে লড়াইয়েই গজাননের মৃত্যু হয়েছে। তবে বারো বছর আগে সরকার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করবার সময় গজাননের সঙ্গে থাকা আরও দু’জন সহযোগী ইতিমধ্যেই মারা গেছে। তাদের একজন অত্যধিক মদ্যপানের কারনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে, অপর জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। পুলিশ অপহৃতা রুমকি সরকারের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ ব্যাপারে তারা কোলকাতা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করছেন।

চোখ বন্ধ করে কাগজের কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বাবা মা আর দাদাদের মুখের ছবিগুলো আমার মনে ভেসে উঠছিল। দুটো হাত একসঙ্গে মুঠো করে বুকের ওপর রেখে তার ওপর চিবুক চেপে ধরে মনে মনে বললাম, "বাবা, মা, তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ? যারা তোমাদের খুন করেছিল সে পাপীগুলো এত বছর বাদে আজ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।"

মা, বাবা দাদাদের কারুর কোন ছবি আমার কাছে নেই। তা আছে শুধু আমার মনের ভেতর। কিন্তু আজ তাদের সকলের উদ্দেশ্যে ধূপকাঠি আর প্রদীপ জ্বালাতে ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু আমার ঘরে ধূপকাঠি থাকলেও প্রদীপ ছিল না। আর ছবি তো নেইই। তাই বুকের কাছে হাত দুটো জড়ো করে রেখে চোখ বুজে তাদের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাতেই আমার বন্ধ চোখের পাতার ফাঁক দিয়ে আবার জলের ধারা নামতে লাগল। শ্যামলীদি আর অনুরাধা আমার দু’পাশে চুপ করে বসেছিল।

এভাবে মিনিট খানেক যাবার পরেই বিজলী মাসির গলা শুনতে পেলাম। সে আমার নাম ধরে ডাকতেই আমি চোখ মেলে চাইলাম। বিজলী মাসি আমার গালের ওপর থেকে দু’চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, "কাঁদিস না মিনু। আমার মনে হয় তোর একটা কাজ করা উচিৎ এখন।"

আমি তার কথার অর্থ না বুঝে ফ্যালফ্যালে চোখে তার দিকে চাইতেই সে বলল, "চান তো তুই সকালেই করে নিয়েছিস, জানি। তবে এখন হাত মুখ ধুয়ে ভাল শাড়ি পড়ে আমার সাথে চল তো। মন্দির থেকে ঘুরে আসি। সেখানে ঠাকুরকে প্রণাম করে মা বাবা দাদাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রদীপ জ্বালিয়ে আসবি চল।"

মাসির কথা শুনে আমার চোখ দুটো আবার জলে ভরে এল। কিছু না বলে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাতেই শ্যামলীদি বলল, "ঠিক বলেছ মাসি। আমরাও যাব।"

মন্দিরে গিয়ে প্রচুর সন্দেশ, ফলমূল, ফুল, ধূপকাঠি আর প্রদীপ জ্বালিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম করে মনে মনে প্রার্থনা করলাম, "হে ঠাকুর। আমার মা বাবা আর দাদাদের আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।"

বিজলী মাসি, শ্যামলীদি আর অনুরাধাও ধূপ আর প্রদীপ জ্বালালো।

দুপুর বারোটার পর বাড়ি ফিরে বিজলী মাসি আমাকে প্রসাদ খাইয়ে দিয়ে বলল, "এবার ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নে। আমি একটু বাদে তোর ঘরে যাব। আজ আমরা চারজনে একসাথে বসে খাব, কেমন?"

সবাই মিলে দুপুরের খাওয়া দাওয়া হয়ে যাবার পর মাসি পান খেতে খেতে বলল, "রাধা, আমি তো ভেবেছিলাম তোদের সাথে আমিও যাব ডক্টর মুখার্জীর চেম্বারে। কিন্তু ডক্টর ঘোষাল হঠাৎই ফোন করে আমাকে তার সাথে আজ বিকেলেই দেখা করতে বলল। আবার সন্ধ্যেয় লক্ষ্মী পুজো সারতে হবে। তাই আমি আর যেতে পারছি না। তবে তোরা দু’জনেই শুনে রাখ। দিলুকে আমি ডক্টর মুখার্জীর চেম্বারের ঠিকানা ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছি। ও তোদের নিয়ে যাবে। আমি একটু পরেই বেরিয়ে যাব। তোদের আগেই। তবে যাবার আগে আমি তোর কাছে মোবাইল দিয়ে যাব। আর তোরা কিন্তু ঠিক তিনটের সময় বেরিয়ে পড়বি। নইলে কিন্তু দেরী হয়ে যাবে। আর ডাক্তার তোদের ছুটি না দেওয়া পর্যন্ত আমাকে ফোন করার দরকার নেই। তোরা ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়েই ফোন করবি। বুঝেছিস তো?"

অনুরাধা মাথা দুলিয়ে বলল, "হ্যাঁ মাসি, বুঝেছি। তুমি ভেব না। দিলুকে যখন তুমি ঠিকানাটা চিনিয়েই দিয়েছ, তাহলে আর চিন্তার কিছু নেই।"

বিকেল চারটে বাজবার মিনিট দশেক আগেই ডক্টর মুখার্জীর চেম্বারের সামনে পৌঁছে গেলাম। আমি আর অনুরাধা গাড়ি থেকে নেমে বিশাল সাইজের সাইনবোর্ডের নিচে চেম্বারের দরজা বন্ধ দেখে অবাক হলাম। দরজার ওপরে ছোট্ট একটা বোর্ডে লেখা "ডাক্তার বাইরে। শুক্রবারে চেম্বারে বসবেন।"

কিন্তু গাড়ির শব্দ পেয়েই পাশের একটা ছোট দরজা দিয়ে পাজামা পাঞ্জাবী পড়া একজন সুদর্শন পুরুষকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। ড্রাইভার দিলু হাতের ঈশারায় আমাদের একদিকে দেখিয়ে বলল, "মিনুদি আমি গাড়িটাকে ওই ছায়ায় নিয়ে গিয়ে রাখছি।"

দিলু গাড়ি ঘুরিয়ে নিতেই পাঞ্জাবী পড়া লোকটা আমাদের কাছে এসে হাতজোড় করে বললেন, "আসুন আসুন মিনুদেবী। আমি আপনাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তা আপনাদের মাসি আসেননি?"

আমি আর অনুরাধা তার দিকে ফিরতেই দেখি লোকটা আর কেউ নন। স্বয়ং ডক্টর মুখার্জী। আমরা দু’জনেই তাকে হাতজোড় করে নমস্কার করলাম।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





SS_Sexy- লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

SS_Sexy- লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment