CH Ad (Clicksor)

Monday, January 30, 2017

নিয়তির স্রোতস্বিনী_Written By SS_Sexy [চ্যাপ্টার ৪৬]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




নিয়তির স্রোতস্বিনী
Written By SS_Sexy




(#৪৬)

আমি শ্যামলীদিকে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার থালা আনোনি শ্যামলীদি? তুমি খাবেনা আমাদের সাথে?"

শ্যামলীদি আমাদের দু’জনের খাবার থালা মেঝেতে পাততে পাততে বলল, "নারে। মাসির হুকুম, আজ আমাকে তার ঘরে বসে খেতে হবে। খেতে খেতে নাকি আমার সাথে তার কী কথা আছে। তাই তোরা বসে পর। আমি পরে এসে থালাগুলো নিয়ে যাব"

বলতে বলতেই টেবিলের ওপর খালি গ্লাসদুটো দেখে বলল, "ও, দু’টিতে বসে বুঝি পার্টি করা হচ্ছিল এতক্ষণ তাই না?"

অনুরাধা আমাকে নিয়ে খেতে বসতে বসতে জবাব দিল, "বেশী খাইনি গো শ্যামলীদি। শুধু এক পেগ খেতে খেতেই মিনুদির সাথে একটু গল্প করলাম।"

শ্যামলীদি বলল, "আচ্ছা ঠিক আছে। তোরা খেয়ে নে। আমি পরে এসে থালাবাটি গুলো নিয়ে যাব" বলেই বেরিয়ে গেল।

খাবার খেয়ে অনুরাধাও আর বেশী দেরী করল না। ওর ঘরে আর আধঘণ্টা বাদেই খদ্দের ঢুকবে। তাই ও চলে গেল। আমিও বিছানায় বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রমেনকাকু আর সোনা কাকিমার কথা ভাবতে লাগলাম।

@@@@@@@............মনে পড়ল, আমি তখন বোধহয় ক্লাস টুয়েলভে অথবা বিএসসি ফার্স্ট ইয়ারে। ঠিক মনে পড়ছে না। সেদিন বোধহয় কোন ছুটির দিন ছিল। বেলা এগারোটা নাগাদ সোনা কাকিমা আর ঝুনুদি আমাদের বাড়ি এসেছিল। রোজকার মতই আমাকে ঝুনুদি আর সোনা কাকিমার মাঝে বসতে হয়েছিল। চা জলখাবার খেতে খেতে নানারকম টুকিটাকি কথা বলতে বলতে সোনা কাকিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে মাকে বলেছিলেন, "জানো বৌদি, তোমার এ মেয়েটাকে আমি যখনই দেখি তখনই আমার মন খারাপ হয়ে যায়।"

আমরা সকলেই অবাক হয়ে সোনা কাকিমার মুখের দিকে চেয়েছিলাম। মা জিজ্ঞেস করেছিলেন, "কেন গো সোনা বৌ? আমার মেয়েটা এমন কী করেছে?"

সোনা কাকিমা বলেছিলেন, "করবে আর কি? কিন্তু এমন ফুটফুটে মেয়েটাকে তোমরা তো আর কয়েক বছরের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দেবে। ওর কপালে কার ঘরের বৌ হবার কথা লেখা আছে কে জানে। না জানি মেয়েটা আমাদের ছেড়ে কতদুরে কোথায় চলে যাবে। এখন তো তবু যখন তখন এসে মেয়েটাকে দেখে যেতে পারি। কিন্তু তখন ইচ্ছে করলেও মেয়েটাকে আমরা চোখেও দেখতে পাব না। সেটা ভেবেই কথাটা বলছি গো।"

মা একটু হেসে বলেছিলেন, "সে তো তোমার মেয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই হবে সোনা বৌ। মেয়ে বলতেই তো পরের ঘরের জিনিস। মা বাবা হয়ে কেউ কি আর মেয়েকে আইবুড়ো করে সারাটা জীবন নিজেদের কাছে রাখতে পারে? সবাইকেই বুকে পাথর বেঁধে মেয়েকে পরের ঘরে পাঠাতে হয়। তবে তুমি যা বলছ সে’কথা তো আমিও মাঝে মাঝে ভাবি। ওর বাবা তো বলেন যে, ওকে খুব দুরে কোথাও বিয়ে দেবেন না। কিন্তু কার খুঁট কোথায় বাঁধা সে কথা কি আর আগে থেকেই জোর দিয়ে বলা যায়?"

সোনা কাকিমা কিছু বলে ওঠার আগেই ঝুনুদি তার মা-র উদ্দেশ্যে বলেছিল, "মা তুমি বরং এক কাজ কর। রুমুকে বরং তোমার ছেলের বৌ করে তুমি আমাদের বাড়িতেই নিয়ে যেও। তাহলে তুমিও যেমন সারাজীবন ওকে নিজের কাছে পাবে, তেমনি জেঠু জেঠিমাও তাদের এ মেয়েটাকে সারাজীবন পাশের বাড়িতেই দেখতে পাবে। অবশ্য বয়সের হিসেবে একটু গড়মিল হয়ে যাবে, টুপু তো রুমুর চাইতে বছর দেড়েকের ছোট।"

সবাই সে’কথায় হো হো করে হেসে উঠেছিল। মা হাসতে হাসতেই বলেছিলেন, "ভালই বলেছিস ঝুনু তুই। আর তোকেও নাহয় আমার এক ছেলের বৌ করে এ ঘরে নিয়ে আসব। তাহলে তোরা দু’জনেই তোদের বাপের বাড়ির পাশেই থাকতে পারবি। আর আমরাও সারা জীবন মেয়েকে ঘরের পাশেই দেখতে পাব।"

সোনা কাকিমা বলেছিলেন, "বৌদি আমার মেয়েটা তো আর তোমার ছেলে মেয়েদের মত অত সুন্দর নয়। আর জাতপাত নিয়েও আমি বা ওর বাবা কেউই তত মাথা ঘামাই না। এখন কি আর সে’সব দিন আছে? এখন তো ছেলেমেয়েরা নিজেরাই নিজেদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পছন্দ করে। তবে তোমাদের আপত্তি না থাকলে ঝুনুকে কিন্তু আমি তোমার ছেলের বৌ করে পাঠাতে রাজি আছি। সে আদিই হোক বা তোমার ছোট ছেলে অভিই হোক। অভি ঝুনুর থেকে তিন মাসের ছোট হলেও ওকেও আমার জামাই করে নিতে আমাদের আপত্তি নেই। যদি তোমরা মেনে নাও।"

মা ঝুনুদির একটা হাত ধরে বলেছিলেন, "এ মেয়েটাকে কেন তুমি অযথা হেয় করছ সোনা বৌ? ঝুনু সুন্দরী নয় কে বলল? আমার তো ওকে খুব মিষ্টি লাগে দেখতে। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। আর জাতপাত নিয়ে আমাদেরও কোন গোড়ামি নেই। কিন্তু ওই যে তুমি ছেলেমেয়েদের নিজস্ব পছন্দের কথা বললে, সেটাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। নিজেদের পছন্দের পাত্রীকে ছেলেদের গলায় ঝুলিয়ে দিতে আমরা চাই না। বড়খোকার বিয়েটা আমরা তাড়াতাড়িই দিতে চাই। ছেলেটা একা একা কোলকাতায় পড়ে থাকে। কিন্তু ও কাকে পছন্দ করবে, সেটা তো আমরা জানিনা। সত্যি সত্যি ও কোন মেয়ের সাথে প্রেম করছে কি না আমরা সেটাও জানিনা। তবে এখনই তো আমরা ওর বিয়ে দিচ্ছি না। তবে বছর খানেক বাদেই হয়ত দেব। আর তখন যদি দেখি যে ও নিজে কাউকে পছন্দ করেনি, তাহলে ঝুনুর কথা অবশ্যই তুলব। ও যদি রাজি থাকে, আর রমেনদাও যদি চান, তাহলে হয়ত ওদের দু’জনের বিয়ে দেওয়াই যাবে। কিন্তু আদি আর ঝুনুর মনের ইচ্ছেটাও তো জানতে হবে"

বলে ঝুনুদির চিবুক ধরে বলেছিলেন, "কিরে? হবি আমার আদির বৌ?"

ঝুনুদি লজ্জায় মুখ নিচু করে নিয়েছিল। কোন কথা বলেনি। কিন্তু সোনা কাকিমাই আবার বলেছিলেন, "হাসি ঠাট্টা করতে করতে আমাদের আলোচনা কিন্তু বেশ সিরিয়াস হয়ে উঠছে বৌদি। তাই এ ব্যাপারে এখানেই আলোচনা শেষ করা ভাল। তবে তোমাকে আমার মনের একটা কথা জানিয়ে রাখছি বৌদি। সেটা পরে নীলুদার সাথে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখো। তোমাদের তিনটি সন্তানের সবকটিকেই আমরা খুব ভালবাসি। তাই আমাদের ঝুনু যদি সত্যি তোমাদের ঘরের বৌ হয়ে আসতে পারে তাহলে আমাদের খুশীর সীমা থাকবে না। তোমার বড়ছেলে বা ছোটছেলে দুটিকেই আমাদের খুব পছন্দ। অবশ্য সব চেয়ে বেশী পছন্দ করি তো তোমার এই মেয়েটাকে। আমাদের টুপুর জন্যে ওর মত একটা মেয়ে পেলে আমরা নিশ্চিন্ত হতাম।"

এমন সময় ঝুনুদি বলে উঠেছিল, "ওহ মা, তুমি তো দেখছি কালনেমির লঙ্কা ভাগের মত কথা বলছ গো। তবে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার যদি আরেকটা দিদি বা বোন থাকত তাহলে রুমুদের এ বাড়িটাই আমাদের সকলের শ্বশুর বাড়ি হত। আর আদিদা, অভি আর রুমুর শ্বশুর বাড়ি হত আমাদের বাড়িটা। তোমাদের উচিৎ ছিল আরেকটা মেয়ের জন্ম দেওয়া। তাহলে আমরা দু’বোনই এ বাড়ির বৌ হয়ে আসতাম। আর রুমু তোমার ছেলের বৌ হয়ে আমাদের বাড়ি যেত" বলে খিলখিল করে হেসে দিয়েছিল।

সোনা কাকিমা ঝুনুদির পিঠে আলতো করে একটা থাপ্পড় মেরে বলেছিলেন, "দুর মুখপুড়ি। মুখে আর কিচ্ছুটি আটকায় না। নিজের মাকে এমন কথা বলতে আছে?"

সাথে সাথে মা সোনা কাকিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, "ইশ সোনা বৌ। মেয়েটাকে এভাবে মারছ কেন তুমি। আমরা কি সিরিয়াসলি এসব কথা বলছি নাকি? আমরা তো নিজেরা নিজেরা একটু ঠাট্টা তামাশাই করছি। ও-ও ঠাট্টা করেই কথাটা বলেছে। তবে ও যা বলল, সেটা বাস্তবে হলে কেমন হত বল তো? ইশ এ বোধহয় বাঙালী সমাজের মধ্যে একটা রেকর্ড হয়ে যেত গো। তোমাদের বাড়িটাই আমার তিন ছেলে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি হত। আর তোমার তিন ছেলেমেয়ের শ্বশুর বাড়ি হত আমাদের এই বাড়িটা। আর এখানে কোন তুতো তাতার ব্যাপার থাকত না তিনজনেই এ বাড়ির আর ও বাড়ির এক মায়ের পেটের সন্তান হত। সবাই সবার আপন হয়ে যেত। আপন ননদ, আপন দেবর, আপন ভাই, আপন বোন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যেত, কি বল?"

সোনা কাকিমাও হেসে বলেছিলেন, "ঠিক বলেছ গো বৌদি। ঝুনুর নন্দাই হত তার আপন ভাই। আর ওর জা হত ওর নিজের বোন বা দিদি। সবাই সবার আপন হত" বলে উনি নিজেও বেশ জোরে জোরে হাসতে শুরু করেছিলেন। .......@@@@@@@

আজ সেদিনের কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। সেদিন হাসি ঠাট্টার ছলে হলেও সোনা কাকিমা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে আমার বড়দা বা ছোড়দা, যে কোন একজনের সাথে তারা ঝুনুদির বিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। বড়দার সাথে আমার যখন সেক্স রিলেশন শুরু হয়েছিল তখন মা বাবাও মনস্থ করেছিলেন যে বছর খানেকের ভেতরেই বড়দার বিয়ে দেবেন। কিন্তু সে সুদিন আসবার আগেই তো সবকিছু ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যদি আমাদের পরিবারে অমন সর্বনাশটা না হত তাহলে ঝুনুদি কি সত্যিই আমার বৌদি হয়ে আমাদের বাড়ি আসতো? তবে আমার আর টুপুর কথাটা যে নেহাত ঠাট্টার ছলেই উল্লেখ করা হয়েছিল, এ ব্যাপারে আমার মনে কোন সন্দেহই ছিল না। সে’সব কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ঝুনুদির তখনকার মুখটা কিছুটা মনে পড়লেও টুপুর মুখটা তো আমার একেবারেই মনে নেই। ওর ভাল নাম যে নির্ঝর, সেটাও মাত্র ক’দিন আগে অনুরাধার মুখে শুনেই মনে পড়েছিল। আর অনু কিনা বলছে সেই টুপুই মাসির কাছ থেকে আমাকে নিয়ে যেতে চাইছে আজ? না না, এ কখনো হতেই পারে না।

শ্যামলীদি আমার ঘর থেকে এঁটো থালা বাসন নিয়ে যাবার কিছুক্ষণ বাদেই বাড়িতে শোরগোলের শব্দ উঠতে শুরু করেছে। তবে আমাকে আজ তালাবন্ধ ঘরে থাকতে হবে না। ঠিক তখনই গুবলু বই খাতা নিয়ে আমার ঘরে এল। আর আমিও সব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে ওকে পড়াতে শুরু করলাম।

পরের দিন সকালে বিজলী মাসির ঘরে চা খেতে খেতে মাসি আমাকে জিজ্ঞেস করল। "কিরে মিনু। আমার কথাটা ভেবে দেখেছিলি?"

অন্যদিন শ্যামলীদিও আমাদের সাথে একসাথে বসে চা খেত। কিন্তু আজ শ্যামলীদি মাসির ঘরে চা খেতে আসেনি। আমি মাসির প্রশ্ন শুনে বললাম, "আমি কী দোষ করেছি, সেটা আমাকে একটু জানতেও দেবে না মাসি?"

বিজলী মাসি বলল, "শোন মেয়ের কথা? দোষের আবার কি আছে এতে? তুই তো আর নিজের ইচ্ছেয় শরীর বিকোতে শুরু করিস নি। তোর মনে কি কখনও এমন ইচ্ছে হয় নি যে এসব ছেড়ে ছুড়ে কোনও একটা ভদ্র পরিবেশে ভদ্র বাড়িতে গিয়ে সম্মানের সাথে থাকতে?"

আমি মাসির একটা হাত ধরে বলেছিলাম, "না মাসি আমি সত্যি তেমন কিছু চাই না। আমি শুধু তোমার এখানেই থাকতে চাই। আমি যদি কোনও ভুল চুক করে থাকি তাহলে একটি বার আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আর কখনও কোন ভুল আমি করব না। তুমি যদি চাও, রাধাকেই এ বাড়ির মক্ষিরানী কর। কিন্তু আমাকে এ বাড়ির কোন একটা ঘরে আমাকে থাকতে দিও। আমি আরও অনেক বেশী খদ্দের ঘরে নেব। ডাক্তার তো বলেই দিয়েছে আমার শরীরে আর কোনও অসুস্থতা নেই। তুমি চাইলে আমার দিন মজুরীও কমিয়ে দিও। কিন্তু দয়া করে আমাকে এ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিও না মাসি। আমি তোমার দুটি পায়ে পড়ি।"

বিজলী মাসি আমার হাতটাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত গলায় বলল, "আমি তো তোকে আগেই বলেছি মিনু। তুই নিজের ইচ্ছেয় এ বাড়ি ছেড়ে যেতে না চাইলে আমি তোকে কখনও চলে যেতে বলব না। কিন্তু বিশ্বাস কর মিনু। সেদিন তোর জীবনের কথাগুলো শোনবার পর আমার বুকের ওপর যেন একটা পাথর চাপা পড়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি তোর প্রতি অন্যায় করছি। তোর মত একটা মেয়ের ঠাঁই এ বাড়িতে হতে পারে না। আর তাছাড়া যে তোকে নিয়ে যেতে চাইছে, সে একজন যথার্থ ভদ্রলোক। আমি নিজেও তার সাথে কথা বলেছি। লোকটা যখন আমার কাছে অমন একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছিল, আমি তো তখন বিশ্বাসই করতে পারিনি। তারপর অনেকক্ষণ ধরে তার সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারলাম, সে তোকে সত্যিই খুব ভাল ভাবে খুব যত্নে রাখবে। আমার জীবনে আমি এমন একটা মানুষকে আগে কখনো দেখিনি, যে জেনে বুঝে একটা বেশ্যা মেয়েকে সামাজিক সম্মান দিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তাই আমার মনে হয়েছে তুই সেখানে খুব সুখে থাকবি। একটা সামাজিক পরিচয় হবে তোর। একটা সংসার পাবি। এমন একটা লোক পাবি যে তোকে সম্মানের সাথে নিজের পরিবারে নিয়ে গিয়ে তুলবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, তোকে আর এভাবে হাজারটা পুরুষের মনোরঞ্জন করতে হবে না। তুই আমার কথাটা একটু ভাল ভাবে ভেবে দেখ। আমি কিন্তু তোকে কোন মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছি না।"

আমি তবু মাসির হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বললাম, "কেউ কারো জন্যে কিছু করতে পারে না মাসি। যার কপালে যেটা লেখা থাকে ঠিক সেটাই হয়। আর তুমি তো জানই, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় রাহু হচ্ছে ওই গজানন। ওই রাহুটার কবল থেকে যে আমি সারা জীবনেও নিষ্কৃতি পাব না। যতদিন বেঁচে থাকব ওই রাহুটা আমার শরীরটাকে ভোগ করেই যাবে। আর তুমি যে ভদ্রলোকের কথা বলছ, আমার সাথে সাথে সেও ওই গজাননের কোপের সম্মুখে পড়বে। আজ থেকে বারো বছর আগে গজানন যেভাবে আমার চোখের সামনে আমার মা বাবা দাদাদের খুন করেছিল, একই ভাবে সে বোধহয় তোমার ওই ভদ্রলোকটাকেও খুন করে আবার আমাকে নিয়ে অন্য কোন বাড়িউলির কাছে বিক্রী করে দেবে। আমি নিজের সুখের খোঁজে আর একজনকে কিছুতেই বিপদে ফেলতে পারি না। তুমি আমার ওপর একটু দয়া কর মাসি।"

বিজলী মাসি এবার অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকবার পর বলল, "শোন মিনু। তোকে আমি তার হাতে দিয়ে দিলেও আমার লোক সব সময় তোর ওপর নজর রেখে যাবে। গজাননের ব্যবস্থা তো আমি করবই। তোর জীবন থেকে আমি ওকে পাকাপাকি ভাবে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করতে শুরু করেছি। আর ও বাড়িতেও তোর সুখ স্বাচ্ছন্দের প্রতি আমার সমান নজর থাকবে। আর তুইও রোজ আমার সাথে ফোনে কথা বলবি। যদি সেখানে তোর কোনরকম অসুবিধে হয় তুই শুধু আমাকে একটু জানিয়ে দিবি। আমি সেদিনই তোকে তার কাছ থেকে ফিরিয়ে আনব। কারুর ক্ষমতা নেই আমাকে তেমন করতে বাঁধা দেয়। এটুকু ভরসা তো আমার ওপর তুই করতে পারবি, না কি?"

আমি তার কথা শুনে বললাম, "দশটা বছর ধরে তোমার কাছে আছি মাসি। আমার জীবনে ভরসা করবার মত এখন শুধু দুটো মানুষই আছে। তুমি আর শ্যামলীদি। তাই তো এমন ভরসার একটা জায়গা ছেড়ে আমি আর কোথাও যেতে চাই না। তুমি আমার এ মিনতিটুকু রাখ মাসি।"

মাসি এবারেও অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, "দ্যাখ মিনু। আমি লোকটাকে কথা দিয়ে ফেলেছি। আর তুই তো জানিস, আমি আমার কথার কতটা মূল্য দিয়ে থাকি। তাই বলছি, তুই আরেকটু ভেবে দ্যাখ ব্যাপারটা। গজাননকে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। ওকে আমি সামলাব। আর তোর ওপরেও আমার সর্বক্ষণ নজর থাকবে। যদি দেখি তুই অখুশী আছিস, তাহলেই আমি আবার তোকে আমার কাছে নিয়ে আসব। এই বিজলী মাসির ওপর এটুকু ভরসা রাখিস। তুই ঠাণ্ডা মাথায় কথাটা আবার একটু চিন্তা করে দ্যাখ। আমি পরে তোর সাথে কথা বলব। তবে একটা কথা মনে রাখিস মিনু, আমার এ বাড়ির দরজা তোর জন্যে চিরদিন খোলা থাকবে। অন্ততঃ যতদিন এই বিজলী বাড়িউলি বেঁচে থাকবে।"

নিজের ঘরে ফিরে আসবার পর থেকে শ্যামলীদি আর অনুরাধার সাথেই দুপুর পর্যন্ত কাটল। তাই সেভাবে আর এ ব্যাপারে কিছু ভাববার সময় পেলাম না। দুপুরে খাবার পর অনুরাধা তার ঘরে চলে যেতেই গুবলু এসে হাজির। রাতের খাবার খেয়ে অনুরাধা চলে যাবার পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলাম।

খুব ভালই বুঝতে পারছিলাম যে বিজলী মাসি তার মনে মনে পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সে আমাকে ওই লোকটার কাছে পাঠাবেই। তবে এমন ভাব দেখাচ্ছে আমি যেন তাকে ভুল না বুঝি। সে যে নিজের স্বার্থেই আমাকে ওই অজানা লোকটার হাতে তুলে দিচ্ছে সেটা বুঝতে আমার আর কোন অসুবিধেই হচ্ছিল না। আর সে যে আমার হাজার কাকুতি মিনতিতেও কান দেবে না এটাও বুঝতে পারছিলাম। সেই সাথে এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছিলাম যে এরপর যে কোনও দিন সে আমাকে ওই অজানা অচেনা লোকটার হাতে তুলে দেবে। এতদিন ধরে মাসি আমার সব কথাই খুব গুরুত্ব দিয়ে বিচার করত। এবারেই তার ব্যতিক্রম হল। তাই আমিও মনে মনে অজানা অদেখা সেই ভবিষ্যতকেই নিজের ভবিতব্য বলে ভাবতে লাগলাম।

তাই দিন তিনেক বাদে যখন মাসি আবার এ ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চাইল, তখন আমি তাকে বললাম, "তুমি যা ভাল বুঝবে তাই কর মাসি। আমি তোমার কোন কথার অন্যথা করব না। তবে আজকের পর এ ব্যাপারে আমার সাথে আর কোন কথা বোল না তুমি। আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। তাই আর কিছু ভাবতে চাই না। তুমি যেদিন যে মূহুর্তে আমাকে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলবে আমি তখনই তা করব। তবে দশটা বছর তো তোমাদের কাছে ছিলাম। যদি আমার ওপর তোমার মনে সত্যিই এক কণাও ভালবাসা থেকে থাকে তাহলে ওইটুকু ভালবাসার খাতিরে আমি শুধু ওই একটা কথাই বলব। আমি তোমাদের এ বাড়িটা ছেড়ে চলে যেতে চাই না। তুমি নিজেই অনেকবার বলেছ যে আমি নিজে যেতে না চাইলে তুমি আমাকে কখনো এ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলবে না। এখন সিদ্ধান্ত তুমিই নাও। আমি আর এ ব্যাপারে সত্যি কোনরকম আলোচনা করতে চাই না।"

বিজলী মাসি আমার কথা শুনে কোন কথা না বলে অনেকক্ষণ আমাকে তার বুকে চেপে ধরে রইল। তারপর বলল, "ডাক্তার ফোন করেছিল। তোর রিপোর্টগুলো নাকি সব এসে গেছে তার হাতে। আর তোকে রবিবার তার প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে দেখা করতে বলেছে। তবে আমার ইচ্ছে ছিল এবার তোর সাথে আমি যাব। কিন্তু রবিবার হলে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই তাকে অনুরোধ করলাম যে রবিবারের বদলে এ বৃহস্পতি বারের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে। সে তাতে রাজি হয়েছে। তাই বৃহস্পতি বার বিকেল চারটেয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে। সেই মত তৈরী থাকিস। আমরা হয়ত একসাথে যেতে পারব না। আমাকে তো সন্ধ্যেয় লক্ষ্মীপূজো না সেরে যাবার উপায় নেই। তাই আমি হয়ত একটু পরে যাব। তুই আর রাধা আগে চলে যাবি। আমি শ্যামলীদিকে সাথে নিয়ে পরে যাব।"

আমি মাসির বুক থেকে মুখ উঠিয়ে দেখি তার দু’চোখ জলে ভরে উঠেছে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে মাসি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেই। আমার কোন কথাতেই সে নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবে না। তাই চুপচাপ তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের ঘরে চলে এসেছিলাম।

আরও দুটো দিন কেটে গেল। এর মধ্যে বিজলী মাসি, শ্যামলীদি বা অনুরাধা অনেকবার আমার ঘরে এসেছে। অনেক রকম টুকিটাকি কথা বলে আমার সাথে তারা যতটুকু সম্ভব সময় কাটাবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু একটিবারের জন্যেও তারা আমার চলে যাবার প্রসঙ্গ ওঠায় নি। আমি নিজেও আর সে প্রসঙ্গটা ওঠাই নি। কারন আমি ততক্ষণে পুরোপুরি ভাবেই নিশ্চিত হয়েছিলাম যে আমার জীবনে আরেকটা নতুন ঝড় উঠতে চলেছে। আর সে ঝড়ের দাপটে ভেসে যাবার জন্যে আমিও মনে মনে প্রস্তুত হয়ে উঠেছিলাম। তারা যতক্ষণ আমার ঘরে থাকত ততক্ষণ আমার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বেশীর ভাগ সময়ই আমার অসুস্থতা, নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট, ডক্টর মুখার্জী, ডক্টর চৌধুরী, এসব নিয়েই কথা বলত। আর খদ্দেরদের ভেতরে অনুরাধার চাহিদা কী পরিমান বাড়ছে, অনুরাধা কবে কতজন খদ্দেরকে ঘরে নিয়েছে, এ’সব নিয়েই কথা হত। কিন্তু সবচেয়ে চুপচাপ দেখেছি শ্যামলীদিকে। সে প্রায় কোন কথাই বলত না। অন্যের কথায় শুধু ‘হুঁ’ ‘হাঁ’ করেই ক্ষান্ত থাকত। কিন্তু আমার ঘরের কাজকর্মের প্রতি তার মনযোগে একটুও ঘাটতি হয়নি। তার মুখের কথা যেন প্রায় আমার মতই হারিয়ে গিয়েছিল।

রোজই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা আমার ঘরে বসে গল্প গুজব করত। আর দুপুরের পর থেকে গুবলু বই খাতা নিয়ে আমার ঘরে চলে আসত। থাকত রাত ন’টা সাড়ে ন’টা অব্দি। তাই নিজেকে নিয়ে ভাববার সময় প্রায় পেতামই না। তবে ভাববার মত আর বেশী কিছু ছিলও না। নিজেকে পুরোপুরি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত থাকতে চেয়েছিলাম।

বুধবার সকালে বিজলী মাসির ঘরে চা খেয়ে উঠে আসবার সময় মাসি আমার হাতটা ধরে বলল, "কাল বৃহস্পতি বার। তোকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আজ তুই ভাল করে রেস্ট নে। গুবলুকেও আজ আর পড়াতে হবে না তোকে। শ্যামলীদিকে আমি বলে দেব।"

সেদিন সকালে অনুরাধা আবার বাইরের ডিউটিতে চলে গেল। ফিরল বেলা একটার দিকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শ্যামলীদি আর বিজলী মাসি আমার ঘরে কাটাল। শ্যামলীদি গত কয়েকদিনের মত আজও বেশ চুপচাপ। দুপুরের পর যখন ঘরে ঘরে খদ্দের আসতে লাগল, তখন গুবলুও এল না। একা ঘরে বসে প্রথমে খবরের কাগজটা নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বোলালাম। পরে এক সময় অধৈর্য হয়ে আলমারি থেকে হুইস্কির বোতল বের করে একটা বড় পেগ বানিয়ে নিয়ে খেতে লাগলাম।

মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কাল ডাক্তারের ওখানে গিয়ে কী শুনব? আমার ভেতরে আর কোন রকম সমস্যার কথা শুনব? না শুনতে পাব যে আমার ভেতর আর কোনরকম সমস্যা নেই? যদি দেখা যায় কোন সমস্যা নেই, তাহলে ডক্টর মুখার্জী কি সত্যিই আমার শরীরটাকে ভোগ করবেন? অনুরাধা তো এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত। আমার মনটাও তেমনই বলছে। নইলে তার প্রাইভেট চেম্বারে ডেকে নেবেন কেন সে।







কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





SS_Sexy- লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

SS_Sexy- লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ-এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment