CH Ad (Clicksor)

Sunday, May 25, 2014

জামাই আদর_Written By Lekhak (লেখক) [৩য় খন্ড (চ্যাপ্টার ০৭ - চ্যাপ্টার ০৯)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




জামাই আদর
Written By Lekhak (লেখক)






।।সাত।।

মেয়ে জামাই অভ্যর্থনা একেবারে দেখার মতন। পুরো রীতি আচার মেনে মেয়ে জামাইকে বরণ করলেন। শাঁখ বাজালেন, উলুও দিলেন। মনীষা বলল, "মা তুমি সত্যি পারো! এত কিছু করছ কেন বলতো? আমরা কি নতুন?"

মনীষার মা বললেন, "আমার কাছে তোরা নতুনই থাকবি। আজ থেকে দশ বছর পরেও। আর বিয়ের পরে তো সেভাবে এই প্রথমই এলি। এইটুকু না করলে হয়?"

মিষ্টির প্যাকেটটা শাশুড়ীর হাতে দিয়ে সুনীল বলল, "মা এইটা ধরুন। বাবা আপনাদের শুভেচ্ছা সহ পাঠিয়েছে।"

মনীষার মা ওটা হাতে নিলেন। খুশিও হলেন। সুনীলকে বললেন, "তোমাকে বাপু একটা কথা বলার আছে আমার।"

সুনীল বলল, "কি বলুন।"

 - "তুমি তখন থেকে আমাকে আপনি আপনি করছ কেন বলো দেখি? তোমার মুখ থেকে তুমি কথাটা না শুনলে ভাল দেখায়? বলো সুনীল।"

সুনীল হেসে বলল, "আচ্ছা তাই হবে।"

সুটকেশ, লাগেজপত্র রেখে মনীষা বিছানায় বসে পড়েছে। মা বললেন, "এই তোমরা বসো, আমি নিজের হাতে চা করে বানিয়ে আনছি। সারারাত ট্রেন জার্নি করে এসেছ। এখন গরম গরম চা খেলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে।"

মা চলে গেলেন ভেতরে চা করতে। মনীষার দেখাদেখি সুনীলও বিছানায় বসে পড়ল ওর পাশে। সুনীলকে জড়িয়ে ধরে মনীষা বলল, "কি কেমন লাগছে?"

সুনীল সাদামাটা উত্তর দিল, "ভাল।"

 - "ভাল? শুধু ভাল? কেন খুব ভাল নয়?"

সুনীল এবার মনীষাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বলল, "খুব ভাল।"

ওকে আর একটু জড়িয়ে ধরল মনীষা। বলল, "এই, সত্যি করে বলো না। আমার মন রাখার জন্য বলছ? সত্যি ভাল লাগছে শিলিগুড়িতে শ্বশুর বাড়ী এসে? না কি....."

 -- "না, বললাম তো। সত্যিই খুব ভাল লাগছে আমার।"

মনীষা যেন কিছু একটা জানে, সেইভাবেই সুনীলকে বলল, "এই, মায়ের কথা শুনে তুমি খারাপ ভাবে নাও নি তো?"

 -- "কেন খারাপ ভাবে নেব কেন? কেন কি হয়েছে?"

 -- "তোমাকে বললাম না, মা একটু আমার ঐ রকমই। এখনও ছেলেমানুষি ভাবটা রয়ে গেছে।"

 -- "না না আমি কিছু মনে করিনি। তুমি এর আগে বলেছ তো আমাকে।"

মনীষা এবার যেন একটু নিশ্চিন্ত হল। মনীষার মা এবার দুই কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। চায়ের কাপ দুটো ওদের দুহাতে ধরিয়ে উনিও বিছানার একপাশে বসলেন। মনীষাকে বললেন, "জানিস মনি(মনীষার ডাকনাম), তোরা যখন গোয়াতে ঘুরতে গেলি, তখন আমি তোর বাবাকে বলছিলাম, মনীষার কপালটা খুব ভাল, ওর বর দেখো কেমন ওকে গোয়াতে নিয়ে গেছে। আর তুমি কিনা সেই পুরীতে একবার নিয়ে গিয়েছিলে, তাও অনেকবার বলার পর। তোর বাবা এখনও আমায় গোয়া দেখাতে পারল না।"

মনীষা চা খেতে খেতে মাকে একটু সান্তনা দেবার চেষ্টা করছিল, বলল, "তুমি সেভাবে বাপিকে বলোই নি। নইলে বাপী তোমাকে ঠিক নিয়ে যেত।"

 - "হ্যাঁ তোর বাপী আর আমায় নিয়েই গেছে। খালি তো ব্যাবসা আর কাজ নিয়ে পড়ে আছে। এই দেখ তোরা এলি, অমনি উনি ছুটছেন রাজস্থানে। কি না ব্যাবসার কন্ট্রাক্ট ধরতে হবে ওনাকে। এত করে বললাম, মনিরা আসছে, তুমি যেও না। শুনলোই না আমার কথা। কালই ছুটছে রাজস্থানে।"

প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিয়ে সুনীল বলল, "আপনি মানে তুমি গোয়াতে যাবে মা?"

মনীষার মা তাকালেন সুনীলের দিকে। যেন ভীষন রকম আনন্দ হয়েছে একটা। সুনীলকে বললেন, "তুমি আমাকে নিয়ে যাবে সুনীল?"

 -- "কেন যাব না? এরপরের বারে আমরা সবাই যাব একসাথে। মনীষা আমি তুমি আর বাবা। আমরা চারজন একসাথে। আমি নিয়ে যাব তোমাদের।"

মনীষার বাবার কথা শুনে মা একটু ফোড়ন কেটে স্বামী সন্মন্ধে বললেন, "ও যাবে কিনা জানি না। তবে আমি তো যাবই। এক পায়ে রাজী। কতদিন সমুদ্র দেখিনি....."

মনীষা একটু ইয়ার্কি মেরে বলল, "মা দুটোই কিন্তু সমুদ্র। একটা বঙ্গোপসাগর আর একটা আরব সাগর। তফাৎ কিছু নেই।"

 - "তুই আমাকে আর ভূগোল চেনাস না। আমি সব জানি। বাপির সাপোর্টে কথা বলে, আমার মন গলানোর চেষ্টা করবি না কিন্তু বলে দিচ্ছি।"

মায়ের রকম দেখে সুনীল মনীষা দুজনেই হাসছিল। একটু পরে মনীষা উঠে পাশের ঘরে গেল। মনীষার মা একটু সুনীলের কাছাকাছি সরে এসে ওকে বললেন, "এই, গোয়াতে গিয়ে তোমরা কি করলে? খুব আনন্দ করেছ না? মনীষা তোমাকে আনন্দ দিয়েছে খুব? বলো না একটু শুনি।"

মহিলার মাথায় নিশ্চই ক্র্যাক আছে। নইলে জামাইকে এমন প্রশ্ন কেউ করে? সুনীল বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। রেগেমেগে বলেই দিতে যাচ্ছিল, "এসব প্রশ্ন আমাকে কেন? নিজের মেয়েকেই জিজ্ঞাসা করো না।"

তারপর আবার মনীষার কথা চিন্তা করে নিজেকে সহজ করে নিল। মনীষার মা'কে বলল, "মা তুমি ভীষন ইয়ার্কী মারো। খালি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছ।"

একটু বিচলিত দেখাচ্ছিল সুনীলকে। শাশুড়ী বড্ড বেশি খোলামেলা প্রশ্ন করছে সুনীলকে। হাজার হলেও, এসব প্রশ্ন জামাইকে করা যায় না। ও তবু বলল, "তোমার মেয়ে সবসময় আমাকে খুশিতে রাখে। মনীষার কাছ থেকে আমি আদর ভালবাসা সবসময়ই পাই।"

সুনীলের হাতটা ধরে মনীষার মা বললেন, "জানো তো..... আমারও খুব প্রেম করতে ইচ্ছে করে তোমাদের মতন।"

মহিলা হাতটা এমন ভাবে চেপে ধরেছিলেন, সুনীলের যেন কারেন্ট লাগছিল। শরীরের মধ্যে দিয়ে কি যেন একটা প্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। চেষ্টা করেও মনীষার মায়ের চেপে ধরা হাতটা থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে পারছিল না। হেসে বলল, "প্রেম করার বয়সটা তো এখনও ফুরিয়ে যায়নি মা। বাবার সাথে তো আপনি প্রেম করতেই পারেন। উনি তো আপনার জন্য একেবারে পাগল।"

 - "কার কথা বলছ তুমি?"

মনীষার মা এবার একটু ভূরু কূঁচকে সুনীলের দিকে তাকালেন।

 -- "কেন, বাপীর কথা"

 - "দূর তুমি ক্ষেপেছ? ওর তো কপাল ভাল, তাই আমি বিয়ে করেছিলুম ওকে। নইলে আমার কি পাত্রের অভাব? ডজন খানেক ছেলে ছিল লাইন দিয়ে আমাকে বিয়ে করার জন্য। আমি কাউকেই করলাম না। শেষ পর্যন্ত মনীষার বাপীকেই করলাম।"







।।আট।।

সুনীল বলল, "আমি সব শুনেছি মনীষার মুখে। তবে তুমি সঠিক লোককেই বিয়ে করেছে। বাপীর মতন মানুষ হয় না। ঠিক একেবারে আমার বাবার মতন। আমার বাবাও মাকে খুব ভালবাসেন। মা বাবাকে পুরো দেবতার মতন দেখেন।"

মনীষার মা জবাবে বললেন, "কিন্তু সুনীল, আমার স্বামী দেবতাটি যে বড্ড বেরসিক। প্রেম করা তো দূর, আমার সাথে সারাদিনে কথা বলারও সময় হয় না তার। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। আমি এখন প্রেম করার জন্য কার কাছে যাই বলো?"

সুনীল খালি ঝামেলায় পড়ে যাচ্ছিল মনীষার মায়ের কথা শুনে। এবার দেখল শাশুড়ী মা ওর হাতের ওপর নিজের হাতটা দিয়ে বোলাচ্ছে। জীবনে এমন তড়িতাহত হয় নি। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ও মনীষার মাকে বলল, "মা মনীষাকে একটু ডাকো না। ও কোথায় গেল?"

সুনীলকে অবাক করে মনীষার মা বললেন, "কেন? আমি তো রয়েছি। আমাকে পছন্দ হচ্ছে না?"

সুনীল কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। একটু পরে মনীষাও ঢুকল ঘরে। সুনীলকে আরও অবাক করে মনীষার মা মনীষাকে বললেন, "হ্যাঁ রে মনি, আজ থেকে যদি এক মাস তোর বরের সাথে আমিই প্রেম করি তোর কোন আপত্তি নেই তো?"

মনীষাও ঘাড় নেড়ে বলল, "কোন আপত্তি নেই মা। একেবারে সাচ্ছন্দে।"

বলে হাসতে লাগল সুনীলের দিকে তাকিয়ে।

একেবারে সাংঘাতিক শ্বাশুড়ী। সুনীলকে এতক্ষণে নাকের জলে, চোখের জলে করে ফেলেছে। মহিলা একেবারে নাছোরবান্দা। সেই যে জামাইকে চেপে ধরেছেন আর ছাড়ছেন না।

সুনীলের হাতটা থেকে এবার নিজের হাতটা মুক্ত করে মনীষার মা বললেন, "এই তোরা একটু কথা বল, আমি বরঞ্চ জলখাবারটার ব্যাবস্থা করি। তারপর চুটিয়ে আড্ডা দেব তিনজনে। তোর বাপীরও সময় হয়ে এল ফিরে আসার। বাজারটা করে আনলেই আমি রান্না চাপিয়ে দেব। আজকে জামাই এর জন্য অনেক পদ রান্না করব ঠিক করে রেখেছি।"

মনীষার মা উঠে চলে গেলেন। সুনীল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মনীষা পাশের ঘরে গিয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করে এসেছে। সুনীলকে বলল, "তুমিও জামাকাপড় ছেড়ে নাও এবারে। ট্রেনের পোশাকটা খুলে ফেল। পারলে চান করে নিতে পারো। বাথরুমে সব ব্যাবস্থা আছে।"

সুনীল কি বলতে যাচ্ছিল, মনীষা বলল, "তুমি আসলে মার সাথে এই প্রথম মিশছ তো, একটু মানিয়ে নিতে অসুবিধে হবে। কয়েকদিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার মায়ের এটাই স্টাইল। আমি, বাপী মায়ের এই স্বভাবটা জানি, তাই বিচলিত হই না। তুমি নতুন তাই....."

সুনীল বলল, "আসলে তোমার মায়ের বয়সটা খুব বেশি নয়। এখনও একটা ছেলেমানুষি ভাব আছে তোমার মায়ের মধ্যে। এটা থাকে কারুর কারুর মধ্যে। প্রসেনজিত নামে আমার এক বন্ধু থাকে দিল্লীতে। ওর বউ ও অনেকটা এইরকম। ও আমাকে প্রায়ই বলে, বউ এর মধ্যে একটা ছেলেমানুষি ভাব আছে, জানিস তো সুনীল। কোথায় কখন কি বলতে হবে জানে না। তবে প্রসেনজিতের বউ তোমার মায়ের থেকে অনেক ছোট। আমার সেই কথাটাই বারে বারে মনে পড়ছিল।"

মনীষা বলল, "মা'কে বুঝতে তোমার একটু সময় লাগবে। বললাম তো।"

সুনীল একটু বোকার মতই বলল, "মা যেই প্রেম করবে বলল, অমনি তুমি শুনে হাসলে কেন?"

মনীষা বলল, "বা রে, হাসির কথায় হাসব না? মা তোমাকে টেনশনে ফেলে পরখ করছে বুঝতে পারছ না? তোমাকে পরীক্ষা করছে? দেখছে তুমি ব্যাপারটাকে কিভাবে নাও। আমি বলেছি, তোমার জামাই খুব ঠান্ডা, যতই তুমি ক্ষ্যাপাও, ও চটবে না। মা আমার কথার সাথে মিলিয়ে দেখছে। তুমি সত্যি রেগে যাও কিনা? রাসভারী জামাই মার পছন্দ নয়।"

সুনীল এবার একটু টেনশন মুক্ত হল। তার মানে ওর সাথে অভিনয় করছে শ্বাশুড়ি মা। মহিলা ভালই রসিকতা জানেন। স্বামীকে বেরসিক বলেছিল একটু আগে, সুনীলের এবার খেয়াল পড়েছে। মনীষাকে এবার একটু হাম্বড়ি ভাব দেখিয়ে সুনীল বলল, "তাহলে তোমার মায়ের সাথে প্রেম করব বলছ?"

মনীষা সুনীলের পাশে বসে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল, "নেভার মাইন্ড। উইশ ইউ অল দ্য বেস্ট।"

সুনীল এবার কিছু না বলে মনীষাকে জাপটে জড়িয়ে ধরল। ওর গালে ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে লাগল। ভীষন আগ্রাসী হয়ে মনীষার ঠোঁটেও ঠোঁট দিয়ে দাঁত লাগিয়ে অল্প করে দিল কামড়ে। মনীষাকে বলল, "আচ্ছা আচ্ছা, এখন শিলিগুড়িতে এসে আমার হাত থেকে মুক্তি? আছে না কি এখানে কেউ? পুরোনো প্রেমিক? এবার যদি এই আদরটা আমি তোমার বদলে আমি তোমার মাকে করি? কেমন লাগবে?"

মনীষা সুনীলের নাগাল থেকে মুক্ত হতে চাইছিল। মুখে বলল, "এই ছাড়ো ছাড়ো, এক্ষুনি বাপী এসে পড়বে। ইস কি অসভ্য।"

সুনীল তবু মনীষাকে ছাড়ল না। ওর ঠোঁট চুষে একাকার করে দিল। দুহাত দিয়ে মনীষার গাল দুটো ধরে মধুর আস্বাদন করতে লাগল ঠোঁটে ঠোঁটে লিপ্ত হয়ে। মনীষাও সুনীলকে ছাড়াতে না পেরে বাধ্য হয়েই ওর ঠোঁটের মধ্যে নিজের ঠোঁট দুটোকে খেলাতে লাগল। দুজনের কেউই খেয়াল করল না কখন মনীষার মা দুটো থালায় লুচি ভর্তি করে, মেয়ে জামাই এর জন্য জলখাবার নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন দরজার সামনে।

 - "এই তোরা কি করছিস?"

কথাটা শুনে সুনীল এমন জবুথবু হয়ে গেল, যে ও দেখল মনীষাও হকচকিয়ে গেছে মায়ের এই আগমন দেখে। মা'কে ম্যানেজ করার জন্য মনীষা বলল, "এই দেখো না। তখন থেকে বলছি, চান করে নিতে। কিছুতেই আমার কথা শুনছে না।"

মনীষার মা দুটো থালা ভর্তি লুচি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। সুনীলের দিকে একটা থালা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, "যাবে খন চানে। তুই অত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? আজ থেকে ও তোর কথা শুনবেই না। ওকে আমি যা বলব, ও তাই শুনবে।"

বলেই ফিক ফিক করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে।

সুনীল ভীষন লজ্জায় পড়ে গেছে। মনীষা বলল, "দেখলে তো..... আমি তোমায় বলছিলাম। মা এসে ঠিক দেখে ফেলল।"

সুনীল জবাবে কিছু বলতে পারছে না। লুচির টুকরোটা মুখে নিয়েও কেমন গলায় আটকে গেছে। কারণ শিলিগুড়িতে এসে শ্বশুর বাড়ীটা কেমন অন্যরকম লাগছে।

একটু পরে মনীষার বাবা এলেন বাজার করে, দুই হাতে বাজার ভর্তি থলে নিয়ে। গিন্নীকে বললেন, "নাও, পুরো বাজারটাই তুলে নিয়ে এসেছি তোমার জন্য। সুনীলকে আজ ভাল করে তোমার হাতের রান্না খাওয়াও।"

থলে দুটো হাত থেকে নিয়ে মনীষার মা ওনাকে বললেন, "যাও এবার জামাই এর সাথে একটু কথা বলো গিয়ে, আমি ততক্ষণ ওদিকটা একটু সামলাই।"

খুব ভাল রান্না করে মনীষার মা। সুনীলকে নিজের মায়ের রান্নার গুনের কথা আগেই বলেছে মনীষা। একবার খেলে নাকি তারপরেও মুখে স্বাদ লেগে থাকে।

মনীষার বাবা এবার ওরা যে ঘরটায় দুজন বসেছিল, সেই ঘরটায় ঢুকলেন। সুনীল মনীষা দুজনেই তখন প্লেট থেকে লুচি তুলে খাচ্ছে। শ্বশুর মশাইকে দেখে সুনীল উঠে দাঁড়াতেই মনীষার বাবা বললেন, "আরে বসো বসো। উঠতে হবে না। আমি এলাম জানতে, তোমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো সুনীল?"

সুনীল বলল, "না না, ঠিকই তো আছে। কোন অসুবিধে নেই তো। এই তো এবার জলখাবারটা খেয়েই আমি চানে ঢুকবো। মনীষা তখন থেকে বলছে।"

বলেই মনীষার দিকে একবার তাকাল সুনীল।

হাতের ঘড়ি দেখলেন মনীষার বাবা। সুনীলকে বললেন, "আমি আবার কাজে বেরুবো। বেশিক্ষণ বসতে পারব না সুনীল। তুমি বরং চানটান করে একটু রিল্যাক্স করো। তারপর খেয়ে দেয়ে একটা টানা ঘুম। তোমার মা আছেন, কোন অসুবিধে হবে না। আর আমার ফিরতে ফিরতে সেই রাত্রির।"

 -- "আপনি কি এখন দোকানে যাবেন?"

 - "হ্যাঁ। এখন তো আবার দু-দুটো দোকান। আগে একটা ছিল, এখন আর একটা বেড়ে চাপ আরও বেড়েছে। ব্যাবসা বড় হয়ে গেছে। কি করব বলো? এই জন্যই তো তোমার মা একটু চটে যান মাঝে মাঝে। বউকে সময় দিতে পারি না। হাজার হোক ওরও তো সখ আল্লাদ আছে। ব্যাবসা ব্যাবসা করে আমি যেন কেমন হয়ে গেছি।"

 -- "আপনাকে এবার থেকে একটু মা'কে সময় দিতে হবে বাবা। মা'র জন্য এটুকু আপনাকে করতেই হবে।"

সুনীলের দিকে একটু বাধ্য শ্বশুড়ের মতন তাকিয়ে মনীষার বাবা বললেন, "বলছ? তা তুমি যখন বলছ, তখন এবার থেকে তাই হবে।"

মনীষা লুচি খেতে খেতে চুপচাপ বাবা আর স্বামীর কথা শুনছিল। সুনীলের শ্বশুর মশাই এবার মনীষার দিকে তাকিয়ে বললেন, "তুই খুব ভাল স্বামী পেয়েছিস রে মনি। দেখ এখানে এসেই কেমন তোর মায়ের কথা ও চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছে।"

মনীষা একটু অল্প হাসল। সুনীল বলল, "বাবা আপনি থাকবেন না, আপনাকে আমরা কিন্তু খুব মিস করব।"

মনীষার বাবা বললেন, "সাতদিন সুনীল, সাতদিন। তারপরেই আমি এসে যাচ্ছি এখানে। আর নড়ছি না শিলিগুড়ি থেকে।"







।।নয়।।

দোকানে যাবার তাড়া দেখিয়ে মনীষার বাবা বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। যাবার আগে সুনীলকে বললেন, "তবে যাই বলো, তোমার শ্বাশুড়ি মা কিন্তু খুব ভাল। চটে গেলেও সেভাবে কিন্তু কখনও রাগ দেখায় না আমার ওপর। এই জন্যই তো আমার গিন্নিটি এত ভাল। তবে আমাকে তোমার মা বলে রেখেছে, সুনীলকে একবার এখানে আসতে দাও, তারপর ওকে নিয়েই আমি সবসময় পড়ে থাকব। তুমি দোকান থেকে যতই রাত বিরেতে ফেরো, আমার কোন মাথাব্যাথা নেই।"

লুচি খেতে বিষম লেগে যাচ্ছিল সুনীলের। মনীষা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "কি গো কষ্ট হচ্ছে? জল এনে দেব।"

সুনীল বলল, "হ্যাঁ, জল দাও, গলায় লুচি আটকে গেছে।"

সুনীলের কাশি শুনে মনীষার মা'ও দৌড়ে এলেন রান্নাঘর থেকে। মনীষার মত উনিও হাত বোলাতে লাগলেন সুনীলের মাথাতে। মুখে বললেন, "আহা ব্যাচারা। দেখোতো কত কষ্ট পাচ্ছে। এইভাবে খেতে খেতে কেউ কথা বলে? বিষম লেগে গেছে। জল খাও সুনীল।"

মনীষার হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে নিজেই হাতে ধরে ঢকঢক করে জল খাওয়াতে লাগলেন সুনীলকে। সুনীল দেখল শ্বাশুড়ি মা জল খাওয়াচ্ছেন, আর অন্যমনস্কতায় ওনার বুকের আঁচল সরে গিয়ে ব্লাউজের মধ্যে থেকে বুকের খাঁজ বেশ খানিকটা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।

ঢকঢক করে পুরো জলটা খেয়ে এবার একটু নিঃশ্বাস ফেলল সুনীল। মনীষার মা ওর গালে একটা হাত রেখে বললেন, "কষ্ট হচ্ছে না তো সুনীল? খুব জোরে বিষম খেয়েছ।"

শাড়ীর আঁচলটা তখনও বুক থেকে সরে রয়েছে। মনীষা মা'কে ইশারা করে বলল, "মা, আঁচলটা ঠিক করে নাও।"

মনীষার মা সঙ্গে সঙ্গে আঁচলটা ঠিক করে নিলেন। সুনীল এমন ভাব করল, যেন ও কিছুই দেখেনি।

শ্বশুর মশাই এবার চলে গেলেন। মনীষা ওর মা'কে বলল, "মা, ওরা কখন আসবে বলেছে?"

 - "কে? টুনটুনি, বুলবুল?"

 -- "হ্যাঁ।"

 - "ওরা তো দুপুরেই আসবে। কিন্তু তুই সুনীলকে নিয়ে যাবি কি করে? ওর দেখছিস না চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ওর মনে হয় না যাওয়াটা উচিৎ হবে। তুই বরং একাই ঘুরে আয় ওদের সাথে।"

সুনীল বেশ অবাক হয়ে বলল, "টুনটুনি, বুলবুল কে?"

মনীষার মা বললেন, "ও বাব্বা। ওরা তো মনীষার আদরের বন্ধু। রিমঝিম, মনীষা, টুনটুনি আর বুলবুল, এই চারজন সেই ছোটবেলাকার বন্ধু। রিমঝিম মনীষা এখন কলকাতায়, আর এরা দুজন এখন শিলিগুড়িতে রয়ে গেছে। মনীষা আসছে শুনে, আগে থেকেই বলে রেখেছে, মাসীমা আজকের দিনটা কিন্তু ছেড়ে দিতে হবে মনীষাকে। সাথে জামাইবাবুকেও চাই। ওরা একসাথে সিনেমা দেখতে যাবে। টিকিট কেটে রেখেছে। না গেলে হূলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দেবে। তাই বলছিলাম তোমার শরীর খারাপ, মনীষা বরং ওদের সঙ্গে যাক। তুমি বরং আমার সাথেই....."

সুনীল কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। বউ যাবে সিনেমা দেখতে, আর ওকে শ্বাশুড়ির সাথে সময় কাটাতে হবে? আর এরাও আসার আর দিন পেল না? সিনেমা না দেখে এখানে সবাই মিলে গল্প করলেই তো ভাল হত। কি জ্বালায় পড়তে হল এখন, বলো দেখি।

মনীষা বলল, "সেই ভাল। তোমার বরং কষ্ট করে গিয়ে লাভ নেই। মা ঠিকই বলেছে, তুমি এখানেই থাকো।"

মনীষার মুখের দিকে খুব করুন মুখে তাকাল সুনীল। মনে মনে বলল, "কলকাতা থেকে আসার সময় এই প্রোগ্রামটার কথা তো তুমি আগে থেকে বলনি মনীষা। এখন মায়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য তুমি টুনটনি আর বুলবুলকে এনে হাজির করালে?"

একটু বেশ বিরক্তও হল ও। মুখে কিছু বলতে পারছে না, পাশে মনীষার মা অন্যরকম ভাবে। একটু পরে মনীষার মা উঠে চলে যেতেই ও মনীষাকে বলল, "যাই না আমিও। এখানে একা থেকে আমি কি করব?"

যেন মায়ের সাথে এ বাড়ীতে থাকতে ওর অসুবিধে আছে।

মনীষা বলল, "থাকো না তুমি। অসুবিধের কি আছে? মা তোমার জন্য এত কষ্ট করে অনেক পদ রান্না করছে। একটু নয় মায়ের সাথে বসে গল্প করলে। তারপর আমি তো রাত্রি বেলা চলেই আসছি।"

সুনীলের যেন মন সায় দিচ্ছিল না কিছুতেই। মনীষাকে ও বলল, "সিনেমা কি না গেলেই নয়?"

ওর রকম দেখে মনীষাও এবার হাসতে লাগল। বলল, "তুমি না সত্যি একেবারে কচি খোকার মতন হয়ে গেছ এখানে এসে। আমাকে ছাড়া একদন্ড থাকতে পারবে না তুমি? আমি মাকে কি বলব? তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। শুধু শুধু মাকেই বা একা ফেলে যাব কেন? তুমি মায়ের সাথে গল্প করবে, দেখবে তিন চার ঘন্ঢা তোমার দেখতে দেখতে কেটে যাবে। মা হয়তো তোমাকে বলবে তারপর ঘুমিয়ে পড়তে। আর আমি তো ফিরেই আসছি রাত্রিবেলাতে। ইভিনিং শো শেষ হতে হতে নটা। বাপীর গাড়ী করে টুক করে চলে আসব।"

সুনীলের মন ঠিক করার জন্য এবার ওর গালে চুমু খেল মনীষা। সুনীলকে বলল, "নাও এবার চানটা সেরে নাও।"

জলখাবার খেয়ে সুনীল বাথরুমে ঢুকলো চান সারতে। ওদিকে মনীষার মা'ও তখন রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। মনীষা রান্নাঘরে গিয়ে মাকে সাহায্য করা শুরু করতেই মনীষার মা বললেন, "মনি, তোর আসতে আসতে কটা হবে রে?"

মনীষা বলল, "তা ন'টা হবে মা। ওর মা বললেন, সিনেমার শো যখন শেষ হবে, আমাকে একটা ফোন করে দিস তোর মোবাইল থেকে।"

মনীষা বলল, "ঠিক আছে করে দেব।"






কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





লেখক(Lekhak)-এ লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

লেখক(Lekhak)-এর লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইন্ডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment