CH Ad (Clicksor)

Sunday, March 29, 2015

মহানগরের আলেয়া_Written By pinuram [তেরো - চৌষট্টি ছক (০৭ - ০৮)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram




তেরো

চৌষট্টি ছক (#৭)

কি ব্যাপার এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো মণি? কার ফোন? অনেকক্ষণ হয়ে গেছে মনা আর পিন্টু, রুহিকে নিয়ে বেড়িয়েছে। কিছু হলো না তো? তাহলে এই মহানগরের আর রক্ষে নেই, খোলা পিস্তল হাতে রাস্তায় নেমে পড়বে দানা।

ফোন দেখে স্বস্তি পায় দানা, নয়না ফোন করেছে, কিন্তু হঠাৎ? "হ্যালো, কি খবর?" দানা প্রশ্ন করে।

উত্তর আসে নয়নার, "কি করছ? খালি আছো না মিসেসের সাথে কিছু চলছে।" বলেই ফিকফিক করে হেসে ফেলে।

চোখের সামনে মহুয়ার শায়িত অর্ধনগ্ন দেহ পল্লব ওকে মাতাল করে তোলে। মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "কিছু না বলো, কি হয়েছে।"

নয়না ওকে বলে, "একটু পরে আমার বাড়িতে আসতে পারবে। সন্ধ্যের পরে দিকে মোহনের সাথে দেখা করার ছিল।"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, নয়না যখন বাড়িতে ডেকেছে তাহলে ওর ওপরে নিশ্চয় সন্দেহ করেনি এখন। রমলা তাহলে নয়নাকে কিছুই বলেনি। কাউকে ওর অভিসন্ধির ব্যাপারে জানতে দেওয়া চলবে না। দানা উত্তর দেয়, "তুমি ঠিকানা বলো, আমি চলে যাবো।"

ফিকফিক করে হেসে নয়না বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি পাশে মিসেস আছে তাই না।"

দানা মিচকি হাসে, "তা আছে।"

নয়না বলে, "আরে না না সেরকম কিছু নয়। বুঝতেই পারছ এইসব আলোচনা শহরে থেকে করা যায় না। দূরে একটা গ্রামে, নদীর তীরে মোহনের একটা বাগান বাড়ি আছে সেখানে আলোচনা হবে। আমি বিমানকে বলে রেখেছি যে তুমি আমার সাথে আসবে।" গলা নামিয়ে কামুকী কণ্ঠে বলে, "আজ মিস্টার মন্ডলের গাড়িতে যেতে পারি কি?"

দানা বুঝতে পারে কোথায় ডাকা হয়েছে। যেখানে প্রতিবার সিমোনের সাথে সহবাস করত সেই দুর বাগান বাড়িতে ওদের আলোচনা সভা হবে। নয়না নিশ্চয় সিমোনের সম্বন্ধে অবগত নয় না হলে ওকে নিশ্চয় ইয়ার্কির ছলে কিছু একটা বলতো। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, "ঠিক আছে সন্ধ্যে নাগাদ আমি তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবো।"

মহুয়া ওদের কথোপকথন শুনে জিজ্ঞেস করে, "কে ফোন করেছিল গো?"

দানা উত্তরে জানায়, নয়না ফোন করেছিল, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের সাথে আলোচনা সভা আছে সন্ধ্যের পরে। ওর হয়তো আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মহুয়াকে অভয় দিয়ে বলে, নয়না হাতের মুঠির মধ্যে সুতরাং ভয়ের কোন কারন নেই, বিমান ওর টিকি ছুঁতে পারবে না। এখন পর্যন্ত নয়না ওদের অভিসন্ধি আঁচ করতে পারেনি। ওর দেওয়া চাল মতন সবাই এগিয়ে চলেছে একপা একপা করে। চূড়ান্ত হামলা এখন বাকি। কাকে দিয়ে শুরু করা যায়? কঙ্কনা নাসরিনকে দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল কিন্তু ওদের আসার এখন অনেক দেরি। বিমান আর সিমোনকে দিয়েই খেলা শুরু করবে দানা। ধোপ দুরস্ত জামা কাপড় পরে তৈরি, মহুয়ার শখের দামী ছাই রঙের সুট পরে নেয়। কোমরে একটা পিস্তল গোঁজে অন্য পিস্তল পায়ের মোজাতে ছোট বেল্ট দিয়ে বেঁধে নেয়।

মহুয়া সাজ পরিচর্যা ছেড়ে খানিকের জন্য উঠে আসে। মুখে মাথায় তখন পর্যন্ত রঙ মাখানো। ছলছল চোখে ঠোঁট হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে বলে, "সাবধানে যাও জিত। বুকটা কেমন যেন করছে।" জড়িয়ে ধরতে যায় মহুয়াকে কিন্তু মানা করে দেয় প্রেয়সী, "না না, এই ফেস প্যাক আর রঙ তোমার সুটে লেগে যাবে।"

মহুয়ার হাত ধরে চুমু খেয়ে অভয় দিয়ে বলে, "কিছু হবে না, ওরা এখন পর্যন্ত কিছুই আঁচ পায়নি। আর হ্যাঁ আমি একবার মনা আর পিন্টুকে ফোন করে দিচ্ছি রুহিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে।"

দানা বেড়িয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বের হওয়ার আগে মনা আর পিন্টুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেয়। নির্দেশ দেয় যতক্ষণ ও বাড়িতে না ফিরছে ততক্ষণ যেন বাড়িতেই থাকে। মনা আর পিন্টু কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যায়।

গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বুকের মাঝে চাপা টানটান উত্তেজনা, বিমান আর মোহনকে ওর চক্রান্তের বিষয়ে বেফাঁস কিছু বলা চলবে না, নয়নাকে ওর অভিসন্ধির সম্বন্ধে কিছু বুঝতে দেওয়া চলবে না।

অনেকদিন পরে এই বাড়িতে পা রাখতেই ওর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। সুন্দরী লাস্যময়ী অভিনেত্রীর কবলে প্রায় পড়েই গেছিল যদি না নয়না একটা ভুল চাল চালতো, ওই ইন্দ্রাণীর নাম না নিলে হয়তো ওর কথা মেনে বাপ্পা নস্করকে খুন করে দিত। তবে এখন ওর সামনে সব কিছু পরিস্কার, আগে মৈনাকের খুনের প্রতিশোধ, তারপরে নিজের খুনের প্রতিশোধ নেবেই।

কলিং বেল বাজাতেই কাজের মেয়ের স্থানে সুমিতা এসে দরজা খুলে দেয়। ছাই রঙের দামী সুট পরা দানাকে দেখে প্রায় চমকে ওঠে, একদম চেনা যাচ্ছে না যে এই দানা কয়েক মাস আগে ওদের গাড়ি চালাতো। দেখে মনে হয় বিশাল ক্ষমতাশালী এক ব্যাবসায়ী ওদের বাড়ির দরজায়। অদুরে নয়না বিস্ফোরিত নয়নে ওকে দেখে হেসে ফেলে। দানা বসার ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, বিশেষ কিছুই বদলায়নি বাড়ির।

দানা জিজ্ঞেস করে, "তৈরি, যেতে পারি?"

নয়না একটা সাদা জিন্স আর একটা টকটকে লাল রঙের শার্ট পরেছে, ওপরে দুধ সাদা দামী ব্লেজার, গলায় একটা স্কার্ফ। অভিনেত্রী তাই সাজের বাহার আলাদা। নধর দেহের গড়ন অনেকটাই উপচে ফুটে উঠেছে চাপা পোশাকের ভেতর থেকে। নরম ঠিকরে বেড়িয়ে আসা পাছার খাঁজ দেখে দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। কতবার ওই নরম নিটোল পাছার খাঁজে কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ ঘষে কামসুখ আস্বাদন করেছে দানা। উন্নত স্তন যুগল দেখে দুই হাত নিশপিশ করে, পারলে এখুনি স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে চটকে পিষে দেয়। দানা মনে মনে হাসে, একা নিভৃতে নির্জন রাস্তায় আবার যদি হঠাৎ করে বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে সেই পুরানো দিনের মতন তাহলে গাড়ির অবস্থা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। নয়নার পোশাক আশাক আর দেহের লাস্যময়ী কামুকতা ওকে হাতছানি দিয়ে বারেবারে ডাক দেয়। যদিও ওই ফাঁদে প্রথমেই পা দিতে নারাজ দানা তাও দেখা যাক এই পরিণতি কি হয়। মহুয়াকে একটা মেসেজ লিখে জানিয়ে দেয় ওরা যাত্রা শুরু করেছে।

দানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত জড়িয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, "আজকে তোমাকে দেখে সত্যি তোমার পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করছে। তোমাকে কি বলে ডাকবো ভেবে পাচ্ছি না, দানা না মিস্টার মণ্ডল?"

মনে মনে হাসে দানা, এই পোশাক আশাক বাহ্যিক আড়ম্বর দেখেই মানুষ চেনে মানুষে। খোলসের ভেতরে কি আছে সেটা দেখার প্রয়োজন কেউ মনে করে না। শুধু মাত্র ইন্দ্রাণী আর মহুয়া ওর অন্দর মহলে উঁকি দিয়েছিল তা ছাড়া আজ পর্যন্ত যত নারীর সংস্পর্শে এসেছে সবাই ওকে একটা খেলার পুতুল বলেই ভেবেছে। যখন ওর পকেটে টাকা ছিল না, পোশাকের ঠিক ঠিকানা ছিল না, চরিত্র গত দোষ থাকা সত্ত্বেও মহুয়া বুক ভরে ভালোবাসা দিয়েছে ওকে।

মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, "আমি দুটোই।"

গাড়িতে উঠে নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা দানা, ষাট লাখ টাকার গাড়ি থাকতে, তুমি চল্লিশ লাখ টাকার গাড়ির ড্রাইভারি কেন করতে গেলে একবার বলতে পারো?"

দানা প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, "আজকে ভারী সুন্দর লাগছে তোমাকে।"

নয়না চোখ টিপে বলে, "কম হ্যান্ডসাম লাগছ না তুমি। সুটের রঙ কি মিসেসের পছন্দ?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

নয়না বলে, "তোমার মিসেস যেমন সুন্দরী তেমনি মার্জিত সুন্দর রুচিবোধ আছে।"

গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে মাঠের মাঝ দিয়ে হুহু করে এগিয়ে চলে। চালকের আসনে দানা আর পাশে নয়না। অনেকক্ষণ দুইজনে পরস্পরকে শুধু মাত্র দেখে যায়, কিছু কথা নেই। দানা অঙ্ক কষতে ব্যাস্ত, কি ভাবছে নয়না? নিশ্চয় বাপ্পা নস্করকে খুন করার চক্রান্ত করছে। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়, নয়নাকে আর বিমানকে হাতের মুঠোর মধ্যে করার জন্য ওর হাতে কোন ভুয়ো চক্রান্ত থাকা দরকার।

নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "কি এত ভাবছো দানা?"

দানা গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, "না তেমন কিছু না। মোহন রাজি হবে তো, সেটাই একটু শঙ্কায় আছি।"

ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, "আমি ঠিক করিয়ে দেব চিন্তা করো না, দানা।"

কি করিয়ে দেবে? নয়না কি মোহনের সাথেও সহবাস করেছে? নিজের কাজ হাসিলের জন্য, করতেও পারে এই ধূর্ত কামুকী নারী। সন্ধ্যে অনেক আগেই নেমে গেছে। বিমানকে নয়না ফোনে জানিয়ে দেয় ওদের আসার কথা। বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই উর্দি পরা একজন লোহার দরজা খুলে দেয়। বাগান বাড়ির সামনের বাগানে একটা টেবিলের চারপাশে পাঁচখানা চেয়ার রাখা। বাগান আলোয় আলোকিত। রাজনৈতিক দল নেতা বিমান চন্দ, শিল্পপতি মোহন খৈতান আর তার সুন্দরী লাস্যময়ী স্ত্রী সিমোন খৈতান বসে। দামী কালো বি.এম.ডাবলু ঢুকতে দেখে একটু চমক খেয়ে যায় ওরা। নয়নাকে সাথে নিয়ে দানা গাড়ি থেকে নামে। বিস্ফোরিত চোখে দানাকে দেখে অবাক হয়ে যায় সিমোন। ক্ষণিকের জন্য চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে যায়, যেন ভুত দেখেছে সামনে। সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার সামাল দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে ওদের অভ্যর্থনা জানায়। এতদিন দানাকে খুব সাধারন মানুষ হিসাবেই গন্য করে এসেছিল সবাই, কিন্তু দামী সুট, কালো গাড়ি দেখে সেই সব কেটে যায়। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, সত্যি এই জগতে বাঁচতে হলে অর্থ চাই, না হলে ক্ষমতা প্রতিপত্তি আসেনা, মানুষ মানুষকে চেনে না। প্রথম যেদিন বিমান দানাকে দেখেছিল সেদিন সামান্য একটা ড্রাইভার হিসাবে দেখেছিল, দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ এক ব্যাবসায়ী অতি সাধারন পোশাক, আর আজকের দানা একদম ভিন্ন। মোহন ওকে কি বলে সম্বোধন করবে ভেবে পায় না। আময়িক হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে।

নয়না ওদের চেহারার ভাব্ব্যাক্তি দেখে মনের কথা বুঝে বলে, "মিস্টার মন্ডলের সাথে কি এই বাগানে বসেই আলোচনা করা হবে?"

বিমান মৃদু হেসে মাথা দোলায়, "অসুবিধে থাকলে ভেতরে যাওয়া যেতে পারে।"

দানা অল্প হেসে বলে, "না না, এখানে বসতে আপত্তি নেই। নদীর হাওয়া বেশ ভালোই লাগছে।"

দানা এতক্ষণ সিমোনকে তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করে যাচ্ছিল। এই ভাবে দানাকে দেখতে পাবে হয়তো আশা করেনি, না অন্য কিছু। রক্ত শুন্য চেহারায় কোনোরকমে হাসি টেনে আনে সিমোন। মোহন নিজের স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমোনের চোখে চোখ রেখে হাত বাড়িয়ে দেয় দানা। ওই কঠিন হাতের পরশ সিমোনের অজানা নয়, তাই হাত মেলাতে দ্বিধা বোধ করে সিমোন। হাত জোর করে ছোট্ট নমস্কার করে। দানা চোয়াল শক্ত করে মৃদু হাসে।

মোহন জিজ্ঞেস করে, "স্কচ নেবেন না ভদকা?"

দানা চেয়ারে বসে পাশের বেয়ারাকে বলে, "স্কচ অন রক্স।"

বেয়ারা মাংসের চপ কাটলেট আরও অনেক কিছু খাদ্য দ্রব্যের সাথে মদের গেলাস দিয়ে যায়। সিমোনের আশ্চর্য ভাব তখন ঠিক ভাবে কাটেনি আর সেটা নয়নার চোখ এড়ায় না। দানাকে একটু ঠেলে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। দানা মিচকি হেসে বলে ওর আশ্চর্য চকিত নয়নের ভাষার উৎস সম্পর্কে কোন ধারনা নেই।

কেনা বেচা নিয়ে আলোচনার শুরু মোহন করে, "মিস্টার মন্ডল। আপনি প্রায় পনেরোটা প্রকল্প একসাথে হাত দিয়েছেন তাই তো?"

দানা মৃদু হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

মোহন জিজ্ঞেস করে, "কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন?"

দানা উত্তর দেয়, "আড়াইশো কোটি টাকা।"

মোহন প্রশ্ন করে, "কি রকম অংশের শরিকানা আছে এই প্রকল্প গুলোতে?"

দানা উত্তর দেয়, "কোনটায় সত্তর তিরিশ, কোনটায় ষাট চল্লিশ। এইরকম ভাবেই আছে সব কয়টাতে।"

মোহন কিছুক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করে, "আমার কাছ থেকে কত চান সেটা বল।"

মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে চোখে চোখ রেখে দানা উত্তর দেয়, "একশো শতাংশ চাই মিস্টার খৈতান।"

বিমান, সিমোন আর মোহন আঁতকে ওঠে, ছেলেটা বলে কি? মোহন হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, "আপনার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি মিস্টার মন্ডল। আমাদের সাথে আপনি মস্করা করতে এসেছেন নাকি?"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "আপনার পথের কাঁটা বাপ্পা নস্কর, ভালো ভাবেই জানে আপনি আর বিমান চন্দ বাল্যবন্ধু। সুতরাং যতক্ষণ না বাপ্পা নস্কর বিশ্বাস করছে যে আমি আপনাদের সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছি ততক্ষণ বাপ্পা নস্কর আমাকে কাজে নামতে দেবে না।"

বিমান চিবিয়ে চিবিয়ে দানাকে বলে, "তুমি বড় ধূর্ত, এইরকম চাল চালবে ভেবে পাইনি।"

দানা বাঁকা হেসে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আপনার সামনে আমার প্রস্তাব রাখলাম ভেবে দেখবেন কি করতে চান। সম্পূর্ণ প্রকল্প হাতে না আসলে আমি কাজ করবো না।"

নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি কি আমার সাথেই বাড়ি ফিরতে চাও না অন্য কেউ তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে?"

এত তাড়াতাড়ি দানা নিজের পক্ষে অটল হয়ে যাবে সেটা বিমান অথবা মোহন চিন্তা করতে পারেনি। ভেবেছিল একটু দর কষাকষি চলবে দানার সাথে, কিন্তু দানা যে প্রস্থান করতে উদ্যত। নয়না দেখলো এতে হিতে বিপরিত হতে চলেছে, দানাকে হাতে না রাখলে ওদের চক্রান্ত সফল হবে না কিছুতেই।

দানার হাত ধরে বসিয়ে বিমানকে বলে, "তুমি কি চাও দানা এখান থেকে চলে যাক? ও চলে গেলে তোমার পরের নির্বাচনে জেতার আশা ভরসা সব ওর সাথে এই গেট থেকে বেড়িয়ে যাবে।" মোহন আর সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, "গত এক বছর ধরে আপনাদের প্রকল্প শুধু মাত্র ভিত দাঁড় করিয়ে আছে, আগামী পাঁচ বছর ওই ভিতে শ্যাওলা পড়ুক এই চান?"

বিমান বাঁকা হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, "তুমি ঠিক কোন পক্ষের মিস্টার মণ্ডল? বাপ্পা নস্করের না আমাদের?"

দানা চোরা হেসে নয়নার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, "আমি আপনাদের মধ্যে কারুর পক্ষের নয় বিমান বাবু। আমি নয়নার পক্ষের।"

দানা ভালো ভাবেই জানে নয়নাকে মাথায় করে রাখলে এই ব্যাবসায়িক লেনদেন ঠিক ওর ঝুলিতে এনে ফেলবেই।







চৌষট্টি ছক (#০৮)

নয়নাকে বড় করে দেখাতেই বেশ খুশি হয়ে যায় তাই মোহনের দিকে তাকিয়ে বলে, "আপনি কি চান মিস্টার খৈতান? এই চাল কিন্তু আমাদের চক্রান্তের একটা খুব বড় অঙ্গ। যতক্ষণ না বাপ্পা নস্কর বিশ্বাস করছে যে দানা আমাদের বাগে ফেলেছে ততক্ষণ ও শান্তি পাবে না। যে মুহূর্তে ও বাপ্পা নস্করের অতি বিশ্বাসী হয়ে উঠবে ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেব।"

বিমান আর মোহন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা শ্বাস রুদ্ধ করে হাত মুঠি করে বসে থাকে। চাপা উৎকণ্ঠায় হৃদপিণ্ড ফেটে যাওয়ার যোগাড়।

সিমোন শেষ পর্যন্ত মুখ খোলে, "মিস্টার মন্ডলের শর্ত মানতে রাজি আছি তবে হ্যাঁ, তিনখানা ছোট প্রকল্প আছে সেইগুলো সব কুড়ি আশি করে দেওয়া হবে আর দুটো বড় আবাসন প্রকল্প আর একটা হোটেল প্রকল্প আছে সেই গুলো পঁয়তাল্লিশ পঞ্চান্ন করতে হবে। আপনি একটু ঝুঁকুন আমরাও একটু ঝুঁকি, ব্যাবসার তাই নিয়ম তাই না মিস্টার মন্ডল।"

সিমোনের ঠোঁটে মিস্টার মন্ডল শুনে দানা মনে মনে যারপরনাই আনন্দিত। একসময়ে এই নারী ওকে শুধু মাত্র পুরুষ বেশ্যা ভেবে যথেচ্ছ ভাবে সহবাসের পুতুল বানিয়েছিল আর আজকে দামী গাড়ি, দামী সুট পরা দেখে এক সন্মান দিয়ে সম্বোধন করছে।

দানা নিজের কথায় অটল থাকে, "আমি আড়াইশো কোটি টাকা নিয়ে ভালো আছি মিসেস খৈতান। বাপ্পা নস্কর পরের পাঁচ বছর থাকলে অচিরে ওই আড়াইশো কোটি টাকাকে এক হাজার কোটি টাকা করে নেব। বাকিটা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম আমি।"

নয়না বিমানের দিকে তাকিয়ে রাগত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে, "কতবার তোমাকে এক কথা বুঝাতে হবে?"

নয়নার হাতে আলতো চাপ দিয়ে শান্ত করিয়ে মোহনকে বলে বিমান, "দ্যাখ মনু, নয়নার বিশ্বাসী মানে বুঝতেই পারছিস তুই।"

সিমোনের ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলে যায় সেই সাথে দানার ঠোঁটেও বাঁকা হাসি খেলে যায়। বিমান বলে চলে, "তিনটে আবাসনের প্রকল্প আগে ওর নামে করে দে, বাকি গুলো না হয় পরে দেখা যাবে।" দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "খুশি মিস্টার মন্ডল?"

চেয়ারে হেলান দিয়ে পায়ের ওপরে পা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, "খুশি আমি আগেও ছিলাম এখন আছি। দরকার আমার নয় বিমান বাবু, দরকার আপনার। আমি আমার পক্ষ রেখেছি কিন্তু সুতরাং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।"

সিমোনে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, "ঠিক আছে মিস্টার মন্ডল, পরশু দিনের মধ্যে কাগজ পত্র নিয়ে আমার উকিল আর সি এ আপনার অফিসে চলে আসবে। তিনখানা আবাসন প্রকল্প সম্পূর্ণ আপনার। বড় মাপের প্রকল্প গুলো পরে বিচার বিবেচনা করা যাবে।"

সিমোনে খৈতান, বিমান চন্দ এদের সবাইকে ধূলিসাৎ করতে চায় দানা। শুধু মাত্র কুড়ি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে মাছি মেরে হাত গন্ধ করতে নারাজ। চোয়াল চেপে মৃদু হেসে সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, "পনেরো কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে মাছি মেরে হাত গন্ধ করতে রাজি নই মিসেস খৈতান। আপনার কাছে এক সপ্তাহ সময় আছে। দুই সপ্তাহ পরে বাপ্পা নস্করের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হবে। আমাকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে বাপ্পাকে। একবার ওই টাকা যদি আমি বাপ্পার খাতায় ঢালি তাহলে বুঝতেই পারছেন, পরের পাঁচ বছরে ওই টাকার বিশ গুন আমি উশুল করব।"

বিমান সিমোনে আর মোহন সবাই ভাবনায় পরে যায়। নয়না চুপচাপ বসে ওদের দেখে আর হাসে। দানা মনে মনে উৎফুল্ল, এইবারে সঠিক জায়গায় ঘা মেরেছে। এতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা যাবে। মোহন আর বিমান ফিসফিস করে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করে, কি করা যায়, দানা যে অটল।

শেষ পর্যন্ত মোহন মুখ খোলে, "আপনাকে কতটা বিশ্বাস করা যায়, মিস্টার মন্ডল?"

ওই কথা শুনে নয়না ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা কোথা থেকে আসছে এইখানে মিস্টার খৈতান?" বিমানের দিকে অভিমানী চাহনি দিয়ে বলে, "এখন ওকে বিশ্বাস করতে পারছ না? এতদিনে তোমাকে ছিন্নমূল করে ছেড়ে দিত বাপ্পা নস্কর বুঝলে।"

বিমান মৃদু হেসে মাথা চুলকিয়ে মোহনকে বলে, "নারে মনু, আর কিছু না হোক মিস্টার মন্ডলকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তোকে পরে বিস্তারে জানাবো সেই সব।" তারপরে দানার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, "পরশু দিনের মধ্যে উকিল আর সি এ তোমার অফিসে সব কাগজ পত্র নিয়ে পৌঁছে যাবে।"

দানা ওদের বলে, "একটা কথা আছে, ওই কাগজে এটা যেন লিখতে ভুলবেন না যে দুশো কোটি টাকার বিনিময়ে আমি আপনার কাছ থেকে এই প্রকল্প গুলো কিনে নিয়েছি। বুঝতেই পারছেন, আয়কর বিভাগ এটা কিছুতেই মানতে চাইবে না যে আপনি আমাকে বিনা পয়সায় এত গুলো প্রকল্প এমনি এমনি দিয়ে দিয়েছেন। আয়কর ইত্যাদির চোখে ধুলো দিতে হলে এমন কিছু একটা করতে হবে।"

মোহন হেসে ফেলে, "খেঁকশিয়ালের মাথা আপনার মিস্টার মন্ডল। আচ্ছা তাই হবে কিন্তু দুশো কোটির বদলে দশ কোটি অন্তত আমি পেতে পারি।"

দানা হেসে বলে, "দশ কোটি কেন মিস্টার খৈতান, একবার বাপ্পা নস্কর সরে যাক। দুশো কোটির জায়গায় দুই হাজার কোটি আমাদের হাতে আসবে, অর্ধেক আপনার অর্ধেক আমার। আপনি প্রকল্প আমার হাতে দিয়ে খালাস। আসল কাজ আসল টাকা আমাকেই খাটাতে হবে তাই না?"

মোহন স্মিত হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।" দানা, বিমান আর মোহনের সাথে হাত মেলায়।

সিমোনে আর দানার চোখে চোখে কথা হয়, "তুমি কে দানা?" চোখের উত্তরে দানা বলে, "পরে বলবো।" সিমোনে জিজ্ঞেস করে, "খুব ধূর্ত।" দানা উত্তর দেয়, "তুমি কম নও।"

সিমোনে মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, "মিস্টার মন্ডলের সাথে তোমার বেশ খাতির আছে মনে হচ্ছে?"

দানার পাশ ঘেঁসে বসে নয়না উত্তর দেয়, "সে রকম কিছু নয় তবে একটু চেনাজানা আছে এই ব্যাস।" দানার কাঁধে আলতো চাপ দিয়ে বলে, "তাই না মিস্টার মণ্ডল?"

বুক ভরে ঠাণ্ডা নদীর বাতাস নেয় দানা। চূড়ান্ত আঘাত হানার আগের মুহূর্ত, কবে এদের বাগে ফেলতে পারবে আর সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নিতে পারবে সেই প্রহর গোনে। রমলা আর নয়না যখন মৈনাককে খুন করেনি তখন নির্ঘাত বিমান চন্দ আর সিমোনে খৈতান ওকে খুন করেছে। সঙ্গীতাকে খুন করতে চেয়েছিল কিন্তু ওর প্রেমিক বেঘোরে প্রান হারায়। মেয়েটার চোখের জল এখন শুকায়নি ঠিক ভাবে। বিমান বন্দরে দেখা পর্যন্ত করতে যেতে পারেনি পাছে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেলে। চোয়াল চেপে, সামনে বসা সবার দিকে রক্ত চক্ষু হেনে তাকিয়ে থাকে দানা। নয়নাকে ছেড়ে দেবে না দুটো কারনে, ইন্দ্রাণীর নাম নিয়ে হুমকি দিয়েছে আর সঙ্গীতাকে ধর্ষণ করাতে চেয়েছে।

ওকে হারিয়ে যেতে দেখে নয়না আলতো ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, কোথায় হারিয়ে গেলে? মিসেসের কথা মনে পড়লো, না মেয়ের কথা?"

সিমোন অবাক হয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার মেয়ে আছে?"

ওর হয়ে নয়না হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, একদম ফুলের মতন সুন্দরী ছোট্ট পরী, রুহি।"

কাজ শেষ, বুকের ভেতরে এক বিজয়ীর জোয়ার ওঠে দানার। হাতের নাগালের মধ্যে সব শত্রু, শুধু মাত্র যদি কেউ ওকে এইখানে আসতে না দেখতো তাহলে সবাইকে এইখানে খুন করে চলে যেত দানা। না, নিজের হাতে রক্ত মাখাতে চায় না দানা, ছোট্ট রুহির কি হবে? ওর "ডাডা" একজন খুনি? ওর সুন্দরী প্রেয়সীর চোখের জল কে মুছাবে? দানা ঘড়ির দিকে তাকায়, দীর্ঘ আলোচনা পর্ব শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে যায়। ওইদিকে বেয়ারারা আবার রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একবার মহুয়াকে ফোন করতে হবে, এতখনে নিশ্চয় চাপা উত্তেজনায় বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে। বিমান আর মোহন কিছু শলা পরামর্শ করার জন্য, মদের গেলাস হাতে নিয়ে উঠে চলে যায়। নয়না আর সিমোন গল্পে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

এর মাঝে দানা মহুয়াকে ফোন করে, "কি গো ঘুমালে নাকি?"

দানার কণ্ঠ স্বর শুনে স্বস্তি পায় মহুয়া, বুকের মাঝে বাঁধা রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বলে, "তুমি যেখানে গেছ সেখান থেকে না ফেরা পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারি? কি হল? সব ঠিক ঠাক না গোলমাল?"

দানা মৃদু হেসে বলে, "সব জালে।"

মহুয়া হেসে বলে, "এই না হলে আমার জিত।" বলেই ফোনে একটা দীর্ঘ চুম্বন একে দেয়। "তাড়াতাড়ি বাড়ি আসো। রাত দশ’টা বাজে।"

দানা জানায় এখন রাতের খাবার বাকি তারপরে বাড়ির পথ ধরবে।

সেই শুনে মহুয়া ওকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি জানি। নয়নাকে সঙ্গে নিয়ে গেছ। তুমি এক বাঘ আর ও এক বাঘিনী।" দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে, "দেখো বাবা তোমরা মারামারি খামচা খামচি কর তাতে আসে যায় না তবে আমার গাড়ির যেন কিছু না হয়। গত সপ্তাহে কিন্তু সার্ভিসিং আর ড্রাই ওয়াশ করিয়েছি। যা করার ফাঁকা মাঠে সেরে আসবে।"

দানাও ওকে ক্ষেপানোর জন্য বলে, "নয়নাকে আজকে একদম ফুলটুসি মাল দেখাচ্ছে, ভাবছি ফাঁকা রাস্তায় একটু চটকে আদর করবো।"

মহুয়া রেগে কাঁই, "যদি গায়ে মেয়ের গন্ধ পাই তাহলে ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে চিবিয়ে খাবো কিন্তু।"

দানা হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি খাবে শসা? সবুজ না গাঢ় বাদামী।"

দানার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে মহুয়ার একবিন্দু কষ্ট হয় না, কপট অভিমানী কণ্ঠে বলে, "আমি আজকে এত কষ্ট করে পরিচর্যা করলাম আর তুমি..... রাতে কিন্তু গেস্ট রুমে শুতে হবে জেনে রেখো।"

ওকে শান্ত করিয়ে বলে, "আচ্ছা বাবা আচ্ছা, নয়নাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই তোমার কোলে ঝাঁপ দেব। রুহি কি করছে?"

রুহিকে ফোন ধরিয়ে দেয় মহুয়া। আদো আদো কণ্ঠে কিছুক্ষণ ডাডা আর রুহির বার্তালাপ হয়। অনেক পুতুল কিনেছে, "আইকিম" খেয়েছে, "আন্তেলের" সাথে নাচানাচি করেছে।

মহুয়া সাবধানে বাড়ি ফিরতে বলে। দানা ঘড়ির দিকে তাকায়, বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত একটা বেজে যাবে। এতটা পথ গাড়ি চালিয়ে ক্লান্তি বোধ করবে কিন্তু একবার মহুয়ার মিষ্টি চুমু পেলেই সব ক্লান্তি ভুলে মেতে উঠতে পারে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাকি সবার দিকে দেখে, কোথায় কে কি করছে। চোখের সামনে চার বিপক্ষকে একসাথে দেখে বেশ খুশি, সবাইকে মোটামুটি নিজের ফাঁসে আটকাতে পেরেছে। এইবারে জাল গুটিয়ে আনা বাকি। কিছুদিনের মধ্যে জাল গুটাতে শুরু করতে হবে। প্রথমে সিমোনে আর বিমান চন্দ, তারপরে নয়না।

সিমোনকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দানা সতর্ক হয়ে যায়, নিশ্চয় অনেক কিছু জিজ্ঞেস করবে। পুরুষ বেশ্যা দানা কি ভাবে কোটিপতি ব্যাবসায়ি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল হয়ে উঠল। হাতের মদের গেলাস অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। নয়না অন্য দিকে চলে গেছে, বিমান আর মোহন তখন পর্যন্ত গুঢ় আলোচনায় ব্যাস্ত।

সিমোনের চোখে চোখ রেখে দানা এগিয়ে যায়। স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কেমন আছো?"

সিমোন দানাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে জিজ্ঞেস করে, "তুমি এখন এই শহরে আছো?"

প্রশ্ন শুনে দানা অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, "কেন আমি কোথায় যাবো?"

সিমোনে ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বলে, "না মানে, আমি যতদূর জানতাম তুমি শহর ছেড়ে চলে গেছ।"

দানার মাথার শিরা ওকে জানিয়ে দেয়, নিশ্চয় কঙ্কনা আর নাসরিন ওর ওপরে নজর রেখেছিল। কালী পাড়ার বস্তি কাউকে না বলেই ছেড়ে চলে গেছিল বেশ কয়েক মাসের জন্য। নিশ্চয় তার মাঝে কঙ্কনা আর নাসরিন ওর খোঁজ নিতে বস্তিতে লোক পাঠিয়েছিল। ওকে খুঁজে না পেয়ে নিশ্চিন্ত হয় কঙ্কনা আর নাসরিন, সেই খবর সিমোনেকে দেয়। কঙ্কনা আর নাসরিনের সাথে সিমোনে, রমলা, রাগিণী, নীলাঞ্জনা এমন অনেক ক্ষমতাশালী নারীদের যোগাযোগ রয়েছে সেটা দানা আগে থেকেই জানে। সিমোনকে চেপে ধরলে নিশ্চয় কঙ্কনার খবর পাওয়া যাবে সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না। কিন্তু এখুনি সিমোনকে চাপ সৃষ্টি করা মস্ত বড় ভুল। হাতের থেকে পাখী ফস্কে উড়ে চলে যেতে বাধ্য। আরো একটু রয়েসয়ে চাল খেলতে হবে ওকে।

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "তাই নাকি? না না, আমি এই মহানগরে ছিলাম।"

সিমোন আমতা আমতা করে বলে, "না মানে উড়ো খবর তাহলে। কিন্তু তোমাকে এই রূপে দেখতে পাবো আশা করিনি।"

দানা ভালো ভাবেই জানে এই রূপ অনেকের আশাতীত। শুধু মাত্র প্রেয়সীর জন্য এটা সম্ভব না হলে দানা হয়ত ভেসে যেত। কোনোদিন প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা করত না। দানা একটা বেয়ারাকে ডেকে এক গেলাস মদ আনিয়ে নেয়। মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে সিমোনের চোখে চোখ রেখে বলে, "এখন দেখতে পেলে। আরো বলো কি চলছে?"

সিমোন হেসে বলে, "তুমি প্রচন্ড কানিং (খুব ধূর্ত) তাই না? একদিকে বাপ্পা নস্করকে খেলাচ্ছো অন্যদিকে বিমানকে খেলাচ্ছো?"

দানার মাথা সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে যায়, কিন্তু মেপে উত্তর না দিলে সিমোন ওর চাল বুঝতে পেরে যাবে। এখুনি কারুর সন্দেহ ভাজন হতে চায় না দানা। মিচকি হেসে নয়নার দিকে ইশারা করে বলে, "আমি না বাপ্পা নস্করের দলের, না বিমান চন্দের দলের। আমি নয়নার পক্ষের।"

চোখ পাকিয়ে চটুল হাসি দিয়ে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি?" গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, "সাবধানে থেকো ওর কাছ থেকে। ও কিন্তু বিমানকেও খেলায়।"

দানা জানে তাও না জানার ভান করে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? এইবারে তাহলে তোমার কাছে শলা পরামর্শ নিতে আসবো।"

সিমোন হেসে বলে, "ঠিক আছে, আগে এই ব্যাবসায়ী লেনদেন হয়ে যাক। একদিন না হয় হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো খোঁজা যাবে আর শলা পরামর্শ করা যাবে।"

দানা মিচকি হেসে বলে, "তোমার খাই খাই ভাব এখন সেই রকম আছে না একটু বেড়েছে?"

সিমোন কামুকী হাসি দিয়ে বলে, "তুমি নেই, কঙ্কনা নাসরিন চলে গেছে। খুঁজতে একটু অসুবিধে হয় তবে পেয়ে যাই।"

হুম, তাহলে রমলা সঠিক খবর দিয়েছিল। সিমোন মুখ ফসকে সেই কথা দানাকে জানিয়ে দিল শেষ পর্যন্ত। আর সঙ্গে সঙ্গে দানা কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করে, "তুমি কি জানো কঙ্কনা আর নাসরিন কোথায়?"

মুখ ফসকে ওদের নাম নিয়ে নেওয়াতে বেশ বিবৃত বোধ করে সিমোন। কিন্তু মুখের কথা হাতের ঢিল ছুঁড়লে পরে বড় মুশকিল। নিজে থেকে ফাঁদে পা দিয়েছে এইবারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া গতি নেই। ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, "না সঠিক জানা নেই, তবে যতদূর আমি জানি ওরা আর এই শহরে নেই।" কথায় কথা বাড়ে তাই সিমোন আর কথা না বাড়িয়ে দানাকে বলে, "চল ডিনার সেরে ফেলি। তুমি আবার নয়নাকে নিয়ে ফিরবে তাই তো?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ। তোমরা কি আজ রাতে এইখানে কাটাবে?"

সিমোন ফিক করে হেসে ফেলে, "ওই দুই বুড়ো মদ্দ আর মদ। হ্যাঁ আজ রাতে এইখানেই কাটাবো আমরা।"

রাতের খাবার দাবার শেষ হল আরও বেশ কিছু ব্যাবসায়িক আলোচনায়। মোহন চায় যত তাড়াতাড়ি এই প্রকল্প গুলোতে কাজ শুরু করতে। দানা জানিয়ে দেয়, কাগজ হাতে আসার পর দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। একবার বাপ্পা নস্কর সরে যাওয়ার পরেই নিজের অংশ কেটে বাকি সব কিছু মোহনকে ফিরিয়ে দেবে। মনে মনে দানা জানে, একবার হাতের মুঠিতে এলে আগে এদের সবাইকে পিষে ধরবে তারপরে যা করার করবে। কাউকে এখুনি প্রানে মারার পরিকল্পনা ওর নেই। তবে সময় হলে চারজনকেই চির নিদ্রায় শুইয়ে দেবে। বাপ্পা নস্করকে খেপিয়ে লাভ নেই, অন্তত বাপ্পা নস্কর ওর কোন ক্ষতি করেনি।

বাড়ি ফেরার সারা পথ, নয়নার হাবিজাবি গল্পে কেটে যায়। কিছু কথা কানে ঢোকে কিছু ঢোকে না, ইচ্ছে করেই ঢুকায় না দানা। আর ওই ফাঁদে পা দিতে রাজি নয়। দানা ওকে বিশ্বাস করে সেটা জেনে নয়না ভারী উৎসাহিত। গাড়ি মধ্যেই গলা জড়িয়ে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে নেয়। দানার সেদিকে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ নেই, আগের দানা আর এই দানা অনেক আলাদা। সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে ওর শান্ত রূপ দেখে টের পেয়ে যায় নয়না।

গাড়ি থেকে নামার আগে ওর হাত ধরে বলে, "এই দানা, একদিন মিসেস আর মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এসো।"

দানা মৃদু হেসে বিদায় জানিয়ে বলে, "মিসেস মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলে, নিশ্চয় আসবো।"





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment