আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram
Written By pinuram
তেরো
চৌষট্টি ছক (#০৫)
মহুয়াকে সব কিছু খুলে জানাতে, মহুয়া ওকে সাবধান করে দেয়। রমলা বিশ্বাস আগে সাংবাদিক ছিল, বর্তমানে নয়নার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিজের একটা পত্রিকার সম্পাদিকা হয়েছে। মিডিয়া জগতে অনেক চেনাজানা, সেটা ইন্দ্রাণীর সাথে ওই পার্টিতে গিয়ে দানা বুঝেছিল। এর সাথেও বেশ মেপে চলতে হবে দানাকে। সারা রাত ধরে দুইজনে অঙ্ক কষে যায়, কি ভাবে রমলাকে বাগে আনা যায়। এই রমলা, নয়নাকে ইন্দ্রাণী আর দানার সম্পর্কের ব্যাপারে জানিয়েছিল তাই নয়না ওকে হুমকি দেওয়ার সাহস পেয়েছিল। তবে এই কানীন পুত্রের সংবাদ খুব গোপন, একবার এই খবর উজাগর হলে দুলাল মিত্রের নামে আর রমলার নামে কলঙ্ক রটে যাবে। এই খবর নিশ্চয় নয়না জানে আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই রমলাকে চেপে ধরে সঙ্গীতার খবর পায়। এই জারজ সন্তানকে ঢাল করেই রমলাকে ফাঁদে ফেলতে হবে। একবার এই ছেলেটার সাথে দেখা করা যাক।
ভোরের বেলায় দানা, রমিজকে ফোন করে বাড়িতে ডাকে, আর সেই আবাসিক স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যাক্ত করে। মহুয়ার বুক চাপা উত্তেজনায় ভরে ওঠে, এক এক করে চারপাশে ফাঁদ পেতে চলেছে কিন্তু কখন কোনদিক থেকে ওদের ওপরে আঘাত আসবে সেটা এখন বুঝে উঠতে পারছে না। নয়না আঘাত করবেই, বিমানের কাজ শেষ হলেই নিশ্চয় দানাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। এইবারে রমলাকে আঘাত করলে রমলা নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না পাল্টা আঘাত করবেই।
গাড়ি নিয়ে রামিজ আর শঙ্করকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে। মহানগর থেকে ওই পাহাড়ি আবাসিক স্কুল অনেকদুর। রাস্তায় দানা নিজের পরিকল্পনার সম্বন্ধে রমিজ আর শঙ্করের সাথে শলা পরামর্শ করে। রামিজ আর শঙ্কর উঁচিয়ে, হাতে পেলে যে কারুর মাথা ধড় থেকে নামিয়ে দেবে। কিন্তু দানা নিজেদের হাতে রক্ত মাখাতে নারাজ। ওইখানে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যাবে। পথে যেতে যেতে নয়নাকে ফোন করে রমলার ফোন নাম্বার জেনে নেয় দানা। প্রথমে নয়না কারন জিজ্ঞেস করলে, দানা বলে যেহেতু নয়নাকে ওর আর ইন্দ্রাণীর সম্পর্কে জানিয়েছিল তাই একবার রমলার সাথে কথা বলতে চায়।
সারাটা পথ তিনজনে পালা করে গাড়ি চালিয়ে বিকেল নাগাদ দুর পাহাড়ি স্কুলে পৌঁছে যায়। রাতে আবাসিক স্কুল বন্ধ থাকায় কারুর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা হয়ে ওঠে না। সকালেই তিনজনে স্কুলে গিয়ে ছেলেটার বিষয়ে জানতে চায়। অধ্যাপিকা কিছুতেই অনুমতি ব্যাতিত ছেলেটার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাতে নারাজ। দানা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, সঙ্গে সঙ্গে রমলাকে ফোন করে। অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে রমলা আগন্তুকের পরিচয় জিজ্ঞেস করে।
দানা মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "আমি বিশ্বজিৎ মন্ডল ওরফে দানা, আশা করি এইবারে চিনতে পারছেন।"
রমলা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। তুমি নয়নার....."
দানা বলে, "হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। আমি এক সময়ে নয়নার গাড়ি চালাতাম।"
রমলা প্রশ্ন করে, "হঠাৎ কি মনে করে ফোন করা হল? ইসস তুমি না, ইন্দ্রাণীর কি খবর?"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুঝতে বাকি থাকেনা এই মহিলাই নয়নাকে ইন্দ্রাণীর বিষয়ে জানিয়েছে। দানা কঠিন কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "তুমি নয়নাকে সঙ্গীতার খবর দিয়েছিলে? সত্যি সত্যি উত্তর দাও।"
সরাসরি প্রশ্ন করাতে রমলা ঘাবড়ে যায়, কিন্তু সেই অনুভুতি লুকিয়ে কঠিন কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আমি কাকে কি বলেছি তাতে তোমার কি দরকার। তুমি সামান্য একজন গাড়ির চালক, নিজের চরকায় তেল দাও।"
দানা পাল্টা আক্রমন করে রমলাকে, "দেখো রমলা, তুমি নয়নাকে সঙ্গীতার খবর দিয়েছিলে তাই আজ মৈনাক মারা গেছে। তুমি সঙ্গীতাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলে ঠিক কি না বলো?"
রমলা দাঁতে দাঁত পিষে বলে, "কি যা তা বলছ তুমি? আমি কেন সঙ্গীতাকে মারার চেষ্টা করব? আমি মৈনাককে চিনিনা আমি কাউকে মারিনি।"
দানা ক্রুর হাসি দিয়ে বলে, "তুমি সঙ্গীতার সব খবর জানো রমলা, সোজা কথায় মানবে না তাহলে। জানো আমি এখন কোথায়?"
রমলা জিজ্ঞেস করে, "কোথায়?"
দানা জানায়, "আমি বেলপাহাড়ির আবাসিক স্কুলে। তোমার ছেলে বেশ বড় হয়ে গেছে রমলা। শেষ কবে এসেছিলে দেখা করতে? আমি অনেক চকোলেট আর একটা ভিডিও গেম এনেছি ওর জন্যে। বলো তো ওর হাতে দেব না তোমার জন্য অপেক্ষা করবো?"
ওইপাশে রমলার শরীর রক্ত শুন্য হয়ে যায়, তাও দানাকে বলে, "কি যা তা বলছো তুমি, আমার কোন ছেলে নেই আমার শুধু দুই মেয়ে।"
দানা বাঁকা হেসে বলে, "ঠিক আছে তাহলে অধ্যাপিকার সাথে একবার কথা বলে নাও যাতে আমি একটু ছেলের সাথে দেখা করতে পারি।" বলে সামনে বসা অধ্যাপিকার হাতে ফোন ধরিয়ে দিতে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে রমলা ওইদিক থেকে আঁতকে ওঠে, "না দানা প্লিস, আমি সব বলছি কিন্তু প্লিস ছেলের সামনে আমাকে ছোট করে দিও না দানা, আমি তোমার পায়ে পড়ি।"
দানা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "আমি আগামী কাল বিকেল পর্যন্ত এইখানে থাকব, এর মধ্যে যদি এইখানে এসে দেখা করে যাও তাহলে ভালো না হয় যাওয়ার আগে তোমার ছেলের আসল পরিচয় বিশ্বের কাছে উজাগর করে দেব। একজন বড় সম্পাদিকার নামে কলঙ্ক। সামনে নির্বাচন সেই সাথে রাজনৈতিক দল নেতা দুলাল মিত্রের নামে কলঙ্ক।"
রমলা চাপা কণ্ঠে বলে, "তুমি ওইখানে অপেক্ষা করো দানা, আমি এখুনি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছি। রাতের মধ্যে আমি পৌঁছে যাবো প্লিস আমার ছেলেকে এর মধ্যে জড়িও না দানা আমি তোমার পায়ে পড়ি।"
দানা বাঁকা হেসে বলে, "ঠিক আছে, চলে এসো। আমি অপেক্ষা করে থাকবো।"
আঘাতটা একদম ঠিক জায়গায় লেগেছে। মৈনাকের খুনিকে হাতের সামনে পাওয়া যাবে। দানা এটাও জানে এতক্ষণে দুলাল মিত্রকে রমলা সব ঘটনা খুলে বলে দেবে আর নয়নাকে এই সব জানাবে। রমলার সব ক্রোধ নিশ্চয় নয়নার ওপরে পরবে কারন এই দুর্বলতার ফলে রমলা ওকে সঙ্গীতার খবর দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু নয়নাকে বেশি চাপ দিলেই ফেটে পড়তে পারে তাই রমলাকে সাবধান করে দেয়, "আর একটা কথা, নয়নাকে এই বিষয়ে কিছু জানাবে না, কারন নয়না আমাকে কিছুই বলেনি। আমি জানি তুমি নয়নার ওপরে সন্দেহ করেছ কিন্তু নয়না আমাকে তোমার ছেলের ব্যাপারে কোন খবর দেয়নি।"
রমলা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "না না আমি কাউকে কিছু জানাবো না। তুমি ওইখানে অপেক্ষা কর আমি আসছি। তোমার সাথে আরও অনেক কথা আছে দানা। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত এই শহর ছেড়ে চলে গেছ, কিন্তু সেদিন নয়নার পার্টিতে তোমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম।"
ঠিক কি বলতে চায় রমলা? ওর সাথে আর কি কথা থাকতে পারে প্রাক্তন সাংবাদিক, বর্তমান সম্পাদিকা রমলা বিশ্বাসের? রমলা কি মৈনাকের খুনের বিষয়ে কিছু আলকপাত করতে সক্ষম হবে? হতে পারে, সাংবাদিক মানুষ অনেক খবরা খবর রাখে রমলা। তবে নয়না কম যায় না, গুপ্তচর লাগিয়ে অনেক খবর বের করতে ওস্তাদ।
সন্ধ্যে নাগাদ রমলা বেলপাহাড়ি পৌঁছে যায়। রমলা একাই এসেছে, দানা নিজের হোটেলের ঠিকানা জানিয়ে দেয়। রমলা সেই হোটেলে একটা ঘর নেয় রাতের জন্য। রাতের খাওয়ার পরে দানা রমলাকে নিজের কামরায় ডাকে কথাবার্তা বলার জন্য। দানা চুপচাপ রমলার অপেক্ষায়, ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে, মৈনাকের খুনির সঠিক খবর এর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। রমিজ আর শঙ্করকে ওদের দেখা সাক্ষাৎ সবকিছু ক্যামেরা বন্দী করতে পরামর্শ দেয়। সেই মতন ঘরের এক কোনায় একটা ছোট ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা হয়।
এই একদিনেই রমলা অনেক শুকিয়ে গেছে, ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। একদিকে রামিজ বসে অন্যপাশে শঙ্কর বসে মাঝ খানে দানা। দানা একটা সোফায় রমলাকে বসতে অনুরোধ করে।
রমলা এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি?"
কঠিন গম্ভির কণ্ঠে দানা প্রশ্ন করে, "প্রশ্ন আমি করবো, তুমি উত্তর দেবে। প্রথমে এটা বলো, কেন তুমি সঙ্গীতার সম্বন্ধে নয়নাকে জানিয়েছিলে? জানো তারপরে সঙ্গীতার সাথে কি হয়েছে? নয়নার বাড়িতে সঙ্গীতাকে বেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওর প্রেমিক মৈনাকের খুন হয়েছে। এইসব শুধু তোমার জন্য হয়েছে রমলা।"
রমলা আক্ষেপ করে মাথা দোলায়, "সত্যি বলছি দানা, সঙ্গীতার জন্য আমার সত্যি দুঃখ হচ্ছে। আমি আমার ছেলের নামে শপথ করে বলছি ওর ক্ষতি হোক সেটা কোনোদিন চাইনি আমি।"
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, "আমি জানি না তুমি আমার ছেলের সম্বন্ধে কার কাছ থেকে শুনেছো, কিন্তু নয়নাও এই গোপন খবর জানে।"
দানা চিবিয়ে চিবিয়ে রমলাকে বলে, "নয়নাকে এইসব থেকে দূরে রাখো রমলা। নয়না আমাকে কিছুই বলেনি, বিশ্বাস না করলে এখুনি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারো।"
ওই হিমশীতল কণ্ঠস্বর শুনে রমলা কেঁপে ওঠে, "নয়না আমাকে কলঙ্কের হুমকি দিয়ে সঙ্গীতার খবর জানতে চায়। আমার কিছু করার ছিল না দানা, আমি ওকে দিতে বাধ্য হই। আমি সত্যি জানতাম না যে নয়না ওকে ধর্ষণ করাবে। জানলে কোনদিন সঙ্গীতার খবর ওকে দিতাম না। বিশ্বাস করো দানা, অনেকদিন পর্যন্ত ওকে আমি ওকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমি সঙ্গীতার খারাপ কোনোদিন চাইনি।"
ওর পার্টির কথা দানার মনে পরে যায়, রমলা মুখ খোলেনি নয়নার কাছে। তবে কে খুন করতে পারে মৈনাককে? ওকে অবাক করে রমলা বলে, "তবে আমি মনে হয় জানি মৈনাককে কে খুন করতে পারে।"
সঙ্গে সঙ্গে দানার রমিজ আর শঙ্করের দিকে তাকায়। দানা উৎসুক হয়ে ওঠে, "কে খুন করতে পারে। কি জানো তুমি?"
রমলা ওকে বলে, "সত্যি বলতে কি জানো। আমি কিছু গোপন খবর পেয়েছিলাম আর তার থেকেই অনেক কিছু জেনেছি।"
চাপা উত্তেজনায় দানার শ্বাস আটকে যায়। রমলা কণ্ঠস্বর নিচু করে বলে, "মিসেস কঙ্কনা দেবনাথ নামে ইন্দ্রাণীর এক বান্ধবী আমাকে একটা সিডি দিয়েছিল।"
কঙ্কনার নাম শুনতেই দানার শরীরের সকল ধমনী চাপা উত্তেজনায় টানটান হয়ে যায়। কঙ্কনা কি ভাবে রমলাকে চেনে?
রমলা ওকে বলে, "কঙ্কনা আমাকে যে সিডি দিয়েছিল তাতে প্রচুর গোপন কথোপকথন ছিল। কি ভাবে কঙ্কনা ওই সব কথাবার্তা রেকর্ড করেছিল সেটা আমার জানা নেই। তবে ওই সিডিতে আমি সিমোনের কথাবার্তা শুনেছি। কোন একজনকে ফোনে সঙ্গীতাকে খোঁজার আর তারপরে ওকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। আমি বুক ঠুকে বলতে পারি ফোনের ওইপাশের মানুষ বিমান চন্দ ছাড়া আর কেউ নয়। কারন সিমোনে, অত প্রান খুলে একমাত্র ওর স্বামীর বন্ধু বিমান চন্দের সাথেই কথা বলে, আর কারুর সাথে নয়।"
দানার মাথায় বিজলীর ঝিলিক খেলে যায়। মনে পরে যায়, ওর সাথে যেদিন সিমোনের প্রথম দেখা হয় সেদিন ফোনে কোন একজনকে ওই সাংবাদিককে খোঁজার আর মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। দানা জিজ্ঞেস করে, "ওই সিডিতে আর কার কার কথাবার্তা ছিল একটু বলতে পারো?"
রমলা ওর হাতে একটা সিডি ধরিয়ে বলে, "অনেক বিত্তশালী ক্ষমতাশালী মহিলাদের কথাবার্তা এতে রেকর্ড করা আছে। সিমোন খৈতান, রাগিণী ভৌমিক, নীলাঞ্জনা সেন, সুমিত্রা মল্লিক, কেতকী দাসগুপ্ত এমন অনেকের কথোপকথন আছে ওই সিডিতে।"
দানা বুঝতে পেরে যায় ওকে খুনের কারন কি হতে পারে, এটাও বুঝতে পারে কঙ্কনা ওকে জানায়নি কি ভাবে এই সব তথ্য যোগাড় করেছিল না হলে দানাকে হয়ত উল্টে চেপে ধরত রমলা। যে যে মহিলাদের নাম নিয়েছে রমলা, একসময়ে সবার সাথে সহবাস করেছে দানা। কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে ব্যাবহার করে ওই বিত্তশালী ক্ষমতাশালী নারীদের অন্দর মহলে ঢুকে গেছিল। সাধারনত এই বড় লোকেরা, ড্রাইভার মালী চাকর পুরুষ বেশ্যা এদের মানুষ বলে গন্য করে না। এদের সামনেই অনেক সময়ে অনেক গোপন আলোচনা করে ফেলে, ভাবে এরা কাকে কি বলবে। সেই সুযোগ নিয়ে দানাকে ওই দুই নারী ব্যাবহার করে।
দানা চিবিয়ে চিবিয়ে রমলাকে প্রশ্ন করে, "তুমি এই কথোপকথন নিয়ে কি করলে?"
রমলা উত্তরে বলে, "আমি খবর বেচা কেনা করি দানা। এই রেকর্ড করা কথোপকথন খবর যোগাড় করতে আমার খুব কাজে আসে। মানে আমি কাউকে সরাসরি ব্ল্যাকমেইল করিনি, তবে মাঝে মাঝে ভেতরের খবর হাসিল করার জন্য এই সব লাগে।"
এতক্ষণ এতসব জটিলতা শুনে দানার মাথা ভোঁ ভোঁ করতে শুরু করে দেয়। শঙ্কর আর রমিজ সিগারেট খাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ওদের মাথায় এই সব কথাবার্তার কিছুই ঢোকেনা। তবে দানার সামনে সব অঙ্ক মিলে যায়। কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল। কি কারনে বিমান চন্দ, সঙ্গীতাকে খুন করতে চেয়েছিল। সঙ্গীতা মারা যায়নি, তবে ওর প্রেমিক মৈনাক ওই দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছে।
দানা পিস্তল বের করে গর্জে ওঠে, "তোমার জন্য মৈনাক আজকে এই পৃথিবীতে নেই।"
ওর গর্জন শুনে শঙ্কর আর রমিজ খোলা পিস্তল হাতে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখে যে রমলা আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছে আর দানা খোলা পিস্তল হাতে ওর দিকে উঁচিয়ে।
রমলা কাঁপা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, "দেখো আমি যা যা জানি সব তোমাকে বলেছি প্লিস আমাকে প্রানে মের না। দেখ দানা, আমার কিছু হলে দুলাল মিত্র কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দেবে না।"
দানা চোয়াল চেপে চেঁচিয়ে ওঠে, "শালী রেন্ডী কুত্তি, সঙ্গীতার চোখের জলের মাশুল কে দেবে? কোন দুলাল মিত্রকে আমি চিনি না বুঝলে রমলা। আমার গায়ে আঁচড় লাগলে আমি সবকিছু নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে চলে যাবো। এই সংবাদ মাধ্যমের দুনিয়ায় নিশ্চয় তুমি একা নও রমলা। তোমার বিপক্ষে অনেক সাংবাদিক সংস্থা নিশ্চয় মুখিয়ে আছে তোমাকে দমানোর জন্য। তাদেরকে খুঁজে বের করতে আমার সময় লাগবে না, মিসেস রমলা বিশ্বাস।"
রমলা হাত জোর করে প্রার্থনা করে, "তুমি যা বলবে আমি করতে রাজি আছি।"
দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে রাগ প্রশমিত করে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কঙ্কনাকে কি ভাবে চেন? কঙ্কনা কোথায় তুমি জানো?"
এতক্ষণ কথা বলার পরে রমলার গলা শুকিয়ে আসে, বোতল থেকে জল খেয়ে আবার বলতে শুরু করে, "আমি আগে থেকে কঙ্কনাকে চিনতাম না। তবে ওই পার্টিতে কঙ্কনা নিজেকে ইন্দ্রাণীর বান্ধবী হিসাবে আমাকে পরিচয় দেয়। আমিও ইন্দ্রাণীর সাথে ওর মেলামেশা দেখে বিশ্বাস করে নিলাম যে ওর বান্ধবী হয়ত ওর সাথেই এসেছে। সেই পার্টির প্রায় আড়াই তিন মাস পরে কঙ্কনা আর নাসরিন আমার কাছে একটা সিডি নিয়ে আসে। এসে আমাকে বলে যে ওর কাছে অনেক গোপন তথ্য আছে যা আমি খবরের জগতে কাজে লাগাতে পারি। তবে তার জন্য অনেক মোটা অঙ্কের টাকা চায়, পাঁচ কোটি টাকা। সবে নয়নার কাছ থেকে এক কোটি টাকা নিয়ে আমি পত্রিকা শুরু করেছিলাম। আমার হাতে অত টাকা ছিল না তাই অগত্যা ওদের আমার পত্রিকার শেয়ার দিয়ে দিলাম। ওই দুইজন আমার পত্রিকার কুড়ি শতাংশের অংশীদার।"
এইবারে কঙ্কনার ঠিকানা পাওয়া যাবে। এতদিন কঙ্কনা আর নাসরিনের ঠিকানা ছিল না, ফোনে ফোন করে পায়নি, ওদের ছবি পর্যন্ত দানার কাছে ছিল না। এই নিয়ে ইন্দ্রাণীর সাথে কোনোদিন কথা হয়নি তাই জানতে পারেনি। ভেবেছিল একদিন কোন ভাবে খুঁজবে, তবে সেটা রমলার হাত ধরেই ওর কোলে এসে পড়বে সেটা আশাতীত। ওকে খুন করতে চেয়েছিল ওই দুই ধূর্ত মহিলা, খুনের প্রতিশোধ নেবেই।
রমলাকে কঙ্কনা ও নাসরিনের ঠিকানা জিজ্ঞেস করাতে রমলা ওকে জানায়, "কঙ্কনা আর নাসরিন এই শহর ছেড়ে চলে গেছে।"
শুনে দানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, তাহলে প্রতিশোধ কি ভাবে নেবে? রমলা ওকে বলে, "অন্য শহরের ঠিকানা ফোন নাম্বার সবকিছু আমি জানি। কিন্তু তুমি কঙ্কনাকে কি ভাবে চেন?"
দানা বাঁকা হাসি দিয়ে সত্য গোপন করে বলে, "ইন্দ্রাণীর বান্ধবী অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই তাই জিজ্ঞেস করলাম। একসময়ে বেশ জানাশুনা ছিল কঙ্কনা আর নাসরিনের সাথে। যাই হোক ওর ঠিকানা আর ফোন নাম্বার আমাকে দাও।"
রমলা ওকে কঙ্কনা আর নাসরিনের ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দেয়। দুর পশ্চিমের শহরে চলে গেছে দুইজনেই, হয়ত ওদের স্বামী বদলি হয়ে গেছে তাই এই শহর ছেড়ে চলে গেছে। অতদুরে গিয়ে সরাসরি কঙ্কনা আর নাসরিনকে খুন করতে হবে ভেবেই দানা একটু চিন্তিত হয়ে যায়।
রমলা ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বলে, "কঙ্কনা আর নাসরিন দুই মাস পরে আমাদের পত্রিকার বার্ষিক সম্মেলনে আসবে। তুমি চাইলে আমি দেখা করিয়ে দিতে পারি। ওই সময়ে ওদের নাকি আরো কিছু কাজ আছে, তাই প্রায় এক মাস মহানগরে থাকবে।"
ওই এক মাসেই যা করার করে ফেলতে হবে দানাকে। তবে সরাসরি খুনের দায়ে জেলে যেতে চায় না দানা। ঘরে সুন্দরী প্রেমিকা মহুয়া আর কচি শিশু রুহির কথা মনে পড়ে যায়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, বড় কঠিন পরিস্থিতি বড় জটিল সবকিছু, তবে প্রতিশোধ দানা নেবেই। ওর ভালোবাসার খুনের প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর।
চৌষট্টি ছক (#০৬)
রমলার কাছ থেকে আর কিছু জানার নেই দানার, তবে সাবধান করে দেয়, যদি রমলা মুখ খোলে তাহলে দুলাল মিত্র আর রমলার কেলেঙ্কারির খবর, মহানগরের সব খবরের কাগজের শিরোনাম হয়ে যাবে। রমলাকে এটাও জানিয়ে দেয় ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু কি ভাবে কাজে লাগাবে সেটা একটু ভাবতে হবে। বেলপাহাড়ির কাজ শেষ, মহুয়ার মিষ্টি হাসি আর রুহির কচি হাসি ওকে ডাক দেয়। আর দেরি করে না দানা, সেই রাতেই রমিজ আর শঙ্করকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আসার পথে দানা গুম মেরে বসে অঙ্ক কষে চলে, কি ভাবে কঙ্কনাকে আর নাসরিনকে হাতের মুঠিতে করবে। বাকি সবাইকে মোটামুটি জালে টেনে এনেছে দানা। শুধু মাত্র একে ওপরের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া বাকি। বিমান চন্দ যে মৈনাককে খুন করেছে সেটা পরিস্কার হতেই দানার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। নয়নার কথা মেনে বাপ্পা নস্করকে খুন করা ভুল পদক্ষেপ তার চেয়ে ভালো উল্টে বিমান চন্দ আর নয়নার মাঝে দ্বন্দ তৈরি করে দেওয়া। এক সাথে দুইজনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে মারামারি করে মরবে। অথবা বাপ্পা নস্করের কানে বিমান চন্দের আর নয়নার গোপন সম্পর্কের কথা তুলে দেওয়া তাহলে দুইজন কে বাপ্পা নস্কর খুন করে দেবে। দানার কাজ হাসিল হয়ে যাবে। সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ আর মৈনাকের খুনের প্রতিশোধ একসাথে নেওয়া হয়ে যাবে। তবে সিমোনে খৈতানকে বাগে আনতে হবে, ওই সিমোনে খৈতান সকল নাট্যের নায়িকা। ওর ধূর্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমান চন্দ লোক লাগিয়ে মৈনাককে খুন করেছে।
এই সব ভাবতে ভাবতে একসময়ে শহরে পৌঁছে যায় দানা। ভোরের আলো অনেকক্ষণ আগেই ফুটে গেছে। সকাল সকাল মহুয়ার ফোন, "কোথায় তুমি?"
দানা জানায়, "আমি একটু পরেই বাড়ি আসছি।"
মহুয়া অবাক হয়ে যায় ওর কথা শুনে, "রাতেই বেড়িয়ে পড়েছিলে নাকি গো?"
দানা উত্তর দেয়, "হ্যাঁ পাপড়ি। চোখের সামনে রুহির মুখচ্ছবি ভেসে ওঠার পরে বেল পাহাড়িতে আর থাকা গেল না। ওকে কোলে নেওয়ার জন্য মন ছটফট করছিল।"
ঘরে ঢুকেই আগে শোয়ার ঘরে ঢোকে দানা। ছোট্ট রুহি ঘুমে অচৈতন্য। মহুয়া ওইভাবে ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে, "কি হল বলবে ত? এমন ঝোড় কাকের মতন কেন দেখাচ্ছে তোমাকে?"
দানা চুপচাপ রুহির পাশে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। রামিজ আর শঙ্কর মহুয়াকে রাতের বিস্তারিত খবর দেয়। মহুয়া বুঝতে পারে যে দানা বেশ ভয় পেয়ে গেছে, মেয়েকে আর ওকে কেউ আঘাত করলে দানা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। সেই দৃশ্য দেখে মহুয়ার চোখে জল চলে আসে। কিন্তু দানা যে বদ্ধ পরিকর, প্রতিশোধ না নিয়ে কাউকে ছাড়বে না আর মহুয়া বদ্ধ পরিকর, দানাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। এহেন উভয়সঙ্কট অবস্থায় কি করা যায়। দিনে দিনে ওদের শত্রু সংখ্যা বেড়েই চলেছে, কম হবার নাম করে না। প্রথমে কঙ্কনা আর নাসরিন, তারপরে রমলা বিশ্বাস। এরমাঝে নিশ্চয় নয়না, দুলাল মিত্র আর বিমান চন্দ ওর বিপক্ষে হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে মোহন খৈতান আর সিমোন খৈতান ওর বিরুদ্ধে হয়ে যাবে। পাশে একমাত্র বাপ্পা নস্কর, তবে কতদিন?
দানার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে, "কি হয়েছে জিত, আমাকে বলবে না?"
দানা ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "প্লিস পাপড়ি তুমি এখান থেকে চলে যাও। রুহিকে নিয়ে তুমি আজমের চলে যাও।"
মহুয়া এটাই ভয় করছিল কিন্তু দানাকে একা ফেলে রেখে গেলে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? একা দানা কি করবে? না মহুয়া ওকে কিছুতেই ছেড়ে যাবে না, মরতে হলে সবাই একসাথেই মরবে। পাশে থাকলে ওকে বুকে জড়িয়ে শক্তির জোগান দিতে পারবে।
চুপচাপ দানার মাথা বুকে করে অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "আমি চলে গেলে তুমি শক্তি পাবে কোথা থেকে জিত? তুমি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ফাঁকা বাড়ি দেখে আরো মুষড়ে পড়বে।"
সেটা অবশ্য দানাও জানে, এই নারী ওর শক্তির উৎস। এতদিনে ওর বুকে কোন বল ছিল না। সেই বাজারে প্রথম মহুয়ার কাজল কালো ভাসা ভাসা চোখ দেখেই দানার বুকে সাহসের সঞ্চার হয়েছিল। আর তাই ওকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জানত না কি হবে, হয়ত সবার মৃত্যু হতে পারত কিন্তু নির্ভয়ে দানা ওকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আর সেটাই সত্যি।
মহুয়ার বুকের মাঝে মুখ ঘষে দানা মিহি কণ্ঠে বলে, "তুমি না একটা পাগলী মেয়ে বুঝলে।"
ওর অবিন্যাস্ত চুলের মধ্যে বিলি কেটে উত্তর দেয়, "পাগলে পাগল চেনে, আর শুয়োরে চেনে কচু। এইরকম কিছু একটা বাংলায় প্রবাদ আছে তাই না?" বলেই দুইজনে হেসে ফেলে। মহুয়া ওর গালে আলতো গাল ঘষে বলে, "আজকে আর কোথাও যেতে হবে না। সারারাত অনেক ধকল গেছে একটু ঘুমিয়ে নাও। কি খেতে চাও বলো।"
দানা হাসে, "তুমি আর কি খাওয়াবে, সেই রুটি আর ডাল। একটু মাছ মাংস হয় না বাড়িতে।"
মহুয়া ভুরু কুঁচকে ওকে বলে, "আচ্ছা প্রেম করার সময়ে জানতে না যে আমি নিরামিষ।"
দানা ওকে জোরে জড়িয়ে ধরে গালে অজস্র চুমু খেয়ে বলে, "নিরামিষ আর কোথায়, এমন সুন্দরীকে রোজ রাতে চটকে পিষে খাই আর কি নিরামিষ গো তুমি।"
ভালোবাসার রঙ ধরে যায় মহুয়ার চোখে, "ধ্যাত কি শুরু করেছে না দিন দুপুর বেলায়। নাও নাও স্নান সেরে ফেল, আর বিশ্রাম নাও।" তারপরে চোখ টিপে ফিসফিস করে বলে, "বিউটিসিয়ানকে ডাকব ভাবছি।"
মহুয়ার মসৃণ পুরুষ্টু লালচে ফর্সা ঊরু যুগল আর রোমহীন বগলের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই দানার ভেতরে কেমন যেন ছ্যাঁত করে ওঠে। মনে হয় এখুনি ওকে জড়িয়ে ধরে এইখানে সঙ্গমে মেতে ওঠে। বাধ সাদে রুহি সোনা, পাশেই ঘুমিয়ে আছে। ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়ে গেছে, পাশে ডাডাকে দেখে একটু আদর করবে, চুল ধরে টেনে উঠাতে চাইবে। গতরাতে পাশে দেখেনি, তাই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিল।
মহুয়ার পাতলা নরম কোমর জড়িয়ে, নরম পেটের ওপরে কর্কশ গাল ঘষে উত্তেজিত করে বলে, "রাতে তাহলে জমবে ভালো।" চোখ টিপে উদ্ধত লিঙ্গের দিকে ইশারা করে বলে, "আইসক্রিম খাবে নাকি?"
মহুয়া প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না তারপরে দানা যখন ওকে চক্ষের ইশারায় লিঙ্গ দেখায় তখন মহুয়ার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায় সেই সাথে কিঞ্চিত রেগে যায়, "ছিঃ কি সব বলছ তুমি। না না...." বলতে বলতে লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।
ওর রক্তিমাভা মাখানো ডিম্বাকৃতি মুখবয়াব দেখে দানা আর থাকতে পারে না। দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিজের ওপরে টেনে নেয়। বলিষ্ঠ বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে মহুয়া নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। নরম পাছার খাঁজে আটকা পড়ে যায় দানার উদ্ধত কঠিন লিঙ্গ। কঠিন লিঙ্গের পরশে সকাল সকাল মহুয়া, না চাইতেও কামোত্তেজনায় কেঁপে ওঠে।
দুই হাতে মহুয়ার নধর দেহ পল্লব পিষে ধরে গালে চুমু খেয়ে মহুয়াকে বলে, "এই এত লজ্জা কিসের।"
লজ্জায় মহুয়া ওর দিকে তাকাতে পারে না কিছুতেই, "ছাড়ো না প্লিস, মেয়ে উঠে পরবে।"
দানা ওর গালে গাল ঘষে বলে, "মেয়ে এত তাড়াতাড়ি উঠবে না।"
মিহি আদুরে কণ্ঠে বলে, "মণি এসে যাবে।"
দানা উত্যক্ত করে বলে, "আসবে না। মণি আসার আগে অন্তত দরজায় কড়া নাড়াবে।"
প্রেমঘন কণ্ঠে বলে, "আর সেই সময়ে যদি মাঝখানে পড়ে যাই তাহলে কি হবে? এ যাঃ সব মাটি।" বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
দানার লিঙ্গ কিছুতেই বাগ মানতে নারাজ। প্যান্টের ওপর দিয়েই দানার লিঙ্গ আলতো নাড়িয়ে দিয়ে মহুয়া বলে, "সোনা এখন ওইটা শান্ত কর। রাতে কাবাডি খেলবো, ঠিক আছে।"
মহুয়াকে ছেড়ে দিতেই বেশ কয়েকটা চড় চাপড় মেরে দানাকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে সারা অঙ্গে মাদকতাময় ছন্দ তুলে পালিয়ে যায়। গতকাল থেকে অনেক ধকল গেছে এই শরীরের ওপরে আর শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না। দানার চোখ জুরিয়ে আসে, রুহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
দুপুরে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া সারে। মনা আর পিন্টু, রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। দানা একবার আড় চোখে মহুয়াকে শোয়ার ঘর দেখায়। মহুয়া চোখ পাকিয়ে ঠোঁটে দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে জানিয়ে দেয়, কাবাডি খেলা রাতের আগে হবে না। দানা মাথা চুলকিয়ে অনুনয় বিনয় করে, বুক ধরে কাতর প্রার্থনা জানায়। রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছে, সকাল বেলায় যেমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল সেই আবেশ এখন ওর ঊরুসন্ধিতে লেগে আছে। লুঙ্গি পরা বাড়িতে মানা তাই শয়তান লিঙ্গ পায়জামার নিচেই ছটফট করে ওঠে।
মহুয়া ওর গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "তুমি না....."
দানা ওর হাত ধরে কাছে টেনে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ বলে ফেল, আমি কি।"
মহুয়ার চোখে রঙ লাগে, কঠিন থাবার মাঝে নরম কব্জি বাঁধা পড়ে যায়। হাত ছাড়াতে বৃথা চেষ্টা চালায়, ইচ্ছে করলে ছাড়াতে পার্ট কিন্তু সেই ইচ্ছেটা নেই, একটু দুষ্টুমি একটু ছোঁয়া পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জেগে ওঠে বুকের মধ্যে। ঠিক তখনি দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে।
দানা মিচকি হেসে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, "এই যাত্রায় বেঁচে গেলে।"
কাজের মেয়ে দরজা খুলে মহুয়ার দুই বিউটিশিয়ানকে বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসে। মল্লিকা আর সোনালী, মহুয়ার নিজস্ব বিউটিশিয়ান, ডাক দিলেই বাড়ি এসে পরিচর্যা করে যায়। তার জন্য ভালো টাকা দেয় মহুয়া। অবশ্য এর আগে এই দুইজন দানার অবর্তমানে বাড়িতে এসেছিল। সাধারণত দুপুরের পরে আসে আর তখন দানা বাইরে থাকে নিজের কাজে। দানা বুঝে যায় এইবারে ঘন্টা চারেকের জন্য প্রেয়সীর দেখা পাওয়া যাবে না।
অঙ্গে এক ছন্দময় হিল্লোল তুলে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, "তুমি ওইখানে বসে থাকো আমি আসছি।"
দানা ওকে কাছে ডেকে কানেকানে বলে, "তোমার ওইখানের জঙ্গল পারলে একটু কামিয়ে নিও।"
মহুয়ার কান লাল হয়ে যায়, "ছিঃ আমি ওদের সামনে ওইসব খুলে দেখাই না।"
দানা ওকে আর একটু উত্যক্ত করে বলে, "পরশু দিন কিন্তু আমার মুখের মধ্যে চলে গেছিল।"
মহুয়ার মুখ লজ্জায় লাল, কি শয়তানি শেষ পর্যন্ত শুরু করেছে, "এই যে শোন, যেখানে সেখানে মুখ না দিলেই হয়। আমি কি তোমাকে ওইসব জায়গায় মুখ দিতে বলেছি?"
মহুয়ার নরম হাত জোড়া গালের ওপরে চেপে ধরে বলে, "ইসস তাহলে মধু কি করে চাটবো? রাগ করে না সোনা, রাতে বেশ সুন্দর করে কামিয়ে দেব।"
সেই অনেকদিন আগে একবার যোনি কেশ খুব যত্ন নিয়ে সুন্দর করে কামিয়ে দিয়েছিল তারপরে অবশ্য দানার ইচ্ছেতে কামানো হয়নি। সেই দৃশ্য ভাবতেই মহুয়ার গায়ে কামোত্তেজনার কাঁটা দিয়ে আসে, "যাও শয়তান, তোমার সাথে আর কথা বলবো না।"
মহুয়ার গালের রক্তিম আভা দেখে দানার লিঙ্গ ফুঁসে ওঠে। দানা ফিসফিস করে বলে, "চেরার দুইপাশে একদম মসৃণ করে কামিয়ে দেব আর বেদির ওপরে ছোট একটা গুচ্ছ রেখে দেব। বেশ সুন্দর লাগবে।"
উত্তেজিত কথার ফলে মহুয়ার শরীর ছটফট করে ওঠে। নিজেকে কোনোরকমে দানার হাত থেকে বাঁচিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে, "রাতে আমার পাশে এস, এমন লাথি মারব না ওইখানে..... তখন বুঝবে ঠ্যালা।"
দানা হেসে ফেলে আর দুই বিউটিশিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে মহুয়া ভেতরের ঘরে ঢুকে যায়। রুহি নেই বাড়িতে একটা সিগারেট ধরাতে পারে, তাই একটা সিগারেট ধরিয়ে টিভি খুলে বসে পড়ে। একবার ফারহানকে ফোন করলে হয়, ওর বিয়ে সামনে, অনেকদিন হয়ে গেল দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। নাফিসা আর জারিনার দেহ পল্লবের ছায়াছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। পুরুষ মানুষ, পাশে প্রেমিকা থাকলেও নারী মাংসের লোভ শরীরের কোন এক কোনায় লুকিয়ে থাকবেই। বিয়ের পরে কি ফারহান ওর ভাবীজান নাফিসার সাথে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যাবে না বন্ধ করে দেবে? এতদিনে নিশ্চয় ফারহানের দাদা দুবাই থেকে এসে গেছে, নাফিসা রোজ রাতে তাবিশের কোলে বসে চরম কাম ক্রীড়া করছে। নগ্ন সুন্দরী নাফিসার দেহ যেন চোখের সামনে দেখতে পায় দানা, সেই সাথে লাস্যময়ী কচি সুন্দরী জারিনা। ভীষণ লাস্যময়ী দুই বোনের শারীরিক গঠন। ফারহান ভাগ্যবান, দুই বোনকে একসাথে এক বিছানায় ফেলে সঙ্গম সম্ভোগ করে। দানার মনে মাঝে মাঝে একটু এদিক ওদিকে নারী যোনির স্বাদ ভোগ করার সুপ্ত বাসনা জাগে বটে কিন্তু প্রেয়সীর মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বিরত হয়ে যায়।
ঘন্টা দুই এইভাবে বসে বসে কেটে যায়। নিঝুম বাড়ি, রুহিও নেই যে একটু ওর সাথে খেলা করবে। মনা আর পিন্টু কোথায় নিয়ে বেরিয়েছে কে জানে। বিকেলে মনে হয় মহানগরের অর্ধেক খেলনা ওর বাড়িতে এসে স্থান পাবে। আজকাল দানার চেয়ে বেশি মনা আর পিন্টুকে চেনে। আরো একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ভেতরের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কি করছে এতক্ষণ মহুয়া, রমহীন পুরুষ্টু ঊরু যুগল দেখার প্রবল ইচ্ছে দমাতে পারে না। আর যদি সত্যি বস্ত্রহীন হয় তাহলে কথাই নেই, দুই বিউটিশিয়ানকে ঘর থেকে বের করে ঝাঁপিয়ে পরবে প্রেয়সীর ওপরে।
দরজায় আলতো টোকা মেরে দানা জিজ্ঞেস করে, "আসতে পারি কি?"
উত্তরের অপেক্ষা করে লাভ নেই, ঘরে শুধু মাত্র ওর প্রেয়সী ছাড়া আর কারুর পরিচর্যা হচ্ছে না। দরজা খুলে ঢুকতেই মহুয়াকে দেখে ওর মাথা গুলিয়ে যায়। সাদা নরম বিছানার ওপরে চিত হয়ে শুয়ে মহুয়া, একটা সাদা তোয়ালে দিয়ে বুক থেকে ঊরুসন্ধি পর্যন্ত মোরা, বাকি অঙ্গ অনাবৃত। চোখের ওপরে আবার শশা কেটে রাখা। একটি মেয়ে মহুয়ার মাথার কাছে বসে ওর হাত দুটি নিয়ে পরিচর্যা করতে ব্যাস্ত। নখের পরিচর্যা, নখ ঘষে রঙ লাগিয়ে দিচ্ছে। অন্য মেয়েটা পায়ের কাছে বসে পায়ের আঙ্গুলের পরিচর্যা করতে ব্যাস্ত। পায়ের আঙ্গুলের মাঝে আবার তুলো গোঁজা। বাপ রে, ওর সুন্দরী মহুয়াকে কি করেছে এই দুইজনে? মুখের ওপরে কি সব মাটি না কি প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে, চুলেও কি সব মাখানো। সুন্দরী আর সুন্দরী নেই, পেত্নীর মতন দেখতে লাগছে মহুয়াকে।
দানা মিচকি হেসে বলে, "উফফ আর পারি না পাপড়ি। একদম শাকচুন্নির মতন দেখতে লাগছে তোমাকে।"
মহুয়া মুখ নাড়াতে পারে না, কিন্তু হাবভাব দেখে বোঝা যায় যে বেশ রেগে গেছে। চোখের ওপর থেকে শশা উঠিয়ে ওর দিকে কপট রাগত দৃষ্টি হেনে দরজা দেখিয়ে দেয়। দানা একপা একপা করে ওর দিকে এগিয়ে আসে। সুউন্নত স্তন যুগলের মাঝে বাঁধা তোয়ালের গিঁট কে ছাপিয়ে নিটোল স্তন জোড়া উচ্চ শৃঙ্গের মতন দাঁড়িয়ে। দানার হাত নিশপিশ করে ওঠে এখুনি ওই জোড়া নরম শৃঙ্গ হাতের মুঠোয় নিয়ে চটকাতে।
মহুয়ার শরীর কেঁপে ওঠে, এই শয়তানটা, এই মেয়েদের সামনেই না কিছু একটা করে বসে। বিশ্বাস নেই দানাকে, অন্তত এই ভালোবাসার দুষ্টুমিতে একদম বিশ্বাস নেই। যখন তখন শুরু করে দিতে পারে, রান্না ঘরে, বাথরুমে, সকালে চা খেতে খেতে।
অগত্যা মহুয়া চেঁচিয়ে ওঠে, "এক লাত্থি মারবো এইবারে কিন্তু। তুমি যাবে এইখান থেকে।"
ঠিক সেই সময়ে কাজের মেয়ে মণি এসে ওর হাতে ফোন ধরিয়ে বলে, "দাদাবাবু ফোন এসেছে।"
কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য।
পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click hereপিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment