CH Ad (Clicksor)

Sunday, March 29, 2015

মহানগরের আলেয়া_Written By pinuram [তেরো - চৌষট্টি ছক (০১ - ০২)]

আমরা টেক্সট ফরম্যাটে গল্প দেয়ার জন্য দুঃখিত, যারা ফন্ট সমস্যার কারনে পড়তে পারবেন না তাদের কাছে আগেই জানিয়ে রাখছি। আরও দুঃখিত গল্পগুলো চটি হেভেনের স্পেশাল ফরম্যাটে না দিতে পারার জন্য। খুব শিগগিরই গল্পগুলো এডিট করে চটি হেভেন ফরম্যাটে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো। এই অসঙ্গতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




মহানগরের আলেয়া
Written By pinuram




তেরো

চৌষট্টি ছক (#১)

ঘুম থেকে উঠতে সেদিন বেশ দেরি হয়ে যায়। অনেকদিন পরে নরম বিছানা আর প্রেমিকার ছোঁয়ায় দানার চোখ সকালে আর খুলতেই চায় না। গালের ওপরে নরম একটা চুম্বনের পরশে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখে রুহি কচি কচি দুই হাতে ওর গলা জড়িয়ে কর্কশ গালে নরম ঠোঁটের চুমু এঁকে দিয়েছে।

রুহি আদো আদো কণ্ঠে আবদার করে, "ডাডা ওতো না, কেলবে না?"

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে কাতুকুতু দিয়ে বলে, "হ্যাঁ মা, খেলবো। একটু চা খাই তারপরে।"

খাবার টেবিলে বসে সকালের চা জল খাবারের সময়ে মহুয়ার সাথে আগামী দিনের আলোচনা পরামর্শ করে দানা।

মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "আজকের প্ল্যান প্রোগ্রাম (পরিকল্পনা) কি?"

দানা একটু ভেবে বলে, "ভাবছি একবার মহেন্দ্র বাবুর কাছে যাবো। ওনার চেনাজানা একজন প্রমোটার আছেন তাঁর সাথে দেখা করব আর পরামর্শ নেব। তারপরে দেখি একবার বাপ্পা নস্করের কাছে যাবো। তুমি কি করছ আজকে?"

মহুয়া খেতে খেতে বলে, "কেনাকাটা করা। একটু পরেই রুহিকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবো। ওই লুঙ্গি টুঙ্গি পরা ছাড়, আর দেখি এইবারে তোমার স্টাডিটা সাজাতে হবে।"

দানা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "স্টাডি নিয়ে আমি কি করব?"

মহুয়া হেসে বলে, "সুযোগ ছিল না বলে দশ বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি, কিন্তু পড়াশুনা করার ইচ্ছে ছিল তাই না?" দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ" মহুয়া বলে, "তাহলে, স্টাডি তোমার অফিস হবে।"

দানা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, "পারলে একটা ছোট বার বানিয়ে দিও।"

মহুয়া চোখ পাকিয়ে দানার দিকে তাকায়, "বাড়িতে মদ একদম চলবে না। রুহি দেখতে পেলে কি হবে বলো তো? আজকে তুমি ওকে ভুলিয়ে বলবে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছো। একটু বড় হলে বলবে, ডাডা কোল্ড ড্রিঙ্কস খায় আমিও খাব। তখন কি হবে?"

দানা মাথা চুলকিয়ে ক্ষমা ভিক্ষে করে, "না না একদম নয়, অন্তত ওর সামনে একদম খাবো না।"

মহুয়া ওকে প্রশ্ন করে, "বারমুডা না পায়জামা, কি কিনবো তোমার জন্য?"

দানা ওর কানেকানে হেসে বলে, "আরে সোনা, লুঙ্গিতে বেশ হাওয়া খেলে। তোমাকে দেখলেই পেন্ডুলাম নড়তে শুরু করে, লুঙ্গি পড়লে খুলতে সুবিধা, হাওয়ায় ঠাণ্ডা হতেও সুবিধা।"

মহুয়া রেগে যায়, "সকাল সকাল উলটোপাল্টা কথাবার্তা শুরু করোনা তো। সবসময়ে শুনতে ভালো লাগে না বুঝলে। আর আমি যা বলবো তুমি তাই করবে।"

দানা মাথা নোয়ায়, "যে আজ্ঞে। আচ্ছা আমি কেষ্টকে বলে দিচ্ছি, ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসবে।"

মহুয়া ওকে মানা করে দেয়, "না না, কেষ্টকে নয়। ওর গাড়িতে চাপলে আবার ভাড়া নিতে চাইবে না।"

দানা হেসে ফেলে, "আচ্ছা বাবা, তবে মনা আর পিন্টুকে সঙ্গে নিয়ে যেও।"

মহুয়া জানায়, মনা আর পিন্টুকে সাথে নিয়েই কেনাকাটা করতে যাবে। দানার জন্য অনেক কিছু কেনার আছে। একবার ব্যাঙ্কে যেতে হবে, টাকা তুলতে তারপরে মধ্যমহানগরে অথবা দক্ষিণ মহানগরে চলে যাবে।

এইবারে ওদের প্রস্তুতির শুরু, খুব সন্তর্পণে পা ফেলে এগোতে হবে, মেপে মেপে চাল খেলতে হবে। চারপাশে মাকড়শার জাল, কে কার সাথে জড়িত সেটা একটু একটু পরিস্কার হয়েছে। কাকে কার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে হবে তার জন্য সুচতুর পরিকল্পনা করতে হবে। যতটা পারা যায় এদের দুর্বল নাড়ি জানতে হবে। কুয়াশাচ্ছন্ন হয়েই একের পর এক আঘাত করতে হবে দানাকে। সবাই যে এক সুতোয় বাঁধা, শুধু মাত্র নয়নাকে পরাস্ত করলে চলবে না। মনা আর পিন্টুকে ভালো করে বুঝিয়ে বলে ওর বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য। মনা বাড়ির মধ্যে বসে থাকে আর পিন্টু নিচে, আসতে যেতে সবার ওপরে কড়া নজর। একটু কিছু সন্দেহ হলেই সেই লোকের পিছু নেয়, পারলে গায়ে পরে গল্প করে জিজ্ঞাসাবাদ সারে।

সকালেই দানা, বিল্ডার প্রমোটারি ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা আর পরামর্শ নেওয়ার জন্য মহেন্দ্র বাবুর কাছে চলে যায়। মহেন্দ্র বাবু দানার পরিকল্পনা শুনে বিস্মিতের সাথে খুশি হন। এত টাকা একসাথে নিয়ে ব্যাবসায় নামতে মানা করেন। কিন্তু দানার লক্ষ্য বাপ্পা নস্করের সুনজরে আসার আর সেই সাথে নয়নাকে ব্যাবহার করে বিমান চন্দের কাছে যাওয়ার। বিমান চন্দ মৈনাকের খুনি হতেও পারে, সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ চাই।

সব শুনে মহেন্দ্র বাবু ওকে বলেন, "খুব মেপে চলিস। শঙ্কর আর রমিজ সব সময়ে তোর সাথে থাকবে। বাড়ির কি খবর, মহুয়া কি বলছে?"

গত রাতেই শঙ্করের মুখে মহুয়া আর রুহির সম্বন্ধে শুনে মহেন্দ্র বাবু খুব খুশি। দানা একটু লজ্জায় পড়ে যায়। মহেন্দ্র বাবু ওর পিঠ থপথপিয়ে বলেন, "শেষ পর্যন্ত একটা কাজের কাজ করেছিস তুই। এতে লজ্জার কি আছে রে? ভালো কাজ করেছিস বুক ফুলিয়ে চল। এক নর পিশাচের হাত থেকে এক অবলা নারীকে মুক্তি দিয়েছিস। এক পিতৃ হারা কচি শিশু, পিতার স্নেহ পাবে। তোর নাম আজকে সত্যি সার্থক, বিশ্ব জয়ে বেড়িয়ে পড়।"

শঙ্কর আর রমিজ দুইজনেই দানার চেয়ে অনেক বড়, তাই ওদের সঙ্গে নিতে একটু দ্বিধা বোধ করে দানা। দানা জানিয়ে দেয়, দরকার পড়লে ডেকে নেবে, এমনিতে দুটো পিস্তল সবসময়ে কোমরে থাকে। জামা গুঁজে পরে না দানা, কেননা পিস্তল দুটো কোমরে গোঁজা।

সঙ্গীতার সাথে দেখা হয়। একটু সুস্থ হয়ে উঠেছে তবে এখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছে না। ওর বাবা ওকে ফ্রান্সে পাঠানোর ব্যাবস্থা শুরু করে দিয়েছেন। সঙ্গীতা জানায়, ওর মাসতুতো বোন, অপরাজিতা, সে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশুনা করছে। এইখানে থাকলে ওদের সাহায্য করতে পারতো। তবে একবার অপরাজিতাকে বলে দেখবে, যদি ওর চেনাজানা কেউ এইখানে থাকে তাহলে দানার কাজে সাহায্য করতে পারবে।

সেখান থেকে দানাকে নিয়ে মহেন্দ্র বাবু তাঁর পরিচিত প্রমোটার, মহেশ সরকারের কাছে নিয়ে যান। সেখানে অনেকক্ষণ এই ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা চলে। মহেশ বাবু দানাকে সব থেকে আগে একটা কোম্পানির নাম ঠিক করতে বলেন, তারপরে সেই কোম্পানির রেজিস্ট্রেসান, ট্যাক্স জমা, লেজার বুক ইত্যাদি তৈরি করার পরামর্শ দেন। মহেশ বাবু সবরকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় দানাকে।

তারপরে দানা, বাপ্পা নস্করের কাছে গিয়ে জানায় ও প্রমোটারি ব্যাবসায় নামতে চায়। বাপ্পা নস্কর প্রথমে অবাক হয়ে যায়, কিন্তু দানা যখন ওর সামনে পঞ্চাশ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ রাখে তখন বাপ্পা নস্কর আশ্চর্য চকিত হয়ে যায়, জানতে চায় কোথা থেকে এত টাকা পেয়েছে। বাপ্পা নস্কর জানতে চায়, হঠাৎ এই ব্যাবসায় কেন নামতে চায়। সুচতুর দানা, উত্তরে বলে এই এলাকায় প্রচুর অর্ধ নির্মিত ফ্লাট আবাসন রয়েছে। যাদের কাছ থেকে বাপ্পা নস্কর চাঁদা আদায় করতে পারছে না। বিরোধী দলের নেতা, বিমান চন্দের প্রিয় বন্ধু মোহন খৈতানের বেশ কিছু বড় প্রকল্প ওর দৌরাত্মের ফলে অর্ধ সমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। দানার ইচ্ছে সেই সব অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো কম দামে কিনে কাজ শুরু করতে। মোহন খৈতানের হাত থেকে কাজ নিতে পারলে বিমান চন্দ দমে যাবে, ওর হাতে আসন্ন নির্বাচনের জন্য টাকা আসবে না। দানার হাতে টাকা এলে বাপ্পা নস্করকে খুশি করে দেবে। আগাম পঞ্চাশ লাখ টাকা পেয়ে বাপ্পা নস্কর যারপরনাই আনন্দিত। দানার বুদ্ধি তারিফ করে বাপ্পা নস্কর, আসলে দানার পরিকল্পনা এর চাইতেও অনেক গভীর। নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে দানার গায়ে খুব লাগে কিন্তু নিরুপায়। তবে এই পঞ্চাশ লাখ টাকা সুদে আসলে বাপ্পা নস্করের কাছ থেকে আদায় করবে একদিন। বাপ্পা নস্কর সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রনীলকে আদেশ দেয় ওই অর্ধ নির্মিত ফ্লাট আবাসনের মালিকদের সাথে দানার সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে।

মহুয়া ওইদিকে বসে নেই, রুহিকে কোলে নিয়েই কাজে নেমে পড়ে। সব থেকে আগে একটা গাড়ি কিনতে হবে। দানা আর মহুয়া একটা কালো বি.এম.ডাবলু কেনে, দামী বিদেশী গাড়ি শক্তির সাথে সাথে বিত্তের পরিচয়। সামনের মানুষ দানার পোশাক পরিচ্ছদ, দানার গাড়ি দেখেই সর্ব প্রথম যাচাই করবে। এতদিন এম্বাসেডর ট্যাক্সি চালক দানা কোনোদিন স্বপ্নে ভাবেনি নিজের একটা কালো বি.এম.ডাবলু গাড়ি হবে। হাতে চাবি পেয়ে, মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কেঁদে ফেলে।

গাড়ির পরে সব থেকে জরুরি টাকা। মহুয়ার নামে যে একশো কোটি টাকার শেয়ার আর বন্ড ছিল সেইগুলো বিক্রি করে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা হাতে আসে। অত টাকা পাবে সেটা আশাতীত তাই দুইজনে অবাক হয়ে যায়। নতুন কোম্পানির নাম, মেয়ের নামেই রাখা হয়, "রুহি বিল্ডারস প্রাইভেট লিমিটেড।" মহেশ বাবুর তদারকিতে কয়েকদিনের মধ্যে অফিসে লোকজন নিযুক্ত করা হয়। ছোট অফিস, দশ জনের মতন ছেলে মেয়ে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। মহুয়ার কাজ অফিসে গিয়ে বসা, কিছু না হোক মালিক চোখের সামনে থাকলে কাজ সবাই করে না হলে কেউ কাজ করে না। মহুয়া চায় না অফিসের অবস্থা "চাষা গেল ঘর লাঙ্গল তুলে ধর" এর মতন হোক। রুহি ছোট ছোট পায়ে সারা অফিস ঘুরে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

নিজের গাড়ি নিজেই চালায় দানা। আগে হলুদ রঙের ভাড়ার ট্যাক্সির স্টিয়ারিং হাতে থাকতো এখন নিজের কালো বি.এম.ডাবলুর স্টিয়ারিং। পোশাকে তেমন কিছু ফের বদল হয়নি, যদিও মহুয়ার ইচ্ছে দানা সুট পরুক কিন্তু সেটা দানার একদম ইচ্ছে নয়। একটা সামান্য ট্যাক্সি চালক কি আর সুট পরে? মহুয়া যত ওকে বুঝাতে চায় যে দানা আর সেই ট্যাক্সি চালক নয়। জেদি মহুয়া ওর জন্যে বেশ কয়েকটা সুট বানাতে দেয়।

সকালে রুহি আর মহুয়াকে অফিসে ছেড়ে দিয়ে মহেশ বাবুকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে দানা। মহেশ বাবু ওকে নিয়ে নিজের প্রোজেক্ট গুলো দেখান, কেমন ভাবে কাজ হয়, কার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয়। ভিতে বেশি সময় লাগে, একবার ভিত গড়ে উঠলে বাকি বিল্ডিং তাড়াতাড়ি নির্মাণ করা যায়। দানা মন দিয়ে মহেশ বাবুর কাছ থেকে এই ব্যাবসা সংক্রান্ত সব কিছু শিখে নেওয়ার চেষ্টা করে।

এখন এলাকার কোন বিল্ডারদের সাথে দেখা করা হয়নি দানার। বাপ্পা নস্করের সেক্রেটারি, ইন্দ্রনীল ওদের সাথে কথাবার্তা বলেছে কিন্তু কেউই ওদের জমি ওদের অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প দানাকে বেচতে নারাজ। একদিন দানা নিজেই মহেশ বাবু আর ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার এক নামকরা বিল্ডার, সুব্রতর অফিসে যায়। অফিসের সামনে কালো বি.এম.ডাবলু. দাঁড়াতেই সুব্রত অফিস থেকে বেড়িয়ে আসে। দানাকে আগে এই এলাকার উন্নয়নের জন্য দেখেছে তবে বিল্ডার হিসাবে পরিচয় তখন ছিল না। দানার সঙ্গে ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে দানা বাপ্পা নস্করের খাস লোক।

দানা অফিসে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে সুব্রতকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার আজকাল কাজ কেমন চলছে?"

সুব্রত দানাকে বসতে বলে, "দেখুন আমি জানি আপনি কেন এখানে এসেছেন।"

দানা সোজাসুজি সুব্রতকে প্রশ্ন করে, "কয় মাস হয়ে গেল আপনার কাজ বন্ধ, এক বছর হয়ে গেছে তাই না?"

অগত্যা সুব্রত মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

দানা জিজ্ঞেস করে, "কত টাকা লোকসান হয়েছে আপনার?"

সুব্রত বাঁকা হেসে বলে, "তাতে আপনার কি দরকার?"

ইন্দ্রনীল ওকে বলে, "দেখুন মিস্টার সুব্রত, আমরা এইবারে চাঁদা অথবা প্রকল্পের অংশীদার হতে আসিনি। আপনার যত টাকা খরচ হয়েছে ঠিক সেই দামে দানা আপনার ওই অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প কিনতে চায়।"

সুব্রত একটু ভেবে বলে, "এই এক বছরে অনেক টাকা লোকসান হয়ে গেছে। জিনিস পত্রের দাম বেড়ে গেছে। দেখুন আমি ব্যাবসায় নেমেছি কিন্তু বাপ্পা নস্কর যদি কুড়ি পঁচিশ শতাংশ চায় তাহলে কি করে কাজ করি বলুন?"

ইন্দ্রনীল কিছু বলতে গেলে দানা ওকে থামিয়ে নিজে উত্তর দেয়, "মিস্টার সুব্রত, আমি জানি আপনি ব্যাবসা করতে এসেছেন। আপনার সামনে কয়েকটা বিকল্প রাখতে পারি। প্রথম বিকল্প, আমি আর আপনি মিলে মিশে কাজ করি। আপনার চল্লিশ শতাংশ থাকুক আমার ষাট তাহলে আপনিও টাকা কামাবেন। দ্বিতীয় বিকল্প, গায়ের জোরে আমি আপনার কাছ থেকে কম দামে প্রকল্প কিনে নেব আর তৃতীয়, আপনি এইভাবে বসে থাকুন আর পাঁচ বছরের জন্য। কেননা এর পরের নির্বাচনে আবার বাপ্পা নস্কর এই আসনে জিতবে এবং আমি জেতাবো।"

পরের নির্বাচনে দানা বাপ্পা নস্করকে সমর্থন করবে জেনে ইন্দ্রনীল সন্তুষ্ট। গায়ের জোরে কিনে নিতে পারে দানা সেটা ইন্দ্রনীলকে সাথে দেখেই বুঝে গেছিল সুব্রত। সুব্রত'র কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়। অনেকক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে সুব্রত দানাকে বলে, "জমি কিনতে এক কোটি টাকা লেগেছে আর এখন পর্যন্ত আরো এক কোটি জলে গেছে।"

এইবারে মহেশ বাবু মুখ খোলেন, সুব্রতকে বলেন, "আগে সাইট দেখবো তারপরে কাগজ পত্র দেখব। আপনি যেমন একটা দাম বলেছেন তেমনি আমরাও হিসাব নিরীক্ষা করে তারপরে মুল্য ধার্য করব।"

সুব্রত শেষ পর্যন্ত বলেন, "না মানে কয়েকদিন একটু সময় চাই। তবে আপনার প্রথম বিকল্প আমার বেশ লেগেছে।"

দানাও সেটা চায়, যদিও হাতে টাকা আছে তাও ওই অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো অংশীদারি হিসাবে কাজ করতে চায়। তাতে মাথা ব্যাথা বেশ কম, আগের মালিকের জানাশোনা লোকের দ্বারা কাজ করানো যাবে। নতুন লোক খোঁজার বালাই নেই। হাতে টাকা থাকলে বেশি প্রকল্পে কাজ করতে পারবে তাড়াতাড়ি টাকা আয় হবে।

কয়েকদিন পরে সুব্রতর সাথে সাথে আরও অনেকজন বিল্ডার প্রমোটার ওর সাথে দেখা করে। সবাইকে এক কথা বলে দানা, সবাই ওর কথায় সম্মতি জানায়। সেদিন ইন্দ্রনীল ছাড়াই দানা আর মহেশ বাবু ওদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেন।

সেদিন দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, "আপনাদের কি কারনে বাপ্পা নস্কর বাধা দিয়েছিল বলতে পারেন?"

সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করে, দানা বাপ্পা নস্করের লোক ওর সামনে বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে বলা উচিত হবে কি হবে না সেই নিয়ে ধন্দে পড়ে যায়।

দানা ওদের অভয় দিয়ে বলে, "বলুন না, সমস্যাটা কি হয়েছিল।"

সবার হয়ে সুব্রত উত্তর দেয়, "আমরা বেশির ভাগ আগে বিমান চন্দের রাজনৈতিক দল করতাম। গত বারে বাপ্পা নস্কর জেতার পরে ওকেও আমরা টাকা দেব বলেছিলাম। কিন্তু বাপ্পা নস্কর আমাদের কাছ থেকে কুড়ি থেকে পঁচিশ শতাংশ চেয়ে বসে। আমরা ছোট ছোট প্রকল্পে হাত দেই, কুড়ি পঁচিশ শতাংশ যদি একা ওকেই দেই তাহলে বাকিদের দিয়ে আমাদের কি বাঁচবে বলুন?"

বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মের বিষয়ে দানা অবগত। দানা মাথা দোলায়, "সত্যি কথা।" একটু থেমে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে আপনারা আমার প্রথম বিকল্প পথেই যেতে চান তাই তো?"

সবাই সম্মতি দেয়। দানা ওদের সাথে হাত মিলিয়ে জানিয়ে দেয় কাগজ পত্র তৈরি করতে। একবার কাগজ পত্র হাতে চলে এলে কাজ শুরু করতে পারে সবাই আর সেই সাথে দানাও ওদের সেই মতন টাকা দেবে।







চৌষট্টি ছক (#০২)

সঙ্গীতাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছে ওর বাবা মা। ইন্দ্রাণী শহর ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে গেছে। যাওয়ার আগে ইন্দ্রাণী ওদের সাথে দেখা করে যায়নি, সেই নিয়ে দানা একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলেও মহুয়া বুঝতে পারে কি কারনে ইন্দ্রাণী আর ওদের সাথে দেখা করেনি। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়, মহুয়ার মনের অবস্থা ঠিক সেই রকম ছিল। কাজের চাপে কয়েকদিনের মধ্যেই ইন্দ্রাণীর কথা ভুলে যায় দানা আর মহুয়া স্বস্তির শ্বাস নেয়।

সঙ্গীতা ফ্রান্সে পৌঁছে দানার কাছে তথ্য প্রমান রেকর্ড করা চিপ পাঠিয়ে দেয়। সেই চিপ থেকে দানা, বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর কারচুপির প্রমান পায়। সঙ্গীতা বেশ ভালো তদন্ত করেছিল, কবে কোন আমলাকে কত টাকা দিয়েছিল, কোন বিল্ডারকে খুন করেছিল, কোন কোন সরকারী কাগজে হেরফের করেছিল সবার নাম ধাম, তারিখ ইত্যাদি সব কিছু ওই চিপ থেকে উদ্ধার করে।

নাসির আর আকরাম খবর দেয় যে নয়না আবার কাজে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। নয়নার পেছনে ছায়ার মতন লেগে থাকতে নির্দেশ দেয় দানা। ওর নতুন ছবির কাজ পুরো দমে চলছে। কোনদিন খুব ভোরে শুটিংয়ে যায়, কোনোদিন সারাদিন স্টুডিওতে, তবে সমুদ্র আর সুমিতা ওর পাশ ছাড়ে না আর। নতুন ড্রাইভার রেখেছে, তবে সে শুধু ওর গাড়ি চালায় ব্যাস। একজন আলাদা করে দেহ রক্ষীও নিযুক্ত করা হয়েছে। ভীষণ ধূর্ত নয়না হয়ত টের পেয়ে গেছে যে দানা ওর ওপরে নজর রেখে চলেছে, তাই বিমানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ আর বাপ্পা নস্করের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দিয়েছে।

নিজের কাজে নেমে দানা বেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। বিকেলে অফিস থেকে মহুয়াকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আবার কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কোনোদিন জিজ্ঞেস করলে সদুত্তর পায় মহুয়া কোনোদিন পায় না। যেদিন পায় নান সেদিন রাতে ফিরলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ লাগে বাড়িতে। ঠিক সময়ে ফিরলে মহুয়া দরজা খোলে আর অসময়ে ফিরলে কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।

বসন্ত প্রায় শেষ, গ্রীষ্মের মুখে এসে পড়েছে মহানগর। সামনের বাগানে কোকিলের কুহু ধ্বনি রোজ সকালে শোনা যায়। আম বকুলের গন্ধে বাড়ি মম মম করে। বাগানটা একটা রাস্তা পেরিয়েই, মাঝে মাঝে মনে হয় একটু মাতাল হলে ভালো হত। রোজ রাতে মহুয়ার নেশায় বুঁদ হয় তবে রক্তে একটু সুরা চড়লে আরো ভালো হত। বাড়িতে মেয়ের সামনে মদ খাওয়া যায় না। সেদিন মদনার দোকানে বেশ আড্ডা মেরে সময় কাটিয়ে অনেক রাত হয়ে যায়।

মদনা আর কেষ্ট বারেবারে ওকে বলে, "বাড়ি যা, না হলে ম্যাডাম এই বারে ঝ্যাঁটা পেটা করবে।"

অনেকদিন পরে গলায় চোলাই পড়েছে তাই আর সেইসবে কান দেয় না দানা, "ধুর বাল একটু দাঁড়া এই যাচ্ছি।"

তাও এই যাচ্ছি এই যাচ্ছি করতে করতে রাত দশ’টা বেজে যায়। গাড়িতে উঠে মোবাইল খুলে দেখে প্রায় এক ডজন মিসকল, বুঝে যায় প্রিয়তমা খাপ্পা হয়ে আছে। এই রাতে মধ্য মহানগরে কি আর সেই ফুলের দোকান খোলা থাকবে? দেখা যাক কি হয়। মেয়ের জন্য একটা বড় চকোলেট কেনে। ওই নেশা গ্রস্থ অবস্থায় মধ্য মহানগরের ওই ফুলের দোকানে যায় দানা। বরাবরের মতন হলুদ ফুলের স্তবক চাই ওর। এতদিনে দোকানি ওকে চিনে গেছে। ওকে দোকানে ঢুকতে দেখেই হলুদ ফুলের স্তবক ধরিয়ে দেয়।

দোকান থেকে বের হতে যাবে দানা, দেখে সামনে সমুদ্র দাঁড়িয়ে। সমুদ্র ওকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে ওঠে। সেই সাথে দানার নেশার ঘোর কেটে যায়। রাত সাড়ে দশটা কিন্তু মধ্য মহানগর এলাকায় তখন লোকে লোকারণ্য। রাত যত ঘন হয়, তত এই শহর জেগে ওঠে। আর দশটা এগারোটা মানে মানুষের বিকেল। দানাকে অবশ্য একবার সমুদ্র আগেও ফোন করে ডেকেছিল, কিন্তু দানা জানিয়ে দিয়েছিল যে আর ওই মুখো হবে না। ফোনে গলার স্বর শুনে এইটুকু ধারনা হয়েছিল হয়ত ওরা ওর ওপরে অতটা ক্ষেপে নেই। হয়তো নিজেরাই বুঝতে পেরেছে যা কিছু হয়েছে সেই রাতে সব নয়নার প্ররোচনায় আর চূড়ান্ত নেশার ফলে হয়েছে। তবে নয়নার মনোভাব এখন বোঝা যায়নি। নয়না অতি ধুরন্ধর মহিলা ওর মনের কথা জানার জো কারুর নেই।

সমুদ্র দানাকে কাষ্ঠ হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার এত রাতে ফুল কিনতে বেড়িয়েছিস? এখন কাকে পাল দিচ্ছিস?"

সমুদ্রের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভারী গলায় পাল্টা প্রশ্ন করে দানা, "নয়না, কেমন আছে?"

সমুদ্র চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তুই শালা সেদিন ওই ভাবে নয়নার সাথে সেক্সে মেতে উঠলি, মেয়েটা এক সপ্তাহ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারল না।"

দানার মস্তিকের সকল শিরা উপশিরা সতর্ক হয়ে ওঠে। নয়না কি সত্যি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে না এটা একটা চাল। তবে ওকে এই মেকি হাসির আড়ালে থেকেই আঘাত শুরু করতে হবে। বাঁকা হেসে সমুদ্রকে বলে, "এই শোন আমার হয়ে একটু নয়নার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস। সেদিন না মদের ঝোঁকে একটু বেশি করে ফেলেছিলাম।"

সমুদ্র হাসি থামিয়ে গম্ভির কণ্ঠে ওকে বলে, "নয়না একবার তোর সাথে দেখা করতে চায়।"

প্রমাদ গোনে দানা কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। সাহস নিয়ে সমুদ্রের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, "কেন রে, নয়নার গুদে আবার চুলকানি উঠেছে নাকি?"

ওই কথা শুনে ভুরু কুঁচকে দানাকে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তুই শালা সত্যি হারামির বাচ্চা। সেই যে গেলি আর দেখা পর্যন্ত করলি না বাড়া।"

হেসে ফেলে দানা, বুঝতে পারে যে ওর এই প্রমোটারির বিষয়ে নয়না অবগত নয় আর সেটা লুকাতেও চায় না, তাই সমুদ্রকে বলে, "আমি বিল্ডার প্রমোটারির ব্যাবসা শুরু করেছি, বুঝলি। কাজে খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি রে।"

সেই শুনে সমুদ্র অবাক হয়ে যায়, "তাই নাকি, কোথায় করছিস? তোর এলাকায়, বাপ্পা নস্কর জানে?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ রে ভাই, বাপ্পা নস্কর জানে এবং ভালো ভাবেই জানে।"

সমুদ্র খানিকক্ষণ ভেবে ওকে বলে, "যাই হোক নয়না একবার তোর সাথে দেখা করতে চায়। কবে তোর সময় হবে?"

দানা পাল্টা প্রশ্ন করে, "কেন দেখা করতে চায় নয়না?"

সমুদ্র চোরা হেসে ঠোঁট উল্টে উত্তর দেয়, "ওই জানে কেন দেখা করতে চায়।"

দানা হেসে ফেলে, "শালা আমাকে গরু পেয়েছিস নাকি? তুই জানিস না এটা হতেই পারে না রে।"

সমুদ্র মিচকি হেসে বলে, "আরে না না সেই সব কিছু নয়, তোর মাইনে বাকি পরে আছে সেটাই হয়তো দেবে। যাই হোক একদিন বাড়িতে আসিস।"

দানার ধারনা এখন নয়না, মহুয়া আর রুহির বিষয়ে জানে না। তাও নয়নার বাড়িতে গিয়ে দেখা করা ঠিক মনে হয় না। হয়ত দানাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুন করতে পারে, কিম্বা অন্যদিক থেকে আঘাত হানতে পারে। দানা সমুদ্রকে জানিয়ে দেয়, "ব্যাস্ত রে খুব তবে বাড়িতে নয় অন্য কোথাও দেখা করতে চাইলে করতে পারি।"

দানা আর দাঁড়ায় না, হলুদ ফুলের স্তবক নিয়ে সোজা নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। নিজের গাড়িতে ওঠার আগে একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে। দানাকে একটা বিশাল কালো বি.এম.ডাবলুতে উঠতে দেখে, সমুদ্র বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা ওর দিকে একটা বাঁকা হাসি ছুঁড়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।

আজ কপালে দুঃখ আছে। মদনার দোকান থেকেই বের হতে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল, তার ওপরে আবার এইখানে সমুদ্রের সাথে দেখা হয়ে আরো দেরি হয়ে গেল। ফোন করলে ঝেড়ে কাপড় খুলে দেবে "পাপড়ি"। নেশা কেটে মাথার মধ্যে টানটান উত্তেজনা, নয়না কি কারনে দেখা করতে চায়। যদি রুহি আর মহুয়ার কিছু হয় তাহলে এই মহানগর জ্বালিয়ে দেবে। গাড়ি চালাতে চালাতেই আরও একবার মহুয়াকে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু অভিমানী মহুয়া ওর ফোন উঠায় না।

কলিং বেল বাজানোর আগে শ্বাস চেপে উত্তেজনা প্রশমিত করে নেয়। দেরি করলে ফিরলে যা হয়। যথারীতি কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।

দানা এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোর ম্যাডাম কোথায়?"

কাজের মেয়ে, মণি ওকে বলে, "দিদিমনি আর রুহি শোয়ার ঘরে।"

মহুয়ার গম্ভির কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় দানা, "মদনের দোকান থেকে’ত দশ’টা নাগাদ বেড়িয়েছিলে তাই না। এখন বারোটা বাজে আবার কার কাছে গিয়েছিলে?"

হিমশীতল কণ্ঠে বাঘিনী প্রশ্ন করেছে, দানার বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে এইবারে বেশ আয়েশ করে কেটে কুটে, তেলে ঝালে নুন লঙ্কা দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাবে ওর বাঘিনী। দানা ফুলের স্তবক নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানায় আধা শোয়া মহুয়া, চশমার ওপর দিয়ে এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রেয়সী। রুহি অনেক আগেই ঘুমিয়ে কাদা। দানার হাতে হলুদ ফুলের স্তবক দেখে আরো রেগে যায়। ভেবে পায় না এতরাতে কোথা থেকে ওই সুন্দর ফুলের স্তবক যোগাড় করে এনেছে।

অপরাধীর মতন কাঁচুমাচু মুখ করে মহুয়ার দিকে ফুলের স্তবক এগিয়ে দিয়ে বলে, "সরি পাপড়ি, দেরি হয়ে গেল।"

বুকের ওপরে হাতজোড়া ভাঁজ করে গম্ভির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "রাস্তায় কার সাথে দেখা হয়েছিল আবার? নয়না না ময়না?"

দানা চুকচুক করে হেসে ওঠে, "আরে শোন এক কান্ড।" তারপরে ওর পাশে এসে বসে বলে, "ফুলের দোকান থেকে বেড়িয়েই সমুদ্রের সাথে দেখা হয়েছিল।"

সেই শুনে ক্রোধ ভুলে আঁতকে ওঠে মহুয়া, "হঠাৎ কি ব্যাপার? ওরা কি আমাদের অনুসরন করছে।"

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, তাও মহুয়াকে প্রবোধ দিয়ে বলে, "জানিনা পাপড়ি।"

ঘুমন্ত রুহির গায়ে লেপটা আরও টেনে দিয়ে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "কি কথা হল ওর সাথে?"

দানা সব কিছু খুলে বলার পরে, দুইজনের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়। নয়নার সাথে কি দেখা করা উচিত না অনুচিত, এই নিয়ে কিছুক্ষণ শলা পরামর্শ চলে। যদিও সমুদ্রের ব্যাবহার বলছে নয়না ওর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, তবুও সাবধানের মার নেই। মহুয়া ওকে পরামর্শ দেয় একবার দেখা করার জন্য, কি বলতে চায় নয়না। সেই সাথে এটাও বলে, যদি নয়না ওদের বিষয়ে জেনে গিয়ে থাকে তাহলে দানা যেন মাথা গরম না করে। চুপচাপ যেন নয়নার কথা মেনে নেয়। পরে বিষদে আলোচনা করা যাবে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মহুয়ার উপদেশ দানার মনে ধরে যায়। বড় বুদ্ধিমতী, মহুয়া পাশে না থাকলে দানার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠত না।

বুদ্ধিমতী মহুয়া ওর কান টেনে বলে, "মাঝে মাঝে একটু বৌদের কথা শুনতে হয় বুঝলে।"

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "শোব কোথায়?"

মহুয়া, মেয়ের অন্যপাশে দেখিয়ে দেয়। দেরি করার শাস্তি। এমনিতে মহুয়া মাঝখানে শোয়, তবে যেদিন রাগারাগি হয় সেদিন শোয়ার জায়গা বদলে যায়। সেদিন রুহিকে ঢাল করে দানাকে অন্যপাশে ঠেলে দেওয়া হয়।

পরের দিন সকালে দানা, সমুদ্রকে ফোন করে জানিয়ে দেয় দেখা করার কথা। সেই শুনে সমুদ্র বলে, নয়না ওর সাথে বিমানের দেওয়া ফাঁকা বাড়িতে দেখা করতে চায়। দানা নারাজ, একাকী কোন জায়গায় দেখা করতে চায় না দানা। সমুদ্র একটু অবাক হয়ে যায়। সুচতুর দানা বলে ওই বাড়িতে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেললে দুইজনেই সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সমুদ্রকে বলে গাড়ি নিয়ে সোজা মোহনার দিকের বড় রাস্তা যেন ধরে। রাস্তার মাঝে কোথাও একটা জায়গায় ওরা দেখা করবে। মহুয়ার চোখে চাপা উত্তেজনা, বুকে চরম উৎকণ্ঠা, কি হবে কি হবে। দুই খানা পিস্তল কোমরে গুঁজে গাড়ি নিয়ে আর নাসির আকরামের সাথে বেড়িয়ে পড়ে দানা।

বড় রাস্তায় পড়তেই বেশ কিছু দুর গিয়ে সামনে নয়নার গাড়ি দেখতে পায়। সমুদ্র ওর গাড়ি গতরাতেই দেখেছে সুতরাং চিনতে ভুল হয় না পেছনের কালো গাড়ি টাকে। ফোন করে জানতে চায় কোথায় দেখা করতে চায় দানা, উত্তরে ওকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়। সবে মাত্র শহর ছাড়িয়েছে, আশেপাশে এখন জন বসতি। একদম নির্জনে দেখা করতে চায়। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পরে দুই পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে দানা ওদের গাড়ি থামাতে নির্দেশ দেয়। দুইজনে গাড়ি ওই ফাঁকা মাঠের মধ্যে নামিয়ে দেয়। দুটো গাড়ি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দুটো পিস্তলের স্লাইড টেনে চেম্বারে গুলি ভরে নেয়। পেছনের সিটে বসে আকরাম আর নাসির আগে গাড়ি থেকে নামে। উলটো দিকের গাড়ি থেকে, সমুদ্র, গাড়ির ড্রাইভার আর ওর দেহরক্ষী নেমে পড়ে।

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, সমুদ্র ফোন করে দানাকে, "কি রে কতক্ষণ আর গাড়িতে বসে থাকবি?"

দানা গাড়ি থেকে নেমে বাঁকা হেসে বলে, "আমি নেমে গেছি কিন্তু যে দেখা করবে সে কোথায়?"

ওইদিকে শুধু মাত্র ওর দেহরক্ষীর হাতেই একটা বন্দুক, এদিকে তিনজনের হাতেই পিস্তল কিন্তু লুক্কায়িত। চোখের ইশারায় আকরাম আর নাসিরকে তৈরি থাকতে বলে। দানা এগিয়ে যায় নয়নার গাড়ির দিকে। ওকে এগিয়ে আসতে দেখে, পেছনের দরজা খুলে নয়না বেড়িয়ে আসে। হাসিহাসি চেহারা, চোখে ছলনার লুকোচুরি। জ্যাকেট খানা গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায় নয়না। দানাও একটা সিগারেট ধরিয়ে নয়নার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। নয়নার ঠোঁটে মিচকি ধূর্ত হাসি যেন ওকে জিজ্ঞেস করছে, "কি দেখছ এত?" দানা উত্তরে চোখ পাকায়, "পেছনে লেগ না তাহলে খুলি উড়িয়ে দেব!" সমুদ্রের কানেকানে কিছু একটা বলে দানার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসে নয়না। দানা চোয়াল শক্ত করে সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়। তীক্ষ্ণ চোখে নয়নার পদক্ষেপ জরিপ করে বুঝতে চেষ্টা করে কি চায়।

নয়না ওর দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে বলে, "কেমন আছো?"

দানাও মৃদু হেসে ওর সাথে হাত মিলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছি। তোমার শরীর ঠিক আছে?"

নয়না হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, তুমি যা অবস্থা করে গেছিলে তাতে সাতদিন আর উঠতে পারিনি।"

মাথা চুলকিয়ে হেসে ফেলে দানা, "ওই স্যাডোম্যাচোকিজম নিজেই চেয়েছিলে তাই না।"

বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে নয়নার লাল ঠোঁটে, "তাই বলে ওইখানে একদম পিস্তল গুঁজে দেবে কে জানতো, বলো?"

দুইজনেই হেসে ফেলে। দানার বুকে টানটান উত্তেজনা, এত ভালো করে কথা বলছে নয়না এই শান্তশিষ্ট ব্যাবহার কোন ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুতেই ধরতে পারছে না দানা। আসলে নয়না ওর কাছ থেকে কি চায়। নিজের প্রতি ধর্ষণের প্রতিশোধ না অন্য কিছু। কিন্তু যার ভেতরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে থাকবে সে কেন এত মিষ্টি করে ওর সাথে কথাবার্তা বলতে আসবে। তবে নয়না প্রচণ্ড ধূর্ত মহিলা, হাসিহাসি মুখেই খুনের পরিকল্পনা করতে পারে। দানা সজাগ হয়ে যায়।

সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে মৃদু হেসে নয়না ওকে বলে, "তুমি ডুবে ডুবে অনেক জল খাও তাই না?"

পেছন ঘুরে কালো বি.এম.ডাবলু. দেখে বলে, "কি বলে ডাকা যায় বলত তোমাকে? নোনাঝিলের মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল, না কালী পাড়ার দানা। এক লাফে অনেক ওপরে উঠে গেছ। লটারি পেয়েছো? তোমার সঠিক পরিচয় কি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল?"

সজাগ দানা নয়নার চাল বুঝতে চেষ্টা করে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে, "কি বলতে চাও নয়না।"

নয়না ওকে বলে, "দেখ দানা, তুমি যেমন আমার দুর্বলতা জানো, ঠিক তেমনি আমি তোমার দুর্বলতা জানি।"

উৎসুক দানার মাথা ঝনঝন করে ওঠে, "আমার বিষয়ে তুমি কি জানো?"

বুকের মধ্যে গরম রক্ত এলোপাথাড়ি ছুটে বেড়ায়। টানটান উত্তেজনায় শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।

নয়না বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমেথেমে বলে, "দেখো দানা, আমাকেও একটু গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। তুমি আমার আর বিমানের সম্বন্ধে জানো ঠিক তেমনি আমিও জানি তোমার একটা সুন্দরী স্ত্রী আর একটা নিষ্পাপ কন্যে আছে।"





কেমন লাগলো দু-একটা শব্দ হলেও প্লিজ লিখে জানান। আপনাদের মহামূল্যবান মন্তব্যই আমার গল্প শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য। 





পিনুরামের লেখা এই গল্পটির ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

পিনুরামের লেখা গল্পগুলোর ইনডেক্স-এ যেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
click here

মূল ইনডেক্স এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ


হোমপেজ এ যেতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment